নন্দা মুখার্জী

Others

2  

নন্দা মুখার্জী

Others

ক্ষমা করো

ক্ষমা করো

3 mins
726


  পেশায় নার্স মাধুরী বিয়ের পাঁচ বছর পরেও মা হতে না পারার যন্ত্রণাটা কিছুতেই উপশম করতে পারেনা।বহুবার সে একটা দত্তক নিতে চেয়েছে।কিন্তু কিছুতেই রাজি করাতে পারেনি স্বামী দেবেশকে।হাসপাতালে অধিকাংশ দিনই তার ডিউটি পরে লেবাররুমে।খুব কাছ থেকে সে দেখতে পায় মা হওয়ার তীব্র কষ্ট আর ঠিক তার পরেই সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া প্রস্ফুটিত ফুলের মত শিশুটির মুখ দেখে মায়ের মুখের হাসি।এক নিমেষে যেন সমস্ত কষ্ট উধাও হয়ে যায়।খুব ইচ্ছা করে এই সুখটাকে অনুভব করতে।কিন্তু ইচ্ছা সাধ সবই যেন পূরণ হয় সেই অদৃশ্য কারও হাতের ছোঁয়ায়। 

  দুটি মেয়ের পরে সুলেখা জম্ম দেয় আবার একটি মেয়ের।মেয়ে হয়েছে শুনেই তার মুখ না দেখেই সুলেখা হাউ হাউ করে কাঁদতে লাগলো।মাধুরী জানতে চাইলো তার এই কান্নার কারন।উত্তরে সে জানালো তার শ্বাশুড়ী , স্বামী এবার মেয়ে হয়েছে শুনলে বাড়িতে আর ঢুকতে দেবেনা।অবাক হয়ে মাধুরী ভাবে কেউ সন্তান চেয়ে পায়না আর কেউ পেয়েও খুশি হতে পারেনা।এ কেমন বিচার ঈশ্বরের? 

  সুলেখার স্বামীর সাথে কথা বলে আইনী কাগজপত্র তৈরী করে সুলেখা হাসপাতালে থাকতেই মেয়েটিকে দত্তক নেয় মাধুরী।সুলেখা কিন্তু এক'দিন মেয়েটির মুখ দেখেনা।কারন হিসাবে মাধুরীকে বলে,'আমি তো মা,ওর মুখ দেখলেই আমি মায়ায় জড়িয়ে যাবো।অথচ এই মেয়ে নিয়ে যদি আমি বাড়ি যাই আমাকে তো বাড়ি থেকে তাড়িয়েই দেবে উপরন্তু আমার আর দুটি মেয়েও ভালোভাবে মানুষ হবেনা।অভাবের সংসার আমার।নুন আনতে পান্তা ফুরায়।ভায়ের সংসারেও ঠাঁই হবেনা।ও তোমার কাছে ভালো থাকবে,খাওয়া পড়ার কষ্ট হবেনা,মানুষের মত মানুষ হবে' 

 প্রস্ফুটিত একটি ফুলকে তোয়ালের মধ্যে করে বুকে জড়িয়ে মাধুরী যেদিন বাড়ি ফেরে দেবেশ এই বাচ্চাটিকে মেনে নিতে পারেনি।তার মা অনুরাধাদেবী সস্নেহে বাচ্চাটিকে বুকে জড়িয়ে ধরেছেন।তিনি তার ছেলেকে অনেক বুঝিয়েছেন কিন্তু দেবেশের এক কথা অন্যের সন্তানকে সে কিছুতেই নিজের ভাবতে পারবেনা। 

 স্বামী,স্ত্রীর মধ্যে কথা বন্ধ হোল,ঘর আলাদা হোল।যে যার ডিউটি করে যাচ্ছে কিন্তু সম্পর্ক আর ঠিক হলনা।দিন গড়িয়ে যেতে থাকলো।মাধুরীর মেয়ে মাম আস্তে আস্তে বড় হতে থাকলো।ছ'মাসে সে সমস্ত বাড়িময় হামা দিয়ে বেড়ায়।আড় চোখে দেবেশ তাকিয়ে দেখে।তার দুষ্টুমীতে মাঝে মধ্যে নিজের অজান্তেই হেসে ওঠে।পরক্ষণে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে মা বা বৌ কেউ দেখতে পেলো কিনা।কিন্তু মাধুরী বা তার শ্বাশুড়ীর কোন কিছুই নজর এড়ায়না।একজন কিছু দেখতে পেলেই অন্যজনের কানে চলে যায়। 

 মেয়ের সাতমাস বয়স হোল।এবার মুখে ভাত দিতে হবে।ঠিক হোল ঠাকুরের প্রসাদ এনেই মুখে ভাত দেওয়া হবে।কোন আড়ম্বর হবেনা।একদিন দেবেশ বসে আছে চেয়ারে, মাম হামা টেনে দেবেশের কাছে গিয়ে তার পা ধরে দাঁড়িয়ে পড়লো।দেবেশ দুই হাত দিয়ে তাকে কোলে তুলে নিলো।কোলে উঠেই মাম দুই হাতে দেবেশের চুল ধরে টানতে শুরু করলো।হঠাৎ মামের মুখ থেকে বা ----বা , বা ---বা ডাক শুনে দেবেশ মামকে বুকের সাথে চেপে ধরে দুই গালে চুমু খেলো।মাধুরী ও তার শ্বাশুড়ীর এ দৃশ্যও দৃষ্টি এড়ালোনা।তারা চুপচাপ নিজেদের কাজে চলে গেলো।দেবেশ মামকে কোলে নিয়ে মায়ের কাছে গিয়ে বললো,'মা ওর তো সাতমাস বয়স হোল মুখেভাত দেবে না?' 

---ওই একটু প্রসাদ এনে দিয়ে দেবো ভেবেছি।ওর মা ঠাকুরমার এর থেকে আর বেশি ক্ষমতা নেই। 

---কেন ওর বাবা আছে তো! 

 মাধুরী পিছনে এসে দাঁড়িয়েছিল সে বলে ওঠে, 

---কে ওর বাবা? 

---কেন আমি , ওই তো আমাকে মেরে চুল টেনে দু দুবার বাবা বলে ডাকলো।আরে সেদিন আমি বুঝতে পারিনি,আমি আমার ভুল স্বীকার করছি।আমি বড় করে ওর মুখে ভাত দেবো।তোমরা আয়োজন করো খরচ আমার।

কথাগুলো বলে দেবেশ চলে যাওয়ার সময় মাধুরীকে খুব আস্তে আস্তে বলে গেলো যাতে মা শুনতে না পায়', 'তোমার আর মেয়ের শোয়ার জিনিসপত্রগুলো মায়ের ঘর থেকে আমাদের ঘরে নিয়ে এসো।'

মামকে কোলে নিয়েই সে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।


Rate this content
Log in