Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Debdutta Banerjee

Children Stories Drama

4.0  

Debdutta Banerjee

Children Stories Drama

স্নেহের আগল

স্নেহের আগল

4 mins
2.3K


খুব দুষ্টু হয়েছে কচিটা। এক দণ্ড এক জায়গায় থাকবে না। এদিকে সব মুসকিল হয়েছে মায়ের। ও বুঝতেই চায় না কিছু। এই পৃথিবীতে সবে জন্মেছে। ওকে আজকেই সবটা দেখে জেনে বুঝে নিতে হবে যেন!! কালকেই যেন কেউ ওর পরীক্ষা নেবে!! সব ঠিকঠাক বলতে না পারলে ওকে থাকতে দেওয়া হবে না এখানে !!

এখন মায়ের হয়েছে যত জ্বালা। বাবাটা তো দলপতি হয়ে সবার দায়িত্ব নিয়ে বসে আছে। এখন এই ছটফটে কচিকে কে বোঝাবে যে এমন করতে নেই। 

কাল দুপুরে বাঁশ বাগানের ধারে কলাগাছের নরম ডগা চিবোতে চিবোতে আবেশে চোখ বুজে আসছিল কচিটার। হঠাৎ অত জোরে ঐ বিদঘুটে আওয়াজটা শুনেই ছুটেছিল উল্টোদিকে। ভাগ‍্যিস মা দেখতে পেয়েছিল।ওটা নাকি চা বাগানের যন্ত্র ঘরের আওয়াজ, কাজ শুরু হলেই বাজে। আর ও যেদিকে ছুটেছিল ভয় পেয়ে ও ধারেই তো কুলি বস্তি। ওরা একবার দেখতে পেলে রক্ষা ছিল না। তার দু দিন আগে ঐ সাপের মত এঁঁকে বেঁঁকে যে পাত দুটো গেছে ওর উপর উঠে দাঁড়িয়ে দেখতে গেছিল কেমন করে যন্ত্রদানব ছুটে আসে। মা আসলে ওকে গল্প করেছিল ঐ পাতগুলো দ্রুত পার হতে হয়। ওর উপর দাঁড়ালেই যন্ত্র দানব চলে আসবে। ওদের দলের অনেককেই কেড়ে নিয়েছে যন্ত্র দানব। আর জঙ্গলের বুক চিড়ে ঐ যে চকচকে রূপার ফলার মত পথ, ওর উপর ছোট বড় মাঝারি কত কি আওয়াজ করে ছুটে যায় সেখানেও মা যেতে দেয় না। সারাক্ষণ এই সবুজ বনে থাকতে কি কারো ভালো লাগে ? ঐ ঝর্ণায় জল খেতেও একা যেতে দেবে না। জল ছিটিয়ে খেলতে কচির দারুণ লাগে। কিন্তু ঐ যে দোপেয়ে জন্তু গুলো চলে আসে আর হাতে কি যেন নিয়ে খিচিক খিচিক আওয়াজ করে তাই মা ভয় পায়। একটু দেখতেই তো যেতে চেয়েছিল কচি। অমনি শুঁড় দিয়ে টেনে নেয়। উফ, একটুও স্বাধীনতা নেই কচির। 

আজ ভেবেছিল ঐ যে দূরের নীল পাহাড় ওদিকে একটু ঘুরে আসলে বেশ হয়, যেমন ভাবা তেমনি চার পায়ে ছুট। মা ঠিক টের পেয়ে টেনে নেয় পেটের কাছে। বলে ওদিকে নয়। আজ ধানক্ষেতে যাবে সবাই। ভুড়িভোজ হবে। ভোজের নামে অবশ‍্য কচির খুব আনন্দ হয়। এই জঙ্গুলে লতা পাতা আজকাল আর ভালো লাগে না কচির। 


তিরিংবিরিং করে ছুটে গিয়ে নদী পার হতে যেতেই বিপদ। ওখানে জল বেশি, ভেসেই যেত যদি না মা আবার শুঁড় দিয়ে টেনে নিত। 

ভেজা গায়ে শুঁড় বুলিয়ে আদর করে মা শুধু ওকে বোঝায় শান্ত হতে। দলের বাকিরা ওর মত অবুঝ নয়। 


দলটার সাথে কচিও এসে দাঁড়িয়েছে জলার ধারে, এই গরমে ও জল দেখেই আবার নামতে গেছিল। কিন্তু মা আবার টেনে ধরল। ঐ লম্বা শুঁড়টাই যত নষ্টর গোড়া। হঠাৎ দেখে উল্টোদিক থেকে একদল রঙবেরঙের দু পেয়ে জন্তু ওদের দেখে আবার কি লাফাচ্ছে। সেই খিচিক খিচিক যন্ত্র। কচির খুব জানতে ইচ্ছা করে ঐ ছোট্ট জিনিসটা ঠিক কি ? 


কিন্তু আজ যেটা হল এর জন‍্য কচি তৈরি ছিল না একদম। দলটা একটু এগিয়েই গেছিল। কচিকে তো চারিদিক দেখে শুনে এগোতে হয়, ও তাই ধীরে ধীরেই যাচ্ছিল। ওমা, কচি কচি কয়েকটা কলার কাঁদি পড়ে রয়েছে ঐ বড় গাছটার ধারে, শুকনো পাতা মাড়িয়ে দে ছুট। মা কিছু বোঝার আগেই কলার কাঁদি সহ মড় মড় মড়াৎ। একটা বড় গর্তর মধ‍্যে পড়ে গেল কচি, দুটো কাঁদিও পড়েছে ওর সাথে। নিচে খড় আর শুকনো পাতা ছিল বলে ও ব‍্যাথাটা পায়নি শুধু। ওর পড়ে যাওয়ার শব্দেই মা ছুটে এসেছিল। কিন্তু মায়ের শুঁড়টাকে আজ বেশ ছোট মনে হয় কচির। ওর নাগাল পাচ্ছে না মা। এবার !! কয়েকটা পাঁকা কলা খেয়ে নিয়ে কচি ভাবতে বসে এবার সে কি করবে!! বেশ উপরে মায়ের উদ্বিগ্ন মুখটা মাঝে মাঝে দেখা যাচ্ছে। দু বার মায়ের আর্তচিৎকার ও শোনা গেল। কিন্তু কই, দলের সবার হাঁঁকডাক নেই কেনো? দলের সবাই কি ওদের ফেলে এগিয়ে গেলো? দু বার গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে কচি। শুঁড় আর চারপায়ে মাটির দেওয়ালে আঁচড় কাটে। কিন্তু দেওয়ালটা বড্ড খাড়া। ও উঠতে পারে না। আকাশের বড় গোল হলদেটে বলটা দেখা যাচ্ছে। তাছাড়া সব অন্ধকারের চাদর গায়ে দিয়েছে যেন। মা কি তবে চলে গেলো!! এই প্রথম কান্না পায় কচির।মা বলেছিল জঙ্গলে ফাঁদ থাকে। লোভনীয় খাবার হঠাৎ যেখানে সেখানে পড়ে থাকলে সেদিকে যেতে না। ঐ খাবারের ফাঁদ পেতে দু পেয়ে জন্তুরা পশুদের ধরে নিয়ে যায়, ক্ষতি ক‍রে। 


হঠাৎ গায়ের মধ‍্যে ঝুরঝুরে মাটি এসে পড়তে থাকে। বিরক্ত কচি প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে পা ঠোকে। চাঁদের আলোয় দেখে মা গর্তটা বড় করছে, মায়ের পায়ের চাপে মাটি গুলো ভেঙ্গে পড়ছে। মা কি ওকে মাটি চাপা দেবে ? সরে যায় কচি। এবার আস্তে আস্তে একটা দিক ঢালু হচ্ছে। হঠাৎ মা দুটো বড় গাছ উপর থেকে আড়াআড়ি ভাবে গর্তে ফেলে। টলমল পায়ে উঠে আসতে চায় কচি। কিন্তু পারে না। গড়িয়ে যায়। এবার গর্তটা পা আর শুঁঁড় দিয়ে আরো ভাঙতে থাকে মা। অবশেষে কচি বেরিয়ে আসতে পেরেছে। উপরে এসেই মায়ের পেটের নিচে ঢুকে পড়ে ও। মা শুঁড় দিয়ে আদ‍র করতে করতে বলে পা চালাতে। দলটা অনেক এগিয়ে গেছে। ধরতে হবে ওদের। গর্ত থেকে উঠে আসার সময় কয়েকটা কলা তুলে এনেছিল কচি। জোড় করে মায়ের মুখে গুঁজে দেয় একটা ফানা। পড়ে গিয়ে ভয় পেয়েছিল কচি। আপাতত উঠে এসে ও মনে মনে বলে 'এবার থেকে মায়ের কথা শুনব। আর অবাধ‍্য হবো না।' ওকে আদর করতে করতে মা এগিয়ে যায় দলের খোঁজে।



Rate this content
Log in