Debdutta Banerjee

Others

2.0  

Debdutta Banerjee

Others

দুই পৃথিবী

দুই পৃথিবী

3 mins
16.3K


মালিয়াদির এই দেড় হাজার স্কোয়ারফিটের ফ্ল্যাটটায় কাজ করতে এসে শালুর খুব ভাল লাগে। দিদি ওকে খুব ভালবাসে। চার হাজার টাকা মায়নার উপর প্রচুর উপরি ইনকাম হয় এখানে। মাঝে মাঝেই দিদি ছুটি দেয়, সাথে সিনেমায় যাওয়ার টাকাও দেয়। আসলে শনি রবি দাদাবাবু খুব ঘুরতে নিয়ে যায় মালিয়াদিকে। ওদের প্রেম দেখলেই মন ভালো হয়ে যায় শালুর। ব‍্যবসার কাজেও ওরা খুব বাইরে ঘোরে। কোথাও গেলেই শালুর জন‍্য কত কি আনে দিদি। ঘরে ভাল কিছু রান্না হলেই বাটি ভরে মালিয়াদি দিয়ে দেয় শালু আর তার বরের জন‍্য। আর মালিয়াদির হাল ফ‍্যাশানের জামা কাপড়, দামি শাড়ি, একটু পুরানো হলেই শালুকে দিয়ে দেয়। এক শাড়ি বা গাউন পরে সব পার্টিতে যাওয়াও যায়না। শালুর ফিগারে ঐ পোষাক গুলো মানিয়েও যায় বেশ। দু'জনেই রোগা পাতলা। তবে দিদির শরীর যেন মোম দিয়ে তৈরি। শালু কাজের ফাঁকে তাকিয়ে দেখে দিদিকে। সিনেমার হিরোইনদের মতো চেহারা। তবে রোজ সকালে উঠে জিম করে দিদি। একটা ঘরে দাদাবাবু সব রকম ব‍্যবস্থা করে দিয়েছে। আর নিয়ম করে পার্লারেও যায় দিদি। শালুর অবশ‍্য এ সব বিলাসিতা নেই। চোখ, নাক, মুখ ওর এমনি সুন্দর। গায়ের রঙ ও বেশ ফর্সা। কপালটাই যা খারাপ। নইলে জগার মতো ছেলের পাল্লায় পরে পালিয়ে আসতো না গ্ৰাম থেকে। উচ্চমাধ‍্যমিকটা আর দেওয়া হয়নি। জগা কলকাতায় প্রোমোটারের ম‍্যানেজার ছিল। কাঁচা পয়সা আর চাকচিক‍্য দেখে ওর হাত ধরেই পালিয়েছিল শালু। প্রথম কমাস স্বপ্নের মতোই কেটেছিল। সেই নোট-বন্দীর ঝামেলায় জগাদের ব‍্যবসা পড়ে গেলো। আর পেটের দায়ে দু মাসের মাথায় শালু কাজে ঢুকলো। ওদের পাশের ঘরের মিনা এই আবাসনেই কাজ করতো, ওই খুঁজে দিয়েছিল এই কাজটা। আর একটা কাজ করে শালু, এর নিচের তলায় এক দাদু, দিদা থাকেন। তাদের রান্নার কাজ। আড়াই হাজার দেয় ওনারা। এই ছমাস এ ভাবেই সংসার চলছে। জগা টুকটাক অটো, ট‍্যাক্সি চালাচ্ছে। তবে মদের নেশা করছে ইদানিং। দু দিন শালুর গায়ে হাত ও তুলেছে।

শালু মালিয়াদিকে দু চোখ ভরে দেখে। দিদির চারপাশে একটা ভাললাগার মিষ্টি গন্ধ। দিদির ও নতুন বিয়ে। এখনো গায়ের সেই নতুন গন্ধটা আছে। শালু কাজ করতে করতে আড় চোখে দেখে। 

শনি রবিবার দিদির দেওয়া দামী শাড়ি বা চুড়িদার পরে সাজে শালু। এই দু'দিন শালুর ছুটি। জগার সাথে মিলেনিয়াম পার্ক বা ভিক্টোরিয়া যায়। কখনো সিনেমায় যায়। বাইরেই খায় কিছু। নিজেকে এই দু'দিন বেশ মালিয়াদির মতো সুখী মনে হয় শালুর। দাদু, দিদার তিন মেয়ে আশেপাশেই থাকে। তারা এই দু'দিন পালা করে আসে মা-বাবাকে দেখে। 

তবে দিন দিন জগা কেমন বদলে যাচ্ছে। আজকাল অবাক হয়ে দেখে ওকে, ওর সাজ পোষাক। 

সোমবার মুখ কালো করে কাজে আসে শালু। সর্বদা হাসিখুশী মেয়েটাকে এতো চুপচাপ কখনো দেখেনি মালিয়া। রায়চক থেকে আজ সকালে ফিরে সেও ক্লান্ত। তবু শালুর এই পরিবর্তন চোখে পড়ে তার। একটু চেপে ধরতেই ঝরঝর করে কেঁঁদে ফেলে মেয়েটা। বলে জগা তাকে জোর করে এক বন্ধুর সাথে হোটেলে পাঠাতে চেয়েছিল। ওর সাজগোজ, ড্রেস, পোষাক দেখে জগায় মনে হয়েছে ওকে দিয়েই ব‍্যবসা করা যাবে। কদিন ধরেই এসব চলছিল।কাল রাতে ও জগাকে মেরে তাড়িয়েছে।চোখের জল মুছে শালু বলে দু বাড়ি কাজ করে নিজের পেট সে একাই চালাতে পারবে। তাই বলে ইজ্জত বিক্রি করবে না। 

মালিয়ার চোখ দুটো জ্বালা করে ওঠে। আজ ছ'মাস ধরে অর্নবের চাপে পড়ে ওর ক্লায়েন্টদের খুশি করতে করতে সে ক্লান্ত। কাল সারারাত বাজোরিয়ার খিদা মেটাতে হয়েছে। তার আগের রাতে ছিল মিঃ গুপ্তা। অর্নব মদ খেয়ে ফুর্তি করেই কাটায় এই দিন গুলো। অশিক্ষিত মেয়েটা রুখে দাঁড়াতে পেরেছে অন‍্যায়ের বিরুদ্ধে। কিন্তু মালিয়ার সে সাহস হয় নি । 

সমাপ্ত


Rate this content
Log in