STORYMIRROR

S D

Romance Fantasy Inspirational

4  

S D

Romance Fantasy Inspirational

কে আপন

কে আপন

5 mins
239

"বউমা, বাবুয়ার টিফিন তৈরি হল? রান্না হয়ে গেছে?"

" হ্যাঁ, মা, রান্না প্রায় শেষ। ওকে খেতে দিয়েই টিফিনটা ভরে দেব। "

"এক কাজ কর, তুমি টিফিন ভর, আমি বাবুয়াকে ভাত বেড়ে দিচ্ছি।"

" ওহ্ মা, তুমি নিশ্চিন্তে ঘরে গিয়ে বোস তো। আমি সব করে দিচ্ছি। " গলায় একটু উষ্মা নিয়েই কথাগুলো বলে ওঠে রোমিলা। বিয়ে হওয়া ইস্তক সে দেখে আসছে, তার শাশুড়ি ছেলেকে যেন কিছুতেই কোলছাড়া করতে চান না। তার শাশুড়ির সব ভালো, শুধু এই ছেলে ছেলে বাতিকটা যদি না থাকত


     মনোরমাও তিক্ত মন নিয়ে ঘরে চলে এলেন। তিনিও বুঝতে পারেন, এখন সময় হয়েছে ছেলেকে ছেড়ে দেবার, কিন্তু পারেন না। বাবুয়ার সাত বছর বয়সে বাবুয়ার বাবা মারা যাওয়ার পর থেকেই তো মা ছেলের সংসার। সারা জীবন ছেলের পড়াশোনা, খাওয়া দাওয়া সবকিছু নিজের হাতে সামলে নিজের চাকরিটাও করেছেন। মাঝে মাঝে বেড়াতে যাওয়া, মনের কথা আদানপ্রদান-সবই তো ঐ একমাত্র ছেলের সঙ্গেই। ছেলে নিজের পছন্দের মেয়েকে বিয়ের কথা যেদিন তাঁকে জানাল, তিনি তো খুশি মনেই সেদিন সম্মতি দেন। কিন্তু তারপরেই সব কেমন যেন একটু একটু করে বদলে গেল। যে ছেলের জগত ছিল মা, সে জগতে অংশ নিল বউমাও। তাই বলে মাকে বাবুয়া অবহেলা করছে, এমন অভিযোগ কক্ষনো মনোরমা করতে পারবেন না। ছেলে যথেষ্ট দায়িত্ববান। রোমিলাও খুবই হাসিখুশি। শাশুড়িকে যত্ন করে, ভালও বাসে। এ বাড়িতে প্রবেশ করেই সে শাশুড়িকে বলেছে, "মা, এত বছর অনেক কষ্ট করেছ, আর নয়। এখন থেকে সংসারের সব কাজ আমি করব। আর তুমি পায়ের উপর পা তুলে আরাম করবে।" 


       কিন্তু এটাই হয়েছে মনোরমার মনোকষ্টের কারণ। তাঁর মনে হচ্ছে, সংসারে তাঁর অধিকার কমে যাচ্ছে। নিজের সংসারে নিজেকেই আজ অতিথি মনে হয় তাঁর। তাঁর কুমনটা কখনও কখনও বলে ওঠে, এই মেয়েটাই যত নষ্টের গোড়া। ছেলের বিয়ে না হলেই ভালো হতো। মা ছেলে দুটিতে মিলে বেশ সারা জীবন কাটিয়ে দিতেন। সঙ্গে সঙ্গে আবার নিজেকে ধিক্কার জানান এমনতর ভাবনা মনে আনার জন্য। কিন্তু মনটা তিক্ত হয়েই থাকে। 

     সেদিন দুপুরে মনোরমার কাঁচা ঘুম ভাঙিয়ে ফোনটা বেজে উঠল তারস্বরে। ঘুম জড়ানো চোখে ফোনটা ধরলেন তিনি। কিন্তু ওপার থেকে কোনো সাড়া এল না। একটু পরে ফোনটা কেটে গেল। কয়েক সেকেন্ড পরেই আবার ফোনটা বেজে উঠল। অদ্ভুতভাবে এবারও মনোরমা ফোনটা ধরার পর ওপারের মানুষটি রইলেন নিরুত্তর। আবার কেটে গেল ফোনটা। এবার মনোরমা একটু অবাকই হলেন। একটু পরে আবার বেজে উঠল ফোনটা। মনোরমা গলায় যতটা সম্ভব গাম্ভীর্য এনে ফোনটা ধরে বললেন, "এভাবে জ্বালাতন করার মানে কি?" 

ওদিক থেকে সাড়া এল এবার, "মন....."

থমকে গেলেন মনোরমা। এ নামে একজনই তো ডাকত তাঁকে। কিন্তু সেসব তো বিগত যুগের কথা। অপর দিকের মানুষটি বলে উঠলেন, "মন, আমি সুনির্মল। চিনতে পারছ?"


মনোরমার হৃৎপিণ্ড কয়েক সেকেন্ডের জন্য যেন থমকে গেল। কয়েক মুহূর্ত কোনো কথাই বলতে পারলেন না তিনি। সেই সুনির্মল- কলেজ জীবনে যাকে ছাড়া জীবন মনে হত অসম্পূর্ণ। দুজনে দুজনকে কথাও দিয়েছিলেন, সারা জীবন পাশাপাশি থাকবেন। কিন্তু রাশভারি বাবার সামনে কিছুই বলতে না পেরে মনোরমা বাধ্য হন বাবার পছন্দ করা ছেলেকে বিয়ে করতে। আর চোখের জলে ভাসিয়ে দেন তাঁর ভালোবাসাকেও।


-"হ্যালো, মন, শুনতে পাচ্ছ?"

-"হ্যাঁ .....হ্যাঁ .....বল...."

-" কেমন আছ মন?"

-"চলে যাচ্ছে, তুমি?"


-"আমারও এই বৃদ্ধাবাসে ভালোই কেটে যাচ্ছে। একমাত্র মেয়ে তিতিরের বিয়ে হয়ে গেছে। সে আমেরিকাপ্রবাসী। "

      এভাবেই কথায় কথায় কেটে গেল সারা দুপুর। আজকাল জীবনটা বড় সুন্দর মনে হয় মনোরমার।রোজ দুপুরে অপেক্ষা করেন বিশেষ ফোনটির জন্য। সংসারটাও আর আগের মতো অতটা খারাপ লাগে না। দুটি একলা মানুষ তাদের পড়ন্ত বেলায় ফেলে আসা ভালোবাসাকে খুঁজে পেয়ে আনন্দে বিভোর হয়ে রয়েছে। একদিন সুনির্মল মনোরমাকে বলেন," মন, আর কটা দিনই বা আমরা বাঁচব! শেষ জীবনটা একসঙ্গে কি কাটাতে পারি না আমরা?" চমকে ওঠেন মনোরমা। মনের গোপন কুঠুরিতে লুকোনো ইচ্ছেটা ভাষায় প্রকাশিত হতে দেখে তিনি মরমে মরে যান। ছিঃ, ছিঃ .....এ যে অসম্ভব। এই বয়সে নতুন করে সংসার শুরু! সমাজ কি বলবে! ছেলেই বা কি ভাববে! আর বউমার প্রতিক্রিয়া তো তিনি ভয়ে কল্পনাই করতে পারছেন না। 


      এদিকে রোজই নির্দিষ্ট সময়ে শাশুড়ির ফোনালাপে রোমিলার মনে সন্দেহ জাগে। শাশুড়িকে একদিন খুব জোরাজুরিও করে বিষয়টি জানার জন্য। মনোরমা এড়িয়ে যান। দুজনের মধুর কাহিনীটি হয়তো এভাবেই অসমাপ্ত রয়ে যেত। কিন্তু রইল না তিতিরের সক্রিয়তায়।সুনির্মল তার শুধু বাবাই নয়, প্রিয় বন্ধুও। বাবার ভালো থাকার দায়িত্ব তাই তিতিরই নিজের কাঁধে তুলে নেয়। ফোন নাম্বার জোগাড় করে সে ফোন করে রোমিলাকে। তার কাছে সব বৃত্তান্ত জেনে উত্তেজিত ও উৎফুল্ল রোমিলা পুরো ব্যাপারটা অবগত করে বাবুয়াকে। কিন্তু বাবুয়া আঁতকে ওঠে," কি বলছ! এই বয়সে মায়ের বিয়ে দেখতে হবে আমাকে! লোকে কি বলবে! না না, আমি পারব না।" এখানেই শেষ নয়, বাবুয়া মায়ের কাছে গিয়ে বলে ফেলে, " সুনির্মলবাবু কে মা? বাবার জায়গায় তুমি ওঁকে বসাতে চাইছ? আমি ভাবতেই পারছি না!" মনোরমা ঘটনার আকস্মিকতায় বাকরহিত হয়ে যান। দু চোখে অঝোরে ঝরে জলের ধারা। রোমিলা ছুটে এসে শাশুড়িকে জড়িয়ে ধরে। তিরস্কার করে স্বামীকে," আজকালকার দিনের ছেলে হয়ে কি করে এমন সংকীর্ণ মনোভাব পোষণ কর তুমি? যে মানুষটা কোনো দিকে না তাকিয়ে সারা জীবন খালি তোমার প্রতি কর্তব্য করে গেল, তার মনটা বোঝার চেষ্টাও করলে না তুমি?" তারপর যা হয় সংসারে.....অশান্তি, চেঁচামেচি.....কিন্তু, রোমিলার এক কথা, "মাকে আর আমি একা থাকতে দেব না, আর কষ্ট পেতে দেব না। " আর মনোরমা? তিনি শুধু অবাক হয়ে দেখেই যান ঐ মেয়েটাকে, যে দিনে দিনে তাঁর দুচোখের বালি হয়ে উঠছিল! আজ মনে মনে নিজেকে ধিক্কার দিতে থাকেন। বাবুয়া- তাঁর ছেলে যার জন্য তিনি তাঁর সারা জীবন ব্যয় করলেন, সে আজ তাঁর মনের ভাবনা এতটুকু বুঝল না! আর ঐ পরের বাড়ির অনাত্মীয়া মেয়েটা আজ তাঁরই জন্য নিজের স্বামীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে! কেন? কেবল তাঁর ভালো থাকার জন্য! মানুষ চিনতে এত ভুল করে ফেললেন তিনি! মনে মনে অত্যন্ত লজ্জিতবোধ করলেন মনোরমা। 


    যাইহোক, অনেক অশান্তি, অনেক বাধা বিপত্তি পেরিয়ে আজ সুনির্মল ও মনোরমা সাত পাকে বাঁধা পড়তে চলেছেন। আর এর পুরো কৃতিত্ব যে রোমিলারই, তা কক্ষনো অস্বীকার করতে পারবে না কেউই। তিতির ও তার পরিবার, বাবুয়া, রোমিলা সবাই হাজির।রোমিলা জোর করে শাশুড়িকে টুকটুকে লাল বেনারসি, চন্দন, আলতায় সাজিয়েছে নিজের হাতে। পুরোহিতমশাই প্রশ্ন করলেন, " কন্যাদান কে করবে?" সবাই থমকে গেল। এগিয়ে এল বাবুয়া নয়, রোমিলা, " আমার মেয়ের বিয়ে, আমি ছাড়া আর কে কন্যাদান করবে!" মনোরমা চোখে জল নিয়ে ভাবতে থাকেন, কে আপন? নিজের পেটের ছেলে নাকি ঐ অনাত্মীয়া একদা শত্রু মেয়েটি?


Rate this content
Log in

More bengali story from S D

Similar bengali story from Romance