চিরোকুমারী
চিরোকুমারী
[[ চিরোকুমারী ]]
{প্রথমাংশ👇}
একদিন বসে ফেসবুক চালাচ্ছিলাম। হঠাত দেখলাম ফেসবুকে আমাকে একজন রিকুয়েষ্ট পাঠালো। আইডির নাম ছেলেদের নামে। তবে সেটা বিষয় না আমি একসেপ্ট করলাম। তার কিছুদিন পর ঐ আইডি থেকে আমার ফেসবুকে নক দিলো আমিও রিপ্লাই দিলাম। আমি আবার আইডিটা ঘুরে আসলাম দেখি চেনা কেউ কি না। তবে আইডি তে তেমন কিছু পেলাম না। কিছু ফটো স্ক্রোল করার পরে একটা মেয়ের ছবি দেখলাম। কিছুটা বুঝলাম আইডি টা একটা মেয়েই চালাই। তারপর ম্যাসেঞ্জারের চ্যাটের মাধ্যমে কথা বলতে বলতে বুঝলাম সে মেয়ে। সাধারনভাবে টুকটাক কথা হতো আবার ৮-১০ দিন কোনো কথা হতো না এভাবেই চলতেছিলো। মেয়েটার নাম অমীরা। আমি কিছু জিজ্ঞাসা করলে সে সুন্দরভাবে উত্তর দিতো। তবে মেয়েটার কথা বলার ধরন দেখে আমার আর বুঝতে বাকি ছিলো না যে, সে আমার সাথে কথা বলে ভালোই কম্প্রোটোফিল করে। সে আমার অনেক প্রশংসাও করছিলো। তাছাড়াও কথা বলার মাঝে অনেক হাসি, রাগ ও অভিমান ও ছিলো বটে। সবমিলিয়ে মোটামুটি ভালোই কথা হতো। একদিন তার সাথে একটু ঝামেলা হয় আমি ইচ্ছা করে কয়দিন কথা বলা বন্ধ করে দিই। পরে আবার মেয়েটি নক দিছিলো আমিও রিপ্লাই দিছিলাম এবং সেদিন সেই বিষয় নিয়ে আলোচনা করে দেখলাম সেই দিন দোষ টা আমার ছিলো মানে আমি ভুল বুঝেছিলাম আর কি। যাই হোক সবকিছুই ঠিকঠাক হয়ে যায়। এভাবে কয় দিন কেটে যায়। একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে অনলাইন হয়ে দেখি মেয়েটা আমাকে প্রপোজ করছে,,, সেই সাথে আরো বলছে,, সে আমার সাথে সারাজীবন থাকতে চায়, সুখ দুঃখে আমার পাশে থেকে সারাজীবন একসাথে কাটাতে চাই। সেই সাথে তার প্রস্তাব যেনো আমি মেনে নিই তারও অনুরোধ করে। আমি এসব দেখে যে কি বলবো তাকে বা আমার কি করা উচিত কিছুই বুঝতাছিলাম না। আমি তার কোনো রিপ্লে দেই নি। পরে সে লাইনে আসলে আমার মতামত জানতে চাই। আমি বললাম একটু কলে আসতে। পরে বললো তার ফোনে এমবি নেই। অতঃপর আমি তার কাছ থেকে নাম্বার নিয়ে তাকে কল করলাম।
আমি:- এবার বলো কি বলছো?
সে:- সবই তো বলছি আর কি বলবো,,এবার আপনি বলেন।
আমি:- আমি বিড়ি-সিগারেট-গাজা সব খাই, আমি বিভিন্ন খারাপ কাজের সাথে জড়িত, অসত পথে চলি..
সে:- হয়েছে থামেন। আপনি যতই খারাপ হোন তারপরেও আমি আপনার সাথে থাকতে রাজি। পরবর্তীতে খারাপ থেকে ভালো পথে কিভাবে আনতে হয় আমি দেখে নিবো।
আমি:- আচ্ছা। আমি কি বলি শোনো। আমার কথা বলার মধ্যে কোনো কথা বলবে না।
সে:- হুমম বলেন।
আমি:- সত্যি কথা বলতে আমরা খুব গরীব, আমাদের ভালো বাড়ি নেই, জমিজায়গা নেই আরো বরং ঋণদিনাই জড়িত। সবমিলিয়ে আমাদের অবস্থা খুব একটা ভালো না। আর কোনো মা-বাবা চাই না যে তার মেয়ে কে এমন ঘরে বিয়ে দিই। আর তাছাড়াও এমন পরিস্থিতে আমি মনে করি আমার রিলেশনে যাওয়া অনুচিত। কেননা সেই পরিবেশ, সেই মন মানসিকতা, সেই পরিস্থিতি কোনোটাই আমার নেই। সুতরাং তুমি আমাকে ভালোবাসতে এসো না। এটা কখনো সম্ভব না। আশা করি আমি যা বলেছি তুমি সব বুঝতে পেরেছো। আর হ্যা, আর যদি এসব নিয়ে কথা বলো তাহলে আমি কিন্তু ব্লক করে দিবো আর তুমি এখন ব্লক করে দিলেও কোনো অসুবিধা নেই।
সে:- হুমম সব বুঝতে পারছি। আচ্ছা ঠিক আছে বাই।
এই বলে সে কল টা কেটে দিলো। আমি ভাবলাম হয়তো সব বুঝতে পারছে। তারপরে প্রাই ৭-৮ দিন সে অনলাইনে আসি নি।
একদিন আমি আমাদের বাজারে বসে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলাম। তখন একজন আমাকে দূর থেকে ডাক দিলো। লোকটির বয়স আনুমানিক ৩৫-৪০ বছর হবে। সে ডেকে বললো তোমার নাম কি সাগর? আমি বললাম হ্যা, কেনো কি হয়ছে কোনো সমস্যা না কি আর আপনিই বা কে? সে বললো সব বলবো আগে তোমাদের বাড়ি নিয়ে চলো। সেখানে গিয়ে সবকিছু খুলে বলবো। আমি খুব বেশি না ভেবে তাকে আমাদের বাড়ি নিয়ে আসলাম। সে এসে আমার মা, বাবা ও পরিবারের সবার সাথে কুশল বিনিময় করলো। তাকে চেয়ারে বসতে দিলাম। এমন সময় আমার ফোনে কল আসলো। নাম্বারটা যদিও চেনা চেনা লাগছিলো কিন্তু কল ধরার পরে তার কন্ঠ শুনে তাকে আর চিনতে বাকি রইলো না। হ্যা সেই মেয়েটিই কল দিছিলো। সে বললো আমার সাথে তার না কি কিছু কথা আছে। তখন আমি ফোনটি নিয়ে রাস্তার দিকে গেলাম। যদিও আমার বাড়ির পাশেই রাস্তা সেখানে নিরিবিলি সময় কাটানো মোটামুটি উপযুক্ত জায়গা বললেও ভূল হয় না।
আমি:- আচ্ছা,, বলো। কেনো কল দিছো?
সে:- হুমম বলবো। তবে একটা কথা,,আজকে আমি যা বলবো আপনি শুধু শুনবেন কোনো কথা বলবেন না।
আমি:- আচ্ছা ঠিক আছে বলো। কি বলবা শুনি।
সে:- আপনি যেদিন আমাকে রিজেক্ট করছিলেন, সেই দিন ফোন কেটে দিয়ে আমি অনেক কান্না করছিলাম।আমার ঐদিন প্রচন্ড খারাপ লাগছিলো। আমার মনে হতে লাগলো পুরো পৃথিবী টা যেনো অন্ধকার, কেউ আমার ভালোবাসে না। আমি সত্যিই আপনাকে মন থেকে এককথায় নিজের থেকেও বেশি ভালোবেসে ফেলেছি। ঐদিন থেকে আমি ঠিক মতো খায় না, ঘুমায় না। সবকিছু যেনো এলোমেলো হয়ে গেছে। কোনো কিছুই করতে ভালো লাগে না। একটা অসহ্য যন্ত্রনা, একটা অস্বস্তিকর জীবন যাপনের সাথে দিন কাটছিলো। আমি আর এসব সহ্য করতে পারছিলাম না। এমন কি একসাথে অনেক ঘুমের ঔষধও খেয়েছিলাম। আমার জীবনে বেচে থাকার কোনো ইচ্ছা ছিলো না। এসব দেখে আমার মা বুঝতে পেরেছিলো। আর আমি আমার মাকে সব খুলে বলছিলাম। তখন মা আমাকে বললো, তুই একটা মাত্র মেয়ে। তোর সুখের জন্য যতোটুকু সম্ভব সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। তুই এখন মন খারাপ করিস না। দেখছি কি করা যায়। তারপর মা হয়তো কথা গুলো সব আমার বাবাকে বলছিলো। আর বাবা এই বিষয়ে কথা বলার জন্য আপনাদের ওখানে গেছে। তবে..
আমি:- আচ্ছা থামো এবার। এখন রাখো। পরে কথা বলছি।
এই বলে আমি কল টা কেটে দিলাম। তখন আমার শরীরের মধ্যে যেনো কেমন একটা হতে লাগলো।আমার মুখ দিয়ে কোনো কথা বেরোচ্ছিলো না। মেয়েটার কথাগুলো শুনে অনেক খারাপ লাগছিলো আবার অনেক অবাক ও হয়ছিলাম। তার আবেগীয় কথা গুলো শুনতে শুনতে যেনো আমার চোখে জল এসে গেছিলে। আমি কখনও ভাবতে পারি নি যে,,আমাকে কেউ এমন ভাবে ভালোবাসবে। যায়হোক ধীরে ধীরে বাড়ির দিকে গেলাম। সেখানে দেখি অনেকেই আমার দিকে তাকাচ্ছে। যদিও ঐ লোকটি কে,,, আমার আর চিনতে বাকি নেই। আমার কেমন জানি অনেক ভয় লাগছিলো। পরে কোনোরকম বাহানা দিয়ে আমি বাড়ি থেকে চলে যায়। তারপর ওরা কি কথা বলছিলো জানি না। একটু রাত হলে বাড়িতে আসি। আসা মাত্রই মা ডাক দিলো, আর বললো কোথায় গেছিলি? কথার ভাব শুনে বুঝলাম একটু তো রেগেই আছে। আমি বললাম একটু দরকারে আমার এক বন্ধূর বাড়ি গেছিলাম। তারপর
মা :- অমীরা নামের মেয়ে কে চিনিস তুই।
আমি :- হুমম চিনি,,আগে এমনি কথা হতো। কেনো কি হয়ছে?
মা :- কি হয়ছে জানো না তুমি। ঐ মেয়ের বাবা ছিলো ঐটা,, তোকে দেখতে আসছে,, তোর সাথে ঐ মেয়ের বিয়ে দিবে তাই,,ঐ মেয়ে নাকি তোকে খুব ভালোবাসে।
আমি :- কই,, আমি তো জানি না,,।
এই কথা বলে ওখান থেকে চলে আসি,,। মনে মনে যেটা ভাবছিলাম সেটাই সত্যি হলো। বাড়িতে তো ঐসব নিয়ে আলোচনা লেগেই আছে। কিন্তু আমি কি করবো বুঝতাছিলাম না। এদিকে তো অমীরা শুধু ম্যাসেজ দিতেই আছে। আর ও এমন ভাবে কথা বলতো যেনো আমি ওর বর আর ও আমার বউ।
তার ছোট ছোট কেয়ার, আবেগ মাখানো আবদার, তার মিষ্টি মিষ্টি কথা, তার শাষন, আমাকে নিয়ে তার ভাবনা সর্বোপরি তার সবকিছুতেই যেনো আমি আর তাকে ভালো না বেসে থাকতে পারছিলাম না। কেমন জানি নিজের অজান্তেই তার প্রতি আমার গভীর মায়া চলে আসে একটা অন্যরকম টান চলে আসে। আর কতদিন? পরে আমিও তাকে ভালোবাসতে শুরু করলাম। দুজন দুজনকে ভালোবাসলে, এক অপরের কেয়ার করলে, সকল রাগ, অভিমান, ঝগড়া সবকিছুর মধ্যে দিয়ে সবশেষে সেই আগের মতো ভালোবাসাটাই যদি থেকে যায় তাহলে ভালোবাসার মধ্যে যে অমরত্বতা শান্তির পরশ মিলে,,সেটা বুঝতে পারছিলাম।
এভাবে চলতে লাগছিলো। আমাদের বাড়ি থেকে বেশ ৮-৯ কিলো দূরে একটা গ্রামে ওদের আত্মীয় ছিলো। সেখানে বড়পূজাতে ও আসতো। এই বছর বায়না ধরছিলো এবার এসে আমার সাথে দেখা করবে। আমিও না না বললেও পরে অবশ্য রাজি হয়েছিলাম। দেখা করার ইচ্ছা তো আমারও।
আর হ্যা আমি এদিকে সবে ইন্টার পরীক্ষা দিয়েছি। কোনো একটা কাজ খুজতেছি আর অনার্স এ পড়ার চিন্তা করছি। পড়াশোনা শেষ করার আমার খুব ইচ্ছা,, আমার পরিবারের ইচ্ছা কিন্তু পরিবার থেকে আর্থিক ভাবে সাপোর্ট করার পরিস্থিতি ছিলো না। ভগবানের কৃপায় নিজের খরচে ইন্টার কমপ্লিট করছি। এখন জানি না কী আছে কপালে।
এদিকে বড়পূজাও চলে আসলো,, আবার অমীরা সাথে দেখা করতে হবে,, প্রথম দেখা হবে,,, কি করবো,, কি হবে,, কিছুই বুঝতাছিলাম না। এভাবে সদ্যসময় ও চলে আসলো। এবার দেখা করতে যেতে হবে। অবশ্যই আমরা আগে থেকে কথা বলে নিছিলাম কোথায় দেখা করবো কোন সময় দেখা করবো সেই বিষয়ে। সেইমতো গেলাম,, আর দেখাও করলাম,,কিন্তু ও আমাকে প্রথম দেখে এতো লজ্জা পাচ্ছিলো সেটা বলার বাইরে। আমি শুধু ওর দিকে তাকিয়ে হাসছিলাম। পরে আমরা একসাথে কিছুটা সময় ঘুরাঘুরি করলাম অনেক গল্প করলাম। সবমিলিয়ে খুব আনন্দেই সময় টা কাটছিলো। তারপরে অমীরা হুট করে আমার হাত ধরেএ ফাঁকা জায়গার দিকে নিয়ে আসলো। সেদিকে লোকজনের সংখ্যা অনেক কম, একেবারে নেই বললেও চলে। ও আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো আর অঝোরে কান্না করতে লাগলো। আমি ওর চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে বললাম কি হয়ছে,, কাদছো কেনো,,,আমি তো আছি। কান্নার কারন কি?
অমীরা :- আমার খুব কষ্ট হয়। তোমাকে ছাড়া থাকতে।চলোনা আমরা বিয়ে করে ফেলি। আমি আর সহ্য করতে পারছি না। প্লীজ। (এই বলে আবার কান্না করতে লাগলো)
আমি :- আচ্ছা এই ব্যাপার। ঠিক আছে খুব শিঘ্রই আমরা বিয়ে করবো। কিছুদিনের মধ্যেই।
অমীরা :- সত্যি তো। যদি আমি তোমাকে না পাই তাহলে কখনোই কাউকো বিয়ে করতে পারবো না।আমার শুধু তোমাকেই প্রয়োজন।
আমি:- ওওও আচ্ছা,,তাহলে আমি যদি কোনো কারনে মরে যায় তাহলে,,তুমি চিরোকুমারী থাকবা না কি,, (এটা বলতে না বলতেই শক্ত করে আমার মুখটা চেপে ধরলো) আর বললো
অমীরা :- আপনাকে আমি মেরে ফেলবো,,আর এমন কথা বললে। আমি হয় আপনারই হবো,, নাহলে চিরোকুমারই থাকবো। আর এমন অলক্ষুণে কথা কখনো বলবেন না, বলে দিলাম।
আমি :- আচ্ছা ঠিক আছে আর বলবো না। আমি তোমাকেই বিয়ে করবো। আর তুমিই আবার বউ হবে।
অমীরা :- হুমম,, আচ্ছা ঠিক আছে।
তারপরে ও একটু মুচকি হাসলো। আমরা আবার গল্প করতে করতে আর একটু ঘুরাঘুরি করলাম। এভাবে দুজনে একটি সুন্দর মুহূর্ত কাটালাম।
{দ্বিতীয়াংশ}
এভাবেই আমাদের ভালোবাসা যেন সময়ের চেয়েও শক্তিশালী হয়ে উঠছিল। প্রতিদিন নতুন স্বপ্ন, নতুন গল্প। আমি বারবার বলতাম "আমাদের সংসার হবে ছোট্ট, কিন্তু সুখের। একদিন সকালে ঘুম ভাঙবে তোমার ডাকে, দুপুরে তুমি রাগ করে দূরে চলে যাবে, আর রাতে আমি তোমার অভিমান ভাঙাবো!"
অমীরা মিষ্টি হেসে বলতো—"তুমি যদি আমায় কষ্ট দাও, তবে কিন্তু তোমার সাথে একদিনও থাকবো না!" এভাবে আমাদের মধ্যে দুষ্টমিষ্টি প্রেমের খুনসুটি হতো। সত্যি কথা বলতে আমি অমীরা কে অতিরিক্ত ভালোবেসে ফেলেছিলাম আর ও আমাকেও প্রচুর ভালোবাসতো।
আমি একদিন অমীরার হাত ধরে বললাম-"তুমি ছাড়া আমি বাঁচবো না। কথা দাও, আমাকেও ছেড়ে যাবে না!"আর আমরা প্রতিজ্ঞা করেছিলাম আমরা কখনো একে অপরকে ছেড়ে যাবো না…।
ডাইরীতে এই পর্যন্ত লেখা ছিলো। সাগরের বন্ধূ আমি। এতক্ষণ যতটুকু গল্প পড়ছিলেন সবই সাগর নিজে লিখছে। আমি ওদের পুরো বিষয়টা জানতাম। যাই হোক এরপর থেকে যেটা হয়েছিলো সেটা আমিই লিখছি। হয়তো পুরোপুরি সঠিক টা বলা সম্ভব না। কিন্তু কিছু তথ্য জানতে পেরেছি আর আমার ধারনা থেকে যতটুকু বলা সম্ভব হয় বলছি।আর হ্যা গল্পের নাম "চিরোকুমারী" এটা আমিই রেখেছি। কেনো রেখেছি সেটা পুরো গল্পটা পড়লেই বুঝতে পারবেন।
একদিন বিকেলে সাগর শহরে গিয়েছিল কাজের সন্ধানে। যাওয়ার আগে অমীরাকে বলেছিল—"তুমি অপেক্ষা করো, আমি আজ একটা ভালো খবর নিয়ে আসবো!"অমীরা খুশি হয়ে বলেছিল—"আসার সময় আমার জন্য কাঁচের চুড়ি আনবে, ঠিক আছে?"
সাগর হেসে বলেছিল—"চুড়ি নয়, তোমার জন্য শাঁখা আনবো, আমার নাম লেখা শাঁখা! অমীরা লজ্জায় মাথা নিচু করেছিল।
কিন্তু বিধাতা যেন অন্য কিছু লিখে রেখেছিলেন…
সাগর রাস্তা পার হওয়ার সময় হঠাৎ একটা ট্রাক খুব জোরে তার দিকে ছুটে এসছিলো। ব্রেকের কর্কশ শব্দ, চারপাশের চিৎকার—সবকিছু যেন এক মুহূর্তের জন্য থমকে গেছিলো। সাগর শুধু একটা কথাই ভাবছিলো —"অমীরা অপেক্ষা করছে..."
ধাক্কাটা এতটাই তীব্র ছিল যে সাগরের শরীর ছিটকে গিয়ে রাস্তায় পড়ে রইলো। চারপাশে রক্ত, আর তার কানে হয়তো গেছিলো অস্পষ্ট কিছু আওয়াজ—
"এই ছেলে, চোখ খুলো! তুমি কি শুনতে পাচ্ছো?"
সাগর ঠোঁট নড়াতে চাইলেও, পারি নি। সে শেষবারের মতো মনে মনে বলেছিলো—"অমীরা..."
তারপর সব অন্ধকার হয়ে গেছিলো..
সন্ধ্যায় অমীরা বারবার সাগরকে ফোন দিচ্ছিল। কিন্তু ফোন কেটে যাচ্ছিল। একসময় ফোন বন্ধ পেয়ে তার বুকের ভেতর কেমন জানি শূন্যতা অনুভব হলো।
হঠাৎ ফোন বাজলো। কিন্তু স্ক্রিনে সাগরের নাম নয়, অন্য এক অপরিচিত নাম্বার।কল রিসিভ করতেই একটা ভারী গলা বললো—"আপনি কি সাগরকে চেনেন?"
অমীরা স্তব্ধ হয়ে গেল। গলাটা যেন খুব দূর থেকে আসছে।
"হ্যাঁ… চিনি… কেন?"
প্রান্তের গলা থেমে গেল কিছুক্ষণ। তারপর বললো -
"দুঃখিত, উনার অবস্থা খুব খারাপ… উনার এক্সিডেন্ট হয়েছে…"
ভালোবাসার পৃথিবী অন্ধকারে আছন্ন হয়ে গেল।
সে ছুটে গেল হাসপাতালে। সেখানে গিয়ে তার কানে ভেসে আসে কান্নার চিৎকারের আওয়াজ। হাসপাতালের দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা এক নার্স অমীরা কে বললো—
"আমরা দুঃখিত, উনি আর নেই..."
অমীরা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো। কিছুই শুনতে পাচ্ছিল না, কানের কাছে যেন কেবল বাতাসের গুঞ্জন। সে দৌড়ে গেল হাসপাতালের ভেতরে, সাদা চাদর ঢাকা শরীরটার দিকে।
"সাগর?"
তার কাঁপা কাঁপা হাতে চাদরটা সরিয়ে দেখলো—সাগরের মুখ… ঠাণ্ডা, নিস্তব্ধ…
সে চিৎকার করে উঠলো—
"মিথ্যে! মিথ্যে! তুমি আমাকে ছেড়ে যেতে পারো না! সাগর, চোখ খোলো!"
কেউ একজন তাকে ধরে রাখতে চাইল, কিন্তু সে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে সাগরের বুকে মাথা রেখে কান্না শুরু করলো।
সাদা চাদরের নিচে পড়ে ছিল সাগর… চিরনিদ্রায়…!
পরে অমীরা ধীরে ধীরে সাগরের হাতটা ধরে বললো—
"তুমি বলেছিলে, আমাকে ছেড়ে যাবে না… তুমি প্রতিশ্রুতি ভেঙেছো, সাগর…"
তারপর চুপচাপ সাগরের ঠোঁটের উপর নিজের কপাল ঠেকিয়ে বললো—
"তুমি চলে গেছো, কিন্তু আমি কোথাও যাবো না… আমি তোমারই থাকবো… সারাজীবন!"
তারপর ধপ করে মাটিতে পড়ে গেল।
সাগরের মৃত্যুর পর দিন, মাস, বছর কেটে গেল। কিন্তু অমীরা বদলালো না।
গ্রামের মানুষ বলতো, "এখনো কি তুমি সাগরকে ভালোবাসো?"
অমীরা হেসে বলতো, "ভালোবাসার কি মৃত্যু হয়?"
সে প্রতিদিন সাগরের জন্য খাবার সাজাতো, কিন্তু নিজে খেত না। সে আয়নার সামনে শাড়ি পরে দাঁড়াতো, যেন সাগর তাকিয়ে আছে।
সে আগের মতোই প্রতিদিন সেই নদীর ধারে গিয়ে বসতো। তার হাতে ছিল সেই ভাঙা কাঁচের চুড়ি, যা সাগর এনে দিতে পারেনি।
তাদের সম্পর্ক সমাজের চোখে শেষ হয়ে গেছিল, কিন্তু তার হৃদয়ে সাগর রয়ে গেছে… চিরদিনের জন্য… চিরোকুমারীর ভালোবাসা হয়ে…সে হয়ে রইল... "চিরোকুমারী"।
(সমাপ্ত

