STORYMIRROR

সূর্য্যেন্দু গায়েন

Inspirational Others

3  

সূর্য্যেন্দু গায়েন

Inspirational Others

খাবো না

খাবো না

3 mins
145

আমার অত্যন্ত কাছের এক বন্ধু বলা যায়। তার পিতৃবিয়োগ হয়। ওর বাবার অসুখের সময় আমার সাথে যোগাযোগ করে। সে কি কান্নাকাটি। "এক টাকাও নেই। বাবার ট্রিটমেন্ট কিভাবে করাবো কিছুই বুঝতে পারছি না, ইত্যাদি ইত্যাদি।" নানান পরামর্শ দিলাম। তার মধ্যে একটা কথা বলেছিলাম, ওনার সম্পত্তির কিছু অংশ বিক্রি করে ভালো ডাক্তার দেখালে হয়তো উনি সুস্থ হয়ে যাবেন বা আরও কিছুটা বছর বেঁচে থাকবেন। যেই আমি বললাম সম্পত্তির কিছুটা অংশ বিক্রি করে ডাক্তার দেখাতে সেই মিনমিন করে বলল, "হ্যাঁ কিছু একটা তো করতে হবে। ঠিক আছে, এখন রাখছি পরে কথা বলব। বাবাকে নিয়ে ব্যস্ত আছি।"

তিন চার সপ্তাহ পর বন্ধুটা আবার একদিন আমাকে ফোন করেছে। একটু ব্যথিত কন্ঠে বললো, "ভাই কি আর তোকে বলবো দুঃখের কথা। বাবাটা আজ তিনদিন হলো মারা গেছে। তোকে নেমন্তন্ন করার জন্য ফোন করলাম। আসিস শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানের সময়। এসে একটু কাজে লাগিস। চিঠিতেও ডাক যাবে। তাও তোকে ফোনে একবার জানিয়ে রাখলাম। তুই তো আমার খুব কাছের বন্ধু, তাই জানালাম।"

"সে কি বলছিস রে? এই তো সেদিন বললি কাকু অসুস্থ হয়েছে। এর মধ্যেই মারা গেল? তা ডাক্তার দেখিয়েছিলিস?"

"হ্যাঁ, ডাক্তার দেখিয়েছিলাম। ডাক্তার বলল সুস্থ হবে কিন্তু ওই দু লাখ টাকার মতো খরচ করতে হবে। আমি তো পয়সা কড়ি যোগাড় করছিলাম কিন্তু আর জোগাড় হল কোথায়? বাবা চলে গেল।"

একটু-আধটু সান্ত্বনা দিয়ে ফোনটা রাখলাম। ফোনটা রেখেই যোগাযোগ করলাম বন্ধুটার পাশের বাড়ির এক ছেলের সাথে। সেও আমার বন্ধু। যা বলল তা তো ভয়ংকর কথা।

"বলল, ওর বাবাকে কোথায় একটা নিয়ে গিয়েছিল। আদৌ ডাক্তার দেখিয়েছিল কি দেখিয়েছিল না কেউ জানিনা আমরা। ঘরে এমনি ফেলে রেখেছিল। কোন ওষুধ পত্র কিছুই এনে দেয়নি। আর তারপর তো এই ঘটনা। তুই যা শুনলি আমরাও তাই শুনলাম।"

দু-একদিনের মধ্যে বন্ধুটা আমার বাড়িতে কার্ড মারফত আমন্ত্রণ জানাতে এসেছে। কত কি বলে গেল। তার মধ্যে বলল ৬০০ লোক আমন্ত্রিত অতিথি। পাড়ার নেতারা বলেছে তোর বাবা মারা গেছে, একটু লোকজন ডেকে শ্রাদ্ধ শান্তি না করলে নয়। তাই যাদের যাদের ডাকা উচিত তাদেরই ডাকছি। এই ৬০০ মতো লোক আমন্ত্রণে আসবে।

জিজ্ঞেস করলাম তা 600 লোক খাওয়াতে তোর খরচ হয়ে যাবে কতখানি? ও বললো, ধরে রাখ মোটামুটি দু লাখ থেকে আড়াই লাখ টাকা। আমি তো আর অত পেরে উঠতে পারব না। তাই মোটামুটি শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানটা সেরে নেব।

দু লাখ থেকে আড়াই লাখের কথা শোনার পর আমি আমার নিজের রাগটা কন্ট্রোল করতে পারিনি। বন্ধুটার হাতে চিঠিটা ধরিয়ে বললাম, "তোর বাবার শ্রধ্যটা তুই খা। আমার খাওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই। যে মানুষটাকে এক-দু লাখ টাকা খরচ করে ট্রিটমেন্ট করালে আরো বেশ কিছু বছর বাঁচিয়ে রাখা যেত, সেই মানুষটাকে বাঁচানোর কোন তাগিদ তোর মধ্যে ছিল না। আর মানুষটা মরে যাওয়ার পর অমনি দেড় দু লাখ টাকা কোথা থেকে জোগাড় করে তাঁর শ্রাদ্ধ শান্তি করে লোক খাওয়াবি? এমন খাওয়া আমার হজম হয় না। ওনার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি। জীবিত অবস্থায় মানুষটাকে ওষুধ খাওয়াতে পারলি না আর মরার পর লোকের পেট ভরাতে টাকা যোগাড় হয়ে যায়? ছিঃ!"

বন্ধুটা বলে গেলো, "তোর ইচ্ছা যাবি। নাহলে যাবিনা।"

সেদিন থেকে আর আমার সাথে যোগাযোগ করে না। এখন মা কোথায় খাবে, সেই ভাগ চলছে।



Rate this content
Log in

More bengali story from সূর্য্যেন্দু গায়েন

Similar bengali story from Inspirational