অনাহত
অনাহত




ঘর থেকে বেরোনোর সময় সুব্রত দেখে বাবুল তখনও ঘুমোচ্ছে। ডিউটির যা চাপ, সকালে বেরিয়ে ফিরতে ফিরতে রাত। সুচেতাই বাবুলকে ক’দিন স্কুলে দিতে যাচ্ছে। বাচ্চাটার মুখের দিকে তাকিয়েই মায়া হল সুব্রতর। বাপির সাথে সময় কাটাতে ভীষণ ভালোবাসে ছেলেটা। থানার গাড়ি এসে সুব্রতকে তুলে নিল। সকালে বড়বাবুকে কয়েকটা কেসের রিপোর্ট দেখানোর ছিল। সেকাজেই দুপুর। খেয়ে দেয়ে একটু জিরোতেই তরফদার বলল, পার্কস্ট্রীটে রেইডে যাবে, সন্ধ্যেবেলা?
এইসব রেইড দেওয়াতে আজকাল উৎসাহ পায় না সুব্রত। নাইটক্লাবগুলো টার্গেট। ফল কিছু হয় না। উপরি আসে। সাথে ফ্রিতে মদ, শরীর। নৈশ আলোতে এলএসডি, ম্যাজিক-মাশরুম, ডিএমটির বিকিকিনি। ইলেক্ট্রনিক ডান্স মিউজিকের মূর্ছনায় দুলতে থাকা খোলামেলা শরীর। বেশিরভাগ কুড়ির আশেপাশে। শুকনো ঠোঁট। লাল চোখ।
আরে। সারা দিন ক্লান্তির পর একটু ফ্রিতে ফুর্তি না করলে অকালে বুড়িয়ে যাবে। তরফদার বলে।
তরফদারকে এরপর এড়িয়ে চলতে হবে। নইলে, এভাবেই রোজ রোজ..। ছেলেটা বড়ো হচ্ছে। রাতদিন টিভিতে পুলিশের মুভি দেখে। ওর চোখে বাপিও ‘হিরো’। তরফদারের মেয়ে একটু বড়ো। ক্লাস নাইন। তরফদার বলে, মনকে প্রস্তুত রাখি জানো। দু’তিন বছর পর কোনোদিন এদের মধ্যে নিজের মেয়েকে দেখলেও অবাক হওয়া যাবে না। তরফদারের জিভ জড়িয়ে আসে নেশায়।
সুব্রত বাড়ি ফিরল রাত দশটা। বাবুল ঘুমে কাদা। বাবুলের মুখে এসে পড়েছে জোছনার স্নিগ্ধ আলো। সুব্রত ওর কপালে আলতো হাত রাখতে গিয়েও নিজের হাতটা সরিয়ে নিল। কী জানি কি মনে করে?