🌜ডিমের ঝোল🌛

আজকাল নিশীথ এর কথা বড্ড মনে পরে তিন্নির। সেই কোথায় দূরে দার্জিলিঙে রয়েছে সে। ঠান্ডা আবহাওয়া কোনোদিনই সহ্য হয়না তিন্নির। আর চাকরি সূত্রে এখানে আসার পর থেকে ঠান্ডা লাগতেই থাকে তার। নিশীথের কাছে থাকাকালীন বড্ড আদরে মুড়িয়ে রাখতো তাকে। এক মাস হলো এখানে এসেছে। আসার পর থেকেই মনে হচ্ছে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কে যেন এক ফাটল ধরেছে।

তিন্নি দার্জিলিংয়ের একটা প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষিকা। নিশীথ একজন ইঞ্জিনিয়ার,, বছরে অর্ধেক সময় বিদেশে কেটে যায়। তিন্নি চাকরি পাওয়ার আগে পর্যন্ত ওর সাথেই ঘুরে বেড়াতো,,,, এক মাস হলো নিশীথ এর থেকে একটু বেশিই দূরে আছে। আলাপটা হয়েছিল স্কুল থেকে। মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে গিয়ে দেখা,,,, বন্ধুর নাম্বারটা নিয়ে রেখেছিল দুজনেই। তারপর সেই বন্ধুত্ব থেকে প্রেমিক প্রেমিকা তে রূপান্তরিত হতে খুব বেশি সময় নেয় নি।

আজকে রবিবার ছুটির দিন, তাই বাইরের বারান্দায় বসে খবরের কাগজ পড়ছে তিন্নি। আজকে তার বিশেষ কাজ নেই। রান্না করতে ইচ্ছা করছে না। এক সপ্তাহ হলো কেমন যেন অদ্ভুত অনুভূতি সৃষ্টি হয়েছে। অবশ্য এটা খুব যে অস্বাভাবিক তা নয়। যতবারই নিশীথ কে ফোন করেছে সে কাজে ব্যস্ত থাকার অজুহাতে বেশিক্ষণ সময় দেয় নি। আর এই দুদিন তো ফোনটাই ধরেনি। চোখের কোনে জলটা মুছে নিয়ে খবরের কাগজটা নামিয়ে রেখে কফির কাপে শেষ চুমুক দিলো।

আজকের দিনটা বেশ কষ্টে কাটবে সেটা বেশ অনুভব করতে পারছে তিন্নি। অন্যদিন কাজের চাপে নিজেকে ব্যস্ত রাখে আজকে কিভাবে থাকবে সেটাই বুঝে উঠতে পারছে না। তার মধ্যে মাথাটা অসম্ভব ভারী হয়ে গেছে। কিছুটা অভিমান করেই নিশীথকে জানায় নি তার শরীরটা এতো খারাপ,,, নিজের বাড়ির লোক অবশ্য জানে তবে পইপই করে বারণ করে দিয়েছে যেন না বলা হয় তাকে আর অজুহাত দিয়েছে যে নিশীথ হয়তো হন্তদন্ত হয়ে কাজ ফেলে তার কাছে ছুটে যাবে।

মাথাটা বেশ ভারী হয়ে আছে। গায়ের জ্বরটা কাল থেকে আরো বেড়েছে। জ্বরের সময় প্রত্যেকটা মানুষেরই কাছের মানুষের থেকে পাওয়া যত্নের প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু আজকে বড্ড একা একা মনে হচ্ছে। কিছু না ভেবে বিছানায় গিয়ে চুপটি করে শুয়ে পড়লো, শরীরটা আর সাথে দিচ্ছে না এবার একটু বিশ্রাম দরকার। চোখটা বন্ধ করতেই চোখের পাতায় ঘুম ভর করলো।

..............

হঠাৎ মাথায় একটা স্পর্শ পেয়ে ঘুমটা ভেঙে গেল তিন্নির। ফট করে চোখটা খুলতে গিয়েও খুলতে পারলো না। অসম্ভব কষ্ট হচ্ছে। জ্বরটা বেড়েছে আরো। গলার কাছে এতো সর্দির চাপ মনে হচ্ছে সেটাতেও কষ্ট হচ্ছে আর মাথার কথা বাদই দিলো। ধীরে ধীরে আবারও চোখ খুলে পাশে তাকাতেই দেখলো কে যেন বসে আছে তার দিকে তাকিয়ে আর তার হাতটা আছে তিন্নির মাথার ওপর। চোখের দৃষ্টি পরিষ্কার হতেই দেখতে পেল তাকে। এ তো নিশীথ বসে আছে। ধরফর করে উঠে বসলো বিছানায়। ভালো করে চোখটা কচলে দেখলো না ঠিকই দেখছে এটা তো নিশীথ। নিশীথের গায়ে হাত দিয়ে দেখলো হ্যাঁ অনুভব করতে পারছে।

নিশীথ এবার বুঝতে পারলো যে, সে যে ওখানে আছে সেটা তার প্রেয়সীর বিশ্বাস হচ্ছে না। ফট করে ওকে জড়িয়ে ধরলো। তিন্নির হার্ট বিট যেন এবার বেশ দ্রুত চলছে। কিন্তু শরীর খারাপ থাকায় ধীরে ধীরে এলিয়ে পড়লো নিশীথের গায়ে। ওকে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞাসা করলো, "তুমি সত্যি এসেছো নিশু, আমি বিশ্বাস করতে পারছি না এখনও।"

নিশীথ আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল, "পাগলী একবার ফোন করে বলতে পারলে না তোমার এত কষ্ট হচ্ছে। আমি যখন বলতাম তৃনা ঠান্ডা লাগবে না, বাইরে যাবে না তখনও তো কিছু বলো নি তুমি। তোমার এই অবস্থা শুনে কাজ ছেড়ে দৌড়ে এসেছি।"

তিন্নি নিশীথের বুক থেকে মাথা তুলে বলল, "আমি তো এই জন্যই তোমায় বলতে চাই নি। তোমার কষ্ট হলো এত টা আসতে হলো তাই।"

নিশীথ এবার ওর হাতটা ধরে টেনে ওকে কোলের ওপর তুলে নিয়ে ব্ল্যানকেটটা দিয়ে নিজেদের জড়িয়ে নিয়ে বলল, "আজেবাজে কথা আর চিন্তা মাথায় কে ঢোকায়। আগে তো তোমার জ্বর হলেও আমি তোমার কাছে তোমার বাড়িতে গিয়ে বসে থাকতাম আর এখন সেটা আমি অবহেলা করবো। আমি কিছু শুনতে চাই না,,,, তোমার কাজ আমি ওখানে ট্রান্সফার করিয়ে নেব আর না হলে নিজের কাজ ছেড়ে এখানে থাকবো।"

তিন্নি এবার নিশীথের বুকে নিজের নাক ঘষে দিয়ে অদূরে গলায় বলল, "বেশ তো তাহলে দুজনেই সব ছেড়ে অন্য দূরে কোথাও পালাই চলো।"

নিশীথ আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো ওকে কিন্তু কিছু বলল না।

................

অনেকক্ষণ জড়িয়ে থেকে বসে থাকার পর নিশীথ এবার ওকে বলল, "তিন্নি তুমি আগে শাওয়ার নিয়ে নাও। আমি ততক্ষন দেখি কি রান্না করা যায়,, এখন জ্বরের মধ্যে বাইরের খাবার না খাওয়াই ভালো।"

তিন্নি এবার আদুরে গলায় বলল, "নিশু অনেকদিন ডিমের ঝোল খাই নি, আজকে করবে প্লিজ। তোমার হাতের ওই একটা রান্না আমার খুব পছন্দ.............

                                           সমাপ্ত