গল্প নয় স্বপ্ন
গল্প নয় স্বপ্ন
গল্প নয় স্বপ্ন
1957 সালের 30/31 মার্চ, সকালে এলাম মাটিতে।
তারপর থেকে দিন যেতে লাগল, ধরা যাক 2021 সালের 30/31 মার্চ….কত হল ? 65 বছরের শুরু অর্থাৎ 65 বছর বয়স শুরু হল মানে 64 টা বছর চলে গেছে।
একটা বিষয় মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে যে পেলাম এতদিন ধরে প্রচুর.... বিশেষ করে একটা মেয়ে যা পেয়েছি না তা আর বলার নয় । নার্সারি ক্লাস থেকে প্রথম শ্রেণী পাওয়া একেবারে ইউনিভার্সিটি পর্যন্ত । অর্থনীতির ছাত্রী। কেন্দ্রীয় সরকারী অফিসে গেজেটেড পদে কর্মরতা। আমাকে পাগলা করে দিয়েছে সাফল্যের নিরিখে..…. আমার একমাত্র অহংকার । এত বেশি পাওয়ার পর এখন মনে হয় এই পূর্ণতা চোখের সামনে ভেসে থাকুক আর 64 বছরের পুরোনো জং ধরা খাঁচাটা ফেলে নতুন কোন খাঁচায় আমায় স্থানান্তরন হোক নতুন কাজের দায়িত্ব দিয়ে ।
দিনে একবার পরমশক্তির কাছে প্রার্থনা করি রোজ ।এটাই চাই যেন সমর্থ থাকতে তিনি আমাকে ছুটি দেন। ঘটনাচক্রে পুরী যাওয়ার সুযোগ পেলাম। ভেবেছিলাম মন্দিরে সর্বকামনা সিদ্ধি (লোকে তাই বলে) স্তম্ভে মাথা রেখে পেশ করব কামনা….হল না... কারণ মন্দির বন্ধ। বাইরে থেকেই জানালাম আর্জি। পূর্ণ হবে কি হবে না মালিক জানেন।
এবার আসল গল্প…স্বপ্নে দৃশ্য হয়েছিল যা। সোমবার সকালে ফিরেছি হাওড়া…রাতের ঘুমের মধ্যে ওরা এল। আমার প্রিয় বেশ কয়েকটি মৃত মানুষ। ওরা আমাকে ভালোবাসতো….আমিও। একজন আমার স্কুলের মাষ্টার মশাই, একজন আমার পরের বোন, তার বড় ছেলে, একজন আমার স্কুলের বন্ধু এবং আরো কয়েকজন যাদের মনে পড়ছে না অথচ ঘনিষ্ঠ।
ওরা আমাকে আনন্দের সাথেই জানালো যে সেদিন আমার মুক্তি। জরা এখনও সেভাবে কাবু করতে পারে নি কিন্তু জীর্ণতার পদধ্বনিতে খাঁচাটা কাঁপছে। ওরা জানালো তিনি আসছেন, তাঁর অঙ্গীভূত করে নেবেন আমাকে। ওদের আনন্দের উদ্বেলতা, উচ্ছলতা আমাকে গ্রাস করেছে। আনন্দের সেই অনুভূতি কথায় বোঝানো যায়না। ওরা আমাকে স্নান করাতে চাইলে। আনন্দে আত্মহারা আমি তাড়াতাড়ি চললাম জলের ধারে। মাষ্টার মশাই বললেন “ জীর্ণানি বাসাংসি যথা বিহায়, নবানি গৃণ্হাতি নরোপরানি “ তুমি ও তেমনি এই পুরানো শরীর ত্যাগ করে ঐশ্বরিক অবয়বের সাথে মিলিত হতে চলেছ। ওদের সবার হাতে একটা করে ছোট কলসি, সোনার মত উজ্জ্বল, গোলাপের সুবাসিত জলে ভরা। আমাকে স্নান করিয়ে পরমাত্মার সাথে মিলন ক্ষণের উপযুক্ত করে তুলতে চায়।
মঙ্গলবার সকালে ভারাক্রান্ত মন। তবে কি সে মিলনের স্নিগ্ধঝোরা এখনও অনেক দূরে !!!!!
