STORYMIRROR

Sree Mondal

Others

4  

Sree Mondal

Others

মায়ের আশীর্বাদ

মায়ের আশীর্বাদ

3 mins
320

আজ তিতির এর ইন্টারভিউ। কলকাতার এক mnc কোম্পানি তে চাকরির আবেদন করেছিল সে। ছোট্ট তিতির খুব একটা বড়োলোক বাড়ির মেয়ে নয়, কিন্তু মা বাবার একমাত্র মেয়ে। বাবা সরকারি চাকুরে ছিল।


 ১৪ বছরের জন্মদিনে মা ঘড়িটা দিয়েছিলো আর বলেছিলো, "যখনই কোনো পরীক্ষা বা কোনো কাজে যাবি এই ঘড়িটা সবসময় পড়বি, তাহলে দেখবি তোর সব কাজ সফল হবে, এটা আমার আশীর্বাদ, সব সময় তোর সাথে রাখবি "। আজ ১২ বছর হয়েগেলো মা নেই। মাধ্যমিক পরীক্ষার চার মাস আগে তার মা মারা যায়।


যখন পরীক্ষা আসতো তখন মা তার সাথে রাত জাগতো, কিন্তু মাধ্যমিক এর সময় মা আর ছিল না কিন্তু সব সময় যেন মনে হতো মা যেন তার সাথেই আছে। জীবনে প্রথম বার মা ছাড়া পরীক্ষা দিতে যাবে।

এবার মা নেই তাই বাবা ই তিতির কে নিয়ে গেলো। দেখতে দেখতে আজ তিতির কলেজের গন্ডি পেরিয়ে চাকরির ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছে। সমস্ত ডকুমেন্টস নিয়ে রেডি হয়ে বেরোতে যাচ্ছে, তাও কেমন যেন তার মনে হচ্ছে সব কিছু ঠিকঠাক মিটবে তো? কেমন যেন টেনশন হচ্ছে তার। হঠাৎ চুড়িদার এর ওড়না টা যেন মায়ের ঘরের সামনে রাখা ফুল গাছটায় আটকে গেলো। বেলফুল ছিল মায়ের খুব পছন্দের। তাই আমি আর বাবা দুজনে মিলে ঠিক করলাম মায়ের ঘরের সামনেই ব্যালকনিতে ফুল গাছটা থাকবে। গাছটায় ফুল ফুটলে আমি আর বাবা খুব আনন্দ পাই, মনে হয় মা যেন সেই বেলফুল হাতে নিয়ে তার গন্ধ নিচ্ছে। ওড়নায় টান পড়তেই পিছনে ঘুরে দেখলো বেলফুল গাছে আটকে গেছে, তাতে আজ তিন চারটে ফুল ও ফুটেছে। ভেবে পাচ্ছিলো না কেন ওড়না আটকে গেলো? ওড়না ছাড়াতে গিয়ে দেখলো ঘড়িটা পড়তে সে ভুলে গেছে। আবার গিয়ে ঘড়িটা তার ঘর থেকে নিয়ে এসে পড়লো। বাড়ি থেকে অফিস দুই ঘন্টার রাস্তা।

প্রথমে ট্রেন ধরে তারপর বাস। ওড়না আটকে যাওয়ায় আর গাছে বেলফুল দেখতে গিয়ে স্টেশন এ আসতে দেরি হয় তার, মনে মনে ভাবলো ট্রেন হয়তো বেরিয়ে গেছে, আবার ১৫ মিনিট পরে ট্রেন, ঠিক সময় মতো অফিসে পৌঁছাতে পারবে কিনা সেটা নিয়ে খুব চিন্তা হয় তার। স্টেশনে এসেদেখলো ট্রেন সবে ঢুকছে প্লাটফর্ম এ।

ট্রেনে বেশি ভিড় ও নেই আজ । একটা সিট্ এ বসলো, আর হাত ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। অতঃপর অফিসে আসলো ঠিক সময়ইমতো, তার ইন্টারভিউ ও খুব ভালো হলো। দুদিন পর থেকেই জয়েন করতে বলেছে ওরা। মাসিক বেতন ২৫০০০ টাকা। 

আজ সব যেন উল্টোপাল্টা হতে গিয়েও হলো না। মায়ের আশীর্বাদ যে তার সাথে আছে, এসব ভাবতে ভাবতে বাড়ি ফিরলো তিতির। এভাবে দুইটি বছর কেটে গেলো।

আজ তিতির এর বিয়ে। আজ ও সে তার মায়ের কথা খুব মনে করছে। আজ ও সে অন্যদিনের মতো হাত ঘড়িটা পড়েছে। দু একজন বললো আজ একটা বিশেষ দিনে পুরোনো ঘড়িটা পড়ার কি তার খুব দরকার ছিল? যে যাই বলুক, তিতির জানে যে ওটা শুধু ঘড়ি নয় ওটা তার মায়ের আশীর্বাদ। যদিও আজ সে তার মায়ের গয়নাতেই সেজেছে। ভালোভাবেই বিয়ে সম্পন্ন হলো।

পরদিন শশুর বাড়ি যাওয়ার সময় ঘড়িটা আবার ও পরে নিলো। মনে হলো মা যেন হাত ধরে তাকে নতুন জীবনে এগিয়ে দিল। মা যেন নতুন জীবনেও সব সময় পাশে থাকে, এসবকথা ভাবতে ভাবতে সে নিজের বাড়ি ছেড়ে স্বামীর সাথে চলে গেলো। মনে মনে ভাবলো বাপের বাড়ি ছেড়ে আসছি তো কি হয়েছে? মা তো যাচ্ছে সাথে। এভাবেই মা আমার সাথে থাকবে।


Rate this content
Log in