বাঙালি বউ
বাঙালি বউ
--- ঐ আপদকে আমি বিদায় করবো। গলার কাঁটা একটা! ভালো ছেলে দেখে এসেছি। টেঁপিকে ওর খুব পছন্দ। আমার কোন খরচ নেই, উপরন্তু মেলা টাকাও দেবে।
---কে? তোমার ঐ ন্যাপা? হাঁটুর বয়সী মদের বন্ধু? তোমার পাল্লায় পরে আমি সারা জীবন জ্বলে পুড়ে মরছি। ঐ টুকু মেয়ের ঘাড়ে আবার এক মাতাল ঝোলাবো? কক্ষনো না। আমার মেয়ে লেখা পড়া শিখবে, মানুষের মতো মানুষ হবে। মেয়েকে আমার বিক্রি করবো না, এই বলে দিলাম।
--- লেখা পড়া করে কোন মেয়েতে রাজকার্য উদ্ধার করেছে? কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা খরচ করে লেখা পড়া করে সেই তো পরের ঘরে হেঁসেল ঠেলবে আর ছেলে মানুষ করবে।
--- মেয়ে হয়ে যখন জন্মেছে তখন বিয়ে তো করবেই, তবে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে তবেই।আমি পড়াশোনা না করে যে ভুল করেছি মেয়ের তা হতে দেব না। লেখা পড়া জানলে কি আর তোমার ঝাঁটা জুতো খেয়ে পরে থাকতাম? মেয়ে বলে কি মানুষ নয়? আমাদের ইচ্ছা অনিচ্ছা, শখ আহ্লাদ, ভালো মন্দ থাকতে নেই?
--- মেয়েরা হলো পর নির্ভর স্বর্ণলতা গাছের মতো। তাদের আবার ভালো মন্দ! কাল টেঁপিকে নেপার বাড়ি থেকে আশীর্বাদ করতে আসবে। আমি বিয়ে দিয়েই ছাড়বো, দেখি কি করে আটকাস।
পরের দিন সকালে "টেঁপির মা .... এই টেঁপির মা..... হারামজাদীর ঘুম দেখো," বলতে বলতে মদন দরজায় সজোরে এক লাথি মারে। হাট হয়ে খুলে যায় দরজা। ঘরের ভিতর কেউ নেই, জামা কাপড় পর্যন্ত নেই।
অলক্ষ্যে গড়িয়ে গেছে বারোটা বছর। দুর্ঘটনায় এক পা হারিয়ে নিঃসঙ্গ মদনের জীবন জুড়ে কেবলই অমাবস্যার অন্ধকারের হতাশা। হঠাৎ এক সকালে একটি বড়ো গাড়ি মদনের বাড়ির দরজার সামনে দাঁড়ায়। কেতাদুরস্ত পোশাকের এক যুবতী উঠান থেকে চিৎকার করে, "বাবা ..... ও বাবা" বলে ডাক পাড়ে। ঘর হতে বেরিয়ে ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে থাকে মদন।---আমাকে চিনতে পারলে না, বাবা?--- (বিস্মিত কন্ঠে) না তো, মা। কে তুমি?--- বাবা, আমি তোমার মেয়ে, টেঁপি।--- টেঁপি? আমার টেঁপি? কেমন আছিস, মা? আর তোর মা?--- আমি তোমাকে নিতে এসেছি, বাবা। চলো আমার সাথে।--- কোথায় যাবো, মা?--- আমার ফ্ল্যাটে। এখান থেকে চলে যাওয়ার পর অনেক কষ্ট করে পরের বাড়ি সারাদিন গায়ে গতরে খেটে আমার মা আমাকে মানুষ করেছেন। আমি এখন বি. সি. এস অফিসার। চলো, যেতে যেতে সব বলবো।---আমি যে চরমতম অন্যায় করেছি, অত্যাচার করেছি, মা। তোর মা আমার মুখ দেখবেন কেন? আর আমিই বা কোন মুখে তোর মায়ের সামনে দাঁড়াবো?---আমি জানি বাবা, মদে তোমাকে খেয়ে ফেলেছিল। নিজে অথর্ব হওয়ার পর তুমি মদের থাবা থেকেও মুক্তি পেয়েছো।--- তুই ... তুই সব জানিস, মা!--- আর মা? তিনি তো এখনও স্নানের পর তোমার নামে সিঁথিতে সিঁদুর দেন প্রতিদিন। অশিক্ষিত বাঙালি বউ যে!
মদনের চোখ ছলছল করে ওঠে।