💗 মনের মানুষ 💗

ঋদ্ধি : ছেড়ে দে ভাই... আমার দ্বারা হবে না... অসম্ভব... আমি মরে যাব... 

হিমাংশু : মর তুই... তোর মরাই উচিত... 

ঋদ্ধি : ভাই... তোরা আমার বন্ধু না শত্রু রে...? 

দীপ : তোকে আমরা চিনি না... 

রিয়া : আরে বাবা ভালোই তো বেসেছিস... খুন তো আর করিসনি... তাহলে এত ভয় কেন পাচ্ছিস বলতে... আশ্চর্য!!! 

হিমাংশু : 5 বছর ধরে শুধু চুপিচুপি ভালোই বেসে গেলি... বলতে আর পারলি না... কি সমস্যা তোর...?

ঋদ্ধি : আরে বাবা লেডি যম যে... বলতে গেলে যদি উড়োধুনা দেয়!!! এত তাড়াতাড়ি মরার ইচ্ছা আমার হয়নি... 

রিয়া : তুই একটা গ্লাস নে... দিয়ে তার মধ্যে জল ঢাল... দিয়ে সেই জলে ডুবে মর তুই... 

ঋদ্ধি : তোরা কোথায় আমাকে সাহস জোগাবি... তা না করে ভয় দেখাচ্ছিস!!! 

দীপ : আচ্ছা বেশ... ভয় দেখাচ্ছি না... এবার তুই যা... গিয়ে বলে দে... আর কতদিন এইভাবে মেয়েটাকে কষ্ট দিবি... আরে বাবা নন্দিনীও তো তোকে ভালোবাসে... তোর ওপর অভিমান করে আছে... সে তো তার মনের কথা অনেক ভাবে তোকে বুঝিয়েছে... এবার তুই বল... নাহলে অভিমানের পাহাড় কিন্তু বেড়ে যাবে... মনের মানুষকে কষ্ট দিয়ে তুই ভালো থাকবি তো....???

ঋদ্ধি আর কিছু বলল না... চলে এল বন্ধুদের কাছ থেকে... নাহ... সেও তো ভালো নেই... নন্দিনীকে তো সেও ভালোবাসে... খুব ভালোবাসে... কিন্তু বলতে পারছে না যে!!! 

ঋদ্ধি ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে পড়ে... তার মন মেজাজ ভালো নেই... তাই মন ফ্রেশ করার জন্য বেরিয়ে পড়ল.... 

শীতকালে শান্তিনিকেতনের সৌন্দর্যই অন্যরকম... একটা অন্যরকম পরিবেশ থাকে শান্তিনিকেতনে... আর এই পরিবেশই ঋদ্ধিকে বারবার টেনে আনে শান্তিনিকেতনে... প্রতিবছরই ঋদ্ধি এই শীতকালে শান্তিনিকেতনে আসে... ডক্টর ঋদ্ধিমান বসু... এখানে চেম্বার আছে ওর... পৌষ মেলা... বসন্ত উৎসব কাটিয়ে তবে আসানসোলে ফেরে... ঋদ্ধির বাড়ি আসানসোলে... এইবার বন্ধু বান্ধব সমেত এসেছে... ঋদ্ধি এসেছে নন্দিনীর জন্য...  

নন্দিনী!!!! স্মৃতির পাতায় ডুব দেয় ঋদ্ধি... সেইবার শান্তিনিকেতনে এসে এই সময়েই তো দেখা হয়েছিল তার আর নন্দিনীর... এইরকম শীতকাল ছিল তখন... ঋদ্ধি আর নন্দিনীর ঝগড়া দিয়ে সাক্ষাৎ... ঝগড়াটা হয়েছিল গাড়ি ভাড়া নিয়ে... উফফ সে কি ঝগড়া!!!!

ঝগড়ার কথা মনে করে আনমনেই হেসে ফেলে ঋদ্ধি... কি ঝগড়াটাই না করেছিল ওরা... ওদের ঝগড়া দেখে শেষে টোটোওয়ালাই পালিয়েছিল... 

আর নন্দিনী!!! প্রথম প্রথম নন্দিনীকে দেখলে ঋদ্ধির বিরক্ত লাগলেও... আস্তে আস্তে ভালো লাগতে শুরু করে... ভালোবাসতে শুরু করে...

নন্দিনীর বাড়ি শান্তিনিকেতনে... ও এখানেই একটা ফ্ল্যাটে থাকে... আর তার উল্টোদিকের ফ্ল্যাটে এই শীতকালের 5 মাসের জন্য ভাড়া থাকে ঋদ্ধি... আর নন্দিনীর টানেই ঋদ্ধি বারবার ফিরে আসে শান্তিনিকেতনে... 

ঋদ্ধিও ভালোবাসে নন্দিনীকে... খুব ভালোবাসে... কিন্তু বলতে পারেনি ভয়ে... নন্দিনী যদি ওকে ছেড়ে চলে যায়... সেই ভয়ে... ও জানত না যে নন্দিনীর মনের মানুষ ও নিজে... কোনোদিন বুঝতে পারেনি... আর তাই ঋদ্ধিও এগিয়ে আসেনি ভয়ে... ওর মনে পড়ল কিছুক্ষণ আগের ঘটনা.... 

ঋদ্ধি : কি ব্যাপার মিস পেতনী... এখানে বসে বসে কার কথা ভাবছো....? 

নন্দিনী ওর গায়ে থাকা শালটাকে আরও ভালো করে জড়িয়ে নিয়ে ভাবুক হয়ে বলল... 

নন্দিনী : মনের মানুষের কথা... 

ঋদ্ধি : কবে আসবে সেটা ভাবছ...? তাহলে এ জন্মে আর আসবে না... পেতনীকে আবার কে বিয়ে করবে!!! 

নন্দিনী : তোমাকে কে বলল যে আমার মনের মানুষ নেই... আমার মনের মানুষ আছে তো... তার কথাই ভাবছি... 

নন্দিনীর কথা শুনে ঋদ্ধির গলা শুকিয়ে গেল... ওর কান দুটোকে অবিশ্বাস করতে ইচ্ছা করল ওর 

মনের মানুষ!!! নন্দিনীর মনের মানুষ... নন্দিনী কে হারিয়ে ফেলার ভয় ঋদ্ধিকে চেপে ধরল... 

তাও ঋদ্ধি জোর করে মুখে হাসি এনে বলল... 

ঋদ্ধি : মজা করছ!!! মনের মানুষ!!! তোমার আবার মনের মানুষ থাকতে পারে নাকি!!! 

নন্দিনী গম্ভীর হয়ে বলল... 

নন্দিনী : কেন থাকতে পারে না শুনি... আমিও তো একজন মানুষ... আমার ও তো দুটো হাত একটা পা দুটো চোখ আর একটা মন রয়েছে... তাহলে মনের মানুষ থাকতে পারে না কেন!!! 

ঋদ্ধির নিজেকে অসহায় লাগল... জীবনে একজন কেই তো ভালোবেসে ছিল সে!!!! ঋদ্ধির নিজের ওপর খুব রাগ হলো... তার তো বলে দেওয়া উচিত ছিল মনের কথা... তাহলে তো আজকে আর এই পরিস্থিতি টা আসত না... তার নিজের দোষেই আজ সে হারিয়ে ফেলল তার প্রিয়তমা কে... 

ঋদ্ধি বিষন্ন গলায় বলল... 

ঋদ্ধি : বাহঃ এ তো ভালো কথা... তুমি তোমার মনের মানুষকে পেয়ে গেছো... এবার বিয়ে করে সুখী হও... অনেক বয়স তো হলো তোমার... 

নন্দিনী ঋদ্ধির কথা শুনে কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকাল ওর দিকে... তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল... 

নন্দিনী : নাহ... আমারই ভুল ছিল... আমার মনের মানুষ আমাকে কোনোদিনই ভালোবাসেনি... আর কোনোদিন ভালোবাসবে বলে মনেও হয় না... 

ঋদ্ধি নন্দিনীর কথা শুনে অবাক হয়ে গেল... ও যে কি বলতে চাইছে... আর কি করতে চাইছে সেটা সম্পূর্ণ ভাবে ঋদ্ধির মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে... অবাক হয়ে ও নন্দিনীকে জিজ্ঞেস করল... 

ঋদ্ধি : মানে... কি বলতে চাইছ তুমি... তোমার মনের মানুষ তোমাকে ভালোবাসে না... আর তোমার মনের মানুষ টাই বা কে...?  

ঋদ্ধির কথা শুনে নন্দিনীর চোখ জল চলে এল... নন্দিনী ফ্রাস্টেড হয়ে বলল... 

নন্দিনী : তোমাকে কতবার বোঝাতে হবে আমার মনের কথা... তোমাকে অনেক বার বোঝানোর চেষ্টা করেছি যে আমার মনের মানুষ মিস্টার ঋদ্ধিমান বসু... কিন্তু তুমি কখনই বোঝার চেষ্টা করোনি... এত অবুঝ কেন তুমি... আমারই ভুল... তোমাকে মনের মানুষের জায়গা দেওয়াটা আমার ঠিক হয়নি... একদমই ঠিক হয়নি.... 

বলে নন্দিনী কাঁদতে কাঁদতে ওখান থেকে ছুটে চলে গেল... ঋদ্ধি চেয়েও তাকে আটকাতে পারল না... আটকাবেই বা কি করে... সেই মুখ তো ওর আর নেই.... 

ঋদ্ধি নিজেকে গালি দিতে লাগল... নিজের প্রিয়তমার মনের খবর ও নিজেই জানে না... এতটা অপদার্থ ও!!!! 

তাই ম্যাডামের রাগ হয়েছে... রাগ হলে নন্দিনী কোথায় যায়... সেটা ঋদ্ধি ভালো করেই জানে... ও যাচ্ছে সেখানেই... 

উদ্দেশ্য... নন্দিনী কে নিজের মনের কথা বলা... নাহ... অনেক হয়েছে... এইবার ব্যাপারটার হেস্তনেস্ত করতেই হবে... 

*************************** 

কোপাই নদীর পাড়ে বসে আছে নন্দিনী... চোখে জল... অভিমান করে আছে ওর মনের মানুষের ওপর... কেন করবে না অভিমান ও তো ওর মনের মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করেছে ওর ভালবাসার কথা... ভালো লাগার কথা... সে তো বুঝেও বোঝেনা...

নন্দিনী : ঋদ্ধি... তুমি কেন বোঝো না যে আমি তোমাকে ভালবাসি... তুমিই আমার মনের মানুষ... কিভাবে বোঝাবো আর... অনেক তো চেষ্টা করলাম... আমি কি এত খারাপ যে আমাকে ভালোবাসা যায় না... এত খারাপ আমি!!!! 

নন্দিনী নিজের সমস্ত সুখ দুঃখ ভাগ করে নিতে থাকল নদীর সঙ্গে... ছোটবেলা থেকে এটাই করে আসছে ও... রাগ, অভিমান, কষ্ট হলে ও চলে আসে এই কোপাই নদীর কাছে... নদীর কাছ থেকে সান্ত্বনা পেয়ে ওর মন হালকা হয়ে যায়... 

কিন্তু আজ যে ওর চোখের জল বাঁধা মানছে না... নদীর কুলকুল শব্দ তো তাকে সান্ত্বনা দিতে পারছে না.... মনের মানুষের কাছ থেকে পাওয়া কষ্ট বুঝি এমনই হয়!!!! 

নন্দিনী একমনে নদীর দিকে তাকিয়ে বসে ছিল... ফলে ওর পাশে যে কেউ এসে বসেছে... সেটা ও দেখতেই পায়নি.... একটা গলার আওয়াজ শুনে ওর ধ্যান ভাঙ্গে... 

---- না মানে বলছি যে... এখানে বসে বসে কি বিবাগী হওয়ার কথা ভাবছ.....?

নন্দিনী চমকে উঠে ঘাড় ঘুরিয়ে ঋদ্ধি কে দেখে মুখ ফিরিয়ে নিল... নন্দিনী চোখের জল টা মুছে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে বসে রইল...

ঋদ্ধি : মনের মানুষ কে ভালোবাসা যায়... আর রাগ দেখানো যায় না বুঝি!!!! 

নন্দিনী অবাক হয়ে ঋদ্ধির দিকে তাকাল... ও যে কি বলতে চাইছে... সেটা নন্দিনী বুঝতে পারল না... 

ঋদ্ধি নন্দিনীর অবাক হওয়া মুখটা দেখে মুচকি হেসে বলল... 

ঋদ্ধি : মনের মানুষটা তোমারই তাহলে শুধু কি ভালোবাসবে... আর রাগ হলে মুখ ফিরিয়ে নেবে... কেন রাগ হলে তার ওপর রাগ দেখানো যায় না বুঝি... হুমম.... 

ঋদ্ধির কথা শুনে নন্দিনী কিছুক্ষণ থম মেরে বসে রইল... তারপর একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে ঋদ্ধির দিকে তেড়ে গেল... 

নন্দিনীর হাতে খানকয়েক কিল ঘুষি চড় থাপ্পড় আর শখানেক গালাগালি খেতে হলো ঋদ্ধিকে... এটা তো ওর পাওনা ছিল... 

ঋদ্ধি : আরে আস্তে আস্তে... এবার থামো... মরে যাবো যে... তোমার সঙ্গে এখনও বিয়েটা হওয়া বাকি আছে আমার... 

ঋদ্ধির কথা শুনে নন্দিনীর হাত থেমে গেলো... ওর চোখের পাতা আবার ভারি হয়ে উঠল... 

ঋদ্ধি : কথায় কথায় এত কান্না করে কেন... এমন ছিঁচকাঁদুনি বৌ আমার মোটেই পছন্দ নয়... 

নন্দিনী : পছন্দ করতে হবে না তোমায়... আমি আমার মনের মানুষ কে খুঁজে নেবো... তুমি আমার মনের মানুষ নও... তুমি একটা বনমানুষ... 

বলে নন্দিনী যেই ওখান থেকে চলে আসতে যাবে... তার আগেই ঋদ্ধি নন্দিনীর হাত ধরে হ্যাঁচকা টান মেরে ওকে কাছে টেনে আনল... নন্দিনীর মুখটা দুহাতে ধরে ওর কপালে কপাল ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে ঋদ্ধি বলল... 

ঋদ্ধি : একবার যখন মনের মানুষকে মন যখন দিয়েই দিয়েছ... তখন পালিয়ে যাওয়ার কথা উঠছে কেন হ্যাঁ... কোত্থাও যেতে দেবো না তোমাকে... যাব বললেই কি চলে যাওয়া যায় নাকি হুমম... অত সোজা... কোত্থাও যেতে দেবো না তোমাকে... বন্দি করে রেখে দিয়েছি যে মনে... অনেকদিন আগে.... একবার যখন ভালোবেসেছ... তখন মনের মানুষের ঠেলা এবার সামলাও... 

নন্দিনীর চোখে বাষ্প ভিড় করেছে... তবে দুঃখে নয় আনন্দে... তার মনের মানুষের মনে সে জায়গা করে নিতে পেরেছে... এর থেকে আনন্দ আর কিছু হয়না... ঋদ্ধি নাহয় ওর ভালোবাসার কথা মুখে নাই বলল... তবে ও জানে... মানুষটা তাকে কতটা ভালোবাসে... 

কিছু কিছু কথা না বললেও হয়... কিছু কথা না বলাই থাক... " ভালোবাসি " কথাটা সব মানুষই তার মনের মানুষের কাছ থেকে শুনতে চায়... 

কিন্তু কিছু কথা আড়ালে থাকাই ভালো... সবসময় চেঁচিয়ে " আই লাভ ইউ " কিংবা " আমি তোমাকে ভালোবাসি " না বললেও হয়... মনের মানুষের মনের মধ্যে লুকিয়ে থাকা গোপন কথা জানতে পারাটাই তো ভালোবাসা... ভালোবাসা যখন আড়ালে গোপনে চুপিচুপি হয়... তখন মনের কথা বিনিময়ও নাহয় গোপনেই হোক... না বলা ভালোবাসার গভীরতা অনেক বেশী হয়... তাই কিছু কথা না বলাই থাক... মনের মানুষ মনের গভীরেই থাক.... 

নন্দিনী জড়িয়ে ধরল ঋদ্ধি কে... ঋদ্ধিও নন্দিনী কে দুহাত দিয়ে আগলে ধরল... আর মুখে বলল... 

ঋদ্ধি : এভাবেই আগলে রাখব সারা জীবন... কথা দিলাম... মনের মানুষের জ্বালা সামলাও এবার...

নন্দিনী মুচকি হেসে বলল... 

নন্দিনী : সহ্য করতে রাজি... 

আশপাশ থেকে ভেসে এল একটা গান.... 

সে আমার মনের মানুষ বলে.... 

মরেছি অনেক জ্বালায় জ্বলে...

সে আমার মনের মানুষ বলে... 

মরেছি অনেক জ্বালায় জ্বলে... 

এবার দাও গো সমন... 

সাক্ষী দেবো হব সর্বনাশী... 

আমায় গুণ করেছে... 

আমায় খুন করেছে... 

আমায় গুণ করেছে, খুন করেছে

ও বাসি... 

আমায় গুণ করেছে 

আমায় খুন করেছে... 

আমায় গুণ করেছে, খুন করেছে

ও বাসি... 

ও দয়াল......... 

বিচার করো.... 

ও দয়াল বিচার করো...

দাওনা তারে ফাঁসি... 

আমায় গুণ করেছে... 

আমায় খুন করেছে... 

আমায় গুণ করেছে, খুন করেছে...

ও বাসি... 

আমায় গুণ করেছে...

আমায় খুন করেছে... 

আমায় গুণ করেছে, খুন করেছে 

ও বাসি... 

               ❤ সমাপ্তি ❤