Akash Karmakar

Children Stories Fantasy Children

3  

Akash Karmakar

Children Stories Fantasy Children

রাজকন্যা ও ফুলপরীদের রাজ্য

রাজকন্যা ও ফুলপরীদের রাজ্য

3 mins
349


এক রাজা আর রানীর একটি ফুটফুটে কন্যা সন্তান ছিল। রাজা প্রজাহিতৈষী, দানধ্যান পরায়ণা, সৎ নির্ভীক ব্যক্তি ছিলেন। সকল প্রজাদের এবং রানী ও কন্যাকে নিয়ে রাজার দিন বেশ সুখে শান্তিতেই কাটছিল। প্রজাদের রাজা যেমন সন্তানসম ভাবতেন, তেমনই প্রজারাও রাজাকে যথেষ্ট ভালোবাসতেন, শ্রদ্ধা করতেন। রাজকন্যার নাম ছিল পাপড়ি; সে ফুলের পাপড়ির মতনই ছিল কোমল-স্পর্শকাতর। সারাদিন তার খেলার অভাব ছিল না; পাশাপাশি বাগানের প্রতিও ছিল তার বিশেষ টান। সময় পেলেই সে চলে আসত বৃহৎ উদ্যানে, গাছে জল দেওয়া-গাছেদের গায়ে হাত বুলিয়ে কথা বলা এসবেই কেটে যেত তার সময়। রাজার সেই বৃহত্তর রাজপ্রাসাদের উত্তর পূর্ব কোণে ছিল একটা জীর্ণ দরজা। সেই দরজাটি খোলার জন্য ছিল একটি বিশেষ চাবি কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সেই চাবিটি কোনোভাবে হারিয়ে গেছে তাই সেই দরজাটিও বহুকাল ধরে এরকম বন্ধ অবস্থাতেই পড়ে রয়েছে। 


     একদিন দুপুরে রাজকুমারী বাগানের মধ্যে অবস্থিত পুকুরে মাছেদের নিজে হাতে খাবার খাওয়াচ্ছিল; হঠাৎ সে লক্ষ্য করে যে একটি মাছরাঙা এসে পুকুরের সবচেয়ে বড়ো রূপালী মাছটিকে তুলে নিয়েছে ঠোঁটে করে। রাজকুমারী তড়িঘড়ি গিয়ে কোনোক্রমে সেই মাছরাঙার ঠোঁট হতে সেই মাছটিকে ছাড়িয়ে এনে তাকে প্রাণে বাঁচায়, যদিও সে পাখির ঠোঁটের ধারালো আঘাতে আহত হয়েছিল খুব। মাছটিকে রাজকুমারী রাজপ্রাসাদে নিয়ে এসে সেবা শুশ্রূষা করে ধীরেধীরে সুস্থ করে তোলে; ইতিমধ্যে তাদের মধ্যে ভালো বন্ধুত্বও হয়ে যায়। মাছটি হয়ে ওঠে রাজকুমারীর খেলার নিত্যসঙ্গী। এরপর যেদিন রাজকুমারী মাছটিকে আবার সেই বড়ো পুকুরে ছাড়তে যাবে বলে নিয়ে যায় তখন সেই মাছটি রাজকুমারীকে বলে, "রাজকুমারী, আমি তোমারর সেবায় নতুনভাবে প্রাণ ফিরে পেলাম। আমি জানি তোমার এই ঋণ কখনোই মেটানো সম্ভব নয়। তবে আমি তোমাকে এমন একটা জিনিস উপহার হিসেবে দেব যা তুমি ছাড়া আর কেউই ব্যবহার করতে পারবে না"। এই বলে সে মাছটি রাজকুমারীর হাতে একটি মূল্যবান স্বর্ণখচিত চাবি তুলে দেয়, চাবিটি ছিল সেই উত্তর পূর্ব কোণের পুরাতন জীর্ণ দরজাটির। 


     গভীর রাত। রাজপ্রাসাদের সকলেই যখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন তখন চুপিসারে রাজকুমারী এগিয়ে যায় সেই দরজার দিকে এবং যেই ঐ চাবিটি দরজায় ঝোলানো তালাতে সে লাগাল সঙ্গে সঙ্গে সেই দরজাটি অদৃশ্য হয়ে গেল এবং চোখের সামনে খুলে গেল এক সাজানো স্বর্গীয় ফুলের বাগান। পুরো বাগান রঙবেরঙের ফুলে ভরা, জানা-অজানা ফুলের এক বর্ণময় সমাবেশ সেখানে। আশ্চর্যজনক ভাবে দরজার এই প্রান্তে রাত হলেও ঐ প্রান্তে ঝলমলে আলো। কিন্তু এত সাজানো বাগানে না ছিল কোনো প্রজাপতি, না ছিল কোনো পাখি-যেন মনে হচ্ছে এই সুন্দর বাগানে কোনো প্রাণীই নেয়। যখনই রাজকুমারী এরকম ভাবতে শুরু করেছে ঠিক সেই সময় সেখানে উড়ে আসে এক কাকাতুয়া। কাকাতুয়া রাজকুমারীকে জিজ্ঞেস করে, সে কি করছে এখানে? কি করেই বা এখানে তার আগমন ঘটল? যখন কাকাতুয়া রাজকুমারীর ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারে তখন সে বলে যে, এটা কোনো সাধারণ বাগান নয়, এটা একটা ফুলপরীদের রাজ্য, বাগানের প্রতিটি ফুল এক-একটি সুন্দরী পরী। অনেক আগে এক দুষ্টু জাদুকরের অভিশাপে প্রতিটি পরী এরকম ফুল হয়ে দীর্ঘদিন দাঁড়িয়ে রয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই রাজকুমারী এসব শুনে খুব কষ্ট পাবে।

সে জিজ্ঞেস করবে এর থেকে বেরোনোর কি কোনো উপায় নেই?  

আছে, ঐ দুষ্টু জাদুকরের মৃত্যু হলে তবেই এই সমস্ত ফুলগুলো আবার তাদের পুরোনো রূপ ফিরে পাবে। তাহলে বলো কি করতে হবে? আমি অবশ্যই চেষ্টা করব। 

তখন কাকাতুয়া বলবে যে, ঐ দুষ্টু জাদুকরকে একমাত্র রূপালী মাছের আঁশ দিয়ে আঘাত করলে তবেই তার মৃত্যু হবে এবং এই ফুলপরীরা আবার বেঁচে উঠতে পারবে। 


   এটা শুনেই রাজকুমারী সঙ্গে সঙ্গে দৌড়ে গেল সেই পুকুরের রূপালী মাছটার কাছে এবং তাকে সমস্ত বিষয়টা বলল। এরপর সেই কাকাতুয়ার পিঠে চেপে রাজকুমারী রূপালী মাছ নিয়ে পাড়ি দিল ঐ দুষ্টু জাদুকরের কাছে এবং সেখানে গিয়ে ছলে-কৌশলে শেষ পর্যন্ত তাকে হত্যা করল ঐ রূপালী মাছের আঁশের আঘাতে। দুষ্টু জাদুকরের মৃত্যুর সাথে সাথেই সমগ্র ফুলপরীদের রাজ্যের প্রতিটি ফুল ফিরে পেল তাদের পুরানো রূপ, তাদের দীর্ঘ বন্দীদশার ঘটল অবসান। এদিকে সেই কাকাতুয়া হয়ে উঠল সেই ফুলপরীদের রাজ্যের রাজা ও রূপালী মাছ হল রাজকুমারীর স্বপ্নের রাজপুত্র। সকলে এবার ফিরে হল আবার তাদের রাজ্যে। রাজকুমারীর কাছে সমগ্র ঘটনাক্রম জানার পর রাজা ঐ রাজপুত্রের সাথেই রাজকুমারীর বিবাহ স্থির করলেন। সমগ্র রাজ্যবাসী তাদের প্রিয় কন্যার শুভদিন আনন্দে মেতে উঠল।


Rate this content
Log in