STORYMIRROR

Lamia Islam Tonni

Romance Others

3  

Lamia Islam Tonni

Romance Others

আমাকে আগলে রাখার জন্য এই বুকটা যথেষ্ট.....

আমাকে আগলে রাখার জন্য এই বুকটা যথেষ্ট.....

8 mins
361


অপারেশন থিয়েটারের দরজা ঠেলে বের হতেই মুখোমুখি হতে হলো, লম্বা সুঠাম দেহের অধিকারী একজন পুরুষের! তাকে দেখে চিনতে, আমার খুব একটা কঠিন হলো না। একসময়ে আমার সবচেয়ে কাছের মানুষ ছিল যে। সবচেয়ে ভরসা যোগ্য ছিল সে! একসময় যাকে আমি খুব বেশিই ভালোবাসতাম। সময়ের ব্যবধানে আজ সে আমার প্রাক্তন প্রেমিক! 


কিন্তু, সে এখানে কি করছে? আর, তার চোখ মুখও কেমন যেন দেখাচ্ছে। আচ্ছা, ৭ বছর আগে যখন দেখেছিলাম, তখন তো ইশাদ এমন ছিল না। কতোটা সুন্দর, স্মার্ট ছিল দেখতে। ৭ বছরের ব্যবধানে কতোটা পাল্টে গিয়েছে। চুলগুলো উষ্কখুষ্ক। মুখটা শুকোনো! 


আমার সব কল্পনা যল্পনার মাঝেই অপারেশন থিয়েটার থেকে বেড়িয়ে আমার একমাত্র ভরসা, আমার শক্তি ও সাহসের একমাত্র উৎসহ আমার স্বামী। হ্যাঁ, ইশাদের উপর থেকে বিশ্বাসটা হারিয়ে যাওয়ার পর কাউকে বিশ্বাস করতে পারিনি আমি। তবে, আমার স্বামীকে বিশ্বাস করেছি। করতে বাধ্য হয়েছি। কারণ, সে মানুষটাই এমন! 


ইশাদ এগিয়ে এলো। আমাদের উদ্দেশ্যে জিজ্ঞেস করল,


'বাবা কেমন আছেন? ঠিক আছেন? চিন্তার কোনো কারণ নেই তো ডক্টর?


আমি কিছু বলার আগেই তাহিন এগিয়ে এলেন। ইশাদের কাঁধে হাত রেখে আশ্বাসের স্বরে বললেন,


'রিলাক্স! এতো হাইপার হওয়ার কিচ্ছু নেই। অপারেশন সাকসেসফুল। এখন চিন্তার কোনো কারণ নেই। কিছুক্ষণের ভেতরেই আপনার বাবাকে কেবিনে দেওয়া হবে।'


উনি কথা বলতে বলতেই আমি মাস্ক ও গ্লাভস খুলে ফেললাম। ইশাদ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে আমার দিকে তাকাতেই থমকে গেলো। পিছিয়ে গেলো কয়েক পা! হয়তো, নিজের বিস্ময় কাটিয়ে উঠতে পারছে না। 


আমি কয়েক পা এগিয়ে গেলাম। ইশাদের ঠিক সামনে গিয়ে প্রশ্ন করলাম,


'কেমন আছো, ইশাদ?'


ইশাদ কিছু বলল না! এখনও ওভাবেই তাকিয়ে আছে। আমি হালকা হেসে তাহিনের পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। উনার বা'হাতটা ধরে কাঁধে মাথা রাখলাম। ইশাদকে উদ্দেশ্য করে বললাম,


'উনি আমার স্বামী। আমার মতে, পৃথিবীর বেস্ট স্বামী উনি।' 


তাহিন হালকা হাসলেন। হয়তো, বুঝলেন! কারণ, উনি জানেন ইশাদের কথা। সবটা জেনেই বিয়ে করেছিলেন আমাকে। আমার সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিয়েছিলেন। 


তাহিনের কাঁধ থেকে মাথা তুললাম আমি। তাহিনকে উদ্দেশ্য করে বললাম,


'ও ইশাদ!'


তাহিন সামনে এগিযে গেলেন। ইশাদের দিকে হাত বাড়িয়ে খুব মিষ্টি করে বললেন,


'আমি তাহিন চৌধুরী। নাইস টু মিট ইউ, মি.ইশাদ!'


ইশাদ জোড় পূর্বক হাসার চেষ্টা করল। ভদ্রতা স্বরূপ ডান হাত বাড়িয়ে বলল,


'মি টু!'


'তোমার ওয়াইফ কেমন আছে, ইশাদ?' 


ইশাদকে প্রশ্নটা করতেই ওর মুখটা কেমন যেন ফ্যাকাসে হয়ে গেলো। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম,


'আর তোমাদের সন্তান?'


ইশাদ মলিন হেসে বলল,


'বউ-ই তো নেই। সন্তান আসবে কোত্থেকে?'


'মানে?' 


ঠিক তখনই উনার কেবিনের দিক থেকে দৌড়ে এলো আড়াই বছরের একটা বাচ্চা। পড়নে তার লাল টুকটুকে জামা। গায়ের রং ধবধবে ফর্সা। ছোট চুলগুলোতে দু'টি ঝুটি করা। তার দৌড়ের তালে করিডোর কাঁপিয়ে ভেসে আসছে পায়ে থাকা নুপুরের রিনঝিন শব্দ। তাকে দেখতে যেন পরীর মতো লাগছে!


বাচ্চাটা দৌড়ে এসেই, 'বাবা' তাহিনের কোলে উঠে পড়লো। তাহিন মুচকি হেসে তাহিয়াকে কোলে তুলে নিল। মেয়েটা হয়েছেও বাবার পাগল!


'আমাদের মেয়ে, তাহিয়া!' 


ইশাদকে উদ্দেশ্য করে কথাটা বলতেই ওর ফ্যাকাসে মুখটা আরো ফ্যাকাসে হয়ে গেলো। হালকা হেসে বলল,


'মাশাল্লাহ্!'


তাহিন গাঢ় চুমু একে দিলেন মেয়ের কপালে। মেয়েকে উদ্দেশ্য করে বললেন,


'আম্মু? আঙ্কেলকে সালাম দাও।'


তাহিয়া বেশকিছুক্ষণ গম্ভীর মুখ করে তাকিয়ে রইল ইশাদের দিকে। কিন্তু, কিছু বলল না। তাহিন আবার বললেন,


'কি হলো আম্মু? বাবার কথা শুনবে না?'


তাহিয়া এবার আমার দিকে তাকালো। তারপর, তার বাবার দিকে তাকাতেই দেখতে পেল, উনি তার দিকেই তাকিয়ে আছে। হয়তো, বুঝলো বাবা তার উত্তরের অপেক্ষাতেই আছে। সে আগের মতোই মুখ গম্ভীর করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলে উঠলো,


'আত্তামুয়াইকুম।' 


ইশাদ আবার হাসলো। হাসি মুখেই বলল,


'ওয়ালাইকুমুস সালাম, মামুনি।'


তাহিয়া সাথে সাথেই মুখটা ফিরিয়ে নিল। তাকে দেখে মনে হচ্ছে, ইশাদকে তার পছন্দ হয়নি। ইশাদ আবার বলল,


'লামিয়া? আমি আসছি। ভালো থেকো।'


কথাটা বলে পেছন ঘুরতেই আমি ডেকে উঠলাম,


'কই বললে না তো, তোমার বউ বাচ্চার কথা?'


ইশাদ আগের মতোই হাসলো। মুখে হাসি ধরে রেখে বলল,


'থাক না সেসব কথা! তুমি তো ভালোই আছো। আমার কথা জেনে কি হবে? তবে, একটা কথা কি জানো? কাউকে কষ্ট দিয়ে কেউ কখনো সুখী হতে পারে না! আমিও পারি নি। (তাহিনকে উদ্দেশ্য করে) মি.চৌধুরী? ভালো থাকবেন। আর, ভালো রাখবেন ওকে। আমি ওকে দেওয়া কথা রাখতে পারিনি। তবে, আপনি রাখবেন। আমি দোয়া করব।' 


কথাটা বলেই এক পা দু'পা করে করিডোরের আড়ালে হারিয়ে গেলো ইশাদ। আমি ঠাই দাঁড়িয়ে রইলাম। উহুঁ, ওকে পাই নি বলে কষ্ট হচ্ছে না আমার। বরং, ও ভালো থাকার জন্য আমাকে ছেড়ে গিয়েও ভালো থাকতে পারেনি বলে আফসোস হচ্ছে! একজন মানুষ হিসেবে খারাপ লাগছে ওর জন্য। ব্যস, এইটুকুই! 


~~~~


৭ বছর আগে ইশাদই আমায় ছেড়ে চলে গিয়েছিল। শুধুমাত্র ইতুকে বিয়ে করবে বলে! ইতু আমার দুঃসম্পর্কের কাজিন ছিল। ইশাদের সাথে রিলেশনে থাকাকালীন যখনই দেখা করতে যেতাম ইতু আমার সাথে যেতো। সেখান থেকেই ওদের পরিচয়। আস্তে আস্তে ভালো লাগা ও সেখান থেকেই ভালোবাসা। আর হবে নাই বা কেনো? ইতু দেখতে আমার চেযে অনেক সুন্দরী! সেখানে আমি কিছুই না! ওর মতো স্টাইলিশও নই! খুবই সাধাসিধে! তার উপর মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। আর ইশাদ? সে তো বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে! তার ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড আমার চেয়ে অনেক ভালো। তার সাথে কি আমাকে মানায়? এসব কথা সে আমায় বলেনি, এসব কথা ইতু আমায় বলেছে। সে যাইহোক! আমার জন্মদিনের দিন আমার বোন ও আমার বয়ফ্রেন্ডের দেওয়া বেস্ট উপহার ছিল তাদের বিয়ের কার্ড! ভেঙে পড়েছিলাম ভীষণ ! সামনে মেডিক্যালের এডমিশন টেস্ট ছিল। বাসায় কারো সাথে কথা বলতাম না। ঠিকমতো খেতাম না। ঘুমাতাম না! সারাদিন টেবিলেই বসে থাকতাম। কিন্তু, পড়ার 'প' ও হতো না। এডমিশন টেস্টের জন্য যেই কোচিং-এ ভর্তি হয়েছিলাম। উনি (তাহিন) সেখানকার টিচার ছিলেন। একদিন কোচিং ছুটির পর হুট করেই আমায় ডেকে বললেন, 


'কোনো সমস্যা তন্নি? তোমাকে ক্লাসে খুব একটা মনোযোগী দেখা যায় না! পড়াশোনাও ঠিকমতো পারছো না। এভাবে চললে তুমি মেডিক্যালে চান্স পাবে বলে মনে করো?'


সেদিন শুধু হালকা হেসে বলেছিলাম, 


'আর হবে না ভাইয়া!'


তারপর আবার একই ঘটনা ঘটছিল! কোচিং-এ ভর্তি হওয়ার প্রথম দিন থেকেই তাহিন আমাকে লক্ষ করছিলেন। শুরুর দিকে বেশ চঞ্চল থাকলে শেষে গিয়ে স্থির হয়ে যাওয়াটা তাকে বেশ ভাবাচ্ছিলেন। তাই, একদিন কোচিং শেষে উনি আমাকে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে পাশেই একটা পার্কে যায়। সেদিন আমাকে জিজ্ঞেস করে, আমার হুট করেই বদলে যাওয়ার কারণ। প্রথমে বলতে না চাইলেও পরে সবটা বলে দেই। কেনো বলি জানিনা! তবে, কোচিং-এর প্রথম দিন থেকেই তার সাথে কথা বলতে কম্ফোর্ট ফিল করতাম। অন্যান্য ভাইয়াদের তুলনায় উনি কথা কম বলতেন। কিন্তু, খুব ফ্রেন্ডলি ছিলেন। সেদিন, সবটা শোনার পর উনি আমাকে কোচিং-এ যেতে নিষেধ করে দেন। এক্সট্রা সময় নিয়ে আমাকে বাসায় পড়ানো শুরু করেন। ইনফ্যাক্ট, আমার পড়ার রুটিনটাও তার কথা অনুযায়ী চলতো। কখন পড়ব,কতোটুকু পড়ব,কীভাবে পড়ব? সবটাই উনি ঠিক করে দিতেন। পড়ার সময় হলে আমাকে কল করে সবটা বলে দিতেন। কোনো কিছু বুঝতে সমস্যা হলে তাকে কল করে সবটা বুঝে নিতাম। এডমিশন টেস্টের দিন ঘর থেকে বের হওয়ার সময় ফোনে একটা ম্যাসেজ আসে,


'অল দ্যা বেস্ট তন্নিজা। আই উইশ...!'


ম্যাসেজটা উনার নাম্বার থেকে আসে। কিন্তু, ম্যাসেজটা অসম্পূর্ণ। যাই হোক, এসব নিয়ে খুব একটা ভাবলাম না আমি। পরীক্ষা শেষ হলো! ফলাফল প্রকাশের দিন আমার থেকে বেশি টেনশনে উনি ছিলেন। এমনকি রেজালটা দেখার পর আমার থেকে বেশি খুশিটাও উনিই হয়েছিলেন। ভাগ্যগুনে ডিএমসিতে চান্স পেয়ে যাই। রেজাল্ট বোর্ড চেক করার সময় উনি পাশে ছিলেন। ৫ নং রেঙ্ক-এ নিজের নামটা দেখে সত্যিই অবাক হয়েছিলাম। ইশাদকে হারানোর কষ্টটা সেদিন মনেই ছিল না! 


পরদিন সকালে, খুব শান্তিতে ঘুমোচ্ছিলাম। হঠাৎ করেই আম্মু ডেকে বললেন, 


'লামু? তাড়াতাড়ি ওঠ।'


ঘুমু ঘুমু চোখ মেলে প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে তাকাতেই আম্মু বললেন,


'তাহিনের বাসা থেকে তোকে দেখতে আসছে! তাড়াতাড়ি উঠে ফ্রেশ হ। উনারা চলে আসবেন।'


আম্মু কথাটা শেষ হতেই বিদ্যুৎ বেগে উঠে বসলাম আমি। আশ্চর্য! এসব কি হচ্ছে? দেখতে আসছে মানে?


আমি কিছু বলার আগেই আম্মু বেড়িয়ে গেলেন। কিছুক্ষণ বাদেই, বাবা রুমে ঢুকলেন। আমি তখনও একই ভাবে বসে। বাবা পাশে বসে মাথায় হাত রাখলেন। স্নেহ মাখা স্বরে বললেন,


'কোনো ঝামেলা করিস না মা। তোর ইচ্ছে অনুযায়ী তোকে সময় দিয়েছি। তুই মেডিক্যালে চান্স পেয়েছিস। এখন তো তোর কোনো সমস্যা নেই।'


আমি টলমল চোখে বাবার দিকে তাকাতে তিনি আবার বলেছিলেন,


'আমি তোর কষ্টটা বুঝি। কিন্তু, মেয়েরা আজীবন বাবার বাড়িতে থাকতে পারে না। তাদের জন্মই হয়, পরের ঘরে যাওয়ার জন্য। একদিন না একদিন সবারই বিয়ে হয়। তোরও হবে। যেহেতু, তাহিন খুব ভালো ছেলে। আমরা অনেকদিন যাবৎ ওকে চিনি। সেহেতু, এতো ভালো ছেলেকে হাতছাড়া করা ঠিক হবে না। প্লিজ মা...।'


সেদিন বাবার কাকুতি মাখা স্বরের বিপরীতে আমি কাকুতি করতে পারিনি। বলতে পারিনি, 'বাবা আমি বিয়ে করব না!' কার জন্য করব? যে ধোঁকা দিয়েছিল তার জন্য? যে আমাকে ভালোই বাসেনি তার জন্য কষ্ট পাব কেনো? কেনোই বা বাবা মাকে কষ্ট দিব? রাজি হয়ে যাই বিয়েতে! 


বিয়ে হয়ে যায়। দেখতে দেখতে কেটে যায় অনেক বছর! বিয়ের ৪ বছর পেড়িয়ে যাওয়ার পরও যখন নাতি-নাতনির মুখ দেখলেন না তখন কথা শোনাতে লাগলেন শ্বাশুড়ি। কথা শুনাতে লাগলেন, শ্বশুর বাড়ির সবাই। কিন্তু, তখনও উনি আমার পাশে ছিলেন। ছায়া হয়ে আগলে রেখেছিলেন। ৪ বছর পর প্রথম আমার সম্মতিতে আমায় ছুঁয়েছিলেন উনি। যার ফল, তাহিয়া! ওর বয়সও প্রায় ৩ বছর হতে চলল। কিন্তু, এখনও তার বাবাকে ভালোবাসার কথা আমি বলিনি। তবে, বিশ্বাসটা সেই কবেই অর্জন করে নিয়েছেন। যদি কেউ আমার বিশস্ত মানুষের তালিকা চায়, সর্বপ্রথমেই তার নাম থাকবে। আর সর্বশেষেও! চোখ বন্ধ করেই তাকে ভরসা করতে পারি আমি। আজ আমি এতোটা পথ এসেছি শুধু তার জন্য! হ্যাঁ, আজ তাকে আমি বলব, 'ভালোবাসি! ভীষণ ভালোবাসি।'


অতীতের কথাগুলো ভাবছিলাম। ঠিক তখনই পাশে এসে দাঁড়ালেন কেউ। রাত তখন ২ টোর কাছাকাছি তো হবেই! আমি বুঝলাম তার আগমন। কিছু বললাম না। উনিও আমার মতো করেই জানালা ঘেঁষে দাঁড়ালেন। চাঁদটা আজ জোৎস্না ছড়াচ্ছে চারিদিকে। রাতের আধারে জোৎস্না ছড়ানো চাঁদ সেই সাথে ঠান্ডা হাওয়া! মৃদু হাওয়ায় থেকে থেকে চুলগুলো উড়ছে আমার। বাহিরের পরিবেশটা খুব সুন্দর দেখাচ্ছে! বেশ কিছুক্ষণ বাহিরে তাকিয়ে রইলেন। কিছুক্ষণ পর সেদিকে তাকিয়েই বললেন,


'ইশাদকে এখনও ভালোবাসো তাই না? খুব মিস করছো ওকে? শুনেছি, ইতু চলে যাওয়ার পর ও আর বিয়ে করে নি। তুমি চাইলে ওর কাছে ফি...'


উনি কথা শেষ করার আগেই মুখটা চেপে ধরলাম। উনি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। আমিও তাকিয়ে আছি। জানালা ভেদ করে জোৎস্না তার চোখেমুখে পড়তেই চোখমুখ চিক চিক করে উঠলো। কে বলেছে ফর্সা শরীরে সাদা রং বেমানান? এই গভীর অন্ধার ঘরটিতেও তাকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে! শুধু তাই নয়, চাঁদের আলোতে তাকে অসম্ভব সুন্দর দেখাচ্ছে! আমি মিষ্টি করে হাসলাম। হাসি মুখে বললাম,


'আমার কিচ্ছু চাই না! শুধু আপনাকে চাই। একটা জীবনে পরিপূর্ণভাবে বেঁচে থাকার জন্য আপনাকে চাই। শুধু ইহকালে নয় পরকালেও আপনাকেই চাই। আজীবন, পাশে থাকার জন্য আপনাকেই চাই। ছায়ার মতো আগলে রাখার জন্যও আপনাকেই চাই! এক কথায়, আমার জীবনের শুরু থেকে শেষ অব্দি আপনাকে চাই। আমাকে যদি সৃষ্টি কর্তা আরেকবার পৃথিবীতে আসার সুযোগ দেন, আমি তখনও জীবন সঙ্গী হিসেবে আপনাকেই চাইব! ৭ বছরের না বলা কথাটি আজ বলব! ভালোবাসি। ভীষণ ভালোবাসি আপনাকে!'


উনি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন আমার দিকে। উনার চোখ দু'টো পানিতে চিকচিক করে উঠলেন! মোহাচ্ছন্ন স্বরে বললেন,


'মারাত্মক ভালোবাসি! শেষ নিঃশ্বাস অব্দি ভালোবেসে তোমার পাশে থাকব, পিচ্চি!'


পরম আবেশে তার বুকে মাথা রাখলাম। শান্তিতে চোখ জোড়া বন্ধ করে নিলাম। সাথে সাথে চোখের কোণ বেয়ে গড়িয়ে পড়ল, দু'ফোটা পানি! উঁহু, এই কান্না কষ্টের নয়। আনন্দের! এই কান্না শান্তির! হ্যাঁ, আমাকে আগলে রাখার জন্য এই বুকটা যথেষ্ট। ভরসার জন্য, জড়িয়ে রাখার জন্য এই হাত জোড়া যথেষ্ট। ভেঙে পড়ার আগেই জুড়িয়ে দেওয়ার জন্য, আমাকে ভালোবাসা ও ভালো রাখার জন্য এই আস্ত মানুষটা যথেষ্ট! আজীবন আমার পাশে থাকার জন্য, সে একাই একশো! ভালোবাসি মানুষটাকে! আজীবন বাসব!


সমাপ্ত.......


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance