Manasi Ganguli

Others

2  

Manasi Ganguli

Others

মীরাকল

মীরাকল

2 mins
467


  হঠাৎ করে একদিন গাড়ী অ্যাক্সিডেন্টে বাবা-মাকে হারিয়ে কল্লোল যখন শোকে মুহ্যমান, ঠিক তখনই সর্বাণী আসে ওর জীবনে। পরিচয় ছিলই আগে এক কলেজে পড়ার সুবাদে। কল্লোল সর্বাণীর দু'বছরের সিনিয়র। কলেজে এক ডিবেটে অংশ নিয়ে দু'জন বিপরীত পক্ষে ছিল,দারুণ যুক্তিতে কেউ কাউকে হারাতে পারে না,অবশেষে সর্বাণী হেরেছিল কল্লোলের কাছে।

   সর্বাণীকে তর্কে হারালেও যখন কল্লোল বাবা-মাকে হারিয়ে ফেলল চিরতরে,সর্বাণী ছুটে এসেছিল তার কাছে আর কি জানি কেন কল্লোল ওকে আঁকড়ে ধরেছিল সেদিন থেকে। অসহায় কল্লোলকে ছেড়ে যেতে পারেনি ও।

    কল্লোলের নির্ভরতা ও সর্বাণীর মায়ায় সৃষ্টি ভালবাসা ঘর বসাল ওদের মনের গভীরে। সে ভালবাসার ক্ষয় নেই,লয় নেই আর তাই বাবা-মায়ের তীব্র আপত্তি উপেক্ষা করে সর্বাণী আজ কল্লোলের স্ত্রী। জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে কল্লোল নির্ভর করে সর্বাণীর ওপর। সর্বাণীময় জগত কল্লোলের আর সর্বাণীর বুকের মাঝে কল্লোল হিল্লোল তুলে আনন্দে,খুশীতে ভরিয়ে রেখেছে তাকে।

   দেখতে দেখতে তিনটে বছর পার। সর্বাণী টের পায় তার দেহে নতুন প্রাণের সঞ্চার। কল্লোলকে জানালে খুশীতে কি করবে সে ভেবে পায় না। কিন্তু জীবন বড় নিষ্ঠুর, কার কুনজর যে পড়ল ওদের ওপর! হঠাৎ একদিন পেটের ব্যথায় কাতর হলে কল্লোলকে নিয়ে সর্বাণী ডাক্তারের কাছে গেলে নানারকম পরীক্ষানিরীক্ষায় ধরা পড়ে লিভার ক্যান্সার,3rd stage,হাতে গোনা আয়ু।দু'জনে হঠাৎ যেন স্থবির হয়ে গেল,পরক্ষণেই কল্লোল চেয়ার ছেড়ে উঠে ডাক্তারের টেবিল চাপড়ে বলে,"আগামী ১০বছরেও আমি মরব না দেখে নেবেন"। সর্বাণী অবাক চোখে দেখে কল্লোলকে,হঠাৎ করে এত মনের জোর সে পেল কোথা থেকে? একেই বোধহয় বলে মরিয়া। আর সত্যিই তাই,চিকিৎসা শাস্ত্রকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে তারপর ১২বছর কেটে গেল কল্লোলের।ডাক্তাররা অবাক হয়ে যান,বলেন,' মীরাকল আজও ঘটে'।

  এই ১২ বছরে কেমো চলেছে,প্রচুর খরচ হয়ে গিয়েছে,কল্লোলের বাবার রাখা প্রচুর অর্থে অনর্থ হতে পায়নি এতদিন। ওদের একটা ছেলে রয়েছে ১১বছরের,তার মুখের দিকে তাকিয়ে কল্লোলের খুব বাঁচতে ইচ্ছে করে কিন্তু মনের জোর বুঝি এবার হার মানছে দেহের কাছে।অর্ধেক দিনই এখন কল্লোলের কাটে নার্সিংহোমে। এবার সর্বাণীকে হার মানতে হল কর্কট রোগের কাছে।মৃত্যুর সময়ও সর্বাণীর হাতটা ছিল কল্লোলের হাতে ধরা। বাঁচতে চেয়েছিল ও।


Rate this content
Log in