ধুসর ছবির উপাখ্যান।
ধুসর ছবির উপাখ্যান।
ধুসর ছবিটা বাক্সবন্দি। যখন মনে পড়ে সুকান্ত বার করে। বাবা, মা, আর সে। বাবা তো কবেই ছেড়ে চলে গেছে। আর মা! তিনিও মাসখানেক হল গত। বিয়ে করেনি ইচ্ছা করেই। কারণ বাবা মায়ের দূরত্ব টা ছোট বেলার থেকেই মেনে নিতে পারেনি সুকান্ত। বিয়ের কথা মনে হলেই ভাবে-
-" ধুর, এই বিন্দাস আছি। রামুদা ঘরের কাজকর্ম করে দিয়ে যায় । আর কি চাই!"
কিন্তু কিছুদিন ধরেই একটা কথা মনে ঘুুুরঘুুর করছে। অফিসের সামনে বসে থাকা ভিখারী টা! কেমন যেন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তার দিকে! যেন কিছু বলতে চায় ! যাকে সে রোজ খাবার জন্য কিছু টাকা দেয়।
বিষয়টি দেখতে হবে।
" দাদা বাবু, তোমার চা। খেয়ে নাও।ঠান্ডা হয়ে যাবে।"
চা তে চুমুক দিতে দিতে পুুরোনো বাক্সবন্দি ছবি টা বের করল সুকান্ত।
" আবার ওটা বের করেছ ! এবার আবার মন খারাপ করে বসে থাকবে ! কি দেখ ? দুুুদিন ছাড়া ছাড়া ! তোমাকে নিয়ে আর পারা গেল না। বিয়ে করবে না , আমার হয়েছে যত জ্বালা !" গজ গজ করতে করতে রামুদা চলে গেল।
চা তে চুমুক দিতে দিতে পরম মমতায় ছবির ওপর হাত বোলাতে লাগল সুকান্ত ।
পরের দিন রবিবার। অফিসের ছুটি থাকা সত্বেও গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেল সুকান্ত । রামুদা কে বলে গেল- " আজ একজন গেস্ট আসবে।"
দুুর থেকে দেখল- একই ভাবে বসে আছে ঐ ভিখারী টা। একদম সামনে নিয়ে গিয়ে গাড়ি থামালো। " উঠে এস।"
চমকে উঠল ভিখারী টা। " না, বাবু আমি যাব না।"
- " কোন ভয় নেই। উঠে এস। তোমাকে মারব না।"
আরো কিছুক্ষণ বোঝানোর পর গাড়িতে উঠলো ভিখারী টা । সুকান্ত কিছু জামাকাপড়ও
কিনলো তার জন্য।
অতঃপর চান করে ফ্রেশ হল দুজনেই । মাংসের ঝোল ভাত খাওয়া হল।
সুকান্ত নিজের বিছানাতে তাকে শুতে দিয়ে অন্য জায়গায় সোফাতে গিয়ে শুলো।মাথার দিকে সেই পুরনো ছবি টা রাখা ছিল।
ঘুম ভেঙে দেখে ভিখারীটা ছবি টা বুুুু কে নিয়ে অঝোরে কেঁদে যাচ্ছে। বাইরেও তাল মিলিয়ে জোরে বৃষ্টি হচ্ছে। তাই কান্নার শব্দ শোনা যায় নি।
" সুরমা তুমি কোথায় ?"
কথা টা শুনতে পেয়ে চমকে উঠল সুকান্ত ।
ইনি তাহলে আমার হারিয়ে যাওয়া বাবা।
কাছে গিয়ে অবণী বাবু কে জড়িয়ে ধরল সুকান্ত।
অতঃপর ঘটনাচক্রে জানা গেল আন্ডারওয়ার্ল্ডের খপ্পরে পড়ে উনি সর্বস্বান্ত
হয়ে পথের ভিখারীতে পরিণত হয়েছিলেন।
সবই নিয়তি !
