SUSHANTA KUMAR GHOSH

Children Stories Thriller Children

3  

SUSHANTA KUMAR GHOSH

Children Stories Thriller Children

তুতুন গেল মাছ ধরতে

তুতুন গেল মাছ ধরতে

9 mins
157


তুতুন গেল মাছ ধরতে 

সুশান্ত কুমার ঘোষ 


তুতুন গেল মাছ ধরতে। না,ক্ষীর নদীর কূলে নয়,তালার দহে।সঙ্গে গেল সাতগাঁ দাদু।তুতন এসেছে মেলা দেখতে সাতগাঁ দাদুর বাড়ি। এখানকার তালার মেলা বিখ্যাত। বাবার কাছে এই মেলার গল্প শুনে শুনে তুতুনের ইচ্ছে হল এবার সে নিজের চোখে মেলাটা দেখবে। বাবা বলেন, মেলাটা আকারে ছোট, কিন্তু মজা অনেক। সাতদিন ধরে চলে সেই মেলার মজা। দিনে ঘোরে নাগর দোলা,গন্ধ ছাড়ে চপ ঘুগনি পাপড় ভাজা, কানে বাজে ভেপু।আর রাতে রাতে বসে জলসার আসর।সারা রাত ধরে চলে লোটো,আলকাপ,ঝুমুর নাচ,পঞ্চরস আর যাত্রাপালার গান। কলকাতার নামীদামী অপেরার যাত্রাপালাও নাকি হয় দুদিন। 


তাই এবার তুতন জেদ ধরে বসল।সে আর কোনো কথা শুনতে রাজি নয়।এবার তাকে সাতগাঁ দাদুর বাড়ি নিয়ে যেতেই হবে। মেলা তার দেখা চাই। দরকারে বাবাকে ছুটি নিতে হবে। সে স্কুলে স্যারদের অনেক আগেই বলে রেখেছে এবার সে সাতগাঁ দাদু বাড়ি যাবে, তার এক সপ্তাহের ছুটি চাই। 


পাঁচ দিনের ছুটি নিয়ে তুতুন মেলা দেখতে সাতগাঁ দাদুর বাড়ি। এসে শুনল মেলা এখন হয় না। মেলা বসা বন্ধ আছে বেশ ক'বছর। তুতুন উঠল রেগে। মেলা বসবে না মানে! সে এসেছে পাঁচ দিনের ছুটি নিয়ে মেলা দেখতে। স্যারদের কাছে প্রমিস করতে হয়েছে, বাড়ি ফিরে বেশি বেশি করে পড়ে পাঁচ দিনের পিছিয়ে যাওয়া পড়া সে রপ্ত করে নেবে। কত কষ্ট করে বাবাকে রাজি করিয়েছে। এতদিন ছুটি বাবা কখনো নেন না।তার জন্য বাবাকে ছুটি নিতে হল।মেলা দেখার জন্য এতকিছু করতে হয়েছে তাকে। মেলা বসবে না বললেই হল!!


তুতুন দাদুকে গিয়ে ধরল।দাদুর সঙ্গে খুব একটা ভাবসাব ছিল না। তাদের বাড়িতে দেখেছে কয়েক বার।চকলেট টকলেট নিয়েছে,মাঝে মধ্যে কোলে উঠেছে এই পর্যন্ত। আসলে বাড়িতে এসে বেশ কয়েকদিন জাকিয়ে বসে গল্প টল্প না করলে বন্ধুত্বটা বেশ জমে না। এক আধ ঘন্টার দেখাশোনায় কি আর ভাব ভালোবাসা হয়! যাই হোক, এখন তুতুনের গরজটাই বেশি।মেলাটা তো তারই দেখা হয় নাই।


কোনো ভনিতা না করে সরাসরি বলল তুতুন 

"ও দাদু, মেলাওয়ালাদের বল না, মেলাটা সাজাতে।বল গিয়ে তুতুন এসেছে মেলা দেখতে। গিয়ে বললেই হবে দেখো।"

"আচ্ছা ঠিক আছে দাদু ভাই,সব হবে। তুমি আগে স্নান কর,ভাত খাও,তারপর ওসব কথা হবে। "

"না না, সে অনেক দেরি হয়ে যাবে। মেলা সাজাতে সময় লাগবে তো।"

দাদু একটু ভেবে উত্তর দিলেন -

" তা সময় একটু লাগবে। দুটো দিন তো সময় দিতেই হবে। "

"তাহলে তো আমার ছুটি ফুরিয়ে যাবে! তুমি এক কাজ কর, মেলাওয়ালাদের বল চপ ঘুগনি পাঁপড় ভাজার দোকান সাজানোর দরকার নাই। পকোড়া মোগলাই ফিস ফ্রাই হলেই চলবে। তবে নাগরদোলা বসা চাই কিন্তু। "

" হবে ভাই, সব হবে। তোমার নাওয়া খাওয়া ঘুম এগুলো হোক আগে। "


সাতগাঁ দাদুটাকে তুতুনের বেশ ভালোই মনে হল।এই তো কিছুক্ষণ হল তারা এসেছে। এরই মধ্যে ভাব জমে গিয়েছে বেশ।তুতুন যা বলছে, দাদু তাই শুনছে।মেলা বসা বন্ধ হয়ে গেছে অথচ তুতুন মেলা দেখতে এসেছে বলে মেলা বসবে, একি কম কথা। ফিরেই বন্ধুদের বলবে, "জানিস আমর জন্যে সাতগাঁ দাদু মেলা বসিয়েছে!"

তিতাসকে বললে হয়তো বিশ্বাসই করবে না। তাই ওর জন্য একটা পুতুল কিনবে ঠিক করল।মাকে বলবে তিতাসের জন্যে একটা বড় পুতুল কিনতে।


মেলায় কোন দিন কি কি করবে, তাও ঠিক করে। ফেলল তুতুন। নাগরদোলায় সে প্রতিদিনই চরবে। একদিন চিকেন পকোড়া খাবে। মোগলাই খাবে একদিন। তার পরের দিন ফিস ফ্রাই আর রোল।তবে রাতের জলসায় সে প্রতিদিন যাবে। আলকাপ,ঝুমুর নাচ, লোটোগান- এসব তো তার দেখা হয় নাই কখনো। এবার মেলাতেই সব দেখবে সে।ভালো করে শিখে নেবে বিষয়গুলো। বন্ধুদের শেখাতে হবে তো।লোটোগান,ঝুমুর নাচ কেমন হয় কে জানে না।সে তো বিদ্যাসাগর মঞ্চে বোস কাকুদের নাটক দেখেছে। টিনা দিদি সোমা দিদি দের নাচ গান আবৃত্তি শুনেছে। লোটো ঝুমুরের গল্পই শুনেছে শুধু বাবার মুখে। এবার সে নিজের চোখে দেখতে পাবে। তবে ছৌ নাচ তার দেখা হয়ে গেছে। সেবার পুরুলিয়ায় বাবার বন্ধুর বাড়ি বেড়াতে গিয়ে ছৌ নাচ দেখেছে। 


বেশি কিছু দেখা হয়নি তুতুনের। তবে ছোটা ভীম আর নবিতা সে প্রত্যেক দিন দেখে।মাঝে মাঝে টম জেরি। তবে কিংকং স্পাইডার ম্যান গর্জিলা জুরাসিক পার্ক - এগুলো তার অনেক বার করে দেখা হয়েছে।বাবা তো সব সিডি এনে দিয়েছেন। ভূত আংকেল আর ভূত এণ্ড ফ্রেন্ড দেখতে তার খুব ভালো লাগে। তবে সব থেকে বেশি ভালো লাগে জ্যাংগুলি কী ম্যাংগুলি।ও!ম্যাজিক ব্যাটে করণ কী ছক্কাটাই না মারে।বলে বলে ছক্কা! সেও তো ক্রিকেটার হবে। বড় হয়ে ক্রিকেট খেলবে। শচীনরা না পারলে কি হবে, তুতুন বলে বলে ছক্কা মারবে সব বোলারকে।তুতুনের হাতে কোনো বোলারের রেহাই নেই। সে তুতুন বটে!হাতে তার চওড়া ব্যাট।শরীরে ছোটা ভীমের মতো শক্তি! 


বিকেলে ঘুম থেকে উঠেই দাদুকে ধরল-

" দাদু,মেলাওয়ালাদের বলেছ?"

" হ্যাঁ ভাই বলেছি। ওরা বলল আজ রাতে একটা মিটিং করি,তারপর কাল থেকে না হয় মেলা বসানো যাবে। "

রাতে তুতুন একটু আগেই ঘুমিয়ে পরল।নিজের হাতে ভাত খায়নি সেটা মনে আছে। হয়তো মা-ই খাইয়ে দিয়েছে। ঘুমাতে ঘুমাতে খেয়েছে তো,এখন আর কিছু মনে নাই। খাওয়ার কথা মনে না থাকলেও মেলার কথা কিন্তু ভোলে নাই।ঘুম থেকে উঠেই পরল দাদুর খোঁজ। দাদু তখন গরুকে খাওয়াচ্ছিল।তুতুন আর সাহস পায়না দাদুর কাছে যেতে। গরুকে খুব ভয় তার। শিং নেড়ে তেড়ে আসে যে! যদি শিং ফুটিয়ে দেয় পেটে! তুতুন আবার নতুন এসেছে এখানে। তাকে ওরা চেনেও না।দাদুকে চেনে, তাই কিছু করছে না।আর দাদুকে মারলে ওদের খেতে দেবে কে! তুতুন একটু তফাতে থেকেই ডাক দেয় -

" দাদু!দাদু!"

" কি ভাই? "

" দাদু, মেলার মিটিং করেছে? "

"হ্যাঁ, করেছে।ওরা বলছে যেখানে মেলা বসে সেই জায়গাটা তুতুন ভাইকে একবার দেখাবে। তুতুন ভাই যদি বলে সেখানে যা আছে তার উপরেই মেলা বসিয়ে দাও, তাহলে ওরা তক্ষুনি মেলা বসানোর কাজ শুরু করে দেবে। "

"তাহলে চলো,এক্ষুনি ঘুরে আসি। "

" না ভাই, এখন নয়। মেলার মাঠ ঘুরতে হয় বিকেল বেলা। সব কিছুর তো একটা নিয়ম আছে। "

তুতুন ভাবল তা তো বটে। যখন তখন তো সব কিছু করা যায় না। রবিবার যেমন ইস্কুল ছুটি থাকে। রাত্রটা যেমন বাড়িতে ঘুমানোর সময়। রাতে ইস্কুলে যেতে হয় না। তিতাসের সঙ্গে তো বিকেলেই খেলে। সকালে তো খেলে না কোনদিন। তাহলে মেলার মাঠে যাওয়ার নিয়ম বিকেলেই হবে।


বিকেলে তুতুনকে আর তাড়া দিতে হয়নি। দাদুই তাকে ডেকে তুলল ঘুম থেকে-

"তুতুন ভাই, ওঠো ওঠো, মেলার মাঠে যেতে হবে যে!"

ডাক শুনে তুতন ধড়মড় করে উঠে বসল।দু'হাতে চোখ রগড়ে দাদুকে দেখেই বলে উঠল-

" চলো চলো।"


তুতুন দাদুর সাইকেলের পিছনের কেরিয়ারে বসল।সাইকেলের রডের সঙ্গে বাঁধা একটা ছিপ।হ্যাণ্ডেলে ঝোলানো একটা ব্যাগ।মাছ ধরার ছিপ তুতুন দেখেছে। তুতুন তাই জিজ্ঞাসা করল 

" আমরা তো মেলার মাঠে যাচ্ছি,তাহলে ছিপ নিয়ে কি হবে দাদু?"

"দুটোই এক সঙ্গে হবে দাদু। তোমার মেলার মাঠ দেখা হবে, আমার মাছ ধরাও হবে! "


দাদু যেখানে থামলেন, তুতুন দেখে সেখানে পুরোটাই চাষের জমি। প্রায় সব জমিতেই ফসল রয়েছে। ঝিঙে, উচ্ছে, তরমুজ, ছোট ছোট তিল গাছ।একটু দূরে একটা ঝোপের মতো জায়গা। সেখানে ছোট বড় অনেক খেজুর গাছ রয়েছে। সঙ্গে শ্যাওড়া জাতীয় আরও কিছু গাছ দেখা যাচ্ছে। দাদু বললেন -

" দাদু ভাই, এই দেখ,এই হল মেলার মাঠ।"

তুতুন অবাক হয়ে গেল। মেলার মাঠ আবার এমন হয় নাকি! এ তো সব চাষের জমি। কত মেলা সে দেখেছে। সে মেলার মাঠ গুলো তো খেলার মাঠের মতো। তুতুন হতাশ হয়ে জিজ্ঞাসা করে -

" ও দাদু, এ তো চাষের জমি! এখানে মেলা বসবে কিভাবে? "

"এটাই মেলার মাঠ ছিল দাদু ভাই। তোমার বাবা যখন তোমার বয়সী ছিল, তখন এটা ডাঙা ছিল। তারপর গ্রামের লোকজন বেড়ে গেল। কিন্তু জমি তো আর বাড়ল না। তাই ডাঙা গুলোই সব চাষের জমি হতে লাগলো। "

" তাহলে মেলা কোথায় বসত?"

"এই চাষের জমিতেই বসত।মেলার সময় কেউ ফসল বুনতো না।মেলা শেষ হলে ফসল বুনত সব।

এখন আর মেলা বসে না।তাই সবাই ফসল বুনে দিয়েছে। এবার তুমিই বল,এই ফসলের উপর মেলা বসানো কি ঠিক হবে? "

তুতুন ভেবে পায়না ঠিক কি করা উচিৎ। মেলা বসাতে বলবে কি বলবে না। 

তুতুনের ভাবনার মাঝেই দাদু বললেন -

" কি জান দাদু ভাই, এখানকার সব মানুষই তো চাষি। চাষ করেই সংসার চালায়।তোমার বাবার মতো চাকরি তো কেউ করে না।মাঠের ফসল বেচে যা টাকা পায় তাই দিয়ে সব জিনিস কেনে।এখন ফসলের উপর যদি মেলা বসাতে বল,তাহলে ফসল গুলো তো আর থাকবে না। ওরাও আর ফসল বেচে টাকা পাবে না। কি খাবে বল তো? "

তুতুন এতক্ষণ ভেবে পাচ্ছিলনা কি বলা উচিৎ। দাদুর কথায় তার দ্বন্দ্ব কাটল।ভেবে দেখল সত্যিই তো মেলা বসলে সামনে চোখ জুড়োনো যা সব ফসল দেখছে সব নষ্ট হবে। তুতুন তাই ঝটপট দাদুকে জানিয়ে দিল-

"ঠিক আছে দাদু, এখন আর ফসল নষ্ট করে মেলা বসাতে হবে না। তবে বলে দিও সামনের বছর যেন মেলা বসার পর ফসল বোনে!"


দাদু হাসতে হাসতে বলেন " তুমি যদি বল,তাহলে ওরা ফসলের উপরেই মেলা বসিয়ে দেবে। "

"না না।মেলা বসাতে হবে না! সব নষ্ট হয়ে যাবে যে!"

হঠাৎ তুতুনের কি যে মনে পড়ে গেল। সে দাদুকে জিজ্ঞাসা করল -" আচ্ছা দাদু, মেলা বসা বন্ধ হল কেন? "

দাদু ভেবে পায়না এ প্রশ্নের কি উত্তর দেবে! এ যে কঠিন প্রশ্ন। এক কথায় উত্তরও হয়না। তবুও উত্তর তাকে দিতেই হবে। ভাবীর কাছে কৈফিয়ত দিতে সবাই বাধ্য! 

" সে অনেক কথা দাদু ভাই। হঠাৎ সব কেমন যেন উলোটপালোট হয়ে গেল। মানুষের সঙ্গে মানুষের ভাব ভালোবাসা গেল হারিয়ে। কেউ কাউকে বিশ্বাস করে না আর।কারোর উপর ভরসা করে না কেউ! ঝগড়াঝাটি, মারদাঙ্গা... "

"তোমরা ঝগড়া মারামারি কর!"

অবাক হয়ে গেল তুতুন! 

"আমরা স্কুলে, পাড়ায়, খেলার মাঠে - কেউ কোথাও মারপিট করি না! মারপিট করলে স্যার মিসরা বকেন! সবাই বলেন কারোর সাথে ঝগড়াঝাটি মারদাঙ্গা করতে নাই! তুমি তো দাদু, সবার বড়,তাহলে তুমি ওদের বকে দাওনা কেন? তুমি ওদের বলবে তুতুন বলে দিয়েছে মারপিট না করতে। সবাই মিলে মেলা বসাতে। আর যদি মারপিট করে স্যারদের বলে এমন বকুনি খাওয়াবো, বুঝবে মজা! "

" তোমাদের স্যার মিসরা খুব বকেন বুঝি? "

" এমনিতে বকেন না।তবে আমি তো তিতাসকে মারি মাঝে মাঝে, তখন স্যারের বকা খাই। সেই জন্যেই জানি ঝগড়াঝাটি মারপিট একদম ভালো নয়! তাহলে কেউ বন্ধু হয়না! "


ওরা এসে পৌঁছায় দহের ধারে। দহের জল দেখে তুতুন অবাক হয়ে বলে -"ও দাদু এটা নদী তো!"

" হয়তো নদীই ছিল এক সময়। এখন লোকে এটাকে তালার দ বলে। "

" দ আবার কি কথা  দাদু? "

"বড় জলাশয়কে তালা বলা হয়। দ কথাটা এসেছে হ্রদ থেকে। হ্রদ আমাদের জিভে পাল্টি খেয়ে দহ হল।সেখান থেকে দ হয়ে গেল! হ্রদ কি জানো তো? "

" হ্যাঁ। আমি তো হ্রদ দেখেছি। চিল্কা হ্রদ। অনেক বড় গো দাদু।লঞ্চে চেপে ঘুরতে হয়। কত ডলফিন গো দাদু। গায়ে লাফিয়ে পড়ছে একেবারে। আর কত পাখি! আচ্ছা দাদু, এখানে ডলফিন আছে? "

"ডলফিন নাই। তবে বড় বড় মাছ আছে। কুমিরও ছিল এক সময়। "

" কুমির আছে!" উত্তেজনায় লাফিয়ে উঠলো তুতুন! "কই কোথায় আছে? "

" এখন আর নাই। ছিল এক সময়। "

" কোথায় ছিল দাদু?"

" সে তোমাকে দেখাবো সব।বাঘের বাসা কুমির বাড়ি, সব দেখাবো তোমাকে! মেলা তো আর দেখা হচ্ছে না। ভালোই হল,ওগুলো সব দেখে নিতে পারবে! "

কুমির আর বাঘের কথা শুনে তুতুন উত্তেজনায় লাফিয়ে উঠলো। 

"দাদু, এক্ষুনি দেখাবে চল!" 

" এখন নয় ভাই, ওগুলো পরে হবে। এখন মাছটা ধরি এসো।"

দাদু ব্যাগের ভিতর থেকে একটা সুতো জড়ানো হুইল বের করল।সুতোর ডগায় দশ বারটা বড়শিগাঁথা! বড়শীর মাথায় চার লাগিয়ে সেটাকে ছুড়ে দিল দহের গভীর জলে। তুতুন জিজ্ঞাসা করল -

"ওটা কি দাদু?"

" ওটাকে তগি বলা হয়। ওই বড়শীর মাথায় মাছের প্রিয় খাবার লাগিয়ে দিলাম। খাবার গুলো খুব গন্ধ ছাড়বে। খাবারের গন্ধ পেয়ে বড় বড় মাছ ছুটে এসে যেই না খেতে যাবে অমনি বড়শী গুলো গেঁথে যাবে মুখে। এই দেখো না। "


তগীটা গভীর জলে ফেলে হাত ছিলে টোপ গেঁথে তাকিয়ে থাকে ফাতার দিকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তগীর সুতোয় পরল টান।হুইল ঘুরছে পাঁই পাঁই করে। সুতো যাচ্ছে খুলে। দাদু জল থেকে ছিপটা তুলে পাশে রেখে বললেন -

" তুতুন ভাই, মাছে টোপ গিলেছে। তগীর সুতোয় টান পরেছে। এবার তুমি চুপটি করে বসে দেখো মাছ বাবাজী কেমন খেলে! "

তুতুন দেখে দাদু তগীর সুতো গোটায় আর মাছটা টেনে নেয়।জলের মধ্যে এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে ছুটে বেড়ায় মাছটা। জলে বড় বড় ঢেউ ওঠে। দাদুর সঙ্গে মাছের খেলাটা অনেক ক্ষণ ধরে চলে। এইভাবে সুতো টানা গোটানো করতে করতে মাছটা এক সময় ক্লান্ত হয়ে পরে। দাদু তখন সুতোর টানে মাছটাকে তীরের কাছে নিয়ে আসে। তগীটা মাটিতে শক্ত করে পুঁতে একটা বস্তা দিয়ে চেপে ধরে মাছটা ডাঙায় তোলে। 

মাছের আকার দেখে তুতুন তো অবাক! এ তো তার সমান মনে হচ্ছে! ডাঙায় উঠেও লাফাচ্ছিল।তুতুন চেষ্টা করেও মাটি থেকে তুলতে পারল না। এত বড় মাছ সে এর আগে হাত দিয়ে দেখেনি কখনো!  


মাছ ধরার আনন্দে বাঘ কুমিরের কথা ভুলে গেল। 

দাদুর সাইকেলের পিছনে বসেই কোমর দোলাতে দোলাতে ফিরে এলো বাড়িতে। আসার পথে দাদু বললেন -

"তুতুন ভাই, বাড়ি গিয়ে কি বলব বল তো? "

" কি বলবে দাদু?"

" বলব মাছটা তুতুন ভাই ধরেছে! 

কথাটা শোনার পরে তুতুনের নাচ তো আরও বেড়ে গেল। তার কি এমনি এমনি নাচতে ইচ্ছে করছে! যেমন তেমন মাছ তো সে ধরে নাই। মাছটা আকারে তার সমান সমান! মাও পারবে না তুলতে। 

দাদু যখন বাড়িতে বলবে মাছটা তুতুন ধরেছে মা অবাক হয়ে যাবে! 

ভাববে আমার তুতুন তো বেশ বাহাদুর হয়ে গেছে!



Rate this content
Log in