Sipra Debnath

Children Stories Romance Classics

3  

Sipra Debnath

Children Stories Romance Classics

স্মৃতিচারণা-রবীন্দ্রজয়ন্তী

স্মৃতিচারণা-রবীন্দ্রজয়ন্তী

5 mins
255



তিতলি তখন ক্লাস ফাইভে পড়ে। স্কুলের নাম পাবলিক হাই স্কুল। বাড়ি থেকে কাছেই পায়ে হেঁটে যাওয়া যায়। ছোট্ট মেয়ে বয়কাট চুল। সাদা ব্লাউজ খয়েরি রংয়ের স্কার্ট। কোমরে বেল্ট। পায়ে সাদা মোজা সাদা কিডস। স্মার্ট লুক।

হাই স্কুলে আসার কিছুদিনের মধ্যেই সে নিজের ক্লাস থেকে শুরু করে সিনিয়ার সব ক্লাসের দাদা দিদিদের ভীষণ প্রিয় হয়ে উঠলো। সহজেই সবার সাথে মিশতে পারে। পড়াশোনায় ও ভালো। সেই জন্য সকল শিক্ষক-শিক্ষিকার কাছেও প্রিয় হয়ে ওঠে। সামনেই পঁচিশে বৈশাখ। স্কুলে বিরাট আয়োজন হৈ হৈ রব শুরু হয়ে গেছে। ফোর্থ পিরিয়ডের পর থেকে রিহার্সাল শুরু। সব টপিকেই তিতলির নাম লেখানো হয়ে গেছে। রিহার্সেল করানোর দায়িত্বে রয়েছেন অংকের শিক্ষক নগেন দাস মহাশয়। আড়ালে সব ছাত্র-ছাত্রীরা তাকে টাইগার বলেই ডেকে থাকে ওনার রাগী স্বভাবের জন্য তবে এটাও ঠিক স্যারকে যে বুঝতে পেরেছে সে ধন্য শিক্ষার্থী । রয়েছেন ইংরেজির শিক্ষক সুভাষ তালুকদার মহাশয় ইনি বাচ্চাদের খুব ভালোবাসেন এবং খুব ভালো পড়ান , বাংলার শিক্ষক হিমাংশু বিকাশ চক্রবর্তী ইনিও অসম্ভব ভালো পড়ান। তবে সকল ছাত্রদের প্রিয় নন কেননা ইনিও খুব ডিসিপ্লিনড এবং কিছুটা রাগী স্বভাবের । ছাত্রদের বেয়াদবি সহ্য করতে পারেন না।স্কুলে পড়া করে না আসা ছাত্রদের উনি মোটেও পছন্দ করেন না। সৌম্যকান্তি পরনে ধবধবে ধুতি পাঞ্জাবি। তবে তিতলি ওনার খুব প্রিয় ছাত্রী। যে সকল ছাত্র ছাত্রীরা পড়া পারেনা, স্যারের কাছে মার খায় তারা স্যারের নাম দিয়েছে দি রয়েল বেঙ্গল টাইগার।

রিহার্সাল শুরু। নগেন স্যার রিহার্সাল করাচ্ছেন। প্রথমে রিহার্সাল হবে হাস্য-কৌতুকের। হাস্যকৌতুক এর নাম পেটে খেলে পিঠে সয়। তিতলি সেখানে ভুতু হয়েছে। ভুতুর মালিক ভুতুকে দিয়ে কাজ করায়, আর একটু পর পর এসেই ভুতুর পিঠে কয়েকটি কিল দেয় আর বলে পেটে খেলে পিঠে সয়। কিন্তু ভুতু মনে মনে ভাবে এটাতো নাটক,মারটা তো মিছিমিছি দিতে পারে তাহলে সত্যি সত্যি পিঠের মধ্যে এত জোরে করে মারছে কেন। সে বলে ওঠে স্যার ও আমার পিঠে খুব জোরে মারছে আমি খেলব না। তিতলির মুখে আমি খেলব না কথাটা শুনে স্যার হো হো করে হেসে উঠে। ভুতুর কো-আর্টিস্ট কে বলে ওরে ওকে জোরে মারিস না।

এবার দি রয়েল বেঙ্গল টাইগার স্যারের তত্ত্বাবধানে হবে আবৃত্তি রিহার্সাল। সেখানে সবার আগে তিতলির ডাক পড়ে। জিজ্ঞেস করে তুই কোন কবিতা বলতে চাইছিস নাম বল। তিতলি উৎসাহ নিয়ে বলে ওঠে শরৎ কবিতা। স্যার বলে শরৎ কবিতার কবির নাম কি? তিতলি বলে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। স্যার বলে সাবাস। শুরু কর কবিতা বলা।তিতলি শুরু করে---

আমি আপনাদের সকলের সামনে আবৃত্তি করে শোনাচ্ছি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লিখিত কবিতা "শরৎ"

 "এসেছে শরৎ হিমের পরশ লেগেছে হাওয়ার পরে 

   সকাল বেলায় ঘাসের আগায় শিশিরের রেখা ধরে।"

গড়গড় করে ছন্দে ছন্দে সুর করে খুব সুন্দর করে কবিতা পাঠ করে শোনায় সকলের সামনে। সকলে হাততালি দেয়।

  স্যার বলেন সাব্বাস। তোর কবিতা বলা ঠিক আছে তোকে আর করতে হবে না রিহার্সেল।

   এবার সুভাষ স্যারের পালা। নাটকের রিহার্সেল হবে। নাটকের নাম ডাকঘর। তিতলির ভাগে পড়লো অমলের রোল। প্রথম দিন সবাইকে যার যার চরিত্রের অংশ বুঝিয়ে দিল কিভাবে করতে হবে। সবাই খুব খুশী। পরের দিন থেকে পুরোদমে রিহার্সাল শুরু হবে। রিহার্সাল শেষ হবার পর সবাই খুব খুশী মনে যার যার বাড়ি ফিরে যায়।

   দেখতে দেখতে দিনগুলো কেটে যায়। আজ পঁচিশে বৈশাখ। সবকিছু মঞ্চস্থ হবে। স্কুলের হলঘরে স্টেজ হয়েছে।

   অনুষ্ঠান শুরু হয় উদ্বোধনী সংগীতে "এসো হে বৈশাখ এসো এসো" গানের মাধ্যমে, মঞ্চের সামনে সকল বিশিষ্ট অতিথিরাএবং শিক্ষক-শিক্ষিকারা বসেছেন। উল্টোদিকে অভিভাবক অভিভাবিকারা। আর সম্পূর্ণ হল ঘরজুড়ে সারি সারি পাতা ডেস্ক বেঞ্চে ছাত্র-ছাত্রীরা।

 একে একে সব কিছুই মঞ্চস্থ হয়। তিতলি তো সকল বিভাগেই নাম দিয়েছে। উদ্বোধনী সংগীত হয়ে যাবার পর প্রথমেই তিতলিকে ডাকা হল মঞ্চে নৃত্যের জন্য। "হে নতুন দেখা দিক আর-বার জন্মের প্রথম শুভক্ষণ" তিতলি এই গানে নৃত্য পরিবেশন করে। হল ঘর হাততালিতে ফেটে পড়ে। স্টেজ থেকে নেমে এলে তিতলির মেজদি ওকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু এঁকে দেয়। কেননা মেজদি নিজেই ওকে নাচ শেখায়। মেজদির চেহারায় তখন গর্বের ভাব ফুটে উঠেছে। এবার যারা নাটক করবে তারা গ্রিনরুমে তৈরি হচ্ছে। তিতলি মন্দিরা দিদির ভাই হংসরাজের থেকে নিজের সাইজের হাফ প্যান্ট হাফ শার্ট যোগাড় করেছে অমলের ভূমিকায় অভিনয় করার জন্য। যারা নাটক করবে হাস্যকৌতুক এ অভিনয় করবে তাদের রেডি হতে হতে বাকিদের গান আবৃত্তি এসব মঞ্চস্থ হচ্ছে। মাঝে মাঝে দু চারটা নৃত্য পরিবেশন হচ্ছে। এবার ডাকঘর মঞ্চস্থ হবে। তিতলি অমল হয়েছে। অমল রোগী। সে ঘরের ভেতর। জানালা দিয়ে বাইরের দিকে চোখ রেখে সব দেখে সারাদিন। ওরও বাইরে যেতে ইচ্ছে করে। জানালা দিয়ে দই ওয়ালার সাথে কথা বলে। একটা সময়ে এসে নাটক শেষ হয়। দর্শকের হাততালিতে হলঘর ফেটে পড়ে। তিতলি যখন অমল হয় তার অনাদি স্যার মধু স্যার তাকে চিনতে পারে না। স্টেজ থেকে নেমে আসার পর তাকে জড়িয়ে ধরে। বলে এই ছেলে তুই এত সুন্দর করে অভিনয় করলি কি করে। তোর বাড়ি কোথায় আজ তোর বাড়ি যাব চল। 

   তিতলি বলে স্যার আমি ছেলে নই আমিতো তিতলি। উভয় শিক্ষক হেসে ফেলেন আরে তুই তিতলি নাকি আমরা তো চিনতেই পারিনি তোকে। দারুন অভিনয় করেছিস। তুই কি মনিকার ছোট বোন নাকি। তিতলি বলে হ্যাঁ স্যার। ও তাইতো বলি তোর সব কিছুতে মনিকার ছাপ পাচ্ছি কেন।

       মনিকা তো স্কুলের প্রাণ। খুব ভালো খুব ভালো। অনেক আশীর্বাদ করি বড় হ। তিতলি চট করে দুই স্যারের পায়ে প্রণাম ঠুকে দেয়।

   দেখতে দেখতে সন্ধা ঘনিয়ে এলে অনুষ্ঠান শেষ হয়ে যায় জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে। এবার পুরস্কার বিতরণীর পালা। প্রথমেই সংগীতে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হলো। প্রথম-শিউলি দাস, দ্বিতীয়- তিতলি ঠাকুর, তৃতীয় শংকরী রাজ।

তারপর আবৃত্তি প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা হয়--

প্রথম- তিতলি ঠাকুর, দ্বিতীয়- শিখা দাস, তৃতীয়- শংকরী রাজ।

হাস্য-কৌতুকের বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হলো এবার

প্রথম-তিতলি ঠাকুর, দ্বিতীয় লক্ষ্মী পাল, তৃতীয়- শিখা দাস।

একে একে প্রত্যেক বিভাগের বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হচ্ছে বিজয়ী গণ নিজেদের পুরস্কার গ্রহণ করছে প্রধান অতিথির হাত থেকে আর অনুষ্ঠান হল জুড়ে হাততালির মূর্ছনা গম গম করছে।সকলেই আনন্দিত আপ্লুত।তারপর ধীরে ধীরে সকলেই যার যার বাড়ি ফিরে। ছোট্ট তিতলি বাড়ি ফিরে রাতের খাওয়াদাওয়ার পর নিজের প্রাপ্ত পুরস্কার গুলো সঙ্গে নিয়েই ঘুমোতে যায়।পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে সেগুলোকে আবার প্রাণ ভরে দেখে।



Rate this content
Log in