STORYMIRROR

Dhrubo Saha

Romance

3  

Dhrubo Saha

Romance

বুয়েট বাস

বুয়েট বাস

4 mins
163

 

দুপুর একটা সাতাশ । ভার্সিটির বাসের সামনে রোদে দাঁড়ানো শোভন। ক্লাস আর ল্যাব করে ভালই ক্লান্ত আর আজকে আবার গরমও বেশি। তারাতারি এসে জানালার কাছে ব্যাগ রেখে আবার বাস থেকে নিচে নামে শোভন। এই বাস ছাড়ার আগের সময়টা তার বেশ ভাল লাগে। বিভিন্ন রুটের বাসের সামনে সিনিয়র-জুনিয়র সবাইকে দেখা যায়। এই সময় নাফিসের সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আড্ডা হয়। আড্ডার বেশিরভাগ বিষয়ই ক্রিকেট আর ফুটবল নিয়ে । কিন্তু আজকে আড্ডা হচ্ছে না, কারন নাফিস কি একটা কাজে যেন ক্যাফেতে আছে। এক সিনিয়র ভাইয়ের সাথে প্রোজেক্ট নিয়ে কথা বলতে বলতে প্রায় চল্লিশ বেজে যায়। সবাই এক এক করে বাসের দিকে এগোতে থাকে। ভাইকে বলে শোভন ও বাসে উঠে যায়। বাসে উঠেই বিভিন্ন কথা কানে আসে। এই রুটে বাস মাত্র একটা হওয়াতে এক বাস লোক বসে যায় আর এক বাস যায় দাঁড়িয়ে। সামনের সিটে বসা একটা মেয়ের কথা কানে আসে শোভনের। তার পাশে বসা এক বন্ধু আর দাঁড়ানো অন্য এক বন্ধুকে মেয়ে নিজের স্কুটার কেনার ইচ্ছার কথা বলতে থাকে। তার স্বাধীনচেতা স্বরে শোভনের বেশ আগ্রহ জন্মায়। এদিকে বাস কাকরাইলের মোড়ের কাছাকাছি চলে আসলে মেয়েটা নেমে যায়। শোভন এবার মেয়েটাকে খেয়াল করে। চোখে বড় ফ্রেমের চশমা পড়া মেয়েটাকে খোলা চুলে, সবুজ কুর্তিতে ভালই লাগে শোভনের। ফুটপাতে নেমে ব্যাগ থেকে ছাতা বের করে মেয়েটা হাঁটতে থাকে। ততক্ষণে সিগন্যাল ছেড়ে দিলে বাস আবার চলতে শুরু করে। 


সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে অনেকে শাহীদ মিনারের সামনে জমা হয়। গতরাতে গুটিকয়েক বহিরাগত ক্যাম্পাসে এসে কয়েকজন ছাত্রকে মারধর করেছে। তারই প্রতিবাদে সকাল থেকে ক্লাস বর্জন করে আন্দোলন। আন্দোলন, প্রতিবাদ মিছিল এসবের প্রতি ছোটবেলা থেকে আগ্রহী শোভন কাল রাতের ঘটনা জানার পর অনেক সকালে ভার্সিটিতে চলে আসে। ভার্সিটি জীবন শুরু হওয়ার পর থেকে শোভনের একটা আক্ষেপ এই ক্যাম্পাসের ছাত্রছাত্রীরা জাতীয় যেকোনো বিষয়ে বেশ নীরব। যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে তেমন কোনও প্রতিবাদ হয় না। আন্দোলন শুরু হওয়ার আগে সবাই খুব সরব,কিন্তু আন্দোলনের দিন প্রতিবার হাতেগোনা ২০-২৫ জন আসে। ক্লাস বর্জন হয় ২-৩ দিন, আবার যা তাই। কিন্তু আজকে বেশ অনেককে দেখা যাচ্ছে। বাঙালি নিজের গায়ে হাত না পড়লে কোন কিছু করে না । একটু পরেই বেশ লোক জমা হয়ে যায়।ওদিকে রাস্তা বন্ধ করে সিনিয়ররা শ্লোগান দিতে থাকে। যে আপু শ্লোগান দিচ্ছে তার শ্লোগানে কেমন একটা বিষয় আছে যেন শোভনের মনে হয়।একদম ভিতর থেকে শব্দগুলো বের হচ্ছে বলে মনে হয়। এর মধ্যে দুই তিন সারি পিছনে শোভন সেদিনের বাসের সবুজ কুর্তি পড়া মেয়েটাকে দেখে শোভন। এর মধ্যে ক্যাম্পাসে,বাসে আগে কয়েকবার দেখেছে , একবার মনে আছে বাসের মধ্যে এক কোচিং সেন্টারের খাতা চেক করতে দেখেছিল। মেয়েটার মধ্যে একটা চাঞ্চল্য আছে,আর চিন্তাচেতনা বেশ পরিষ্কার বলে শোভনের মনে হয়। “গর্ভধারিণী “ উপন্যাসের জয়িতার সাথে মেয়েটার মিল আছে। মেয়েটাকে ভাল লাগলেও কথা বলার সাহস পায় না শোভন। শোভনের মনে হয় আন্দোলনে এসে এশব ভাবা ঠিক না। কিন্তু তার “কালবেলা” উপন্যাসের অনিমেষের কিছু কথা মনে পরে, “ যা কিছু সচল তাই তো বিপ্লবের আহবান। জড়পদার্থ কখনও বিপ্লব করতে পারে না।“ বিপ্লব শব্দটা বেশ ভারী যদিও। শোভন নিজেকে বিপ্লবী ভাবতে পারে না। নিজেকে তার এদেশের পাঁচটা সাধারন মানুষের মতো বেশ মেরুদণ্ডহীন মনে হয়। কারও যেন নিজস্ব কোন দায় নেই, দেশটার ভালোমন্দের ইজারা রাজনৈতিক দল্গুলর হাতে তুলে দিয়ে দেশের অধিকাংশ মানুষ ঘরের নিরাপদ কোণ খুঁজে।


কয়েকদিন পর আবার সব স্বাভাবিক হয়ে যায়। প্রথমদিনের আন্দলেনের পর থেকে লোক কমতে থাকে। বাকিরা যাবে এই কথা বাসায় বসে সবাই ভাবে। কিন্তু শোভন বেশিরভাগ দিনই সেই বড় ফ্রেমের চশমা পড়া মেয়েটাকে দেখতে পায়। সবাই এক মাস পর প্রতিবারের মত প্রশাসনের দেয়া মুখস্থ আশ্বাস নিয়ে আবার ক্লাসে ফিরে যায়। এক মাসের বন্ধে অনেকেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ট্যুরের পর বেশ চাঙ্গা দেখা যায়। একদিন ক্লাস শেষে শোভন আর সাদমান বই কিনতে যায়। সাদমান বেশ ভাল ছেলে।সব সময় সবার সাহায্য করে হাসিমুখে। শোভন সাদমানকে হায়দার বলে ডাকে। সাদমান রিকশাতে উঠে বলে “জুনিয়র একটা একটা মেয়েরে দেখসস? আন্দোলনে বেশ সরব ছিল,প্রতিদিন আসতো।“ শোভন বলে তুই নিজেই তো ছিলি না প্রতিদিন,তুই জানলি কেমনে? সাদমান বলে, “ আরে ব্যাটা আমি দেখসি। তুই খেয়াল করসস?”এরপর সাদমান একে একে ডিপার্টমেন্ট,নাম বিভিন্ন প্রশংসামূলক কথাবার্তা বলতে থাকে। শোভন জানায়,হুম, খেয়াল করসি।


এরপর পরীক্ষা চলে আসে। পরীক্ষা এরপর রেজাল্ট বেশ ব্যাস্ত সময় কাটায় সবাই। এর মধ্যে অনেকগুলো আন্দোলন হয় আবার।প্রতিবারই দুইদিন হয়ে তা আবার মুখ থুবড়ে পড়ে। কিন্তু প্রতিবার শোভন মেয়েটাকে খোঁজে। যতবার তাকে দেখে ভাবে যেয়ে কথা বলবে। কিন্তু সিনিয়র হয়ে কোন কারন ছাড়া কিছু বলতে আবার সঙ্কোচ হয়। এভাবে চলতে চলতে শোভনদের ক্যাম্পাসে শেষ টার্ম চলে আসে। ভাবে এই শেষ টার্মে একবার মেয়েটার সাথে কথা বলা দরকার। সে হিসাব করে খাতা কলমে আর মাত্র ৭০ দিন আছে সে এই ক্যাম্পাসে। এতগু


Rate this content
Log in

More bengali story from Dhrubo Saha

Similar bengali story from Romance