ককপিট
ককপিট
আমাকে ওরা কলকাতায় থাকতে দেবে না. কাল রাত্তিরে পুলিশ এসেছিলো. শাসিয়ে বলে গেছে, সকালের ফ্লাইটেই যেন শহর ছেড়ে যাই, কোনো পার্টি-পলিটিক্সের যেন চেষ্টা না করি. প্রিয় দেশ, আমি তোমার কি করেছিলাম?
আকাশে মেঘ. যান্ত্রিক ডানাতে ভর দিয়েই উড়তে উড়তে চলেছি. অনেক নীচে আমার পৃথিবী. মাটি, জমি, ক্ষেত, বাড়ি, নদী.. আমি হাত বাড়াচ্ছিলাম. যদিও বা একটুকরো সাদা তুলোট কাগজ, হাতে এসে ঠেকে...
আমার কাগজপত্রগুলোকে, ওরা টুকরো টুকরো করে ছিঁড়েছে. কালি ছিটিয়েছে দেওয়ালে, ছড়িয়ে ভেঙেছে আয়না, ঘর, আমার কলমদান. আমি ধ্বংসের মধ্যে বসেছিলাম. মতের অমিল হলেই বুঝি বা, এরকমটি করতে হয় ? প্রিয় দেশ, বাড়াবে না তোমার হাত?
১২ বছরের কন্যাটি, ২৫০ কিলোমিটার হেঁটেছে. মেঘের ওপর দিয়েই হাঁটতে হাঁটতে আসছে কেমন, আমি আমার স্বচ্ছ কাচের জানলাটার ভেতর দিয়ে ওর দিকে তাকিয়েছিলাম. আমাকে ককপিটে যেতে হবে, এক্ষুণি! এই প্লেনটাকে থামানো দরকার.. আমি..
পাইলট আমার কথা শুনছে না, আমাকে বলচে, আমি নাকি পাগল হয়ে গিয়েছি. অথচ বাইরের আকাশে, মেঘের ওপর দিয়েই, আমি তো স্পষ্ট দেখতে পাচ্চি মেয়েটাকে, এখনো দেখতে পাচ্চি. মেয়েটার বয়স ১২ বছর, ছত্তিসগড়ের লঙ্কাক্ষেতে লঙ্কা তুলতে গিয়েছিলো, মায়ের সঙ্গে. লকডাউনে গাড়ি পায়নি ফেরার.. পায়ে হেঁটেই তেলেঙ্গানায় ফিরতে চেয়েছিলো, কমবেশী আড়াইশো কিলোমিটার.
প্লেন থামাও! আমি চিৎকার করি, প্লেনে যেন আর একজনও যাত্রী নেই, ককপিটেও একজনও মানুষ নেই.. আমি উড়তে উড়তে হারিয়ে যাচ্চিলাম..