Rituparna Sengupta

Drama Romance Classics

3  

Rituparna Sengupta

Drama Romance Classics

আননন নাম্বার

আননন নাম্বার

13 mins
440


- কি করছো ?

- আমার একলা ঘরে মেঘলা দুপুরে কি তোমাকে একটু পাওয়া যাবে না ?

- আমার আঁচলে একটু তোমার নীলচে রঙ চাইতে পারিনা ?

- তুমি শুনতে পাচ্ছো ?

- তুমি উত্তর দেবে না ?

আগন্তুক এর মত মেয়েটি নেমে এলো সুকান্তর ফোনে।


সাদামাটা গোছের বই মুখো সুকান্ত সারাদিন কলেজ ক্লাস, মেস বাড়ির রান্না খাওয়া সেরে শনিবারের Second half-এ শান্তির দুপুরে বালিশে সবে মাথা রেখেছে। কাল রাতে পুপের Ringtone-এর অনেক্ষন জাগিয়ে রাখার আবদার আর অনেকদিন বাড়ি না ফেরার রাগের ঝক্কি সামলাতে হয়েছে ওকে। শান্ত চোখ দুটো Celling fan এর গতি পর্যবেক্ষণ করে নিতে নিতে ঘুমে জড়িয়ে এলো।


আবার তীক্ষ message এর আওয়াজ ! পর পর message এসেই চলেছে। ঘোরের মধ্যেই অস্থির হাত ফোন টাকে অবশেষে খুঁজে পেলো। নীলচে আলোটা বিদ্যুৎ এর মত চোখে এসে পড়লো। কোনো রকমে চোখটা কচলে সুকান্ত message box টা খুললো।


সুকান্তর আরামের ঘুমের ব্যাঘাত।


একটা Unknown number ! কে ? কেন ? কি চায় ? - এক গুচ্ছ প্রশ্ন ভিড় করলো সুকান্তর মনে। কিছু reply লিখবে ? না কি নিতান্তই অবহেলা করে ফিরে যাবে নিজের শান্তির ঘুমে। কিন্তু, শান্তি আর আসে কোথায় ! message-এর অদ্ভুত সব লেখা ! কোনো একটি মেয়েরই একাকিত্বে লেখা message তা লেখার ভাষায় স্পষ্ট। দ্বিধা দ্বন্দ এর মধ্যে একটা message লিখেই ফেললো সুকান্ত !


- Who are you ?


নিস্তব্ধতা বেশ খানিক্ষন।


অদ্ভুত একটা অস্থিরতা কাজ করছে সুকান্তর মনে। আজ অবধি এমন করে কোনো মেয়ে আগবাড়িয়ে এই ভাবে কথা বলেনি। সুকান্তর ঝক্কি girlfriend পুপে তো ভুল করেও না। সুকান্তরই ওকে ভালো লেগেছিলো। অনেককাল পর সাহস অর্জন করে যখন এক বান্ধবীর মধ্যস্থতায় ভালোলাগার খবর টুকু পৌঁছে দিয়েছিলো তাতেও ওই ঝক্কি হাসাহাসি করে 'না' বলে অনেক দুঃখ দিয়েছিল। তারপরও অনেক মানানোর পর এখন সে সুকান্তর জীবনে অধিকার সমেত একগুচ্ছ আবদার বায়না অভিমান এর ঝক্কি নিয়ে বসতি স্থাপন করেছে।


- I am your well wisher !


নিস্তব্ধতার সমাপ্তি ! 


- What's your name ?

- যে নামে ডাকতে চাও তুমি ! 

- Aami tomay chini naah ! 

- আর আমি তোমাকে চিনেছি আমার একলা ছাদে, এক চিলতে নীল আকাশের মতো তুমি এক অসীম অনন্ত সতেজ অবয়ব।

- Baaje na boke bolo tumi ke ? Ki kore cheno aamay ?

- হারানো রাস্তার সাথে ভাব জমিয়ে এগোতে এগোতে তোমাকে চেনা, তোমাকে পাওয়া।

- Aabar sei !! Msg kora bondho koro.

- আমি তোমাকে খুঁজে পেয়েছি সুকান্ত ! হারাতে দিও না ! Please !


Artificial intelligence এর ক্লাস। Pin drop silence ! সুকান্তর প্রথম বেঞ্চে নিস্তব্ধতার অবসান ঘটিয়ে আবার message tune-টা বেজে উঠলো -


- বলো না ! কি করছো ?


অস্থিরতার মধ্যে ফোনটা silent করতে করতে আরো বেশ কটা message ! T.M sir এর কড়া চোখ সুকান্তর দিকে। এমনিতে teacher-রা সুকান্তকে ভালো চোখেই দেখে, তা বলে এই বয়েসে অসময়ে দুটো message ঢুকবে না এটা আশা করা নিতান্তই ভুল। সুকান্ত কোনো রকমে ফোনটা silent করে ফিরে এলো text book-এ। তবে মন বসা একটু কঠিন হলো। তাড়াহুড়োর মধ্যেই সুকান্ত দেখে ফেলেছে আবার সেই unknown number ! বাংলায় লেখা message। আর যাই হোক, হাজার disturbance এর মধ্যেও এই বাংলায় লেখার ধরণটা কিন্তু সুকান্তর বেশ লেগেছে। মনের ভেতর অস্থিরতা আসবে এ বলার অপেক্ষা রাখে না। সুকান্তর চোখ ঘড়ির দিকে। ক্লাস টা শেষ হওয়ার অপেক্ষা !


- ki chao Tumi ?

- শুধু তোমাকে !


সুকান্তর মনে একটা অস্থিরতা অল্প অল্প করে বাসা বাঁধতে লাগলো। সকালে ঘুম থেকে উঠে, tution পড়ানোর ফাঁকে, ক্লাস কিংবা কার্তিকের দোকানের চা এর আড্ডায়, কোথাও যেন শান্তি নেই। যেকোনো সময় যেকোনো মুহূর্তে একরাশ একাকিত্ব আর অদ্ভুত সব ভালোবাসার ভাষায় message box-টা কেঁপে উঠবে ! আর সুকান্ত কিছুতেই এই রহস্যের উদঘাটন করে উঠতে পারবে না।


- oi tui kobe bari aschis ?

- Janina... Akhon toh hobe e na ! 

- knoooooooo ?????

- Samne practical exam ! Tor o toh aache ! Porashona kor na mon diye !

- ososhyokorrrr ! Aaj raate jagbi kintu ! Kotha bolar toh time e nei tor kache !

- Uffff ! Abar ei ek bayna shuru koris na roj roj ! Janis toh sokale uthte hoy amay !

- hm

- Rag korte nei... Achha, by the way ! toke akta kotha bolar chilo !

- Amar kono Kotha shonar neiii !

- Joruri kotha ! Please !

- amr aj bikele gan er class ache ! jaaaa bolar akhoni bol ! Nahole baaaad de !

- Okay, ami call korchi 5 min ! Wait !


"কথাগুলো শোনার না আছে কোনো ধৈর্য্য, না আছে বোঝার কোনো ইচ্ছে। আর কতদিন যে এমন অবুঝ রাগ অভিমান করবে ! পারি না আমি এই মেয়েটা কে নিয়ে !" - ফোনটা রেখে মনের মধ্যে বিড়বিড় করতে লাগলো সুকান্ত। সে জানে এই রাগ ভাঙানোর জন্য তাকে পকেট ভাঙিয়ে Dairy milk তো কিনতেই হবে। ঝক্কি girlfriend এর মান ভাঙানোর ওষুধ তো না হয় জানা আছে, কিন্তু এই নতুন আগন্তুক ! তার কি অসুখ ? কিসেই বা সারবে ?


- কাল অনেক রাত তুমি আমায় জাগিয়েছিলে ! তুমি কি জানো ?

- Aabar ? Ke Tumi boloto ?? It's too embarrassing you know that ?

- তুমি এত রাগ করে উত্তর দিচ্ছো কেন ?

- Kaaron tumi tomar porichoy dichho na & you are just disturbing me !

- ভালোবাসার কি কোনো পরিচয় হতে পারে ?

- Ke tomay valobase ? Tomar kothao akta vul hochhe ! 

- ভালোবাসাটাও তো এক রকমের ভুল ! ভুল নয় ?


কার্তিকের দোকানে দু-কাপ চা শেষ করে ফেলেছে। tution-এ দুজন student এর সংখ্যা কমেছে, পুপের অবুঝ অভিমান দিন দিন বেড়েই চলেছে সব মিলিয়ে আড্ডায় ঠিক মন নেই সুকান্তর। সব কথা কাওকে বলেও উঠতে পারছেনা। এই অসুখের কথা শুনলে তো বন্ধুরা ঢুকে শুধু শুধু ব্যাপারটা কে আরো জটিল করে দিতে পারে। ঝক্কি মেয়েটা তো বোঝদারই নয় ! ওকে বলা মানে পকেট খসানো। অনেক রকমের ভাবনা মনের মধ্যে তোলপাড় করছে সুকান্তর। মনটা খুব উদাস একলা হয়ে আছে। বাড়ির হাজার রকমের দায়িত্ব, tution student দের দায়িত্ব, কলেজ ক্লাস, চাকরির পড়া এসবের বাইরেও একটা নিজের একান্ত আপন সময়ের দরকার হয়। যে সময় টা শুধু নিজের ! একাকিত্বটাও কখনো কখনো মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে ওর। বাড়ি থেকে দূরে, পুপের থেকে দূরে, সব কাছের মানুষগুলোকে যেন দূর থেকে দেখতে পায় সুকান্ত। ছুঁতে পারেনা ! কেও যেন নেই যাকে মনের সব অস্থিরতা উজাড় করে দেওয়া যায়, যে সব কথা বুঝবে, মনের সব ক্লান্তি যার কোলে মাথা গুঁজে উধাও হয়ে যাবে। পুপে কি কোনোদিন বড় হবে না ? ও কেন এত অবুঝ ! আজ কি পুপে গানের ক্লাস থেকে একটু তাড়াতাড়ি ফিরে ফোন করতে পারেনা ! একবারও কি পারেনা হঠাৎ হঠাৎ যখন তখন message করতে ! একবারও কি ওর জানতে ইচ্ছে করে না আমার মন ভালো আছে কি না ? আর এই নতুন আগন্তুক ! সে-ই বা কে ? সেও কি এই মুহূর্তে আমার মতো একা ? সে কি সত্যিই চেনে আমায় ? কি-ই বা চায় ! কেনই বা চায় আমায় ! হাতের অস্থিরতায় অনেকগুলো ঘাস ছিঁড়তে ছিঁড়তে কিসব ভেবে চলেছে সুকান্ত। পাড়ার এই ফুটবল মাঠটা সুকান্তর বড্ড প্রিয়। অনেকদিন আসা হয়না ওর। অনেক দিন নিজের জন্য সময় বের করা হয়না !


- বিকেলটা খুব ছোঁয়াচে ! তাই না ?


সুকান্তর একলা মাঠে ফোন টা আবার কেঁপে উঠলো।


- তোমার এই বিকেলটা কি একটু আমার সাথে ভাগ করে নেওয়া যায় না সুকান্ত ?


আজ সুকান্তর মন টা বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। এই বোধহয় কোনো প্রথম মেয়ে যে সুকান্তর একাকিত্ব ভাগ করে নিতে চাইছে। পুপে কবে এরকম বড় হবে ! message টা দেখে সুকান্তর মন টা ভারী হয়ে এলো। কেন মনটা এত বিচ্ছিন্ন ! সুকান্ত যেন পুপে কে পেতে চায় একান্তে এই মুহূর্তে।

গানের ক্লাসে পুপের ফোন টা তীক্ষ্ণ আওয়াজ করে উঠলো।

পুপের ফোন কাটার আওয়াজটা খুব ছেঁকা দিলো সুকান্তর মনে !


- ganer class e aachi ! Bolechi nah ei somoy call korbi na ! 

- Toke khub mone porche pupe !

- Thaaak thak ! Oneeeek hoeche !! Jokhon bolbo ektu jege thak ! kotha bol ! tokhon toh ghumer jonyo bysto !

- Thikache, toke bujhte hobe na !

- okkkkk. Bye.


সুকান্তর চোখটা কেমন ছলছল করে উঠলো। সুকান্ত ফোনটা নিয়ে message box খুলে দেখলো ইতিমধ্যে নতুন আগন্তুক এর বেশ কটা message ঢুকে পড়েছে অজান্তেই।


- Tumi ke ? Ami jante chai tumi ke ??

- আমি তোমার প্রেম ! তোমারই হাওয়ায় বয়ে গেছি কতবার ! 

- Tomar sahos toh kom noy ! Amar prem tumi nou ! Amar prem ek o odwitiyaa ! 

- আমি কি নই তোমার সেই অদ্বিতীয়া ?

- Kokhonoi hote parona !

- কেন সুকান্ত ?


পুপের কণ্ঠই সুকান্তর সব ক্লান্তির অবসানের ওষুধ। সত্যিই ও যখন চায় সুকান্তর কথা বলা হয়ে ওঠে না। ভোর বেলা উঠতে হয় ওকে। মাধ্যমিকের tution পড়িয়ে তারপর মেসের রান্না খাওয়া সেরে কলেজে যায়। বেশ কদিন হলো সুকান্তর রাতের ঘুমে ব্যাঘাত ঘটছে। এদিকে student-এর সংখ্যা কমায় কপালে চিন্তার ভাঁজও পড়ছে।


- jege aachis ?

- Toke khub miss korchi pupe !

- thikache ! Aar baniye bolte hobe na !

- Amar oi msg aasa akhono bondho hoyni !

- ta kno hobe ! Reply dite thak ! O u msg Korte thakuk ! Valo thak dujonee !!!

- Tui eto kno obujh re ? Kichu akta upay bolte paris toh ! 

-ami k !! upay bolar !!! Emon ekta phn use koris jaate block option ta obdhi nei ! Aar avoid koraro khomota nei tor bujhte e perechi ! Valo e toh !!! chaliye jaa !

- Pupe please ! 

- tui ei sob bishoye vabchis bole e jege aachis ! Amar jonyo naaaaahhhh !!! So, plz ... Bye.


পুপের অন্যায় অভিমান সামলানোটা সুকান্তর অভ্যেস। তবে আজ যেন আর ইচ্ছে নেই। শক্তি নেই মনে। পুপে যদি ভালোবেসে পাশে না দাঁড়ায়, না বোঝে কিছু ! তাহলে আর কোনো শক্তি সঞ্চয় করা সম্ভব না। মনটা কেমন ভারী হয়ে উঠলো। পুপেকে বেশ কটা message forward করেছিল সুকান্ত, ভেবেছিল পুপে নিশ্চই বুঝবে এই আগন্তুক কিভাবে তার শান্তির অন্তরায় হয়ে উঠেছে। কিন্তু, না ! ওই ঝক্কি মেয়ে বোঝবার মেয়ে-ই নয়। ভালোবাসায় কখনো কখনো serious হতে হয়, কখনো কখনো বোঝদারের মতো হাত টা চেপে ধরতে হয়। সুকান্তর মনে ভাবনার আলোড়ন। সে যেন একবার শুনতে চায় পুপে হাত টা চেপে ধরে বলে উঠুক, "আমি আছি সুকান্ত, তোমার খুব কাছে, তোমার ঠিক পাশে, তুমি অনুভব করতে পারছো ?"


- কি ভাবছো সুকান্ত ? 

- Nothing ! Ki korle tumi aaj theke msg kora bondho korbe !! You know what ! Tomar moto aamar life-e eto somoy nei je ekla ghore bose bose aami jaake taake ja khushi likhe jabo ! 


মনের ওপর যত ভার ! লেখার ভাষা ততো কঠিন হতে লাগলো সুকান্তর। অনেকটা লিখে পাঠাতে গিয়েও পাঠালো না। Backspace টা দ্রুত বেগে ছুটে এলো।


সুকান্ত মনে মনে ঠিক করেই ফেললো এবার এই আগন্তুক কে সে উপেক্ষা করবেই আর নিজের রোজের জীবনে ফিরে যাবে সব রকম অস্থিরতার অবসান ঘটিয়ে। সামনে practical exam ! ভালো করে দিতে হবে ওকে। Tution-এর জন্য বেশ কয়েকজন কে বলেও রেখেছে। সুকান্ত মনে মনে ঠিক করেই ফেলেছে সে এবারে Practical exam গুলো দিয়েই বাড়ি ঘুরে আসবে। বড্ড মন কেমন করছে তার বাড়ির জন্য, পুপের জন্য তো অবশ্যই। কিন্তু অল্প অভিমান জমেছে তার ওপর। অনেকদিন হলো পুপে শুধু লড়াই করে যায় ! সুকান্তরও অভিমান হতে পারে এই কথা পুপের ভাবনার অতীত। পুপে যে কবে সুকান্তর অভিমানের ঝিনুক গুলো কুড়িয়ে যত্ন করে নিজের কাছে রাখবে ! সুকান্তরও বয়েস কম, তারও ইচ্ছে করে তাকেও কেও ভুলিয়ে নিক।


এদিকে আগন্তুক এর message-এ message box ভরে উঠেছে। যখন কোনো অস্বস্তি রোজের সঙ্গী হয়ে ওঠে তখন সেটাও অভ্যাসের মত আর আলাদা করে মনে খোঁচা মারে না। কিছুটা taken for granted এর মতই আগন্তুক-এর message granted হয়ে উঠেছে সুকান্তর ফোনে। রোজ রোজ কত কিছুই না লিখে যায় মেয়েটা ! কোনো কিছু reply এর আশা ছাড়াই। হয়তো কত-ই না অপেক্ষা করে সে সুকান্তর একটা অক্ষরের জন্য ! সুকান্তর একটা শব্দেই হয়তো তার একাকিত্বের দৈর্ঘ্য কমে যাবে। পুপের জীবনেও কি সুকান্ত ইতিমধ্যে-ই taken for granted হয়ে গেছে !!!


Practical exam গুলো একে একে পেরোলো। Written টা এখনো দেরি আছে। একটা নতুন student-ও পেয়েছে সুকান্ত। কিন্তু মনের টানে এখন বাড়ি ফেরা টাই সব চেয়ে জরুরি হয়ে উঠেছে ওর কাছে। 5-6 মাস প্রায় হতে চললো ওর বাড়ি ফেরা হয়নি ! পুপের রাগ করা টাও অস্বাভাবিক নয় সেটা বোঝে সুকান্ত। ব্যাগ গুছিয়ে বালিশের ওপর মাথা রেখে ফোন টা হাতে নিতেই আবার কেঁপে উঠলো !


- উত্তর পাওয়া যাবেনা জানি।

- আমি তোমার জন্য সারাজীবন অপেক্ষা করতে পারি ! 

- আমি তোমাকে খুঁজে পেয়েছি সুকান্ত ! হারাতে দিও না ! Please !


message গুলোতে সুকান্ত নির্বাক চোখ বুলিয়ে নিলো। এই রহস্য তার উদঘাটনের ক্ষমতার ঊর্ধ্বে। ব্যোমকেশ বা ফেলুদা নয় সে ! নিতান্তই সাদামাটা গোছের ছেলে কিন্তু সংবেদনশীল। ওর ভেতরের গভীরতাটা ঠিক বাইরে থেকে মেপে নেওয়া যায় না। সুকান্ত এক শান্ত নদীর মতো যার গভীরে একটা অদ্ভুত স্রোত আছে। একটা বোঝদার অবয়বের গভীরে একটা ছোট্ট অবুঝ আদুরে প্রাণ লুকিয়ে আছে ! সত্যিই আগন্তুকের কথায় - এক অসীম অনন্ত অবয়ব আছে রোজের ছক-কাটা জীবনে মানানসই সুকান্তর অনেক অনেকটা গভীরে। তার এই সংবেদনশীলতারই কেও অসৎ ব্যবহার করছে এমন টাই মনে করে নিয়েছে সুকান্ত। তবে যে message লেখে সেও কম সংবেদনশীল নয় ! সে আত্মপ্রকাশ করলে সুকান্ত হয়তো তার অনুভূতিপ্রবণ শব্দ সঞ্চয়ন আর প্রকৃতির রঙে ভালোবাসার রঙ কে এক অন্যরূপে আবিষ্কার করার ক্ষমতার প্রশংসা করতো। ভালোবাসা - যা প্রকৃতির মতোই স্বাভাবিক, সতেজ-সবুজ। প্রকৃতির মতোই তার বিচ্ছিন্ন রূপ- কখনো ঝোড়ো হওয়া, কখনো নীরব বৃষ্টি অথবা কখনো শেষ গোধুলির মতোই কাঁচা, কনে দেখা আলোর মতোই মিষ্টি-উজ্জ্বল।


FM টা চালিয়ে সুকান্ত জানলার পাশের রাস্তার হলুদ আলোটার দিকে চেয়ে রইলো। হাওয়ার সাথে ভেসে এলো - 

"Phoolon Ke Rang Se.. Dil Ki Kalam Se.. Tujhko Likhi Roz Paati - -

Kaise Bataaoon.. Kis Kis Tarah Se.. Pal Pal Mujhe Tu Sataati - -

Tere Hi Swapne.. Lekar Ke Soya.. Teri Hi Yaadon Mein Jaaga - -

Tere Khayaalon Mein.. Uljha Raha Yoon.. Jaise Ki Maala Mein Dhaaga - -

Haan Badal Bijli.. Chandan Pani.. Jaisa Apna Pyaaar . . . . . . "


- oi ! Akhono train dhokeni ?

- Ei toh dhukche ! Late chilo half hour er moto !

- aaj ke bikele berobi toh ? Naki bondhu der sathe adda !! 

- Tor sathe e berobo ! Adda pore ...

- sotyyiiiiiii !!!!! :)


দুপুরের কাঁচা ঘুমটার ব্যাঘাত ঘটিয়ে ফোনের ringtone টা চিৎকার করে উঠলো। আঠার মতন আটকানো চোখ দুটো খুলে কোনো রকমে ফোনের নীলচে আলোটাকে সহ্য করে নিয়ে সাড়া দিলো সুকান্ত। পুপের কথা মতো বিকেল নাকি সন্ধ্যের কোলে মিশে যেতে চলেছে। তাই খুব অন্যায় ভাবে সুকান্ত এখনো ঘুমোচ্ছে তাদের বিকেলে বেরোনোর কথা ভুলে গিয়ে। কে জানে এই ঝক্কি সামলাতে আবার না পকেট খসাতে হয় !


সুকান্ত দ্রুত বেগে পায়জামার ওপর পাঞ্জাবিটা গলিয়ে নিয়ে চটি পায়ে ঝড়ের গতিতে রাজ-দরবারের দিকে সাইকেলটাকে ছুটিয়ে নিয়ে গেলো। যাওয়ার পথে পকেট খসিয়ে দুটো Dairy milk আর জামাই দার দোকানের গরম গরম জিলাপি বেঁধে নিল সঙ্গে। পুপেকে কিছুটা দূর থেকে দেখতে পেয়ে সুকান্তর মনে একটা স্নিগ্ধ হওয়া বয়ে গেলো। সাদা রঙের একটা ঢিলেঢালা জামা আর navy blue colour er jeans পরে রাজ দরবারের একটা পাথরের ঢিপির ওপর বসে পুপে মনে মনে কি একটা গান গুন গুন করছিল আর নুড়ি গুলো ছুঁড়ে ছুঁড়ে দূরে ফেলছিল। সুকান্ত ঝড়ের মতো এসে সাইকেলটা থামালো।

পুপে সুকান্তর ঝোড়ো কাকের মতো চেহারার দিকে তাকিয়ে বললো, "বাহঃ ! খুব তাড়াতাড়ি এসেছেন আপনি।"

সুকান্ত - "দেখ ! তোর জন্য কি কি নিয়ে এসেছি !!"

Chocolate আর মিষ্টি পেলে পুপে আর কাউকে চেনে না। সুকান্তর ভাগেরটাতেও অধিকার সমেত ভাগ বসিয়ে নিলো পুপে। আজ সুকান্ত পুপের খাওয়ার ব্যস্ততাটাকেও খুব মন দিয়ে দেখছিল। পুপের চোখের কালো, কাজলের কাঁপা টান , যত্ন করে বাঁধতে চাওয়া অবাধ্য চুলের ভাঁজ, গালের কালো তিল , সুকান্তরই দেওয়া সেই কালো রঙের কানের দুল ! অনেকটা দিন দেখেনি ও পুপেকে। মেয়েটা অনেক রোগা হয়ে গেছে। পুপেকে দেখে সুকান্তর সব অভিমান চোখের জলের সাথে ভিজে এলো। 

পুপের চোখ পড়লো সুকান্তর চোখে। সুকান্তর চোখে তখন অদ্ভুত এক আবেগ ! পুপের কাছে যা খুব অচেনা, অন্যরকম। পুপে নিজের হাত দুটো দিয়ে সুকান্তর গালে আলতো স্পর্শ করে বললো,

"কি হয়েছে ?"

সুকান্ত- "কিছু না।"

পুপে- "আজ বিকেলটা খুব ছোঁয়াচে তাই না ?"


কেমন একটা খটকা লাগলো সুকান্তর কানে ! তবু পরমুহূর্তে উপেক্ষা করেই দূরে নীল আকাশের কোণে গোধূলির শেষ বেলার সূর্যটাকে যেন মেখে নিয়ে সুকান্ত বললো, "আজ ওই দূরে দিগন্তে হারিয়ে যেতে বড্ড ইচ্ছে করছে !"

পুপে সুকান্তর হাতের ওপর নিজের হাতটা খুব ধীরে ধীরে রেখে হঠাৎ চেপে ধরে বললো, 

"আমি তোমাকে খুঁজে পেয়েছি সুকান্ত ! হারাতে দিও না ! Please !" 

বিদ্যুতের মতো শীতলতা খেলে গেলো সুকান্তর ভেতরে ! পুপে আবার বলে উঠলো, 

"এই বিকেলটাকে কি আমার সাথে ভাগ করে নেওয়া যায় না ! আমার আঁচলে কি একটু তোমার নীলচে রং চাইতে পারিনা ?"

হঠাৎ সুকান্ত হাত দিয়ে পুপের ঠোঁটের ওপর চেপে ধরলো। এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতা দুজনের চোখে। সুকান্তর চোখের কোনে টলমলে অশ্রুবিন্দু স্পষ্ট হয়ে উঠলো। পুপের চোখে অদ্ভুত আবেগ ! যা সুকান্ত বারবার খোঁজার চেষ্টা করেছে। পুপের গাল ভিজে যাচ্ছে অস্পষ্ট জলে। আরেকটা হাত দিয়ে পুপে সুকান্তর হাত টাকে আলতো ভাবে নামিয়ে নিয়ে কাঁপা গলায় বললো, "উত্তর দেবে না ?"


সুকান্তর শীতলতা মহাকাশের সীমানার সীমা পেরিয়ে ছায়াপথে এসে ঠেকলো। শেষ বেলায় বুকের কাছে যেন পাঁজরের ভেতর টেনে নিলো সে পুপেকে। হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন পুপের কানে ধ্বনি তুলে যেন বারবার বলে উঠলো, "ভালোবাসিই - ভালোবাসি ! সত্যিই ভালোবাসার কোনো পরিচয় হতে পারে না, আমি ভুল করে সেই বারবার তোমাকেই ভালোবেসে ফেলি !"


সেদিন তারিখটা ছিল পয়লা April ! April Fool বানানোর ছলনায় পুপে যে তার সুকান্তকে অন্যরকম ভাবে খুঁজে পাবে, আর সুকান্তও যে তার ঝক্কি অবুঝ অভিমানী পুপের চোখে কোনোদিন এই ভাবে ভিজে যাবে তা স্বপ্নেও ভাবেনি। বোকা বানানোর ছলনায় ভালোবাসার নতুন রূপ যে আবিষ্কার হওয়াও সম্ভব সে গল্পের খোরাক সারাজীবনেও সম্পৃক্ত করতে পারবেনা সুকান্ত-পুপে কে ! বরং অনেক অনেক সমৃদ্ধ করে তুলবে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। বেলা শেষের কনে দেখা আলোয় দুটো মানুষ অদ্ভুত উজ্জ্বলতার সাথে দিগন্তে মিলিয়ে গেলো।


আমার রবিবার ব্যালকনির tea table এ ফুরিয়ে আসছে সন্ধ্যের FM এ অনুপমের গানের সাথে - 

"আমি তারার মতো জ্বলবো ! তোমার কথা বলবো, দেখি আমায় ! কে আটকায় ! . . .

আমি তোমার শরীরে. . . চামড়ার গভীরে বয়ে যাই ! কে আটকায় ! . . ."


Rate this content
Log in

More bengali story from Rituparna Sengupta

Similar bengali story from Drama