Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Susmita Sau

Tragedy Classics

3  

Susmita Sau

Tragedy Classics

অ-সৎ মা

অ-সৎ মা

5 mins
4.0K


"আরে বলি ও অভাগী কুতা গেলি বল দেকি, বলি বাসন গুলো মাজবে কে শুনি? তোর কি মরা মা এসে সংসারের কাজ করে দেবে? বাপ যেন কতো ঝি রেকেচে? কে জানে সে মিনসে সকাল বেলা কোন চুলোয় মদ গিলতে ঢুকেচে? আমার হয়েচে জ্বালা, ধাঙর মেয়েছেলে শুধু টই টই করচে গা। " গজগজ করতে করতে উনুনে আগুন দিচ্ছিল নন্দুর মা রেখা, কালীচরণের এ পক্ষের বৌ। অভাগী কে জন্ম দিয়েই মরে গিয়েছিল তার মা। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই বিয়ে করে এনেছিল অভাগীর বাবা। সৎ মা নাম রেখেছিল অভাগী। সংসারে পোষা কুকুর বিড়ালের মতোই মানুষ হচ্ছিল সে। তফাৎ ছিল শুধু কুকুর বিড়াল বিনা পরিশ্রমে খেতে পায়, কিন্তু তাকে সারাদিন কাজ করতে হয়, তার ওপর আছে সৎ মায়ের কটূক্তি।

অভাগী এর জন্য কিছু মনে করে না, সে জানে তার বাবা অমানুষ। সকালে স্টেশনে টলি নিয়ে যায়, কাঁচা সব্জি নিয়ে যারা বাজারে যায় তাদের পৌঁছে দেয়, যে কটা টাকা পায় দুপুরে গিয়ে ঢোকে বাজারের পিছনের মদের ঠেকে। সেখানে যে কিনা হয়, গ্রামের সবাই জানে। অতটুকু মেয়ে অভাগী জানে, শুধু এটা জানেনা যে বাড়িতে ঐ রেখা নামের মহিলাটি কি উপায়ে সংসার চালায় ? তাই হয়তো অভাগী আর রাগ করে না। সৎ মায়ের সব উপেক্ষা হজম করে নেয়, আসলে নিজের মা কি সেটাই যখন জানা নেই... তা বলে এই সকাল সকাল অভাগী কে দাঁতে চিবানো কখনই সে সহ্য করবে না। "মরুক গে মাগী চেঁচিয়ে" মনে মনে বলল সে।

আবার বাড়ী থেকে চিৎকার শোনা গেল, " বলি ও পোড়ার মুখি কানের কি মাতা খেয়েচিস্? বলি ছিসটির বাসন আছে যে, মাজবে কে শুনি? আমার হয়েছে এক জ্বালা, মা মাগী তো মরে বাঁচতে, তা পেটের টিকে সঙঙে নে গেলো না কেন শুনি? আমায় জ্বালাবার তারে রেকে গেল বুঝি? "

সত্যি অভাগীর মাঝে মাঝে মনে হয় মা কেন তাকে নিয়ে গেল না? গেলে বেশ হতো, মার কাছে থাকতে পারতো। আজকাল সবাই কে খারাপ মনে হয়, পাড়ার ঐ হরেন মুদি টা, দোকানে গেলেই কেমন খারাপ ভাবে গায়ে হাত বোলায়, বলে " তুই রাতে এসবি অভাগী? সব ধার শোধ হয়ে যাবে রে, আর বাকি রাখবেন কো। "

নন্দুর মাকে বলেছিল সে এই কথাটা, তারপর থেকে আর ঐ দোকানে যেতে দেয়নি নন্দুর মা। হ্যাঁ সে তার এই নতুন মাকে নন্দুর মা বলেই সম্বোধন করে। হয়তো তার মেয়ে হয়ে ওঠা হয়নি, নয়তো রেখার মা হওয়ার ঘাটতি থেকে গিয়েছিল।

এইসব ভাবনা ভাবতে ভাবতে অভাগী যেন কখন অন্য জগতে চলে গিয়েছিল। হঠাৎ একসাথে অনেক চিৎকার শুনতে পেলেন সে, মনে হল যেন বাড়ীর দিক থেকেই আসছে। তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়াল সে। খেয়াল হলো অনেক বেলা বয়ে গেছে, কই তাকে তো খেতে ডাকেনি আজ? তবে কি আজ আর খাবার জুটলো না? ক্লান্ত পায়ে সে বাড়ীর দিকে এগিয়ে গেল।

বাড়ী ঢুকে অবাক হয়ে গেল সে। তার এ পক্ষের ভাই নন্দু উঠোনে বসে কাঁদছে। ঘরের সব জিনিস এলোমেলো হয়ে বাইরে ছড়িয়ে আছে, দেখে মনে হবে কেউ ছুঁড়ে ফেলেছে। রেখাকে ঘিরে পাড়ার মনি পিসি আর ভোলার মা বসে আছে। অভাগী ভয় পেয়ে গেল। মনি পিসি এগিয়ে এসে যা বলল তা হল, কালীচরণ আজ মদের ঠেকে গিয়ে কার সাথে যেন মারামারি করেছে, নেশার খেয়ালে ঠেকে ভাঙাভাঙিও করেছে। ওটা চালায় সুবল সর্দার, সে আবার কোন এক রাজনৈতিক দলের সাকরেদ। তা সুবল ছাড়বে কেন? কিছুক্ষণ আগে চার জন ছেলে সাথে করে এনে কালীচরণ কে তুলে নিয়ে গেছে।

অভাগী মনে মনে বলল বেশ হয়েছে, বাপ থেকেও কি হচ্ছে, সে বেশি অশান্তি, তার থেকে এই ভালো। বরং বাপ তো তাকে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছিল একটা বুড়োর সাথে। খালি নন্দুর মা রুখে দাঁড়িয়ে ছিল, বলেছিল, " এ বে আমি হোতে দিবুনি, সদরে যে নালিশ জানাবু, তুই মেয়ে বিক্রি করছিস। "

অভাগী আস্তে আস্তে ঘরের সব জিনিস তুলে রাখল। তারপর নন্দুকে একটু গুড় চিঁড়ে খাইয়ে দিল।

সন্ধের একটু আগে পুলিশ এসে জানালো, কালীকে কারা যেন খুন করেছে। বডি সদর হাসপাতালে নিয়ে গেছে, কাল সকালের আগে পাবেনা। নন্দুর মা শুধু দরজার আড়াল থেকে বলল, " অভাগী ওনারে কয়ে দে বডি আমরা নে কি করবু? উনারা যা খুশি করুক গে। "

পুলিশটা কি বুঝল কে জানে, তৎক্ষণাৎ চলে গেল। অভাগী অসহায় ভাবে রেখাকে বলল, " এবার কি হবে? তুই কি করবি? " রেখা বলল, "সে থাকতেই কি উপকারে লাগতো? তুই বরং একবার ও পাড়ায় যা, একবার তুর্কি বাপের ঐ বেধবা খুঁড়িকে ডেকে নে আয়। আর শোন যাওয়ার পথে মনি পিসিকে খবর দিয়ে যাস। "

এখন বেশ রাত, স্নান করে ঘরের মেঝেতে নন্দু আর অভাগীকে নিয়ে শুয়ে রেখা। আজ আর দুজনের কেউ ঘুমায়নি। নাহ্ ওরা ভবিষ্যতের চিন্তা করে না, আজ রাতে চিন্তা করে কাল সকালে কি খাবে? ওদের বিনিদ্র রজনী দুশ্চিন্তায় কাটে না, অভুক্ত পেটের জ্বালায় প্রহর শেষ হয়।

এখন প্রায় শেষ রাত, বুঝি ক্লান্ত চোখে ঘুম এসেছিল। রেখা শুনতে পেয়েছিল দরজা ধাক্কা দেওয়ার আওয়াজ। এই ভয়টাই সে পেয়েছিল। অভাগীকে ঘুম থেকে টেনে তুলে সে পাশের রান্নার জায়গায় কাঠের স্তুপের পিছনে লুকিয়ে রেখে এলো। এবার আরও জোর আওয়াজ হলো, দরজা ভেঙে ফেলার মতো। রেখা দরজার এপাশে বসে ওপাশের আক্রোশ টের পেলে। এবার দরজা ভেঙে গেল। সুবল আর তার দুই সাকরেদ ঘরে ঢুকলো। ঘরের সব জিনিস ওলটপালট করতে লাগল। নাহ্ রেখার ঘরে দামি কিছু নেই, তার ঘরের সব থেকে দামি জিনিসটা আজ রেখা কাঠের আড়ালে লুকিয়ে রেখেছে। সুবল এগিয়ে এলো রেখার কাছে তারপর ঐ শুকনো চেহারার বুড়িয়ে যাওয়া শরীর টাকে ভালো করে দেখে বলল, " তুর মে কুথায়?"

-"কেনে? মে কে লিয়ে কি হবে? " রেখা ফুঁসে উঠলো।

-" ঠেকের দাসী বানাবু, বাবুদের মজা দিবে, হামারা ভি মজা পাবো। " কালো ছোপ ধরা দাঁত বের করে কথাগুলো সুবল বলল।

-" খবরদার সুবল, অভাগীর দিকে তাকালে তুর চোখ উবরে লিবো। " রাগে জ্বলে উঠল রেখা।

হ্যা হ্যা করে হায়নার মতো হেসে উঠল লোকগুলো। তারপর রেখাকে সজোরে ঠেলে দিলো। দূর্বল রেখা ছিটকে পড়লো চৌকির ওপর, কপাল ফেটে রক্ত বেরিয়ে এলো। যে রক্তের সাথে অভাগীর কোন সম্পর্ক নেই, সেই রক্ত দেখেই অভাগী উতলা হয়ে উঠলো। যাকে জন্ম থেকে কোনদিন ' মা ' বলে ডাকেনি, সেই রেখাকে মা বলে ডেকে দৌড়ে এলো। রেখার মাথাটা নিজের বুকে চেপে ধরে পরম মমতায় হাত বুলিয়ে দিল। নিজের কাপড়ের আঁচল ছিঁড়ে রেখার মাথা বেঁধে দিলো। রেখা জ্ঞান হারাবার আগের মুহূর্তে দেখল হিংস্র নেকড়ের দল অভাগীকে টেনে নিয়ে ঐ রান্না ঘরে ঢুকলো।

কতক্ষণ ওভাবে রেখা অচৈতন্য হয়ে ছিল জানেনা। হঠাৎ করে চেতনা ফিরে সে পাশের ঘরে দৌড়ে গেল। দেখল তিনটে জানোয়ার মিলে অভাগী কে শোষণ করে যাচ্ছে। রেখার মনে ভেসে এলো অভাগী র ' মা ' ডাক টা। জ্ঞান শূন্য হয়ে রেখা পাশে রাখা কাটারিটা হাতে তুলে নিল। মুহূর্তের মধ্যে তিনটে নেকড়ের নিথর শরীর ঘরের মেঝে ছিটকে পড়লো। অভাগী কে বুকে জড়িয়ে নিল ওর " অ-সৎ মা "।

ভোর হওয়ার আগেই অভাগী কে সুস্থ করে তুললে রেখা। তারপর ঘুমন্ত নন্দু কে কোলে তুলে অভাগীর হাতটা শক্ত করে ধরে রাস্তায় নেমে এলো রেখা। অভাগী বলল, " আমরা কুথায় যাচ্ছি মা? "

-"জানিনে ।"

সত্যি হয়তো রেখা জানেনা তার গন্তব্য, শুধু এটুকু জানে তার দুটি সন্তান কে বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব তার। শহর জুড়ে যখন ঘটা করে " মাদার্স ডে " পালন করা হচ্ছে, তখন অন্যত্র কোথাও শুরু হচ্ছে আর একটা অন্য মায়ের গল্প। একজন নারীর মা হয়ে ওঠার গল্প।


Rate this content
Log in