আমি এখানেই থাকি
আমি এখানেই থাকি
সে অনেক কথা হুজুর...
যেরকম আসে সেরকম ফিরে যায় সব।
আমি একেনেই থাকি, হুজুর।
এই আমার নিজের বটগাস, আমার নদী;
এই পুরোনো ইটভাঁটা... এ সব আমার।
ওই যে দেখসেন হলদে ঘাস, ওই পুকুর পাড়ে;
ওইখানেই আমার একটা ঘর সিলো।
বাঁশের খুঁটি, চটের দেওয়াল, কত কারিকুরি...
একটা জম্পেশ বিসনাও সিলো হুজুর!
সাহেবের বাড়ি থেকে ভাতপান্তা আসতো,
তারপর এই নদীতে মাস ধরতুম কতো!
উঠোনে, চুলোয় সেই মাস ভাজা হতো।
মেয়েলোক আমার বড্ড ভালো রাঁধতো।
কী যে হলো তারপর একদিন...
একদিন পেটের অসুখ হলো তার, সারলো না,
থামলো না, খালি হাগাবমি আর বমি আর বমি!
উঠে দাঁড়াতেও পারে না বৌ...
হাসানপুরের ডাক্তারের কাছে দৌড়ুলুম!
p>
ওষুধ দিল ডাক্তার; বড়ো ভালো মানুষ।
অনেক অনেক নুনপানি খেতে বললো।
সুটে সুটে ঘরে ফিরতে বেলা গড়িয়ে গেল।
দেখি সে চোখ আর খোলে না।
আমার বউটা মরে গেল, হুজুর...
বড্ড রাগ হয়ে গেল!
ওই ঘর ভেঙেই দাহ করলুম পাড়ে।
তারপর থেকে একেনেই থাকি।
এই বটগাসের নীচে। এই পাটি আমার বিসনা।
এই কেঁতা গায় দিই শীতকালে।
আর এই শেকড় হলো আমার বালিশ।
আপনার মতো অনেক লোকে আসে আজকাল।
ঘোরাঘুরি করে, মদ খায়;
অনেকে দু পাঁচ টাকা করে দেয়। ভালোই আসি।
কিন্তু কেউ থাকে না হুজুর...
এই বটগাস, এই নদী, এই পাড়, সবই তো আমার।
বউটার মতো কেউ কিসু বলে যায় না।
যেরকম আসে সেরকম ফিরে যায় সব।