STORYMIRROR

Sree Mondal

Thriller Others

4  

Sree Mondal

Thriller Others

কলিং বেল

কলিং বেল

4 mins
426

রাত তখন ১২. ০০ টা হবে। হঠাৎ কলিং বেল বেজে উঠলো। শ্বেতা একাই ঘুমায়। তাঁদের দোতলা বাড়ি। উপরের ঘরে শ্বেতা র মা বাবা ঘুমায়, আর শ্বেতা নিচের ঘরে। ছোট থেকেই ভারী ভীতু প্রকৃতির মেয়ে শ্বেতা। যে কারণে সে কোনো ভূতের গল্প পড়েনা, ভূতের সিনেমা দেখে না। ছোট বেলায় নাকি তার দিদি একবার ভয় দেখিয়েছিলো তাকে। দেয়ালের তাকে রাখা ছিল কতগুলো প্লাস্টিকের বাটি, গরমকাল ছিল তাই হাওয়ায় পরে গিয়েছিলো। তার দিদি বলেছিলো, ভূত এসেছে তাই পরে গেছে। সেটা শুনে শ্বেতা র খুব জ্বর এসেছিলো। 

        কিছুদিন আগেই শ্বেতার পরিবারের একজন সদস্য মারা যায়। শ্বেতা কিছুদিন মাকে নিয়ে ঘুমাতো। শ্রাদ্ধশান্তি র কাজ মিটে যাওয়ার পর থেকেই সে আবার একা ঘুমাতো। কারণ ভোর ৩ টে র সময় উঠে পড়তে বসতো সে। আর পড়তে বসার আগে বিছানা তার পরিষ্কার করতে হতো। বাসি বিছানায় কিছুতেই সে পড়তে বসতো না। তার সারাদিন টাই ছিল রুটিনে বাধা। রুটিনের বাইরে গিয়ে কোনো কাজ করা সে পছন্দ করে না। 

         চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে সে। তাই জীবনটা রুটিনে বেঁধে ফেলেছে সে। এরকমই একদিন পরীক্ষার এক সপ্তাহ আগে সে ঘুমাতে গেছে প্রায় রাত তখন ১০ টা। ফোন তার হাতের কাছেই থাকতো। রাত ১২ টা কলিং বেল বেজে উঠলো হঠাৎ। বলে রাখি কলিং বেল টা তার ঘরেই লাগানো ছিল। ঘুম ভাঙলো শ্বেতার। "কেউ কি ডাকতে এলো বাবাকে?" এটাই মনে মনে ভাবলো। বলে রাখি শ্বেতার বাবা র কখনো কখনো নাইট ডিউটি থাকতো, তাই একটা জেঠু ডাকতে আসতো, বা কখনো কাকা আসতো ডাকতে। শ্বেতা ফোন দেখলো রাত ১২ টা বাজে। কলিং বেল টা দুবার বেজে উঠলো। শ্বেতা ভাবলো হয়তো জেঠু দেখে গেছে, বাবা নিজের মতো চলে যাবে। এই ভেবে সে আবার ঘুমিয়ে পড়লো। রাত ২ টো র সময় আবার ও কলিং বেল বেজে উঠলো। এবার শ্বেতা আবার ফোন দেখলো। এবার তার মনে পরে গেলো অশরীরী আত্মা রা নাকি এরকমই সময় ই এক্টিভ হয়। ফোন করতে গেলো, কিন্তু ফোন এর নেটওয়ার্ক নেই একদম। ফোন তো ইমার্জেন্সি কল এ আছে। পুরো ঘরে অন্ধকার, লাইট অন করতে গেলেও তো নিচে নামতে হবে। ফোন টা ফ্লাইট মোড করে আবার অন করলো। নেটওয়ার্ক এলো, ফোন করলো মাকে, এর মধ্যে আরো একবার কলিঙবেল বেজে উঠলো। মাকে জিজ্ঞাসা করলো "বাবা কি ডিউটি যায়নি? জেঠু এসে ডাকছে বার বার।" মা জানালো যে বাবার তো আজ ডিউটি নেই। শ্বেতা জানালো ১ মিনিট ও হয়নি কলিঙবেল বাজলো, কে বাজাতে পারে? দোতালার বারান্দা থেকে নিচে দেখলো কেউ নেই, কেউই নেই। তাহলে কলিং বেল কে বাজাতে পারে। এরপর সারারাতটা জেগে কাটালোশ্বেতা।

       পরদিন সকালে বাবার সাথে আলোচনা করতেই বাবার বললো কলিং বেলার সুইচ টা মনে হয় লুস হয়েগেছে তাই মনে হয় এরকম হচ্ছে। যাইহোক বাবা মা খুব লাইটলি ব্যাপার টা নিলেও শ্বেতা কিন্তু মেনে নিতে পারলো না, মনের মধ্যে খটকা থেকেই গেলো।

        এর মধ্যে আর কোনো ঘটনা ঘটেনি কিন্তু শ্বেতার মনের মধ্যে কলিং বেল এর ঘটনাটা নিয়ে টানাপোড়েন চলতেই থাকলো। তার বাবার কথা সে কিছুতেই মানতে পারছে না। কলিং বেল এর সুইচ এর যদি স্প্রিং লুজ হবে তাহলে বাকি দিন এখন তো হচ্ছে না, রাতেই কেন হলো শুধু? এসব মনের মধ্যে ঘুরপাক করতে লাগলো। পরীক্ষার একদিন আগের রাতে আবার ঠিক রাত ১২ টা আবার ও কলিং বেল বেজে উঠলো। বাবা কিন্তু বাড়িতে নেই, মানে জেঠুর ও ডাকতে আসার কোনো কথা নেই, তখন মনে করলো হয়তো সুইচ টা স্প্রিং লুজ তাই মনে হয়। শুয়ে পড়লো এসব ভেবে। হঠাৎ করেই তার মনে হলো কে যেন তার হাত পা গলা চেপে ধরেছে, সে কিছুতেই যেন নড়াচড়া করতে পারছে না, অনেক্ষন পরে যেন সে হালকা হলো। ওই রাতে আবার দুবার কলিং বেল বাজলো। সেই রাতে কিছুতেই ঘুম হলো না আর। ভোর ৪টে বাজলো এবার সে একটু ঘুমাতে যাবে নিশ্চিন্ত মনে। ঘুম থেকে উঠলো তখন সকাল ৭ টা ঘুম থেকে উঠলো, শ্বেতার মা একটু অবাক হলো, এতো দেরি করে সে ঘুম থেকে উঠলো তাই। শ্বেতা তার মাকে সব জানালো। তার মা বললো এসব ন্যাচারাল, ঘুমের মধ্যে হয় নাকি সবারই। সে ভাবলো হয়তো তাই কিন্তু কলিং বেল টা ঠিক ওই ১২ টা থেকে ওই ২ টা র মধ্যে বাজবে কেন? বাবাকে বললো পঞ্চ ধাতুর বালা পড়লো হাতে।

          এই ঘটনার দুদিন পরে একদিন দুপুর বেলায় শ্বেতা বই পড়ছে, আবার ও কলিং বেজে উঠলো। এবার সে গেলো নিচে দেখতে, সত্যিই ই তাই স্প্রিং কেটে গিয়েছে, আর অফ হচ্ছে না একবার কেউ বাজিয়ে গেলে। হাফ ছেড়ে বাঁচলো শ্বেতা।


এই বিষয়বস্তু রেট
প্রবেশ করুন

Similar bengali story from Thriller