Sahasrangshu Guha

Inspirational

2  

Sahasrangshu Guha

Inspirational

আমি প্রীতিলতা বলছি

আমি প্রীতিলতা বলছি

9 mins
582


September শেষ হতে চলল প্রায় তবু যেন এই বছর বর্ষা যাওয়ার নাম নেই । সকাল থেকে আজ আকাশ ভারী হয়ে রয়েছে । বৃষ্টির যেন থাম নেই। অনেক দিন পর আজ আবার লিখতে বসলাম । ইদানিং অনুশীলন সমিতির কাজ করতে গিয়ে নিজের জন্য ভাবার সময় হয়না আর । সমিতিতে আমায় ভরসা করতো খুব সূর্যদা । যে কাজের দায়িত্ব আজ আমার উপর বর্তেছে সেটা অবশ্য প্রথমে আমার উপর চাপতো না যদি না কল্পনাদি কে পুলিশ গ্রেপ্তার করতো । কল্পনা দির গ্রেপ্তারের খবর পেয়েই দল থেকে আমায় ডেকে পাঠানো হয় । সূর্যদা, নির্মল, কল্পনাদির পর আমার উপরেই ভরসা বাকিদের , কারো বা কিছুর জন্যই যেন পরিকল্পনা বিঘ্নিতঅদ্ভুত লাগছে আজকের দুপুরটা । বাড়ির কেউ তো জানেনা, শুধু আমি মনে মনে ঝড় তুলছি । খুব খুশি হয়েছিল বাড়ির লোকজন যখন স্কুলে চাকরিটা পেয়ে গেছিলাম । সেটা যে ছেড়ে দিয়েছি সেটাও বাড়ির লোক জানে না । ভাগ্যিস সূর্যদা সমিতির থেকে মাসোহারার ব্যবস্থা করে দিয়েছে । বাড়িতে খরচা বাবদ কিছু দিয়ে যা কিছু বাঁচে আমি আবার সমিতি তহবিলে জমা করে দেই । আজকের পর কি হবে বাড়ির সবার সেটাই খুব চিন্তা হচ্ছে । আজ সফল হই বা ব্যর্থ যেটা অবশ্যম্ভাবী তা হলো লোক জানাজানি হবেই । আশা করি বাড়ির কেউ আমায় ভুল বুঝবেনা । ছোটবেলা থেকেই অনেক স্বাধীনতা পেয়েছি আমি পরিবারের সবার থেকে। যে রকম কিন্তু আমার সমবয়েসী মেয়েরা অনেকেই পায় না । সে পড়াশোনায় হোক , সবার সাথে মেশা , বন্ধুদের সাথে সময় কাটানো , সমিতিতে যাতায়াত সবেতেই এই স্বআমার অতটাও ইচ্ছে ছিলোনা সশস্ত্র বিপ্লবে যোগদান করার , ছোটবেলা থেকে কোনোদিনই রক্ত সহ্য করতে পারিনা আমি । সূর্যদার বিপ্লবী চিন্তাধারা আমায় খুব প্রভাবিত করে সেই স্কুল জীবন থেকে কিন্তু যোগদান করার অনুপ্রেরণা পেয়েছি রামকৃষ্ণদার থেকে । রামকৃষ্ণদা প্রথম আমায় বুঝিয়েছিলেন সশস্ত্র বিপ্লব মানেই রক্তক্ষয়ী নয় , জীবন নেওয়া বা শহীদ হওয়া নয় । আমাদের সমিতির প্রধান উদেশ্য ব্রিটিশদের মনে সন্ত্রাস তৈরী করা । ওদের বুঝানো যে দলিত করে রাখলেও আমরা কত বড় শক্তি । পায়ের নিচে দাবিয়ে রাখার চেষ্টা করলেও আমরা পারি ওদের উপর কর্তৃত্ত্ব করতে । খুব খুব ভালো লাগতো রামকৃষ্ণদার কথা শুনতে । দলের সবাই বলতো আমি প্রেমে পরে গেছি রামকৃষ্ণদার । নির্মলের সাথে সম্পর্কের আগে আমি সত্যি বেশ ঘনিষ্ঠ ছিলাম রামকৃষ্ণদার । যে যাই বলুক আমার কাছে আমাদের সম্পর্ক টা গুরু-শিষ্যা র । মন্ত্রমুগ্ধর মতো শুনতাম রামকৃষ্ণদার কথা । ওর কথাতেই দেশপ্রেম , ওর কথাতেই অনুশীলন সমিতিতে যোগদান, ওর কথাতেই সশস্ত্র বিপ্লব । অকালে তুমি শহীদ হলে দাদা । তোমার প্রিয় শিষ্যা আজ তোমার স্বপ্ন পূর্ণ করবে প্রাবিকেল হয়ে এলো এবার উঠি সমিতিতে যেতে হবে । আজ আমার অগ্নি পরীক্ষা । আমার নেতৃত্বে দল আজ আক্রমণ করবে পাহাড়তলীর ইউরোপিয়ান ক্লাব । আজ শুক্রবার, সন্ধ্যের পর সাহেবরা ভিড় জমাবে ক্লাবে মোচ্ছবে । আমাদের প্রধান উদেশ্য ওই ক্লাবে হামলা করা । ক্লাবে ঢোকার মুখে একটি নির্দেশিকা দেওয়া আছে যে কুকুর এবং ভারতীয়র প্রবেশ নিষেধ । আজ ওদের বুঝাতে হবে নিকৃষ্ট ভাবে যাদের ওরা সম্বোধন করে তাদের আসল স্বরূপ । সূর্যদার গ্রেপ্তার, নির্মল , রামকৃষ্ণদার মৃত্যুতে আমাদের শক্তি হয়তো কমেছে কিন্তু মনোবল , মনোভাব , এগুলো যে অপরিবর্তনীয় সেটা আজ বুঝিয়ে দিতে হবে ব্রিটিশদের । সমিতির যে স্বপ্ন ছিল সমগ্র ভারত ব্যাপী অখণ্ড বৈপ্লবিক আন্দোলনের তার উদ্গীরণ অব্যাহত রাখতে হবে চট্ট্যগ্রামে । এর পরের কথা আর লেখা হবেনা হয়তো আমার নিজের হাতে তবু এটুকু আশা কেউ না কেউ তো লিখবে । আজ যদি আমরা ব্যর্থ হয়ে যাই তবুও আশা রাখবো এই যে আমরা কাউকে অনুপ্রাণিত করতে পারবো । যে আগুন ভারতের বুকে সূর্যদা জ্বালিয়েছেন সেই আগুনকে কোনোভাবেই স্তিমিত হতে দেবোনা আমরা। আমরা ব্যর্থ হলেও মানুষ আমাদের আদর্শ কে ধরে রাখবে সযত্নে, এইটুরাত সাড়ে ১০ টা বাজে । আমরা সবাই এসে জড়ো হয়েছি ক্লাবের সামনে । আমি আজ পাঞ্জাবি পুলিশের ছদ্মবেশ নিয়েছি । ক্লাবের প্রহরীরা সবাই পাঞ্জাবি পুলিশ , আমাকে দেখে সন্দেহ করার কথা নয় কারণ নিজেই নিজেকে চিনতে পারছিনা এই পোশাকে । পুরোদস্তুর পাঞ্জাবি বানিয়ে দিয়েছে আমাকে । আমি প্রথমে ভিতরে ঢুকবো । ক্লাবের ভিতরের প্রধান ঘরেই সব থেকে বেশি লোক থাকার সম্ভাবনা । ৮ জন বাইরে থাকলো, ওরা বেরোনোর রাস্তা আটকাবে , আমি আর বাকি চারজন দেওয়াল টপকে ভিতরে ঢুকলাম । আমার সাথের সঙ্গীরা ঢুকেই প্রহরীদের আক্রমণ করে ক্লোরোফর্ম দিয়ে বেহুঁশ করে দিলো। একটুও শব্দ করিনি আমরা । নিঃশব্দে ছায়া মূর্তির মতো ক্লাব প্রাঙ্গন পেরোলাম আমরা ৫ জন। প্রধান কক্ষে নাচ গান চলছে , প্রায় ৪০ জনের মতো সাহেব মেম রয়েছে ভিতরে , তাদের সাথে ছোট বাচ্চা ছেলে মেয়েও রয়েছে কিছু । ছিঃ !এরা নিজেকে সভ্য বলে দাবি করে এদিকে একরত্তি সব ছেলে মেয়েকে নিয়ে ক্লাবে বসে বাইজি নাচ দেখছে । পুরো ঘরটা দেখে নিয়েছি দরজার আড়াল থেকে । ঘরের চারদিকে দেওয়ালের ধার ঘেঁষে পর পর বসার জায়গা । মাঝের ফাঁকা অংশে গোল মতো জায়গা করে বাইজি নাচের আসর বসেছে । পুরো ঘর জুড়ে এদিকে ওদিকে হেঁটে বেড়াচ্ছে পানপাত্র হাতে বেয়ারারা । আমার সঙ্গী বললো হাতবোমা ছুড়তে ওই মাঝের জায়গায় । তাহলেই গোটা ক্লাবে হুলুস্থূল শুরু হবে আর আমরা গুলি চালাতে শুরু করবো । আমার মন অন্য কথা বলছে । ক্লাবে আজ প্রায় ১০ জন ছোট ছেলে মেয়ে রয়েছে । ঘরের মধ্যে বোমা ফেললে সেটা প্রাণঘাতী হবে । আসলে আমার মনে পড়ছে রামকৃষ্ণদার কথা । হত্যা নয় সন্ত্রাস ছড়ানোই আমাদের আসল উদেশ্য । ব্রিটিশ দেড় বোঝাতে হবে আমরা ওদের শক্তির কেন্দ্র বিন্দুতেও আঘাত হানতে প্রস্তুত । খারিজ করে দিলাম সঙ্গীদের ইচ্ছে । আমার হাতে শুধু রিভলভার । দলের ২ জনের কাছে রাইফেল আছে । তারা বাইরে দূরে রয়েছে আমাদের পলায়নের সময় পশ্চ্যাত ধাবনকারী দের আটকাবার জন্য । রিভলভার তাক করলাম ঘরের মাঝে ছাদ থেকে গুলির শব্দেই হুড়োহুড়ি শুরু হলো ঘরের মধ্যে, সশব্দে ভেঙে পড়লো বিশাল ঝাড়লণ্ঠনটা । সোৎসাহে সবাই চেঁচিয়ে উঠলাম “ইনকিলাব জিন্দাবাদ”, “IRA জিন্দাবাদ”। চিৎকার চেঁচামেচি শুরু হয়ে গেছে ঘরের মধ্যে । ঝাড়ের আলো নিভে যাওয়ায় ঘরের মধ্যে এখন হালকা আলো আঁধারি । সবাই হুড়মুড় করে এগোচ্ছে প্রস্থানের দরজার দিকে । এর মধ্যে হঠাৎ বাইরের দরজার সামনে বিস্ফোরণ । আমাদেরই দলের সহকর্মী বোমা ছুড়ে বসেছে দরজার গোড়ায় । মহিলা কণ্ঠে আর্তনাদ উঠলো প্রচন্ড । দাউ দাউ করে জ্বলছে ক্লাবের দরজাটা । ধাক্কা ধাক্কির মধ্যেই বাইরে থেকে গুলি চালানো শুরু করেছে দলের বাকি বিপ্লবীরা । স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া আছে খুন নয়, জখম করতে হবে যত বেশি সম্ভব বিদেশিকে । রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে মুহুর্মুহ গুলির আওয়াজে কেঁপে উঠছে ক্লাব চত্বর । এর মধ্যেই হঠাৎ ভিতরের ঘর থেকে গুলির আওয়াজ পেলাম । সেটা কি করে হয়? বিপ্লবীরা কেউ তো ভিতরে ঢোকেনি এখনো । লাফিয়ে ঢুকে পড়লাম আমি দরজা দিয়ে । জ্বলন্ত দরজার আলো আর ধোঁয়ার মধ্যে দেখলাম ৩ জন সাহেবকে রিভলভার হাতে গুলি চালাতে দরজার বাইরে লক্ষ্য করে । আমার দেখাদেখি বাকিরাও এবার ঢুকে পড়েছে ক্লাবের মধ্যে । দরজার সামনে রক্তাত্ব দেহে এক বিদেশিনী । শরীর টা গুলিয়ে উঠলো আমার , হতভম্ব ভাবটা কাটতেই দেখলাম টেবিলে-চেয়ারের আড়াল নিয়ে গুলি যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে সাহেব আর বিপ্লবী দের । বাচ্চা এক ছেলে আটকে পড়েছে গুলি যুদ্ধের মধ্যেই । মাতাল সাহেব একজন দিগ্বিদিক জ্ঞানশুন্য হয়ে গুলি চালাচ্ছে । আমার রিভলভর এ ৫টি তাজা কার্তুজ রয়েছে এখনো । একনাগাড়ে চালিয়ে দিলাম সাহেবকে লক্ষ্য করে । কোনো ভাবে দৌড়ে জ্বলন্ত দরজা টপকে লাফিয়ে বেরিয়ে গেলো বাচ্চাটা । যাক ওর গায়ে গুলি লাগেনি । ঘরের ভিতরে আমরা ৫ জন বিপ্লবী আর দুজন সাহেব তখন । দেশীয় বেয়ারারা এদিকে ওদিকে লুকিয়ে রয়েছে। পোড়া বারুদের গন্ধ বিষাক্ত তুলেছে ঘরের মধ্যেটা । ঘরের মাঝখানে যে বড়ো গদিটা ছিল সেটায় আগুন ধরে গেছে ততক্ষনে । আর ধোঁয়ায় বদ্ধ হয়ে উঠছে ঘরের পরিবেশ । আমাদের এবার পশ্চাৎধাবনের সময় । বেরিয়ে যাবার নির্দেশ দিলাম সবাইকে । একে একে পিছু হটছে সবাই । সবাইকে বাইরে পাঠিয়ে বেরোবো আমি । বাকি দুজন সাহেবের থেকে আর কোনো গুলির আওয়াজ আসছে না । নিশ্চই জখম হয়েছে ওরা । শেষজন দরজা পেরিয়ে গেলে আমি এগিয়ে গেলাম। দরজার ঠিক সামনে পরে রয়েছে অর্ধদগ্ধ মহিলার শরীর। এক মুহূর্তের জন্য পা থমকে গেলো আমার । সশস্ত্র বিপ্লবের নিষ্ঠুর পরিহাসের শিকার বিদেশিনীর আত্মার শান্তি কামনায় কয়েক মুহূর্ত মাত্র নিচে ঝুঁকে ছিলাম, মুখ তুলতেই সামনে দেখি উদ্যত রিভলভর নিয়ে এক সাহেব । মুহূর্তের মধ্যে রিভলভার তুলে ট্রিগার টানলাম আমি । খট । হ্যামারটা শব্দ করলো শুধু । গুলিশূন্য আমার রিভলভার । কিন্তু নাঃ । বুদ্ধি শুন্য হয়ে পড়িনি আমি “প্রীতি দিদি ই ই ই” । বাইরে থেকে চিৎকার করে উঠলো দলের এক ভাই গুলির আওয়াজ পেয়ে । ওরা দেখেছে আমি লাফিয়ে সরে যাওয়ার সময়ই গুলি চলেছে । বাইরে থেকেই পর পর দুটো হাত বোমা ছুড়ে মারলো । আগে থেকেই আগুন জ্বলছিল ক্লাব ঘরের মধ্যে । প্রচন্ড শব্দ করে একসঙ্গে ফাটল বোমা গুলো । একরাশ কাঁচ আর কাঠের সাথে আমি ছিটকে পড়লাম বাইরে । ঘরের কাঠের দেয়ালে আগুন জ্ব্লে উঠলো দাউ দাউ করে । পুরো ক্লাবটা জ্বলছে এখন । মাটিতে ছিটকে পরে মাথায় লেগেছিল আমার। উঠে দাঁড়াতে গিয়ে টাল সামলাতে না পেরে আবার পরে গেলাম । দৌড়ে এলো দুই বিপ্লবী ভাই । কাঁধে ঝুলানো রাইফেল । আমাকে ধরে দাঁড় কারাতে করাতে শুনতে পেলাম পুলিশের গাড়ির সাইরেন । একটা নয় অনেকগুলো গাড়ির আওয়াজ আসছে ক্যান্টনমেন্টআবার পরে গেলাম আমি ওদের হাত থেকে । ঠিক কোমরের উপরে গুলি লেগেছে আমার । লাফিয়ে সরে না গেলে বুকে এসে লাগতো । পেটে লাগাতে আরো সমস্যা হয়ে গেলো এই যে এবার আমি দাঁড়াতেও পারছিনা । কোনোরকমে আমায় টেনে এনে ফেলা হলো একটু দূরে একটা ঝোপের আড়ালে । প্রায় এসে পড়েছে পুলিশের বাহিনী । আগে থেকেই নির্দেশ ছিল কেউ কারোর জন্য পিছনে তাকাবেনা । আগেই অনেক লোকক্ষয় হয়েছে আমাদের। কিন্তু সঙ্গীরাও নাছোড় বান্দা । কিছুতেই আমায় ফেলে যাবেনা ওরা । মরিয়া হয়ে কোমরে বাঁধা বোমা হাতে তুলে চিৎকার করলাম আমি , পালাতেই হবে সবাইকে আমায় ফেলে । এখন সময় হয়েছে আমাকে ছেড়ে আমাদের আদর্শ কে অনুসরণ করার । আমি নগন্য মাত্র । নাছোড়বান্দা কিশোর ভাইটি আমার। স্কুলে আমার ছাত্র ছিল । কিছুতেই আমায় ছাড়ে না । সবাই মিলে টেনে ওকে আলাদা করে পিছু হটে গেলো । আমার দুই চোখ দিয়ে তখন অঝোরে জল পড়ছে । সাফল্যের আনন্দ ? না মৃত্যু ভয় ? না হঠাৎ করে বাড়িতে মঘাসের উপর আমাকে শুইয়ে রেখে গেছিলো ওরা । একটু মাথা তুলতে ঝোপের পাতার ফাঁক দিয়ে দেখলাম পুরো ক্লাবটা জ্বলছে তখনো । প্রায় ১০ টা পুলিশের গাড়ি দাঁড়িয়ে রয়েছে একটু দূরে । গণগনে আগুনে রাঙা হয়ে উঠেছে আশপাশের সব কিছু । ধোয়া উঠছে ওই উঁচু অবধি । আচ্ছা ওই ধোঁয়া পারবে আমাদের সাফল্যের কথা নির্মলর কাছে পৌঁছে দিতে । রামকৃষ্ণদা কি উপর থেকে দেখছে আমায় ? ধুর কিসব ভাবছি আমি । মাথাটা ঝিম ঝিম করছে একটু জল পেলে ভালো হতো । গলা আটকে আসছে তেষ্টায় । আবার এলিয়ে পড়লাম ঘাসের উপরে । অঝোরে রক্ত পড়ছে পেট দিয়ে । মাথায় ব্যাথা । চোখ দুটো কেমন ঝাপসা হয়ে আসছে । আচ্ছা এরকম ই কি হয় মৃত্যুর দূয়ারে এসে ? সূর্যদার কাছে আমাদের খবরটা কে পৌঁছে দেবে ? দলের বাকিরা সবাই আমার থেকে ছোটই হবে বয়েসে। বড়োজোর সমবয়েসী। আজকের পর ওদের সবাই আত্মগোপন করবে । নির্দেশ সেরকমই । রাত তো অনেক হলো । মা কি শুয়ে পড়েছে এখন? না এই বোমা গুলির শব্দে জেগে উঠে আমায় খুঁজছে ঘরের মধ্যে । মাথাটা ভারী হয়ে আসছে এবা “Search Search , Serch everywhere”। আওয়াজে ঘর কাটলো একটু। মাথা একটু তুলে দেখলাম খুব কাছেই ৮-১০ জন সাহেব পুলিশ। সর্বনাশ । আমাকে যদি দেখতে পেয়ে যায় । বাধা দেওয়ার সাধ্য নেই আমার । ওরা আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাবে, তার পর জেল, পুলিশের অত্যাচার , মেয়ে বলে রেহাই পাবনা কোনোমতে । পকেটে হাত ঢুকালাম । কয়েকটা গুলির পাশ থেকে বের হয়ে এলো কাগজে মুড়ানো ক্যাপসুলটা । চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে আবার জলে। এটুকুই শুধু দেওয়ার ছিল ভারত মাতা তোমায়। সায়ানাইড ক্যাপসুলটা মুখে পুরে দাঁতে কাটতেই শরীর টা কুঁকড়ে এলো ।


নামের আড়ালে 


সূর্যদা : বিপ্লবী সূর্য সেন ওরফে মাস্টারদা।

নির্মল : বিপ্লবী নির্মল সেন 

রামকৃষ্ণদা : বিপ্লবী রামকৃষ্ণ বিশ্বাস 



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Inspirational