আমি রাম, প্রথম পর্ব
আমি রাম, প্রথম পর্ব
এই একা আমি পর্ব -১
সবাই আমাকে রাম বলে ডাকে, আমি জানিনা আমার নাম রাম কিনা। কিন্তু যেহেতু সবাই আমাকে এই নামেই ডাকে তাই আমার নাম রাম। আমি থাকি একটা ছোট্ট পাড়ায় নাম জানিনা আর জানার কোন প্রয়োজন ও বোধ করি না, কারণ আমি কোন দলের সদস্য নই। এইখানে কুকুর দলে অন্তত তিনটি দল আছে। কোন দলই আমাকে নেয়নি কারণ আমি দুর্বল আমি লড়াই করি না আমি চেঁচা মিচি করিনা আর আমি তাদের কথা শুনিও না। তিনটি দলের তিনটে নেতা অক্সী, আলু আর ভলু। তাদের মধ্যে আবার অক্সি ওদের নেতা এরা প্রত্যেকেই খুব শক্তিশালী আমার থেকে অনেক বড়। দলে নেয় না ঠিকই কিন্তু ওদের কৃপায় তো আমার খাবার জোটে। অক্সি বলে দুর্বলের দলে কোন স্থান নেই, এতে বরং আমি খুশি হয় কারণ দলবাজি আমার পছন্দ না।
আমি আপাতত থাকি মন্দিরের প্রাচীর এর পেছনের দিকে এক কোণে। যদিও এই পাড়ার সমস্ত জায়গায় আমি থেকেছি কারণ ইটের ঘা এ আমার ঠিকানা পরিবর্তন করতেই হয়। কয়েক বছর আগেও বিস্কুটের আশায় যখন চা দোকানের সামনে দাড়াতাম তখন আমি দেখতাম যে যারা শক্তিশালী, যারা বড়, যারা দেখতে সুন্দর তারা অনেক খাবার পায়। তারা যেগুলো খেতে পারেনা তা সেগুলো দলের অন্যান্যরা খায়। তার পরেও যেগুলো এপাশ-ওপাশ পড়ে থাকে যেগুলো ওরা খেতে পারেনা সেগুলো আমি খাই। কিন্তু এখন আমি মন্দির এর পেছনে নর্দমা থেকে খাবার তুলি অথবা সামনের গলি দিয়ে গিয়ে আস্তাকুড়ে থেকে খাবার খুঁজে খাই।
আমি কারোর আশা করি না আর যেখানে আমাকে কেউ পছন্দ করে না সেখানে আমার গিয়ে কাজ নেই। দলে না থাকার মজা অনেক সেটা আমার থেকে ভালো আর কেউ জানেনা, নিজের পছন্দ মত কাজ করা যায়। একা থাকি বলে সবার মত আমার কাজ ঘুমোনো নয় কিন্তু ।
একা থাকতে যে আমার ভালো লাগে তা নয় এটা শুধু আমার অভ্যেস হয়ে দাঁড়িয়েছে কারণ ছোটবেলা থেকেই বাবাকে আমার মনে পড়ে না, আমি স্বপ্নে বাবাকে দেখি। রাস্তার ধারে যেখানে অসংখ্য বড় বড় চোখ ওয়ালা যন্ত্র চলছে। তারপর বাবা যেন কোথায় হারিয়ে যায় খুজেও পাইনা আর স্বপ্ন ভেঙে যায়। জ্ঞান হওয়ার পরে মনে পড়ে যে মা কে যখন শেষ দেখেছিলাম তখন দেখেছিলাম যে মায়ের মুখ থেকে ফেনা বের হওয়া নিথর দেহটা মানুষ তুলে একটা চোখ ওয়ালা যন্ত্রে ফেলে দেয়। সেদিন আমার কষ্ট হয়নি, ভেবেছিলাম হয়তো মা আবার ফিরে আসবে রোজকার মত মুখে খাবার নিয়ে আমাকে খাওয়ানোর জন্য। সকাল থেকে রোদে দিনের-পর-দিন দাঁড়িয়েছি কিন্তু মা আর আসেনি তাই খিদেতে তখন থেকেই নর্দমা থেকে খাবার তোলা শুরু। তাই আমার নর্দমার খাবার খুব ভালো লাগে।
দেখে আনন্দ হয় যখন ছোট ছোট কুকুর বাচ্চাগুলো তার বাবা-মার সঙ্গে খেলে আমার মনে হয় তখন যে আমি যদি আরেকটু খেলতে পারতাম! আমি দেখতেই থাকি তাদের খেলা। আমি আবার মানুষদের ভীষণ ভালোবাসি কারণ যে দুটো মানুষ আমার মাকে কোলে তুলে নিয়ে সেই বড়ো যন্ত্রে রেখেছিল আমি ভেবেছিলাম ওরা হয়তো আমার মাকে আদর করছিল। কিন্তু কিছু কিছু মানুষ না খুবই শয়তান। এই তো সেদিন সকাল এ আমি দাঁড়িয়ে আছি রাস্তার ধারে আর দলের একটা মা, তিনটে বাচ্চা নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছে হঠাৎ তাদের দিকে গরম জল ছুড়ে মারলো একটা মানুষ, জীবনে প্রথমবার আমি চেঁচিয়ে উঠেছিলাম। আর আমার এই রোগা চেহারা দেখেও আমার চিৎকার শুনে সেই মানুষটা ভয়ে সিঁটকে পাঁচিলে উঠে গেছিল। সেদিন থেকে নিজের ওপর আমি সাহস পাই। রোজ সকালে ওই বাচ্চাদেরকে রাস্তা পার করে দেওয়ার দায়িত্ব আমার। যদিও আমার কাছ থেকে উপকার তারা আশা করে না কিন্তু এটা করে আমার নিজেকে খুব বীর বলে মনে হয়। লোকটাকে দেখলেই আমি রাগী চোখে তার দিকে এমন করে তাকিয়ে থাকি যে লোকটা আমাকে দেখে ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে থাকে, গরম জল ছোঁড়ার কথা তো ভাবেই না।
প্রতিদিন সকালে এই দায়িত্বপূর্ণ কাজটা করার পর গলি পথ দিয়ে হেঁটে আমি মন্দিরের সামনে আসি। গলিপথ দিয়ে হাঁটার সময় একটা কান্নার শব্দ আমার কানে ভেসে আসে, আমি বুঝে উঠতে পারছিনা যে কাঁদে টা কে। ইচ্ছে করে দাঁড়িয়ে দেখি, কিন্তু আবার ইটের ঘায়ের ভয়ে বেশিক্ষণ থাকতেও পারি না। মন্দির এর সামনে গিয়ে আমার মানুষ গুনতে ভালো লাগে। যদিও ওখানে ঢুকে দেখতে কিছুই পাইনা। মন্দির এর সামনের লোক গুলো ভালো ,কারণ ওদের পাশে শুলে ওরা মেরে তাড়াএ না । এই তো সেদিন রাতে কিছু মানুষ মন্দির এর পাঁচিল টপকে যাওয়ার চেষ্টা করায় আমি চেঁচিয়ে উঠি। লোক আসার ভয়ে তারা আবার আমার দিকে পাথর মেরে দৌড়ে পালায়। আমিও ওদের পেছনে তাড়া করেছি কিছুটা। রোজ সকালে আমার কাজে আমি অনেক সাহসী হয়ে গেছি।
সেদিন রাতে কিছু খেতে পায়নি আমি। ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। আবার সেই এক স্বপ্ন। আমার বাবা আমার জন্য খাবার আনতে যাচ্ছে, আমি তার পেছন পেছন ছুটছি। হঠাৎ বাবা আমার দিকে তাকাল সেই রাস্তার ওপর নিমেষে একটা খুব বড়ো চাকাওয়ালা যন্ত্র চলেগেলো ওপর দিয়ে। আমার ঘুম ভেঙে যায়।
দেখি পাশে কোথাও শব্দ হচ্ছে। আমি এগিয়ে যাই। বুঝতে দেরি হয় না যে একটা মানুষ বাজে মতলব এ একটা বাড়ি র দরজা ভাঙ্গা শুরু করছে। এই পাড়া তে অনেক কুকুর থাকলে ও এই খানে আমি ছাড়া কেউ থাকে না। আমার ভয় লাগলেও আমি সাহস নিয়ে এগিয়ে গিয়ে খুব জোর চিৎকার করতে থাকি। এটা আমার জীবনের দ্বিতীয় চিৎকার। আমার চিৎকার শুনে সেই মানুষ টা ঘাবড়ে গিয়ে দৌড় লাগায়। অদ্ভুত ভাবে আমার গলার সথে আরো দুটো গম্ভীর চিৎকার উঠতে থাকে ফলতঃ সেই মানুষের আত্মা খাঁচা ছাড়া হতে ই বাকি ছিল। আমি আগে কখনো ভাবিনি আমি ছাড়ার ও এখানে আরো কুকুর থাকে ।
কয়েকদিন ধরে অদ্ভুত জিনিস লক্ষ্য করছি যে নর্দমাতে আজকাল আর খাবার পাওয়া যাচ্ছে না। তাই খাবার খোঁজার আশায় এই গলিপথ দিয়ে আবারও গেলাম সেই জায়গায় যেখানে দলের সবাই জমায়েত হয়ে খাবারের আশায় দাঁড়িয়ে থাকে। রুটিন মাফিক লোকটাকে ভয় দেখিয়ে নিজের দায়িত্ব পূরণ করলাম, তারপরে যথারীতি খাবারের খোঁজে আসতেই দেখলাম সেখানে সবার জমায়েত। স্বাভাবিক আমি খাবার না পেয়ে পাশের ডাস্টবিন থেকে খাবার নিয়ে খেলাম, অল্প হলেও খিদের জ্বালা তো মিটলো। হঠাৎ একটা কুকুরের চিৎকার শুনলাম শুনে মনে হলো সাহায্যের জন্য ডাকছে আর দলের সবাই তো খাবার খোঁজে আর খাবার খেতে ব্যস্ত আমি দৌড়ে গিয়ে দেখলাম সেই মায়ের একটা বাচ্চা নর্দমায় পড়ে লুটোপুটি খাচ্ছে, আর সে মাথা তুলতে পারছি না, অল্প অল্প নর্দমা স্রোতের জলে বাচ্চাটা আস্তে আস্তে এগিয়ে যাচ্ছে। ততক্ষণে দলের দু-একজন নর্দমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। আর সবাই সাহায্যের চিৎকার করছে। সারারাত না খেয়ে একটু খাবার পেটের পড়ার পরই একটা অদ্ভুত শক্তি শরীরের মধ্যে ছিল আর তাই ঝাঁপ দিলাম নর্দমাতে। বাচ্চাটাকে তুলে তার মায়ের কাছে রেখে দিলাম সেই সমস্ত ঘটনা দলের অনেকে চোখ বড় বড় করে দেখল। দর্শক এর মধ্যে সেই বড়ো চেহারার ভোলু কিন্তু ছিল।
আবারো সেই গলিপথ দিয়ে ফিরছিলাম আবারো সেই কান্নার শব্দ, আজও দেখার চেষ্টা করলাম অল্প, পেলাম না কাউকে দেখতে। স্বাভাবিক মন্দির এর পেছনের পাঁচিলের কাছে গাছের তলায় গিয়ে একটু শুলাম। আজ সারাদিন সেই রকম কিছু কাজ ছিল না তাই মন্দিরের বাইরে বসে থাকা মানুষগুলোর কাছে খানিকটা আদর খেলাম। আর গাছের তলায় একটু ঝিমোছিলাম, দেখলাম হঠাৎ একটা মানুষ আমার দিকে এগিয়ে আসছে আমি সাহস নিয়ে বসে থাকলাম, নড়লাম না একটু ও , আসলে বদঅভ্যেস রয়ে গিয়েছে, ইট না খেলে আমি কোথাও যাবো না।
জীবনে প্রথম এত ভালোবাসা দিয়ে মাথায় হাত বোলালো কেউ, আমি বুঝতেই পারছিলাম না যে আমার লেজটা নড়েই চলেছে। আমাকে এত্ত খাবার দিল, বুঝলাম না লোকটা কেনইবা দিল, কি হবে জেনে খাবার দিল খেয়ে ফেললাম, আর না দিলেও আমার ওই আঁস্তাকুড়ের খাবারেই চলত কিন্তু মাথায় হাত বোলানোর অনুভব টা আমার কাছে খুব আলাদা ছিল। মনে হয়েছিল যে খাবার না পেলেও চলবে কিন্তু ওই মাথায় হাত বোলানোটা রোজ চাই। এত খাবার ও সারা জীবনে কোনদিন খায়নি। মানুষটা চলে গেল, আমি যথারীতি আবার ঘুমিয়ে পড়লাম। আজকের ঘুমে আমি একটা দারুণ বড় স্বপ্ন দেখলাম। এত বড় স্বপ্ন আমি সারা জীবনে কখনো দেখিনি, কারণ এত ভালো খাবার খেয়েছি কিন্তু স্বপ্নটা হয়তো এত ভাল ছিল না। সেই একই পরিচিত আমার স্বপ্ন সেই আমার বাবার পেছনে আমার দৌড়ে যাওয়া সেই বড় যন্ত্রের এসে বাবাকে ধাক্কামারা, সেই আমার মায়ের নর্দমা থেকে খাবার কুড়িয়ে আমাদেরকে খাওয়ানো, আর সেই মায়ের নিথর দেহটা যন্ত্র করে নিয়ে চলে যাওয়া সারা স্বপ্নটাই ছিল এই কাহিনী জুড়ে।
রাতে ঘুমটা ভেঙে গেল। নিজেকে খুব শক্তিশালী মনে হতে লাগলো। আমার ইচ্ছে হলো গলিতে আরেকবার খুঁজে আসি যে কে সকাল সকাল সারাদিন এভাবে কাঁদে। রাত তো অনেক হয়েছে চারপাশে কোন জনমানব নেই আর কুকুর বলতে আমি একা। আগের দিনের মতো আজকেও হঠাৎ দেখি আরেকটা বাড়িতেও এরকম খুটুর খুটুর শব্দ, আমি সেই শব্দ শুনেই বুঝতে পেরেছি আবারো কোন এক বাজে লোক কারোর বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করছে। আমিতো প্রাণপণে চেঁচাতে থাকি আমার চিৎকারের সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় আরো দুই কুকুরের চিৎকার। তাদের গলার শব্দে আমার কান ঝালাপালা করে উঠছিল, কিন্তু আজ তো তাকে আমি উচিত শিক্ষা দেব। আমি সাতে পাঁচে না ভেবে দৌড়ে গিয়ে দিলাম মানুষটার পায়ে কামড়। দুষ্টু মানুষটাও আমার মাথায় কি যেন একটা ভারী জিনিস দিয়ে জোরে আঘাত করলো কিন্তু তা সত্বেও তার পায়ের কামড় আমি ছাড়িনি। চিৎকারে অনেক লোক ছুটে এল দুষ্টু লোকটাকে দিল কিছু পিটুনি।
আমার ততক্ষণে মাথায় খুব ব্যথা করছে, আমি আস্তে আস্তে এগোতে থাকলাম মন্দির এর কাছে, যদি একটু ঘুমোলে এই ব্যথা সেরে যায়। সেই রাতের ঘটনার জন্য চারিদিকে অন্ধকার থেকে অনেক আলো জ্বলে গেছে। দেখলাম সেই ভাল মানুষটির যে আমাকে সকালে খাবার দিয়েছিলো আমার সামনে এগিয়ে এলো হাতে অনেক জিনিস নিয়ে আমার ব্যথা জায়গাটাতে কি যেন দিতে থাকলো। ব্যথা করছিল ঠিকই কিন্তু কিছুক্ষণ পর দেখলাম জায়গাটায় বেশ আরাম লাগলো কখন ঘুমিয়ে পড়েছি মনে নেই।
উঠে দেখি শুয়ে আছি একটা বাড়ীর দালানের সামনে। ঘুম ভেঙে দৌড়ে গেলাম, পাজি লোকটাকে চোখ দেখাতে হবে যে! যথারীতি আমি পাজি লোকটাকে চোখ দেখিয়ে বাচ্চাগুলোকে সুন্দরভাবে রাস্তা পেরোতে সাহায্য করলাম আবার ও। আজ পেট বেশ ভরাই আছে। আগের দিনের মতো খিদে পাচ্ছে না কিন্তু। আজ রাস্তা দিয়ে ফিরে আসার সময় দেখছি জমা হয়ে যাওয়া দলের ভিড়ে কেউ কেউ আমার দিকে তীক্ষ্ণ ভাবে তাকিয়ে আছে আমি আড় চোখে দেখলাম কিন্তু তা সত্ত্বেও উত্তর না করে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করলাম। হঠাৎ করে আমার সামনে অক্সি, ভোলু এবং একমাত্র বোন ম্যাগি এসে দাঁড়ালো এবং শারীরিক ভাবে তারা প্রত্যেকেই আমার থেকে শক্তিশালী।
ম্যাগি প্রসঙ্গে বলি ম্যাগি অক্সি র বোন, ম্যাগীকে ছোট থেকেই আমি খুব পছন্দ করতাম। আমার ছোটবেলায় মনে আছে যে একা ম্যাগি দলের দুজন ছেলে কুকুর কে মেরেছিল। তার সঙ্গে কথা বলতাম না ঠিকই কিন্তু জানতাম যে কি খুব রাগী সেই কারণে সবার থেকে ওকেই বেশি ভয় করতাম আর পছন্দ ও করতাম। তিনজন আমার সামনে এসে দাড়ালো। অক্সী বললো " শুনলাম তুই নাকি কাল আমাদের দলের বাচ্চাকে বাঁচিয়েছিস?" আমি কারও সঙ্গে কোনো কথা বলতাম না তাই স্বাভাবিক ভাবে ই এর উত্তর কিছু দিলাম না। ভলু বললো " নিতান্তই দল হিন কুকুর তাই কিছু না ভেবে ই নর্দমায় ঝাঁপ দিয়েছিল।" ম্যাগি রেগে বলে উঠলো " এত সাহস যখন তুমি তো আগে ছিলে কাউকে বলে না কেনো যে বাঁচাতে। আর এরম কথা বললে তোমার দলের সামনে ই তোমায় মারবো" ।
ম্যাগি র কথা গুলো মন দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে শুনছিলাম। আমি কখনো ওর থেকে পারফেক্ট কোনো কুকুর দেখিনি। আমার কারও বন্ধু হতে ভালো লাগে না কারণ আমার বন্ধু বানানোর অভ্যেস নেই কিন্তু আমার ওকে দেখলেই কেন জানিনা মনে হতো যে ম্যাগি যদি আমার বন্ধু হতো! আমি পাশ কাটিয়ে মাথা নামিয়ে চলে যেতে থাকলাম। ম্যাগি আমার পাশে কিছুখন হাঁটলো। আমি বুঝতে পারছি সে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। জীবনে এত ভয় কখনো আমি পায়নি, তাই ওর দিকে তাকানোর সাহস আমার ছিল না। হঠাৎ করে ম্যাগি বললো " ধন্যবাদ, তোমার সাহসের জন্য" । বলে ম্যাগি চলে গেলো। ম্যাগি র কথা বলতে আমার প্রবল আনন্দ বোঝানোর মতো ইচ্ছে আমার তাহলেও আমি যখন গলি র মধ্যে ঢুকলাম আবার সেই কান্নার শব্দ আমার কনে ভেসে এল। মনে হলো ওই বাড়ীর মধ্যে কোনো কুকুর কে কেউ বন্দী রেখেছে। হঠাৎ করে জানিনা কেনো আমার মুখ থেকে চিৎকার বেরিয়ে এলো। হঠাৎ আমার চিৎকার শুনে কান্নার শব্দও চিৎকার এ পরিণত হলো। তার সঙ্গে সঙ্গে ই আরেকটা চিৎকার এর শব্দে আমি ঘাবড়ে গিয়ে চুপ করে গেলাম বুঝলাম আমার বোধহয় এখন থেকে সরে পড়া উচিত। ভবন মত সরেও পড়লাম।
এরম করে কয়েক দিন কাটলো। খাবারের এখন আমার কোনো অসুবিধে হয়ে না পেট ভরে খাবার জুটে যায় আমার। এখন আবার যে পাড়া দিয়ে যায় সেখানেও আমার জন্য খাবার রাখা থাকে। আপাতত আমাকে র ডাস্টবিন এ খাবার খোঁজার জন্য যেতে হয়ে না । শুধু সকালের দায়িত্ব পালন করে এ চলে আসি। কিন্তু এই পাড়া তে আর কোন কোন কুকুর থাকে এই রহস্যের কিনারা করতে পারছিনা।
সেদিন রাতে স্বাভাবিক যখন আমার ঘুম ভাঙ্গলো দেখলাম একটা কুকুর দূরে এক কোণে বসে বসে আমার দিকে ভয়াতুর চোখে তাকাচ্ছে। নাহ্ একে তো আগে দেখেনি। নিশ্চই এ ওই চোখওয়ালা যন্ত্রদের পেরিয়ে এখানে ঢুকে পড়েছে। আমি ওর দিকে এগিয়ে গেলাম। আমাকে দেখে সে একটু ভয়ে পেয়ে পেছতে লাগলো। কিন্তু আমি তাকে আশ্বাস দিলাম যে আমি ওর কোনো ক্ষতি করবনা। ওকে আমার থাকার জায়গা তে নিয়ে এসে খাবার ও খেতে দিলাম। দেখে মনে হলো অনেক দিন কিছু খায়নি। কথা রীতি দুজন এ খুব গল্পঃ করলাম। জানতে পারলাম ও রাস্তার ওপরের পড়াতে থাকে ভুল করে খাবার খুঁজতে খুঁজতে এখানে চলে এসেছে র ভয় এ ফেরত যে পারছে না। অনেক দিন পর কারও সাথে মন খোলা এত কথা বললাম।
যথারীতি পর দিন সকালে আমি দায়িত্ব নিলাম যে ওকে ওই যন্ত্রদের ওপারে আমি পৌঁছে দেব। যেমন ভাবা তেমন কাজ নিজের সকালের প্রথম দায়িত্ব পূরণ করে, বিদেশি বন্ধু কে নিয়ে রওনা দিলাম রাস্তার ওপারে যাওয়ার জন্য। রাস্তার ওপারে এ যেতে গেলে এপাড়ার দলের জায়গা দিয়ে যেতে হয়। আমি বন্ধু কে নিয়ে কোনো সাড়া শব্দ না করে যেতে থাকি। উপায় আর কি জানেন তো কুকুর এর স্বভাব, নেই বেপারার কুকুর দেখেছে রে রে মার মার করে গোটা 15- 20 কুকুর এলো ছুটে , বেচারা বিদেশি বন্ধু আমার ভয়ে রাস্তাতে শুয়ে কান্না কাটি জুড়ে দিল। " আজ তো ছেড়ে দে"। এরা তো ভাই এই মারে কি সেই মারে। আমার ভারী রাগ হলো। আমি সাতে পাঁচে থাকি না। অথচ আমার পড়াতে আমার বন্ধুকে মারবে বলে এতো তোড়জোড়। আমি ও রেগে দাঁত খেঁচিয়ে বন্ধুর সামনে এসে দাঁড়ালাম। আমার সামনে তখন অক্সাই, ভলু, কালু ছাড়াও অনেক শক্তি শালী কুকুর। এমন কি ম্যাগি ও দাঁড়িয়ে আমার সামনে। আমিও ঠিক করেছি আমার যা হওয়ার হবে , আমি একে এর পাড়া তে পৌঁছে ই ছাড়বো। অনেক ইট খেয়েছি তাই কামড় কে ভয় পাইনা। আমি তাকে ইশারা করলাম যে পালাও দৌড়লাগাও র রাস্তা পেরিয়ে বাড়ি চলে যাও। আর আনন্দে থাকো। আমার বেপাড়ার কুকুর এর প্রতি এ হেন আচরণ দেখে যারা মার মার বলে তেড়ে আসছিল তারা ক্ষণিকের জন্য অবাক হয়ে চুপ হয়ে গেলেও। আমাকে মারার জন্য যেই দাঁত মুখ খিঁচিয়ে এগিয়ে এলো পড়লো অক্সী আর ভলুর গায়ে দুটো বাঁশের বাড়ি। পড়তেই সবাই কেমন যেনো জায়গা থেকে অদৃশ্য হয়ে গেলো। আমি তখন চোখ বুজে দিয়েছিলাম, ভেবেছিলাম আজকে হয়তো আমার সূক্ষ্ম শরীর এখানে এ গড়া গড়ি খাবে। কিন্তু না দেখি অজানা এক লোক এক হাতে বাঁশ ধরে আছে আর কিসব যেনো বলছে। অন্য দিকে তাকিয়ে, হঠাৎ দেখি আমার দিকে দুটো বিস্কুট ছুড়ে দিল। আমার ও খুব আনন্দ হলো , খাবার তুলে ছুট দিলাম। উফফ কি ভাগ্যিস বেচেঁ গেলাম আজ।
