Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!
Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!

Kanad Chatterjee

Inspirational

3  

Kanad Chatterjee

Inspirational

স্ট্যাম্প আর সে

স্ট্যাম্প আর সে

5 mins
960


সে অনেকদিন আগের কথা…. একটা ছোট ছেলে, ক্লাস ফাইভ বা সিক্স এ পড়তো- ঠিক কোন ক্লাস, এখন মনে নেই


সেই সময় ছেলেপিলেদের কাছে এখনকার মতো এত নানারকম কম্পিউটার বা ইলেকট্রনিক্সের খেলা ছিল না - তখন স্ট্যাম্প জমানো ছিল এক দারুন খেলা, দারুন নেশা

তা - সেই ছেলেটাও দেখতো ওর বন্ধুরা স্ট্যাম্প জমায় আর রোজ স্ট্যাম্প নিয়ে আসে, স্ট্যাম্প দেখায় ...

সেও বাবার কাছে একদিন আবদার করলো যে স্ট্যাম্প জমাবে -


বাবা বললো স্ট্যাম্প জমাতে হলে নিজে চেষ্টা করতে হবে - দোকান থেকে স্ট্যাম্প কিনে স্ট্যাম্প জমালে তাতে কোনো আনন্দ নেই...

ছেলেটির বাবা ব্যাংকে কাজ করতেন। সেই সময় এখনকার মতো “ই-মেল” ছিলনা - সব কিছু হতো পোস্টে - তাই ব্যাংকেও আসতো অনেক চিঠি, অনেক খাম-ও জমতো -

ছেলেটা রোজ অপেক্ষা করতো, কখন বাবা অফিস থেকে ফিরবে, অফিসের থেকে খোলা খাম গুলো আসবে আর সেগুলো জলে ভিজিয়ে আঠা আলাদা করে বের হয়ে আসবে সেই স্ট্যাম্প গুলো - কতো কতো স্ট্যাম্প- ৫ পয়সার, ১০ পয়সার, ২০ পয়সার - নানা ছবির- ট্রেন, আঙ্গুর, প্লেন- সে অনেক-অনেক স্ট্যাম্প..


এইভাবে স্ট্যাম্প জমতে থাকলো - কি আনন্দ ছেলেটার মনে..

...................................


এরপর একটা সমস্যা দেখা দিলো- অনেক স্ট্যাম্প জমা হলো বটে, কিন্তু কিছুদিন বাদে একই স্ট্যাম্প বারবার আস্তে লাগলো - নতুন স্ট্যাম্প তো আর আসে না !! তাহলে উপায় ? 


ছেলেটা লক্ষ্য করে দেখলো যে ওর বন্ধুরা , মানে যারা স্ট্যাম্প কালেক্ট করে, তারা আবার স্ট্যাম্প এক্সচেঞ্জ ও করে - যেমন যার কাছে কোনো স্টাম্পের ডুপ্লিকেট আছে আর সেই স্ট্যাম্পটা আরেকজনের কাছে নেই , সেটা দিয়ে সে অন্যজনের কাছ থেকে নতুন স্ট্যাম্প জোগাড় করতো - আসলেএই ভাবেই স্ট্যাম্প কালেকশন বাড়তে থাকে….

ছেলেটার মনে আবার আনন্দ- ওর কাছে তো একরকম স্ট্যাম্প অনেক - শেষমেশ উপায় পাওয়া গেলো ..


একদিন সে তার ক্লাসের এক বন্ধুর কাছে একটা স্ট্যাম্প দেখতে পেলো - কানাডা র স্ট্যাম্প- পাহাড়ের ছবি - ভারী সুন্দর। বন্ধুকে জিজ্ঞেস করলো "তুই এটা এক্সচেঞ্জ করবি আমার সাথে ?"

বন্ধু বললো, "করতে পারি , তুই এর বদলে কি স্ট্যাম্প দিবি?"

ছেলেটা বললো "আমি তোকে চার-চারটে স্ট্যাম্প দেবো !!"

বন্ধু অবাক, একটা স্ট্যাম্পের বদলে চারটে স্ট্যাম্প !!! বললো, "ঠিক আছে - তাহলে কাল নিয়ে আয়, এক্সচেঞ্জ করবো"


ছেলেটা মহানন্দে বাড়ি ফিরে গেলো সেদিন - রাত্রে তো ভালো করে ঘুমিই আস্তে চায় না- এত ইন্ডিয়ার স্ট্যাম্প-এর পর এইবার কালকে আসবে কানাডা-র স্ট্যাম্প

একি চাট্টিখানি কথা !!

..............................


পরের দিন সকালে স্কুলে যেন হাওয়ায় ভেসে যাওয়া - আজকে কানাডার স্ট্যাম্প পাবে সে!!


চারটে স্ট্যাম্প এক্সচেঞ্জের জন্যে আলাদা করে নিয়েছে … তবে যদি দরকার পরে, তাই সব ডুপ্লিকেট স্টাম্পগুলোই পকেটে নিয়ে যাচ্ছে..

টিফিনের ঘন্টা বাজতেই বন্ধুর কাছে উপস্থিত- চারটে স্ট্যাম্প বাড়িয়ে দিয়ে বললো - "এই নে চারটে স্ট্যাম্প, এবার আমাকে দে তোর কানাডার স্ট্যাম্পটা"


বন্ধু ওর স্ট্যাম্পগুলো দেখে বললো "আরে, এ স্টাম্পগুলো তো আমার আছে রে.." ছেলেটা হতচকিত - চারটে স্ট্যাম্প-ই বন্ধুর আছে!!- সে তাড়াতাড়ি পকেট থেকে বাকি ডুপ্লিকেট স্ট্যাম্পগুলো বের করে বন্ধুকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো - "তাহলে এর থেকে যে কোনো চারটে বেছে নে"


বন্ধুটি স্ট্যাম্পগুলোর দিকে একনজর দেখে বললো "তোর তো সব স্ট্যাম্পই দেখছি যেগুলো আমাদের পোস্ট অফিসে পাওয়া যায়, এগুলো খুব কমন, আমার এগুলো সব আছে "


ধীরে ধীরে ছেলেটা বাস্তব বুঝতে পারলো ...ওর কাছে সব স্ট্যাম্পই লোকাল ইন্ডিয়ার স্ট্যাম্প যা সব চিঠিতে আসে, তাই এতো ডুপ্লিকেট - কিন্তু এগুলোর এক্সচেঞ্জে কোনো দাম নেই কারণ যারা স্ট্যাম্প জমায় তাদের সকলের কাছে এগুলো থাকবেই...


মন ভেঙে গেলো, আস্তে আস্তে বললো "ওহ, তাহলে থাক রে "… মাথা নিচু করে ফিরে চললো..


বন্ধুটি তখন ওকে ডেকে বললো "শোন, তুই এই কানাডার স্ট্যাম্পটা রাখ "!!

ছেলেটি অবাক!! বললো "কিন্তু আমি কি করে তোকে চারটে স্ট্যাম্প দেবো? তোর তো এগুলো সব আছে !!”

বন্ধুটি বললো "তোকে কিছু দিতে হবে না, এটা তো আমি তোর সঙ্গে এক্সচেঞ্জ করবো বলেই এনেছিলাম - এটা তোরই - তুই রাখ, যেদিন তোর কাছে অনেক স্ট্যাম্প হবে , আমাকে আমার পাওনা চারটে স্ট্যাম্প দিয়ে দিবি, কেমন ?"


চোখ ভরা আনন্দের জল নিয়ে ছেলেটি কাঁপা হাতে কানাডার স্ট্যাম্প টা নিয়ে নিলো, ধন্যবাদ দেবার ভাষাও সেদিন মুখে এলো না !!


বন্ধুটি বললো "আর শোন, তোর কোনো অত্মীয়পরিজন যদি বিদেশে থাকে তাহলে তাদের পাঠানো চিঠিগুলো দেখবি - অনেক ভালো স্ট্যাম্প পেতে পারিস"


তাই তো!! পিসিই তো লন্ডনে থাকে - প্রতি সপ্তাহে ঠাকুমাকে চিঠি পাঠায় - ব্যাস!! সেদিন বিকেলেই ঠাকুমার ঘরে হানা- সব পুরোনো চিঠি বেরলো খাটের তলায় রাখা ট্রাঙ্ক থেকে – কতো-কতো স্ট্যাম্প !! ভালো ভালো বিদেশী স্ট্যাম্প!!!

 

বাবাকে বলতে ব্যাংকের বিদেশী-শাখা থেকেও খোলা খাম আস্তে লাগলো - নানা দেশের স্ট্যাম্প….


তারপর আর পিছনে ফিরে দেখতে হয় নি - বহু স্ট্যাম্প হলো, অ্যালবাম ভরে উঠতে লাগল...... অনেক  ভালো স্ট্যাম্পের ডুপ্লিকেটেও হল।


সেই ডুপ্লিকেট স্ট্যাম্প থেকে একদিন বেছে বেছে সবচেয়ে ভালো চারটে স্ট্যাম্প নিয়ে ছেলেটা ওর বন্ধুকে দিতে গেলো - "এগুলো তোর জন্যে - সেই কানাডা-র স্ট্যাম্প এর বদলে "


বন্ধুটি হেসে বললো "না রে, আমার চাই না - ওটা তোকে আমি সেদিনই মনে মনে গিফট দিয়েছিলাম - তোকে আগে বলিনি কারণ আমি চেয়েছিলাম তুই ভালো স্ট্যাম্প জোগাড় করার চেষ্টা কর।  তবে এখন নতুন স্ট্যাম্প এক্সচেঞ্জ এ আর কিন্তু কোনো ছাড়াছাড়ি নেই - কড়ায় গন্ডায় বুঝে নেবো"

.............


আজ ছেলেটি পঞ্চাশঊর্ধ, এখনো তার কাছে অ্যালবাম ভর্তি স্টাম্পগুলো সযত্নে রাখা আছে। 


অনেকে জিজ্ঞেস করে - এখন তো আর কেউ স্ট্যাম্প জমায় না - এই স্ট্যাম্প অ্যালবামগুলো রেখে লাভ কি? কিন্তু, ওই অ্যালবামগুলোর সাথেই যে ছেলেবেলার সেই মধুর স্মৃতি জড়িয়ে আছে -


এতবছর বাদে আর সেই বন্ধুটির নামটা মনে পরে না - মুখটাও ঝাপসা হয়ে গেছে - হয়তো লোকে বলবে তোমার এতো ভালো বন্ধুকে ভুলে গেলে? কিন্তু কালের গতি অমোঘ, সময় কাউকে ছেড়ে দেয় না – না চাইলেও স্মৃতি ঝাপসা হয়েই যায়...


কথায় আছে, সব কাজেই এমন কেউ একজন আসে, যে হল দিশারী - সে শুধু নিঃস্বার্থ সাহায্যই করে না - সঠিক পথের দিশাও দেখায় ...এগিয়ে দেয় লক্ষ্যের দিকে - সাফল্যের দিকে



আজও ছেলেটি কোনো কোনো সন্ধ্যাবেলায় একলা বসে স্ট্যাম্প অ্যালবাম গুলো আলমারি থেকে বের করে, ধুলো ঝেড়ে পাতা ওল্টায় - স্ট্যাম্প গুলো দেখে - আর কানাডার সেই স্ট্যাম্পটার ওপর সযত্নে হাত বুলিয়ে তার দিশারী-বন্ধুর মুখটা মনে করার চেষ্টা করে ...


Rate this content
Log in