আমি কালো কিন্তু অসুন্দর নই।
আমি কালো কিন্তু অসুন্দর নই।
কালো হয়ে জন্মানো যেনো একটা অভিশাপ। আর এই অভিশাপ একটা মানুষের জিবন কে শেষ করে দিতে পারে। একটি ধনী পরিবারেই জন্মগ্রহণ করে এক কালো ছেলে। ছেলে কালো জয়ে জন্ম নেওয়ায় পরিবারের সকলের মুখে ছিলো চিন্তা ও অখুশির ছাপ। কারন পরিবারের বাকি সদস্যরা ছিলো ফর্সা। ছেলেটা কালো হয়ে জন্ম নেওয়ায় সবার কাছে অবহেলা পেয়েই ছেলেটা আস্তে আস্তে বড় হচ্ছিলো। কালো হয়ে জন্ম নেওয়ায় ছেলেটাকে অন্য সবার কাছ থেকে আলাদা করে রাখা হতো। এমনকি বাড়িতে কোনো মেহমান আসলে পরিচয় করানোর জন্য তাকে সামনে নিয়ে আসা হতো না। তাদের কালো ছেলে নিয়ে লজ্জা হবে বলে। ঘরের বাকি সদস্যরা ঠিকই সবার কাছে মুল্যবান ছিলো কারণ তাদের গায়ের রঙ হলো ফর্সা। তাদের সবার সামনে নিয়ে খুব গর্ব করেই সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিত। কিন্তু কালো ছেলেটা থাকতো একা এক ঘরে। ঐ এক ঘরেই তার জিবন সীমাবদ্ধ ছিলো। তার আনন্দ বলে কিছুই ছিল না। সে তার কাজের খালার কাছেই বড় হতে থাকে। সে একটু বড় হয় এই পরিপ্রেক্ষিতে তাকে স্কুলে ভর্তি করানো হয়। আচ্ছা কালো ছেলেটার সাথে পরিচয় করিয়ে দেই। কালো ছেলেটার নাম হচ্ছে রিমন। সে তার স্কুলের মধ্যে সবচেয়ে কালো ছিলো। রিমন কালো হওয়ায় তার বাবা মা তাকে নিয়ে স্কুলে যেত না। কালো ছেলে লজ্জা পাবে। রিমন তার বাসার খালার সাথে স্কুলে যেত। রিমন কালো হওয়ায় ক্লাসে তার কোনো বন্ধু ছিলো না। কারন ক্লাসের কেউ তার সাথে মিশতে চায় না। তার সাথে বসতে চায় না। কোনো ব্যান্ছ ফাকা না থাকলে তখন বাধ্য হয়ে বসতে হতো। রিমন ছোট ছিলো তাই এগুলো তার উপলব্ধি হয়নি। আস্তে আস্তে রিমন বড় হওয়া শুরু করে। তার প্রতি মানুষের ব্যাবহার দেখে রিমন কষ্ট উপলব্ধি করতে থাকলো। ক্লাসের সবাই রিমনকে নিয়ে হাসি ঠাট্টা করতো। ক্লাসে তার নাম ব্যঙ্গ করে রাখলো কালু মিয়া। ক্লাসের সবাই রিমনকে কালু মিয়া বলেই ডাকত। রিমন এতে অনেক কষ্ট পেত। বাসায় তার খালার কাছে এসে কান্নাকাটি করতো। রিমন বাসায় আর কারো সাথে কিছুই বলতে পারতো না। কারন তার বাসার সবাইও তাকে অবহেলা করে। একমাত্র বাসার কাজের খালা ছাড়া। তার নিজের ভাই বোনও তাকে কালো বলে খোটা দিত। রিমন এইসব ব্যপার নিয়ে খুব কষ্ট পেলেও ঘরে চুপচাপ বসে থাকত। সে এইভাবে কষ্টে অপমানে বড় হতে লাগলো। রিমন আরও বড় হলো সে এখন কলেজে উঠেছে। রিমন কালো হলেও তার একটি সুন্দর মন রয়েছে। রিমন তার কলেজে একই ক্লাসের একটি মেয়েকে পছন্দ করে। মেয়েটির নাম ছিলো আয়েশা। আয়েশা ছিলো ক্লাসের সবচেয়ে বেশি সৌন্দর্যের অধিকারিনী। তাই তার রুপ নিয়ে ছিল অহংকার। রিমন আয়েশাকে পছন্দ করলেও মুখ ফুট এ তার পছন্দের কথা জানাতে পারে না। কারন যথারিতি স্কুলের মতো কলেজেও রিমনকে নিয়ে ক্লাসের সবাই ঠাট্টা করে। ক্লাসে কোনোদিন পড়া না পারলে শিক্ষকরা অনেক অপমান করতো এমনকি তার গায়ের রঙ নিয়েও অপমান করতো আর ক্লাসের সবাই এগুলা দেখে হাসাহাসি করতো। কলেজের সিনিয়ররা রিমনকে অনেক রেগিং করতো। রিমনকে দিয়ে অনেক কাজ করাতো। রিমনের কাছে থাকা সব টাকা রেখে দিত। রিমন ভিতু হওয়ায় কাউকে বিচারও দিতে পারতো না।কারন রিমনকে ভয় দেখিয়ে রাখত। ছেলেটা কালো হওয়ায় না পেত পরিবারের ভালোবাসা না পেত বন্ধুবান্ধবদের ভালোবাসা না পেত অন্য মানুষের ভালোবাসা। রিমনের জিবন যেন নরক যন্ত্রণায় কাটতে লাগলো। রিমনকে শুধু একজন ই ভালোবাসতো সে হলো তার বাসার কাজের খালা। রিমন আয়েশাকে অনেক পছন্দ করতো। ক্লাস হওয়ার সময় পড়ায় মনোযোগ না দিয়ে শুধু আয়েশাকেই দেখতো। আয়েশাও বুঝতে পেরেছে রিমন যে তাকে পছন্দ করে। কিন্তু আয়েশা এই ব্যাপারে কোনো পাত্তা দেয় না কারন আয়েশাকে ক্লাসের সবাই পছন্দ করে। রিমন যে আয়েশাকে পছন্দ করে এই ব্যাপারে রিমন তার এক সহপাঠীকে জানায়। তার নাম হলো রাফি। রাফিও আয়েশাকে পছন্দ করে কিন্তু এই ব্যাপারে রিমন জানতো না। রাফি রিমনের কাছ থেকে রিমনের আয়েশাকে পছন্দের কথা শুনে রাফির অনেক রাগ হয় কিন্তু রিমনকে সেটা বুঝতে দেয় না। রাফি এক শয়তানি বুদ্ধি বের করে। রিমনকে বলে তুই যদি আয়েশাকে ক্লাসের সবার সামনে তোর পছন্দের কথা বলতে পারিস তাহলে আয়েশা তোর কথায় রাজি হয়ে যাবে। কারন আমার মনে হয়েছে আয়েশাও তোকে পছন্দ করে। রিমন বোকা হওয়ায় রাফির কথা বিশ্বাস করে। রাফি কলেজ ছুটি হওয়ার পরে ক্লাসের সবার উদ্দেশ্য এ বলে রিমন ক্লাসের সবার সামনে আয়েশা কিছু বলতে চায় সবাই একটু রিমনের কথা ধৈর্য সহকারে শুনে যাও। ক্লাসের সবাই এই কথা শুনে মোটামোটি বুঝে ফেলে কি ঘটতে চলেছে। রিমন আয়েশার সামনে যায় এবং সুন্দর করে গুছিয়ে তার মনের কথা বলতে লাগলো। আয়েশা চুপ করে রিমনের সব কথা শুনছিলো এবং পরক্ষণেই সবার সামনেই রিমনের গালে ঠাস করে একটা চড় মেরে বসে আর রিমনের চেহারা গায়ের কালার নিয়েও অপমান করে। ক্লাসের সবাই এমন ভাবে হাসছিল যে তারা অনেক মজা পেয়েছে। তাদের সাথে রাফিও অনেক হাসছিল। রিমন বুঝতে পারে যে রাফি ইচ্ছাকৃত ভাবেই রিমন এর সাথে এই কাজটি করেছে। রিমন অনেক অপমানিত হয়ে সেইখান থেকে চলে যায়। রিমন বাসায় গিয়ে নিজেকে একটা ঘরে আবদ্ধ করে রাখে। সে বাচাঁর ইচ্ছা হারিয়ে ফেলে এত অপমান আর কষ্ট সহ্য করার মতো ছিলো না। সে আত্যহত্যা করতে চায় কিন্তু ভয়ে সেইটাও করতে পারে না। পরদিন রিমনের বাবা মা কে কলেজে ডাকা হয়। কলেজের প্রিন্সিপাল রিমনের গতকালের ঘটনা সম্পর্কে সব কিছু বলে আর বলে রিমনে জন্য আমাদের কলেজে বদনাম হয়েছে। আয়েশা সহ আয়েশার বাবা মা কলেজে এসে রিমনের নাম বিচার দিয়েছে এবং তারা এর সুষ্ঠ বিচার চেয়েছে। আরও বলে যে রিমন যদি পুনরায় এই কাজ রিপিট করে তাকে আমাদের কলেজে রাখা আর সম্ভব হবে না। কলেজের প্রিন্সিপালের কথায় রিমনের বাবা মা অনেক অপমান বোধ করে। রিমনের বাবা মা বাসায় গিয়ে রিমনকে অনেক মারধর শুরু করে বলে যে তুই কালো হয়ে জন্মাইছিস এর জন্যই তো আমাদের সবসময় অপমানবোধ হয় আবার তোর জন্য কলেজে আজ অপমানিত হতে হলো। তুই কি মরতে পারিস না তুই মরলেও তো একটু শান্তি পেতাম। রিমন অনকে কান্নাকাটি করে হঠাত করে চুপ হয়ে ঘরে চলে যায়। ঘরের দরজা আটকিয়ে দেয়। ভয়কে জয় করে রিমন ফাসিঁতে ঝুলে পড়ে আত্যহত্যা করেই ফেলে। কারন সে এই জিবনটাকে আর নিতে পারছিলো না। আর নিবেই কিভাবে রিমনের জিবন ঘিরে শুধু ছিল অপমান আর অপমান। কালো হয়ে জন্ম হওয়ায় বাহিরের মানুষ তো দুরের কথা নিজের বাবা মায়েরই আদর, স্নেহ, ভালোবাসা পায়নি। অনেক সময় হয়ে গেছে রিমন ঘরের দরজা না খুলায় ঘরের সবাই রিমনকে ডাকাডাকি করে তবুও কোনো লাভ না হওয়ায় ঘরের দরজা ভেঙে ফেলে। দরজা ভাঙতেই দেখতে রিমনের দেহ দরজার সাথে ঝুলে আছে। নিষ্প্রান দেহটা ঝুলছে চেহারায় ছিল শত কষ্টের ছাপ চোখেও পানির ফোটার ছাপ ভেসে আছে। রিমনের দেহর নিচে একটা চিঠি পেল। চিঠি খুলতেই দেখতে পেল। মা, বাবা আমি বুঝ হওয়ার পর থেকে দেখতে পেয়েছি আমি জন্মানোয় তোমারা খুশি ছিলে না। কারন আমি কালো জয়ে জন্মেছিলাম। কিন্তু বিশ্বাস করো এতে আমি অনেক কষ্ট পেলেও মেনে নিয়েছিলাম। আমার সব বন্ধুরা তার বাবা মায়ের সাথে স্কুলে যেত আর আমি যেতাম বাসার কাজের খালার সাথে। আমার বন্ধুদের দেখে আমারও খুব ইচ্ছে হতো তোমার হাত ধরে স্কুলে যাওয়ার কিন্তু সেই ভাগ্য আমার ছিলো না কারন আমি কালো হয়ে জন্মেছিলাম। আমি বুঝতে পারতাম আমি কালো হয়ে জন্ম নেওয়ায় তোমরা লজ্জিত। এটা আমার জন্য অনেক কষ্টের ছিল যে নিজের ছেলে কালো হওয়ায় তার বাবা মা লজ্জিত। কিন্তু আমি তো নিজের ইচ্ছায় কালো হয়ে জন্মায়নি। বিধাতাই আমাকে কালো বানিয়ে পাঠিয়েছে। আমি এর আগেও অনেকবার আত্নহত্যা করতে চেয়েছি কিন্তু কেমন জানো একটা ভয় কাজ করতো তাই শত চেষ্টা করেও পারিনি। আজ যখন তোমরা আমাকে আবার মরার পথ দেখালে তখন আমার সকল ভয় সরে গেলো। তোমরা এখন রিমন নামক বিপদ মুক্ত তোমরা ভালো থেক। আর পারলে আমার জন্য দোয়া করো যেনো এপারের মতো ওপারেও এত কষ্ট থাকতে না হয়।
