হার মানা হার
হার মানা হার




হঠাৎ ঘুমটা ভেঙে যায় মেঘার। ঘড়িতে ভোর চারটে বাজে। আজ আবার সেই ভয়ংকর স্বপ্নটা দেখেছে মেঘা। আসলে এটা শুধু স্বপ্ন নয়,এটা মেঘার জীবনের অতীত অধ্যায় যা আজও তাকে দুঃস্বপ্নের মত তাড়া করে বেড়ায় প্রতিরাতে। শুধু কি একটা স্বপ্ন! এই রকম হাজার-একটা অতীত দুঃস্বপ্ন হয়ে তাকে তাড়া করে বেড়ায়। সত্যি, মাত্রকুড়ি বছরের জীবনে এতগুলো ভয়ংকর ঘটনা খুব কম মানুষের জীবনেই ঘটে। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পর শিলিগুড়ি বেড়াতে গেছিল ওরা। ওরা মানে বাবা, মা,ও আর ভাই। সেবার শিলিগুড়ি থেকে ফেরার পথেই ঘটে যায় সেই অঘটনটা। ওদের গাড়িটা হঠাৎই খাদে পড়ে যায়। সবাইকেই উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, কিন্তু মেঘা ছাড়া কাউকেই বাঁচানো যায়নি।তারপর থেকে প্রতিদিন মেঘা তার ভাগ্যকে দোষারোপ করেছে; বলেছে, "কেন আমায় বাঁচালে ভগবান,কেন??"
হাসপাতাল থেকে কাকা ওকে বাড়িতে নিয়ে গেছিল। ওরা আর কাকারা এক বাড়িতেই থাকে,বাড়িটা ওদের ঠাকুরদার। কাকা কাকিমা কখনো নিজের ছেলের থেকে ওদের আলাদা চোখে দেখেনি। কিন্তু দুর্ঘটনাটার পর থেকেই সব সমীকরণগুলো কেমন করে যেন বদলে যায়। কাকা-কাকিমা ওর সাথে খারাপ ব্যবহার করা শুরু করে। সম্পত্তির লোভে ওরা মেঘার বিয়ে দেওয়ার জন্য তৎপর হয়ে ওঠে। মাত্র আড়াই লাখ টাকা পাওয়ার জন্য এক পাগল বরের হাতে ওরা মেঘাকে তুলে দেয়। পাগল বর ওকে খুব মারধর করত।এছাড়াও প্রতিরাতে ওকে ধর্ষণের স্বীকার হতে হত; কোনোদিন দেওরের হাতে, কোনোদিন আবার বৃদ্ধ শ্বশুরের হাতে। এইসব থেকে বাঁচতে ও একরাতে পালিয়ে কাকার বাড়ি চলে যায়। কিন্তু কাকা ওকে রাখেনি, রাখলেই যে সম্পত্তির ভাগ দিতে হবে। তাই কাকা ওকে আবার শ্বশুরবাড়িতেই রেখে আসে। এবার সেখানে অত্যাচারের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। একরাতে দেওর আর তার বন্ধুদের দ্বারা গণধর্ষণের স্বীকার হয় সে। পরের দিন সে আবার পালিয়ে যায়,এবার আর কাকার বাড়ি যায়না।বেড়িয়ে পড়ে অজানা পথের উদ্দেশ্য।
হঠাৎ তার দেখা হয়ে যায় এক পুরনো বন্ধুর সাথে। সে মেঘাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যায়। মেঘার মুখে সব শুনে সে মেঘাকে নিয়ে থানায় যায়। বধূ নির্যাতন আর ধর্ষণের অভিযোগ আনে শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে। দেওর আর তার বন্ধুরা একদিন তাদের বাড়ি চড়াও হয়ে হুমকি দিয়ে আসে। মেঘা তবুও ভয় পায় না। এরপর যা হয় আরকি, এসিড হামলার শিকার হয় সে। কিন্তু তবুও হাল ছেড়ে দেয়নি। এখন সে একটা এন.জি.ও চালায়। তার মত হতভাগ্য মেয়েরা যাতে আবার তাদের জীবনযুদ্ধে ঘুরে দাঁড়াতে পারে সেইজন্যই এই এন.জি.ও তৈরি। আজকের দিনটি মেঘার কাছে এক বিশেষ দিন। আজকের দিনেই সেই ভয়ংকর দুর্ঘটনাটা ঘটেছিল, যা একলহমায় তার জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছিল। আজকের পর থেকে এই দিনটি তার কাছে আরো একটা কারণে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।আজ প্রায় দুই বছর পর তার অপরাধীদের ফাঁসি হবে। আজ সত্যিই তার জয় হয়েছে। হাসিমুখে খাটের উপর উঠে বসে মেঘা।