আবহমান
আবহমান
স্কুল থেকে ফিরে থুম্বোপানা মুখ করে আছে ফুলচাঁদ। হেমালি খেতে ডাকতে বলল," প্যাটটা দমে দুখাইছে রে মা। ভোখ নাই অ্যাকটুকো। " মনটা খারাপ হয় হেমালির। ঝাল ঝাল মুনগাখাড়ির সব্জী দিয়ে ভাত খেতে ভালবাসে ছেলেটা। থাকগে। রাত্তিরে খাবে খন। দুটো কাঠকুটো আর গোবরের ভরসায় হ্যাটকুলিতে নেমে যেতে যেতে রঙ্গিকে ডেকে কুঁকরো ছাগুলোকে খাবার দিতে বলে গেল। রঙ্গি ঘর থেকে বেরিয়ে ভাইয়ের মুখ আঁধার দেখে অবাক। "কইছে রে ভাই?" ভ্যাক করে কেঁদে ফেলে ফুলচাঁদ। " দিদিরে, মাস্টারটা কাইল্যে ইস্কুল যাতে মানা কইরলেক। মোকে গাধা কহিলেক। রেলগাড়ির আঁকটা হামি নাই বুঝলি। " রঙ্গি অবাক হয়ে তাকায় ভাইয়ের দিকে। রেলগাড়ির আবার অঙ্ক হয়! " হাঁ রে দিদি, বোর্
ডে চকে ফটো কইরলেক মাস্টারে। মাচিস বাকসের পারা। চালাটির ওপর একটা কাতুরপারা আংটা। ইহার বাদ পেলাটফরমের ফটো কইরলেক। হুই আমাদের উ ঢিপটার লে উঁচা আর বলখেলা টাইয়ের পারা লাম্বা। কিনা বুঝলিরে দিদি?" রঙ্গি আর কি বুঝবে? ও জানে ওর বাবা তিনবছর আগে রেলগাড়িতে চেপে কোথায় কাজে গেছে। আর আসেনি।" হঠাৎ কি ভেবে চোখদুটো ঝিকিয়ে ওঠে রঙ্গির। " ভাইরে, হামরা তিনজনা একদিন বাসে চেপে পুইল্যা যাবো। রেলগাড়ি দেখব। যাবি ভাই? কখুনো দেখি নাই।" নব্বই বছর আগের এই বাংলারই প্রায় মিথ হয়ে যাওয়া এক গেঁয়ো পুরুতকন্যার মুখের কথা আজ আবার এক কুর্মিমেয়ের উচ্চারণে। শব্দরা থেকেই যায় কোথাও না কোথাও।