Rima Goswami

Romance Tragedy Fantasy

4  

Rima Goswami

Romance Tragedy Fantasy

বধূ যখন বেশ্যা অন্তিম পর্ব

বধূ যখন বেশ্যা অন্তিম পর্ব

9 mins
469


তারপর কেটে গেছে পনেরো বছর । আজ গুনগুনের বার্থডে । বিশাল আয়োজন আজ মার্কণ্ডেয়র বাড়িতে । তার আর মাহির একমাত্র সন্তান গুনগুন আজ আঠেরো বছরের হলো । সারাবাড়ি সেজে উঠেছে আলোয় আলোয় । মাহি এখন এক নিজস্ব এন জি ও চালায় কাদারোডের মেয়েদের সাথে নিয়ে । ওখানকার অনেক মেয়েকে পড়াশোনা , বিয়ে এসবের জন্য মাহির এন জি ও হেল্প করে । সতী দেবী চোখ বুঝেছেন বছর দুয়েক আগে । উনি যাবার আগে ওনার সমস্ত গয়না চিনির বিয়েতে দেবার জন্য বলে গেছেন । কিন্তু রমলার মেয়ে চিনি তার সতী ঠাম্মির গয়না পড়ে এখনই বিয়েতে বসতে রাজি নয় । সে এখন এক গাইনোলজিস্ট সার্জেন হিসেবে সরকারি হসপিটালে জয়েন করছে । আগামীদিনে সে কিছু করতে চায় তার মাহি আন্টির মত । সমাজের বিভেদ গুলো ধুয়ে মুছে সাফ করতে হবে ওদের । সেদিন উর্যা মাসি আর মাহি আন্টি যদি চিনিকে না বাঁচাত তা হলে আজ সে দুবাই এর মত কোন বিদেশে পড়ে থাকত যৌনদাসী হয়ে । মাহি আন্টি আর মার্কণ্ডেয় আঙ্কেল চিনিকে আর গুনগুনকে নিজের সন্তানের মত মানুষ করেছে । ওদের নিজেদের সন্তান হয়নি বলে কোন আক্ষেপ পর্যন্ত নেই । চিনি যদিও পুরো সময়টা হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা চালিয়ে গেছে তবুও প্রত্যেক ছুটিতে আঙ্কেল নিজে এসে ওকে বাড়ি নিয়ে গেছে । কোনদিন বুঝতে দেয়নি যে ও অনাথ । প্রেম জীবনে আসেনি , আসতে চেয়েছে অনেকেই কিন্তু চিনি কার সাথে সংসার করবে এই সিদ্ধান্ত নেবার অধিকার সে তার আঙ্কেল আন্টিকে দিয়ে রেখেছে । গুনগুনের মায়ের মুখটা মনে পড়ে না । তবে ওর মা উর্যাকে ও এক অপরাধী হিসেবে মনে রাখেনি , এক যোদ্ধা হিসেবে মনে রেখেছে । তার মায়ের মত মা না পেলে গুনগুন বাঁচতে পারত না । গুনগুন অপেক্ষায় আছে তার দিদিভাই চিনির । সে আসলে তবেই কেক কাটবে এই বায়না ধরে বসে আছে ।


এদিকে পরপর দুটো সার্জারি সেরে ডক্টর চিত্রা সেন ওরফে চিনি যখন নিজস্ব কেবিনটিতে ঢুকল , তখন দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে চলেছে প্রায় , ক্লান্ত শ্রান্ত শরীরটাও নুইয়ে পড়েছে রীতিমতো,যদিও আজকের শিডিউল অনুযায়ী একটাই মাত্র সার্জারির ভার পড়েছিল তার উপর, কিন্তু একটা ইমারজেন্সি কেস চলে আসার পর সব প্ল্যান চেঞ্জ হয়ে গেল । গর্ভবতী মেয়েটিকে তার স্বামী বেধড়ক মারধর করায় তার জল ভেঙে যায় আর ব্যাথা শুরু হয়ে যায় । ইমার্জেন্সি ওটি করে মা ও বাচ্চাকে বাঁচিয়েছে চিনি । এতেই সে শান্ত হবার নয় , সে এবার ওই মহিলার স্বামীর বিরুদ্ধে এফ আই আর করে তবেই শান্ত হবে । এখনো এই মধ্যযুগীয় বর্বরতা মেনে নেওয়া যায়না । সহকর্মী ডাক্তার ওঝা চিনিকে মানা করেন এই স্টেপ গ্রহণ করতে কারণ আর এখন ডাক্তারের প্রতি চারদিকে যা মনোভাব, তাতে রিস্ক নিয়ে নিজের বিপদ বাড়ানোর কোনো মানেই হয় না , হাজার হোক ঘরে একটা পরিবার আছে তার । আজ তার বোনের জন্মদিন তাই চিনিকে ডক্টর ওঝা বাড়ি ফিরে যেতে বলেন । চিনি পেসেন্ট এর ওই স্বামীকে ডেকে খুব করে বকাবকি করে । আর এটাও জানায় যে ভবিষ্যতে এধরণের কাজ করলে কিন্তু পুলিশ কেস হবে । লোকটি বারবার ক্ষমা প্রার্থনা করে নিজের কৃতকর্মের জন্য । আর এটাও কথা দেয় ডাক্তার দিদিমণির কাছে যে সে এধরনের কাজ আর কোনদিন করবে না । দেরি হয়ে যাচ্ছে বারবার ফোন আসছে বাড়ি থেকে । চিনি নিজের কেবিনে ঢোকে তার ভীষণ ভাবে গলা শুকিয়ে গেছে ।


আহ্ ", ঢকঢক করে গোটা বোতলের জলটা খেয়ে নিলো একেবারেই, প্রাণটা জুড়ালো যেনো এবার । দীর্ঘ পরিশ্রম , হেট্রিক সিডিউল পার করে চিনি যখন শীততাপ নিয়ন্ত্রিত রুমে একটু জিরিয়ে নিতে বসে ...সে বুঝতে পারে ঠান্ডা আবেশে দুটো চোখের পাতা পরস্পরের সাথে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হচ্ছে এবার,বেশ ঘুম ঘুম পাচ্ছে । চোখটা কচলে এবার উঠে পরে সে । গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যায় সে মথুরা হাউসের দিকে । দুদিন পর বাড়ি পৌঁছে চিনি দেখে এলাহী আয়োজন । ভিতরে ঢুকেই তাকে আটক করে আঙ্কেল আন্টি আর গুনগুন । ওদের রাগ উপশম করে চিনি ছোটে নিজের রুমে । একটা ঘিচা তসর শাড়ি পরে সে জয়েন করে পার্টি । গুনগুনকে চিনি আগেই একটা গাউন কিনে এনে দিয়েছে । সেই পিঙ্ক বার্বি গাউন পরে গুনগুন কেক কাটে । পার্টির গেস্টরা সকলে বার্থডে উইশ করে গুনগুনকে । এগুলো সবই ভালো দিনের সংকেত তবুও গুনগুনকে বিষাক্ত শৈশবের স্মৃতি বারবারই গলা জড়িয়ে ধরে ...

তাইতো বুফেতে থরে থরে রাখা দেশী বিদেশী খাবারের সুগন্ধ এসে ঘ্রাণেন্দ্রিয়ে উঁকি মারলেও বিন্দুমাত্র খাওয়ার ইচ্ছে জাগছেনা গুনগুনের । মনটা মায়ের জন্য খারাপ করে ওর । তবে মাহি মায়ের কাছে এই ফিলিংসটা সে বুঝতে দেয়না । মাহি মায়ের মন খারাপ হয়ে যায় । এদিকে চিনির হোস্টেলে থাকা কালীন দীর্ঘদিন ধরে ধরে বাইরের খাবার খেয়ে খেয়ে খাবারের প্রতি ভক্তিশ্রদ্ধাটাই উবে গিয়েছে । বাড়িতে মাহি আন্টির বানানো সাধারণ ঘরোয়া খাবার খেতে ওর বেশি ভালো লাগে । মাহি সারা পার্টি জুড়ে কিশোরীর মত ঘুরে বেড়াচ্ছে । মেয়েদের জন্য খুব গর্ব বোধ হয় ওর । গুনগুনকে দত্তক নেবার পর ওর কচি গলায় সেই মা ডাক যে কতটা সুমধুর তা কেবলমাত্র যে শুনেছে সেই জানে । সারাদিনের ক্লান্তি একলহমায় ধুয়ে মুছে যেত সেই ডাকে , নিজের সন্তান না হবার কোন দুঃখ কষ্ট কিছুই আসেনি তাই । ছোট্ট ছোট্ট দু হাতের ছোয়া, নিরীহ দুচোখের মধ্যে মাহি খুঁজে বেড়াতো উর্যাকে । সময় লাগেনি ওরা হয়ে উঠেছিল তার বেঁচে থাকার একমাত্র রসদ । মার্কণ্ডেয় এক কালে ছিলো বেহেমিয়ান আর সেই এখন দুই মেয়ের গর্বিত বাবা । চিনি জীবনে প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেছে । সে সমাজের জন্য কিছু করতে চায় । ওকে সংসারী করে শান্তি পাবে মার্কণ্ডেয় । আর গুনগুনকে তো এখনো অনেক পথ চলতে হবে ।


তার সবে উচ্চমাধ্যমিক শেষ হলো । মেয়েটা আদুরী খুব । মার্কণ্ডেয়র অতীতের স্মৃতি রোমন্থন শেষে দুফোঁটা জল গড়িয়ে পরল চোখ দুটো বেয়ে । বাবা বেঁচে থাকতে বাবা এই মার্কণ্ডেয়কেই তো দেখতে চেয়েছিলো । পার্টি শেষে সবাই চলে গেলে ওরা ঘুমাতে যায় । সামনেই শারদীয়া দুর্গা পূজার আয়োজন সারতে হবে মাহির এখন খুব ব্যস্ততা । বোন গুনগুনের আবদারে সব কটা গিফট অনপ্যাক করে দেখতে হলো চিনিকে । তারপর অনেক কষ্টে বকবক থামিয়ে গুনগুনকে ঘুমাতে পাঠিয়ে একটা বাথ নিতে বাথরুমে ঢুকে যায় চিনি ।শাওয়ারের জলে দেহনিঃসৃত নোনতা তরল ধুয়ে মুছে গেলেও চোখেদুটোর জ্বালাপোড়া কমাতে পারলো কই ! শরীরের ক্লেদ মুছলেও মনটা যে এক রকম অশান্তই রয়ে গেল । মন অশান্ত হয়ে আছে আজও তার । মা রমলাকে কিছুতেই ভুলতে পারেনি সে । ওর দুম করে পালিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নেওয়াটাই মায়ের মৃত্যুর কারণ । ও না পালালে মাকে মারতো না ওই রত্নার দলবল । ডাক্তার হয়েও নিজেকে মায়ের খুনি বলে মনে হয় ওর । ঘুম নেমে আসে সরাদিনের ধকল পেরিয়ে । ঘুমিয়ে পড়ে চিনি । পরেরদিন সকালেই হসপিটালে যাবার জন্য ঘুম থেকে উঠে রেডি হয়ে যায় চিনি । মাহি আন্টি রাগ করে বলে , একটা দিনও ঘরে থাকা যায় না বুঝি ? আজ মহালয়া জানিস ? ভোরে কেউ উঠলে না তোমরা । একাই শুনলাম বীরেন্দ্র কিশোর ভদ্রের কণ্ঠে দেবীর বর্ণনা । জানিস এই মহালয়া শুনে আমি মনে শক্তি পাই । মায়ের বর্ণনা আমাদের মনে শক্তির সঞ্চার করে । পিতৃপক্ষের অবসানে, অমাবস্যার সীমানা ডিঙিয়ে আমরা যখন আলোকময় দেবীপক্ষের আগমনকে প্রত্যক্ষ করি, তখনই সেই মহালগ্নটি আমাদের জীবনে মহালয়ার বার্তা বহন করে আনে। এক্ষেত্রে স্বয়ং দেবীই হচ্ছেন সেই মহান আশ্রয়, তাই উত্তরণের লগ্নটির নাম মহালয়া। একটি অর্থ অনুসারে মহান আলয়টি হচ্ছে পিতৃলোক। আশ্বিন মাসে কৃষ্ণপক্ষের অবসান ও দেবীপক্ষের সূচনায় যে অমাবস্যাকে আমরা মহালয়া হিসাবে চিহ্নিত করি, সেই দিনটি হচ্ছে পিতৃপূজা ও মাতৃপূজার সন্ধিলগ্ন। পিতৃপূজা ও মাতৃপূজার মাধ্যমে এই দিনটিতে আমরা আমাদের এই মানব জীবনকে মহান করে তুলতে প্রয়াসী হই বলেই এই পূণ্যলগ্নটিকে মহালয়া বলা হয় ।


চিনি বলে ঠিক আছে আমি না হয় শুনে নেবো সময় করে । তবে প্লিস আজ যেতে দাও আন্টি , ওটি আছে যে । মাহি জানে মেয়েটা কাজ পাগল তাই আর আটকায় না । টিফিন সেরে বেরিয়ে আসে চিনি । রাস্তায় যেতে যেতে ভাবে মহালয়া সেও শুনে নিক আজ । মাহি আন্টির কথা মত যদি মনে শক্তির উদ্রেক হয় ।

মাহি অপেক্ষায় আছে মার্কণ্ডেয়র । সে গেছে গঙ্গায় তর্পণ করতে । মহালয়ার পূণ্য প্রভাতে- ‘ময়া দত্তেন তোয়েন তৃপ্যান্ত ভুবনত্রয়ম, আব্রহ্ম স্তম্ভ পর্যন্তং তৃপ্যন্তু’- এই মন্ত্র উচ্চারণ করে তিন গন্ডুষ জল অঞ্জলি দিয়ে স্মরণ করে মার্কণ্ডেয় তার বিদেহী পিতৃপুরুষ এবং পূর্বপুরুষকে। তারপর গঙ্গার পাড়ে বাস করা কিছু ভিখারিদের দুপুরের অন্নের ব্যাবস্থা করে বাড়ির দিকে এগিয়ে যায় সে । মাহি তার অপেক্ষায় আছে । যতক্ষন না পর্যন্ত মার্কণ্ডেয় ফিরবে মাহি না খেয়ে বসে থাকবে ।


বাড়ি ফিরে এসে মার্কণ্ডেয় নিজের গরদের ধুতি ছেড়ে ট্রাউজার পড়ে নেয় । মাহিকে নিয়ে খেতে বসবে বলে ঠাকুর ঘর দিয়ে এগিয়ে যায় ওকে ডাকতে । কিন্তু একি মাহি ওরকম মুখ গুঁজে পরে আছে কেন ? ছুটে ভিতরে ঢুকে মাহিকে তোলে মার্কণ্ডেয় । মাহি অচেতন অবস্থায় পড়ে ছিলো । নাক দিয়ে ব্লিড করছে । মার্কণ্ডেয় চিৎকার করে গুনগুনকে ডাকে । গুনগুন এসে মায়ের অবস্থা দেখে ভয় পেয়ে যায় । ওরা দুজন মাহিকে হসপিটালে ভর্তি করে । এর মধ্যেই খবর পেয়ে চিনিও চলে এসেছে । ডক্টর জানান মাহির সেরিব্রাল এট্যাক হয়েছে । ওরা মাহিকে আই সি ইউ শিফট করে । লাইফ সাপোর্ট নিয়ে একজন জীবন শক্তিতে পরিপূর্ণ নারী অচেতন পড়ে আছে । মার্কণ্ডেয় ভেঙে পড়ে একদম । কি ভাবে এটা মাহির সাথে হলো ? দুই মেয়ে মিলে মার্কণ্ডেয়কে শান্ত রাখে । মার্কণ্ডেয়র অশ্রুসিক্ত চোখ দুটো মাহির দিকে তাকিয়ে বলে, কেনো এমন করছো মাহি ? তুমি খুব ভালো করেই জানো , আমি তোমাকে ছাড়া কতোটা অসহায়! আমি তোমাকে ছাড়া শেষ হয়ে যাবো, প্লিজ তুমি এমন করো না! আমি আমার আগের প্রাণবন্ত মাহিকে ভালোবাসি! যে কথায় কথায় আমার উপর রাগ দেখাবে, আমাকে শাসন করবে আর আমাকে আদর করবে! প্লিস আমাকে ছেড়ে চলে যেও না ! _আমার জীবনের পুরোটা সময়ই তোমার জন্য , শুধু আমার থেকে দূরে যাওয়ার কথা ভেবো না প্লিজ! তাহলে আমি মরে যাবো! বাবাকে ভেঙে পড়তে দেখে গুনগুন কাঁদতে থাকে । চিনি বুঝে গেছে মাহি আন্টি কোমা চলে গেছে । বাঁচার কোন আশা নেই । এখন শুধুই অপেক্ষা দেবীর বিসর্জনের । সারা শহর আলোয় আলোকিত হয়েছে শুধু মার্কণ্ডেয়র বাড়ি আধাঁর


। তার মাহি , তার শক্তিরূপিনি নারী আজ মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে । এখন সমাপ্তি শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা ।

এভাবেই পুজোতে চারটে দিন কেটে যায় । গুনগুন বা চিনি দুজনের বিষাক্ত শৈশব পেরিয়ে মায়ের মত মাহিকেই তো বিশ্বাস করেছিল দুজনে । নিঃশর্তে নিজেকে সঁপে দিয়েছিল নিজেদের সব সিদ্ধান্তের দায়িত্ব মাহিকে ।

মাহিই তো ছিলো ওদের সেই দেবী যার কাছে উজাড় করে বলতে পারত নিজের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির জীবনগাথা । প্রাণোচ্ছল মার্কণ্ডেয় কেমন মনমরা হয়ে যাচ্ছে রোজ প্রতিদিন । হসপিটালে অচেতন পড়ে থাকা মানুষটার দুই ঠোঁটেই তো সে পেত নির্ভরতার পরম আশ্রয় ।


বিজয়া দশমীর রাতে মা দুর্গার সাথে বিদায় নিলো মাহিও । তারও বিসর্জন হলো সে রাতে । মাহির বুকের ধুকপুক টুকু আশ্রয় ছিলো মেয়ে দুটোর আর মার্কণ্ডেয়র । সে টুকুও বন্ধ হয়ে গেল চিরতরে । একা হয়ে গেল এক প্রেমিক চিরতরে । তারপর আর ভালো লাগেনি জুয়েলারি ব্যবসাতে মাথা খাপাতে । কর্মচারীদের দায়িত্বে ব্যবসা রেখে প্রায় অবসর নিয়ে নেয় মার্কণ্ডেয় । কিন্তু অবসর জীবনের অনেক সমস্যা। সারা দিন জুড়ে অপরিসীম ব্যস্ততা,ফাইলপত্র ঘাঁটাঘাঁটি, হঠাৎ এদিক ওদিক ঘুরতে যাওয়া ছেড়ে হঠাৎ করে বাড়ির চার দেওয়ালের মধ্যে নিস্তরঙ্গ জীবন শুরু যারাই করেছে তারাই একমাত্র বোঝে এর জ্বালা। সময় যেন কিছুতেই কাটতে চায়না। মাহি যতদিন ছিল এই বাড়িটার আলাদা জৌলুসই ছিল। সারা ঘরদোর জুড়ে জিনিসপত্র সব কিছুই জায়গামত রাখা,নিখুঁত পরিপাটি করে সাজানো। সারাজীবনের সুখ দুঃখের সঙ্গীকে হারিয়ে মার্কণ্ডেয় এখন সম্পূর্ণ একা এখন। মেয়েরা ব্যস্ত হয়ে গেছে চাকরি পড়াশোনা নিয়ে । ওদের ভালো থাকাটাই তো এখন মার্কণ্ডেয়র প্র্যাওরিটি । আজ অনেকদিন পর নিজেকে একটু সুস্থ লাগছে । তবে পুরোপুরি সুস্থ নয় ও এখনো , মাহিকে হারানোর যে আঘাত তার দাগ এখনো স্পষ্ট রয়েছে মনের কোণে । স্মৃতি হাতড়ে বেড়ায় সে এমন কতো রাত গেছে , যে তারা জেগে কাটিয়েছে । মাহিরর ভালোবাসার স্পর্শ এখনো যে সর্বাঙ্গে লেগে আছে। শুধু মাহি নেই। রাতের পর রাত যে অসহ্য যন্তনার মধ্যে দিয়ে মার্কণ্ডেয় যায় সেটা কি করে বোঝাবে , কাকেই বা বোঝাবে!

আঙ্কেলকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে চিনি মার্কণ্ডেয়কে মাহির এন জি ওর সাথে বেঁধে ফেলে । ওই এন জি ও তো মাহির এক অংশ । মার্কণ্ডেয় সহায় সম্বলহীন মানুষ গুলোর সুখ আর আনন্দের মধ্যে আবার যেন মাহিকে ফিরে পায় । এ মাহিকে চোখে দেখা যায় না তবে অনুভব করতে পারে মাহির স্বামী মার্কণ্ডেয় ।।


Rate this content
Log in