প্রেম ও পজিটিভিটি
প্রেম ও পজিটিভিটি


আত্মোপলব্ধি
কোন প্রেম কি ব্যর্থ হয়? সত্যিই কি প্রেম ব্যর্থ হতে পারে? ভালবাসার মানুষটিকে হারিয়ে দিশেহারা মন কেঁদে ওঠে। নিজের সঙ্গে কম্প্রোমাইজ করে; আর সেটাকেই ব্যর্থ প্রেম বলে ধরে নেয়। কিন্তু একটি প্রেম, তার স্থায়িত্ব যতই কম হোক কিংবা বেশী, কি করে ব্যর্থ আখ্যা পেতে পারে। তাহলে যে সুন্দর মুহুর্তগুলো, যে ছোট ছোট সুখগুলোতে মন প্রাণ, হৃদয় ভরে উঠেছিল, সেগুলোও কি ব্যর্থতা? আমার বিচারে তো সেগুলো সার্থক কারণ আমরা বলে থাকি," আমি তো দিয়েছিলাম উজাড় করে", তার মানে আমি আমার ভালবাসাকে স্বার্থক করতে সবকিছুই করেছিলাম। তবে কিভাবে তা ব্যর্থ হতে পারে? আসলে তার স্থায়িত্ব নিয়েই যত কনফিউশান। ভালবাসা যে কখনো মরে না! তবুও আমরা কনফিউজড্ হয়ে পড়ি; মানসিক পীড়া আমাদের দূর্বল করে দেয় যে! যে মানুষটা একদিন সবচাইতে প্রিয় ছিল, তাকে দোষারোপ করি। কিন্তু দোষে-গুনেই তো মানুষ। যতক্ষন সে আমার কাছে ছিল, তার গুন ও দোষ উভয়েই আমার প্রিয় ছিল আর আজ দূরে চলে গেছে, তাই তার দোষগুলো এত প্রকট হচ্ছে?
আমরা যখন প্রেমে হাবুডুবু খাই; যখন কাউকে খুব ভালবাসি, যখন নিজেকে উজাড় করে দিই; সেই মুহুর্তগুলোর কথা কি ভেবে দেখি একটু অন্যভাবে? সেই সুখস্মৃতিকে তো বারবার মনে করি। কিন্তু এটা কি কখনো ভেবেছি? সেই মুহুর্তের জন্যে আমি আমার ভালবাসার মানুষটাকে একেবারে নিজের করে পেলাম। ভাবি না। তখন শুধু এই চিন্তা থাকে যে ভবিষ্যতে তাকে নিজের করে পাব তো? মুহুর্তের সুখটাকে সোনার খাঁচায় বন্দী করে রাখতে পারব তো? এইসব চিন্তা-ভাবনা আমাদের নেগেটিভ জগতে নিয়ে যায়; আমরা হিসেব কষতে থাকি, কি পেলাম আর কি দিলাম? যেখানে আমরা কেউ জানি না যে কাল সকালের সূর্যোদয় দেখতে পাব কিনা, সেখানে ভবিষ্যতে সেই মানুষটাকে নিজের করে পাব কিনা সেটা ভেবে কি লাভ? ধরে নিলাম যে একদিন তাকে নিজের করে পেলাম, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সে যদি অপরিচিত হয়ে ওঠে; তার চারিত্রিক পরিবর্তন যদি সুখদায়ক না হয়, তখন? তখন আমরা কখনো ভালবাসার জোর, কখনো বা আইনের জোর খাটিয়ে তাকে নিজের মত করে দেখতে চাই। ভুলে যাই যে সে অন্য একটি মানুষ। আর পাঁচটা মানুষের মত সেও তো আলাদা। কিভাবে সে আমার মত হবে? একটা সাইনে যেমন একটা সম্পর্ক ভেঙে যায় না, তেমনি একটা সম্পর্ক গড়েও ওঠে না। সবটাই হার্ট টু হার্ট কানেকশান। যতদিন কানেকশান থাকবে, সম্পর্ক থাকবে। নাহলে তা একদিন বোঝা হয়ে যাবে। তাই যে মুহুর্তগুলো তাকে নিজের করে পেলাম বা পাচ্ছি তাতেই স্বর্গীয় সুখ অনুভব করা উচিত। সমস্ত পজিটিভিটিতে নিজেকে ভরিয়ে নেওয়া উচিত। অন্যথা সবটাই শুধু ব্যাথা আর যন্ত্রনা যার কোন দিশাও নেই; সমাপনও নেই।
নিজেকে স্বান্তনা দিচ্ছি? শান্ত হয় মন? না। জীবনটাকে যদি অন্য আঙ্গিকে ভাবি, তাহলে আর একটা বিশাল দিক উন্মুক্ত হয়ে যাবে। আচ্ছা, আমরা প্রত্যেকেই কারোর না কারোর জন্যে আত্মত্যাগ করে থাকি। সিনেমার টিকিট কাটা আছে, কিন্তু ছেলেটির এত শরীর খারাপ; টিকিট ছিঁড়ে ফেলে দিলাম। কিংবা…হলিডে ট্যুরের টিকিট কাটা আছে, হঠাৎ বাবার হার্ট অ্যাটাক, টিকিট ক্যানসেল করতে বাধ্য হই। পরীক্ষার সময় প্রিয় সিরিয়াল গুলো দেখি না। কিংবা স্বামীর বাড়িতে ফিরতে দেরী হচ্ছে, না খেয়ে বসে থাকি। আরো আরো কত কি? বন্ধুর জন্যে, প্রতিবেশীর জন্যে, এমনকি বাসে একটি প্রতিবন্ধী মানুষকে নিজের সিটটি ছেড়ে দেওয়া সব ক্ষেত্রেই কিন্তু আমাদের শরীর অথবা মন কষ্ট পায়; ব্রডলি বলতে গেলে আমরা কষ্ট দিয়ে থাকি; অন্যের খুশির জন্যে, ভালর জন্যে এইটুকু করেই থাকি। তাই না? তবে প্রেমের বেলাতে অন্য নিয়ম কেন? যদি ভাবি যে আমি কষ্ট পেলাম তাই তো আমার ভালবাসার মানুষটি যে আজকে অন্য কারোর স্বামী বা স্ত্রী, অন্য কারোর বাবা কিংবা মা। আমি অনেক কষ্ট পেয়েছি তাকে হারিয়েছি সেটা সত্য; তেমনিই আরো দুটি মানুষ তো তাকে নিজের করে পেয়ে, কাছে পেয়ে খুশী। তাদের খুশিতে আমি খুশি নাই বা হলাম। কিন্তু এটা তো সত্যিই যে আমার ব্যথার বিনিময়ে আরো কিছু মানুষ সুখ পেল। কিছু তো দেওয়া হল। তাই বা কম কিসে? একদিন কিছু তো পেয়েছিলাম; তার পরিবর্তেই না হয় আজ কিছু দিলাম। ক্ষতি কি? আমাদের যা কিছু তা তো এই ইউনিভার্স থেকেই পাওয়া, আবার সেখানেই সময়মত সব বিলীন হয়ে যাবে। তাই যাবতীয় অনুভূতি, বন্ধন, ভাল লাগা, মন্দলাগা ভালবাসা, খারাপবাসা সবকিছুই ইউনিভার্সে উড়িয়ে দিই যদি...মন্দ কি? কাজটা কঠিন; কিন্তু অসম্ভব নয়। তাই না?
পসিটিভ ইণ্ডিয়া