Nilanjana Sen

Drama Romance Tragedy

4.7  

Nilanjana Sen

Drama Romance Tragedy

এভাবেও মিল হয় ...

এভাবেও মিল হয় ...

2 mins
342


'কি প্রথমবার নাকি?হয় হয় ওরকম,আজ রাতে আমার ডবল সেঞ্চুরী হবে।জলদি এসো তো গুরু'-বলতে বলতেই ওর প্যান্টের বেল্টের দিকে হাত বাড়াতেই সে কাঁপা গলায় বলে উঠল,'একটু গল্প করবেন আমার সাথে, আমি বড্ড একা'। 

গম্ভীরভাবে বললাম 'আ মরণ! হলো টা কি?গল্প করতে আমার কাছে আসা কেন অ্যাঁ, ঘরে লোক নাই?'

-'না,নপুংসকরা যে অচ্ছুৎ।'


 জানি না পুরুষত্বহীন ওই পুরুষটার গলায় কি ছিল,আমার মত বাজারীকেও থামিও দিলো সে। ঘরের কুঁজোটা থেকে এক গেলাস জল এনে ওকে দিতেই এক নিঃশ্বাসে সবটা শেষ করে গল্প বলতে বসলেন,তাঁর জীবনবৃত্তান্ত। জানতে পারলাম মা-বাপ হারা এই মানুষটা শহরের বেশ নামজাদা অফিসের চাকুরে।পুরুষত্বহীনতার জন্য নাকি প্রেমিকাও ছেড়ে গেছে,যেন প্রেমটা যৌনাঙ্গের সাথে ছিল।তারপর এক সহৃদয় বান্ধব জোর করে এই পতিতালয়ে তাকে এনেছেন,বন্ধুটির মতে বেশ্যারা নাকি এসব সমস্যার সমাধান করতে পারে। একটা অদ্ভুত প্রশান্তি ছিল মানুষটার চোখে-মুখে, প্রেমে পড়তে ইচ্ছে করলো...সঙ্গে সঙ্গে ভেতর থেকে কে বলে উঠলো,'লজ্জাও করে না, শয়ে শয়ে লোক নাচিয়ে শেষে সতী সেজে প্রেম করবি?' আটকে ফেললাম নিজেকে। সে বললো,'তোমার গল্প বললে না তো আমায়?কেন করো এসব?কিসের চাহিদা যে এই পথে নামতে হয়েছে?'


হাসলাম...বললাম 'শুনবে?শোনো তবে....প্রেসিডেন্সিতে ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ পেলাম, ফার্স্ট ইয়ার।নিম্ন-মধ্যবিত্ত ঘরের মেধাবী মেয়ে, তাই বাবা বরাবরই চেয়েছিল মেয়ে সংসারের দুঃখ ঘোচাবে। জানো,না চাইতেই সবটা দিয়ে দিতো....অফিস থেকে ফেরার পথে আমায় নিয়ে ফিরতো,ট্রেনে চেপে। খুব সুন্দর পড়াশোনা করতাম আমি,প্রফেসর'রা বেশ খুশী ছিলেন আমায় নিয়ে, কলেজের পত্রিকায় ইংরেজিতে একটা কবিতাও লিখেছিলাম। তখন শীতকাল,বাবার সাথে বাড়ি ফিরছি....পাড়ার আগের মোড়টায় হঠাৎ আমাদের ঘিরে কিছু লোক দাঁড়ালো,ওরা পুরুষ মানুষ,মেয়ে দেখলেই বাঁড়া সোজা হয়ে যায় ওদের। আমার কোমর ধরে টান মারলে বাবা বাধা দিতে গেল।চোখের সামনে নিজের বাপটাকে মরতে দেখেছিলাম।আমার বাবা,আমার ইজ্জত,আমার আব্রু সব একএক করে শেষ করে দিল ওরা। কাগজে তো বেড়িয়েছিল,পড়োনি?পড়েছ হয়তো,রোজই পড়ো,মনে থাকেনা অনেক ঘটনার মধ্যে। দাদা-বৌদি ঘরে নেয়নি, বললো একজন গণধর্ষিতা ঘরে থাকলে এক বছরের ভাইঝিটার পরে বিয়ে হবে না। তিনদিন ফুটপাতের ধারে পড়েছিলাম,যারা আমায় নিয়ে আন্দোলন করেছিল,তারা এসে খোঁজও নেয়নি আমার। চতুর্থদিন আমাদের বেশ্যাখানার রুম্পা কাকিমা আমায় এখানে এনেছিল,তখন থেকে এখানেই আছি,ছেলে চড়াচ্ছি।খুব ইচ্ছে ছিল চাকরি পেয়ে বিয়ে করবো একটা ,পেটে দু'মাসের বাচ্চাটাকে নিয়ে বরের কাঁধে হেলান দিয়ে ওর হাতটা ধরে ঘুমাবো....খুব ইচ্ছে ছিল।' গড়গড় করে বলে গেলাম,এমনভাবে বললাম যেন সে আমার কতদিনের চেনা। বেশ কিছুক্ষন চুপ করে থাকার পর সে আমার হাতটা ধরলো, 'একটা বাচ্চা দত্তক নেবে?তুমি-আমি তাকে যত্ন করে বড় করবো,প্রেসিডেন্সিতে পড়াবো ওকে, তোমার মত।যাবে আমার সাথে?'

অবাক হয়ে মুখের দিকে তাকিয়ে বললাম,'পাগল হলে? আমি যে বেশ্যা,আর তুমি ভদ্রলোক।' উত্তর এলো 'প্রেমে পড়েছি ওই ইংরেজি কবিতা লেখা মেয়েটার।' আমি হাত ধরলাম, উঠে দাঁড়াতেই সে থমকে গেল,বললো,'আমি যে নপুংসক!' 

হেসে ফের হাতটা ধরে বললাম,'মেরুদন্ড থাকলে আমি নপুংসকের সাথেও শুতে রাজি।'



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama