ISHANI CHAKRABORTY

Romance

0.8  

ISHANI CHAKRABORTY

Romance

হয়তো তোমার জন্য। ..

হয়তো তোমার জন্য। ..

4 mins
567


" আমি তখন নবম শ্রেণী, আমি তখন শাড়ি...আলাপ হলো, বেণীমাধব,..." . না..বেণীমাধন না - উজান। আলাপ হলো উজানের সাথে ছোড়দিভাই দের বাড়ি। উজানরা ছোড়দিভাই দের কিরকম জানি একটা আত্মীয় হতো। আগে থাকতো দিল্লী তে। তাই আগে দেখি নি। উজান এর ১০ ক্লাস এর পর ওরা তখন জামশেদপুর শিফট করেছে।

ছোড়দিভাই হলো আমার এক জ্যাঠতুতো দিদিভাই। ছোটবেলা থেকেই আমরা দুই বোন ওই জেঠুর বাড়ি যেতে খুব ভালোবাতাম। ছোড়দিভাই আর বান্টি দা ' র সাথে আমার ছিল তুমুলদোস্তি। ছাদে চড়ুইভাতি করা থেকে ভোর ভোর সুবর্ণরেখা নদীতে এক্সপেডিশন এ যাওয়া - এ সব যাবতীয় অকাজে আমরা ছিলাম "থ্রি মাস্কেটিয়ার্স" । উজান এলেন দারতানিয়ান হয়ে।

উজান আর বান্টি দা ছিল সমবয়েসী। আমার থেকে বছরখানেকের বড়ো। উজ্জ্বল চোখ, ঝক ঝোকে স্মার্ট উজান কে দেখলেই আমার মনে বেজায় খুশি - খুশি ভাব আসতো। তার ওপরআবার উজান দারুন তবলা বাজাতো আর গান ও গাইতো সুন্দর। এ হেনো "হিরো মেটেরিয়াল" এর প্রেমে না পড়াটা অন্যায় .

"অশ্বিনের মাঝামাঝি, উঠিল বাজনা বাজি...পূজার সময় এলো কাছে " শরৎ এলেই পেঁজা - তুলো মেঘের ফাঁকে ফাঁকে কুচি কুচি নীল আকাশ মনটা কেমন জানি মাতাল করে দেয় না? তো, সেবার সপ্তমীর সকালে ঘুম ঘুম চোখ, নড়বড়ে মন নিয়ে জানালার গ্রিল এর ফাক দিয়ে আকাশ দেখতে দেখতে মুগ্ধ হচ্ছি...

একটু আগেই মা "বাবু একটু চা বানাবি?" দাবি দিয়েছে...সেই জন্যই বোধ হয় আরো বেশি নিবিষ্ট মনে মেঘ দেখে চলেছি। ঠিক জানি, ৫-৭ মিনিট বাদে মা নিজেই ও সব বানিয়ে নেবে...হঠাৎ কলিং বেল। বারান্দার গ্রিল এর কাছে পৌঁছে দেখি ছোড়দিভাই, বান্টি দা আর উজান। উজানের চোখে সানগ্লাস, ঠোঁটে ভুবন ভোলানো হাসি...আর...আর আমি একটা রং ওঠা টি- শার্ট আর মলিনতরো, ন্যাতা হয়ে যাওয়া হারেম প্যান্ট পরে আছি ! কি অন্যায়...মা..মাগো...দুগ্গা মা..এই ছিল তোমার মনে ?

সি নেমাতে হিরোইন দের কি সুন্দর এন্ট্রি হয়...এই এত্ত বড়ো আই ল্যাশ লাগানো, কষিয়ে কাজল মাখা চোখ দু-চার বার পিট্ পিট্ করে মোহময়ী দৃষ্টি তে কি অনায়াসে হিরো র মন জয় করে নেয়..আর এখানে দেখো !..সদ্য ঘুম ভাঙা খুদে চোখ !

গ্রিল খোলার আগেই ছোড়দিভাই কে চুপি চুপি বলতে গেছিলাম "একটু ঘুরে টুরে এস না"......উজান ঠোঁট দুটো অল্প ফাঁক করে, কুন্দ ফুলের ন্যায় দাঁত সামান্য উদ্ভাসিত করে বললো "এক গ্লাস জল খাওয়াবে?"

অবশ্যই। নিশ্চয়ই। এক গ্লাস কেন...যায় বজরং বলী হাঁক পেরে আমি রান্নাঘর থেকে মাটির জালা টাও উঠিয়ে নিয়ে আসতে পারি তখন..আলমারির পাশ কাটিয়ে যেতে গিয়ে আড়চোখে মুখটা একটু দেখলাম। এহঃ..বেশি ঘুমিয়ে চোখ গুলো কেমন জানি ছোট ছোট হয়ে গেছে..চুলগুলো খাড়া খাড়া। আর নাক তো...থাক সে দুঃখের কথা। নাকের মতো একটা ইম্পরট্যান্টব্যাপার যা কিনা এক্কেরে চাঁদ বদনের মধ্যিখানে বসে থাকে সেই বিষয়ে ঠাকুর যে কি করে এমন অবিমৃষ্যকারিতা র পরিচয় দেন বুঝি না।

তা, জল এর সাথে মা কটা নাড়ু ও দিয়ে দিয়েছিলো। এক হাতে প্লেট, অন্য হাতে গ্লাস নিয়ে উজান এর দিকে চোখ পড়তেই আরো খানিকটা ভেবলে গেলাম। ব্যাস...আর যায় কোথায়...গ্লাসথেকে খানিকটা জল কেমন জানি লাফ দিয়ে পড়লো গিয়ে ওর কোলে। জামা - কাপড় সব ভুল ভাল জায়গা এ ভিজে গেলো। বান্টি দা অভদ্রের মতো খিক , খিক, খ্যা খ্যা করে হাসতেলাগলো, ছোড়দি হতাশ হয়ে "যাহঃ " বলে উঠলো , মা এই সব গোলমাল শুনে তড়িঘড়ি এসে "তোর দ্বারা কিস্সু হবে না " নিদান দিলো...আর উজান উদাস নয়নে কিন্তু অতি সাবধানে দুহাত দিয়ে নাড়ুর প্লেট টা আমার হাত থেকে নিয়ে দুটো নাড়ু মুখে চালান করলো।

সে রাম ও নেই...সে অযোধ্যা ও নেই....তাই ধরণী ও দ্বিধা হলো না।

আমি অত্যন্ত গম্ভীর ভাবে "আমি বরং একটু স্নান করে আসি " বলে অকুস্থল থেকে পলায়নোদ্যত হলাম। যেতে যেতে শুনলাম উজান বলছে " একটু কেন , পুরোটাই করে এস " . ইস...আজ যে কার মুখ দেখে উঠেছিলাম...নির্ঘাত বোনের। সে ব্যাটাও মৌকে পে চৌকা মেরে " দিদিকে তো সবাই ঢ্যাঁড়স বলে" - বলে সেই যে সে বার চা বানাতে গিয়ে চা পাতার বদলে সর্ষে দিয়ে দিয়েছিলাম...আর তারপর অনেক ফোটানোর পরেও চা এর রং কেন আসছে না ভাবছিলাম...সেই গল্প টা নিজের পাদটীকা সহ বলতে শুরু করলো ! অসহ্য !! ঘর শত্রু বিভীষণই ছিল নির্ঘাত পূর্বজন্মে !

নিতান্ত লজ্জি্ত হয়ে, অধোবদন এ, পুজোর জামা টামা পরে সবুজ সংঘের দিকে রওনা দিলাম। সবুজ সংঘ হলো একটা ক্লাব। এই চত্বরের সব বাঙালি পরিবার ই পুজোর দিনগুলোতেসবুজ সংঘে একবার করে ঢুঁ মারে। টিনএজার রা সকালের দিকে সাধারণত "একা একা " যায়, চাট্টি প্রেম টেম করে, আর বিকেলের দিকে সবাই মিলে - "ফ্যামিলি আউটিং " হয়।ছোড়দিভাই তখন সদ্য কলেজ এ ভর্তি হয়েছে। সে সব ছিল "পেন ফ্রেন্ড " , সুগন্ধি লেটার প্যাড ইত্যাদির যুগ। সেদিন ছোড়দিভাই এর এক পেন ফ্রেন্ড এর সাথে প্রথম বার সামনা - সামনিদেখা হওয়ার কথা। ছোড়দিভাই এর সাথে সাথে আমরাও খুব উত্তেজিত। প্রথম বার সাক্ষাৎ হতে চলেছে...অন্তত একটা করে এগ রোল তো প্রত্যেকে পাবোই। তারপর বান্টি দা কে বলাইআছে। ও নাগরদোলা চড়াবে।

আমি আর বোন বসেছি বান্টি দা র সাথে স্কুটার এ। আর উজান এর বাইকে বসেছে ছোড়দিভাই। বাইক ওয়ালা দের দেখতে আমার কি যে ভালো লাগে ! বেশ একটু হাওয়া লেগে শার্ট টাফুলে ফুলে যায়...কি জানি বলে...হ্যান.."ম্যাচো" ....ছোড়দিভাই এর থেকেই কদিন আগে শোনা শব্দ টা।

দুগ্গা ঠাকুর নমো করে, নাগরদোলা চড়ে, মেলাতে এগ রোল আর আইস ক্রিম খেয়ে বাড়ি ফেরার আগে উজান আমাদের মহিলাদের একটা করে পুঁথির মালা কিনে দিয়েছিলো। বাড়ি এসে সেটা সযত্নে কোথায় জানি তুলে রেখেছিলাম। খুঁজেই পাই নি আর কোনো দিনো।


জীবনের পথে চলতে চলতে উজান ও হারিয়ে গেলো একদিন। তবে মনে ভালোবাসার রেশ টুকু রয়ে গেছে এখনো। 


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance