Aparna Chaudhuri

Children Stories Romance Others

3  

Aparna Chaudhuri

Children Stories Romance Others

তিন্নি ও মামমাম (পর্ব ৪)

তিন্নি ও মামমাম (পর্ব ৪)

2 mins
229



আজ সকাল থেকে তিন্নির মেজাজ খারাপ। কারনে অকারণে বায়না করছে। আজ টিচার্স ডের ছুটি। অবশ্য ছুটি শুধু ছোটদের। বড়দের মানে ক্লাস সিক্স থেকে টেনের অনুষ্ঠান আছে। পাশের বাড়ীর বুলবুলি দি ওদের স্কুলের ক্লাস সিক্সে পড়ে। সে সকাল সকাল কি সুন্দর সেজে গুজে স্কুল বাসে করে স্কুলে চলে গেল। ওদের স্কুল বাস তিন্নিদের বাড়ীর একদম সামনে আসে। তিন্নি ঘুম থেকে উঠে বারান্দায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখল বাসে সবাই কি সুন্দর সেজেগুজে বসে আছে। সেটা দেখার পর থেকেই ওর মন খারাপ। ওর কিছুই ভালো লাগছে না।

মা রোজকার মত ডাকল, “ তিন্নি ব্রেকফাস্ট করে নাও।“

তিন্নি দেখল ডাইনিং টেবিলে রোজকার মতই রাখা রয়েছে এক গ্লাস দুধ, দু পিস টোস্ট আর একটা ডিমের পোচ। দেখেই রেগে গেল তিন্নি,” রোজ এই এক খাবার। ভালো লাগে না।“

“ ওমা ! তুই তো ডিম ভালবাসিস। আচ্ছা ঠিক আছে আজ খেয়ে নে, কাল তোকে অন্য কিছু বানিয়ে দেবো।“ মা তাড়াতাড়ি বলল। মায়ের অফিসের দেরী হয়ে যাচ্ছে।

“ না না আমি কিছু তেই খাব না।“ তিন্নি কাঁদো কাঁদো।

“ এ তো মহা মুশকিল! জেদ করে না মা, তুমি তো আমার সোনা মেয়ে।“ মা মরিয়া।

“ পচা খাবার। বাজে খাবার। অ্যাঁ অ্যাঁ।“

“ অসভ্য মেয়ে। একটা কথা শোনে না...।“ মা আর ধৈর্য রাখতে পারে না। অফিসের দেরী হয়ে যাচ্ছে।  

“ কি হয়েছে কি দিদি? এতো চেঁচামেচি কিসের?” মামমাম এসে দাঁড়িয়েছে।

“ আরে আর বলবেন না। এই তাড়াহুড়োর সময়...... “

“ তুমি যাও মা । আমি দেখছি...।“

“আপনি আবার এই সব আঁশ সগড়ি ধরবেন সকাল সকাল। আপনাকে আবার স্নান করতে হবে তো!”

“ আঁশ সগড়ি কি?”

“ আঁশ সগড়ি? আমি তোমায় বলছি দিদি। বৌমা তুমি যাও আমি দেখছি।“

তিন্নির মা আর কথা না বাড়িয়ে বেরিয়ে গেলো। মামমাম ধীরে ধীরে এসে বসলো তিন্নির পাশের চেয়ারে। সাধারণত মামমাম চেয়ারে বসে না। কিন্তু আজ বসলো। তারপর কাঁপা কাঁপা হাতে তিন্নির ছোট্ট চামচ টা তুলে নিল। ডিমের একটা ছোটো টুকরো তিন্নির মুখে তুলে দিয়ে মামমাম বলতে শুরু করলো,” আঁশ হল মাছ, মাংস , ডিম। “

“ আঁশ ধরলে তোমাকে স্নান করতে হবে?”

“ হ্যাঁ।“

“ কেন?”

মামমাম একটু সময় ভাবল। তারপর নিজের গলার দিকে আঙ্গুল দিয়ে নিজের গলার তুলসীর মালাটা দেখিয়ে বলল,” আমি আশ্রমে থাকি তো। যারা আশ্রমে থাকে তারা গলায় তুলসীর মালা পরে। তুলসীর মালা পরলে আঁশ ছুঁতে নেই।“ 

“ কে বলেছে?”

“ আমার গুরুদেব।“

“ গুরুদেব মানে?”

“ মানে ...... আমার টিচার।“

“ তোমারও টিচার আছে?”

“ হ্যাঁ ।“

“ তোমাকে কি পড়ায় তোমার টিচার?”

“ আমায়...... রামায়ণ, মহাভারত, গীতা।“

“ তোমরা টিচার্স ডে তে কি কর ?”

“ তোমরা কি কর?”

“ আমরা কিছুই করি না, আমাদের ছুটি থাকে। বড়রা কি সুন্দর নাচ গান করে। সেজে সেজে স্কুলে যায়।“ মিন মিন করে বলল তিন্নি।

মামমাম মুচকি হেসে বলল,” আমরাও কিছু করি না । আমাদেরও ছুটি থাকে।“

“ তোমাদেরও ছুটি থাকে?” তিন্নির মুখটা হাসিতে ভরে উঠলো।

মামমাম মুচকি হেসে মাথা নেড়ে বলল “ চল মুখটা ধুইয়ে দিই।“

তিন্নির মুখ ধুইয়ে ওকে টিভি র সামনে বসিয়ে দিয়ে মামমাম চলল স্নান করতে।



Rate this content
Log in