চিঠি
চিঠি


আজ তেসরা আগস্ট,আজ রাখি রাখি মানে সেই উৎসব নয় যেটা আমাদের কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্বাধীনতা সংগ্রামের পন্থা হিসেবে অবলম্বন করেছিলেন; এই রাখি হলো ভাই বোনের সুমধুর মিষ্টি সম্পর্কের উৎসব,আমার আজও মনে আছে রাখি দিনে উপহার হিসেবে পাওয়া কাঠি লজেন্স সাদা কাগজে মোড়া রংবেরঙের লজেন্স তার স্বাদ এখনো আমার জিভে লেগে আছে।তার এইসব ছোট ছোট জিনিস মনে আছে কিনা জানিনা কিন্তু আমার মনে আছে।তার বলতে ভাবছেন তো আমি কার কথা বলছি আমি আমার ছোট্ট ভাইয়ের কথা বলছি।আজ ও,রাখি তাই আজকের এই শুভ দিনে মিষ্টি মুহূর্তে তার উদ্দেশ্যে আমি একটি চিঠি লিখছি, আমার মর্ডান যুগের মডার্ন এলইডি কম্পিউটারে যেটা আমি গতবছর আমার ভাই যে রাখির উপহার হিসেবে টাকাটা পাঠিয়ে ছিল সেই টাকাটা দিয়ে এই কম্পিউটার খানা কিনেছি, তাই আমি এই কম্পিউটারে বসে তাকে একটা চিঠি পাঠাচ্ছি।এবার শুরু করছি চিঠি লেখা; তোর মনে পড়ে ভাই নীল আকাশের নিচে রাখির দিনে মজা করার দিনগুলো।আমি সেই ভোরবেলা উঠে স্নান সেরে মায়ের সাথে পুজো দিতে যেতাম আর ঠাকুরের পায়ের থেকে আনা রাখি টা তোকে পড়াতাম আর তারপর তোর কিনে আনা উপহার পাওয়ার জন্য বসে থাকতাম।যদিও তুই প্রত্যেকবার একই উপহার দিতিস তবুও সেই উপহারটা দেখা আর পাওয়ার উৎসাহটা প্রত্যেকবার বেশ আলাদাই থাকতো। শুধু সেই দিনটার জন্য পড়াশোনা টা বন্ধ থাকত আর আমরা সারাদিন হৈ-হুল্লোড়ে আর চুটিয়ে মজা করতাম।জানিস ভাই,আজকের দিনে আমার খুব মনে পড়ে মায়ের হাতে রাঁধা পাঁঠার মাংস, ডাব চিংড়ি ,আর বাসন্তী পোলাও । মা যা রান্না করতো না পুরো প্লেটটা চেটেপুটে খেতাম । কিন্তু এখন সেই সময় গুলো খুব মনে পড়ে বল বড় হওয়ার পর খুব কম দিনই আমরা রাখির দিনটা একসঙ্গে কাটিয়েছি আর এখনতো তুই কাজ সূত্রে বিদেশে থাকিস আর আমি কলকাতায় তাই নতুন করে সেই পুরনো মজাগুলো উপভোগ করার সম্ভাবনাই নেই ।তাইতো আমি প্রত্যেক বার সেই ছোটবেলাকার মত সকালবেলা উঠে স্নান সেরে মন্দিরে গিয়ে পুজো দিয়ে তোর রাখি টা ডাকের হাতে দিয়ে পাঠিয়ে দি আর তুই আমায় চিঠিতে জানান ।যে তুই রাখি টা পেয়েছি আর আমার রাখির উপহার হিসেবে তুই আমার ব্যাংকের খাতায় জমা করে দিস আর বলিস তোর পছন্দ মতো কিছু কিনে নিস ।কত কিছু বদলে গেছে না ভাই নতুন যুগের নতুন ভাবে রাখি উৎসব পালন করা আর সেই উৎসবের উপহার দেওয়া নেওয়ার ধরনটাও বদলেছে। কিন্তু এটা সত্যি যে আজও আমাদের সেই ছোটবেলাকার স্মৃতি মনের কোন এক কোনায় থেকে গেছে ।আর কোন দিনে সেই লুকিয়ে থাকা মিষ্টি মুহূর্তগুলো মনের ফাক থেকে উঁকিঝুঁকি মারে
।জানিস ভাই ,এ রাখি উৎসব টা শুধু নিছকই এক মজার উৎসব নয় ।এই রাখি উৎসব ভাই-বোনের সম্পর্ককে আরও মজবুত করে আরো মিষ্টি করে তোলে স্বামী ও স্ত্রী একে অপরের পরিপূরক তেমনই ভাই আর বোনের বাঁধন এই সম্পর্কটা একে অপরের পরিপূরক। একটা কথা বলতে ভুলে গিয়েছিলাম আগে চিঠিটি সেটা হলো যে আমাদের বাড়ির সামনে একটা বেশ বড় পরিবার থাকতে এসেছে তাদের অনেকগুলো ছেলে মেয়ে মানে অবশ্যই তারা ভাই বোন। একদিন তাদেরকে ঝগড়া করতে দেখে আমাদের সেই ছোটবেলাকার খুনসুটির দিনগুলো খুব মনে পড়ছিল মনে পড়ে। ভাই এইতো সেদিন কারই কথা আমি বারান্দায় বসে আমের আচার খাচ্ছিলাম আর তুই পিছন থেকে এসে ফট করে আমার হাত থেকে আচারের বাটিটা ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিলিস আর সেই তুই কিন্তু আমার জন্য অনেক কাঁচা আম এনেছি নিস নুন আর লঙ্কা গুঁড়ো মাখিয়ে খাওয়ার জন্য। আর হ্যাঁ একটা কথা আবারও বলতে ভুলে গেছি যে তোর পাঠানো বিদেশী হাতঘড়িটা আমার খুব পছন্দ হয়েছে আর তোর জন্য একটা উপহার রয়েছে সেই উপহার টা আমি এই কিছুদিনের মধ্যেই পাঠিয়ে দেবো।সেই উপহারটা কি তোকে এখন জানাতে পারছি না কারণ সেটা হলও তোর জন্য একটা চমক। কিন্তু তুই চিঠিতে লিখে জানাস তোর উপহার টা কেমন লাগলো। জানিস ভাই,তুই যখন আমায় বকা দিতিস আমার খুব কষ্ট হতো,কিন্তু যখন তুই আমাকে লজেন্স দিয়ে আদর করতে আমার খুব মজা হতো আর মনে হতো কিরম মজা কিরম মজা ভাই কেমন বোকা হয়ে গেল।আমিও তো মজা করে মুখটাকে বাংলার পাঁচ করে রাখতাম যাতে তুই আমাকে অনেক লজেন্স দিয়ে আমার অভিমান ভাঙাস। কিন্তু মাঝেমধ্যে আমিও বোকা হয়ে যেতাম যখন তুই লজেন্সের কাগজে মার্বেল ভরে আমায় দিতিস লজেন্স খাওয়ার জন্য তখন আমার খুব রাগ হতো আর মনে হতো যে আমি তোর সঙ্গে কোনদিনও কথা বলবো না। সেই মান-অভিমানের এক আলাদাই তাৎপর্য ছিল আর ছিল ভাইবোনের সম্পর্কের মধ্যে মিষ্টতা।সেই মিষ্টতা এখনকার ভাই-বোন এদের মধ্যে একটু কম কিন্তু আমরাও তো এই যুগের মানুষ তার সত্তেও আমার সেই ছোটবেলাকার মিষ্টি মুহূর্তগুলো।ণএখনো মনে পড়ে আর মনে আছে আশা করি তোর মনে আছে ভাই আর হ্যাঁ জানি যে তুই কাজে খুব ব্যস্ত কিন্তু তাও আজকের এই রাখির দিনটায় তোর দিদির কথা কি মনে পরে অবশ্যই এমনি দিনে তেও নিশ্চয়ই মনে পড়ে আমার কথা আমার কিন্তু তোর কথা প্রত্যেকদিনই মনে পড়ে. আমার আর তোর কথা মনে পড়ে যখন কারো সাথে খুব করে ঝগড়া করতে ইচ্ছা করে হি হি হি..... ... ...
ভাই তোর মনে আছে যেই বার আমরা একসঙ্গে মেলায় ঘুরতে গিয়েছিলাম সেইবার তুই আমাকে একটা বড় ঘুড়ি কিনে দিয়েছিলিস।আর আমরা দুজনে মিলে মামার কাছ থেকে বায়না করে হাওয়া মিঠাই খেয়েছিলাম আর আমরা নাগরদোলা চেপে কি ভয়ই না পেয়ে গেছিলাম আর আমারতো ভয়ে গলা থেকে আওয়াজ বেরোচ্ছিল না কিন্তু তুই তো আমার মজা ওরা ছিলিস আমাকে ভীতু ভীতু বলে ক্ষ্যাপা ছিলিস আমি তখন রেগে গিয়ে তোর মাথায় একটা থাপ্পর মেরেছিলাম আর তুই বাচ্চাদের মতন ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদতে লাগলি । আর আমি তোকে দেখে খুব হেসেছিলাম আর বলছিলাম যে এমা এমা বড় হয়ে কি রকম ছোটদের মধ্যে কাঁদছে দেখো মা। সেই দিন মেলায় আরও একটা স্মরণীয় মুহূর্ত ছিল জানিনা তোর মনে আছে কিনা কিন্তু সেটা আমার জীবনের সবচেয়ে সেরা মুহূর্ত সেটা হলো যেদিন আমি প্রথম তার দেখা পেয়েছিলাম কার কথা বলছি বলতো সে হলো আমাদের ছেলেবেলা কার সময়ের প্রিয় সাথী গঙ্গারাম।ও কি সুন্দর দেখতে ছিল,বল লাল লাল রংয়ের ঠোঁট গলা, একটা সরু কাটি, লম্বা রংবেরঙের লেজ ,সবুজ দিয়ে ঢাকা ওর পুরো শরীরটা আর সারাদিন চেঁচাতো আমার নাম গঙ্গারাম।ও সবার নাম ধরে ডাকতো আরো খুব লাল লঙ্কা খেতে ভালোবাসতো।ও পাকা পেয়ারা খেতে ভালোবাসতো।
হঠাৎ একদিন আমাদের মায়ের ভুলে গঙ্গারাম উড়ে চলে যায় আর আমাদের দুজনের একই মন খারাপই না হয়েছিল বল ভাই।আমাদের মন খারাপ দেখে বাবা আমাদেরকে একটা ছোট খেলনা টিয়াপাখি এনে দেয় আর সেটাতে আমরা খুব খুশি হয়েছিলাম। আমরা সেটাকে নিয়ে শুতাম খেলতাম আর নানা ভাবে মজা করতাম।আর তোর জন্যই সেই বাবার আনা টিয়া পাখিটা একদিন ভেঙে গেল আর সেই দেখে আমি রাগ করে তিন দিন তোর সাথে কথা বলিনি।তারপরের দিন সকালে উঠে দেখি ঔই ভাঙা খেলনা টিয়াপাখিটা জোড়া লাগিয়ে দিয়েছিলিস আর সেই দেখে আমার রাগ গলে জল হয়ে গিয়েছিল।আর আমি তোর কাছে দৌড়ে গিয়ে তোকে জড়িয়ে ধরে খুব আদর করেছিলাম।আমার কেটে গেলে তোর কষ্ট হতো আর তোর কিছু হলে আমার দুঃখ হতো।
আমি মায়ের কাছ থেকে বকা খাওয়ার হাত থেকে বাঁচাতিস। আর আমি তোকে আমাদের বাড়ির মাষ্টারমশাইের কাছ থেকে বাঁচাতাম যখন তুই হোমওর্য়াক না করে পড়াশোনায় ফাঁকি দিতিস আর আমি যখন পড়া পারতাম না তখন তুই মাষ্টারমশাইকে ভূতের ভয়ে দেখিয়ে তাড়াতিস আর সে যখন ভয়ে মরিয়া হয়ে পালাত তখন আমাদের বেশ হাসি পেত। আমাদের ছোটবেলাটা যা দারুন হইহুলোরে আর দশ্যিপনায় কেটেছে সেই দিনের ছোঁয়া আজও আমাদের মুখে হাসি ফোটায় আর আমাদের সম্পর্কে মানে ভাই-বোনের সম্পর্ককে আলাদাভাবে উৎসব হিসেবে পালন করার কোন দরকার নেই কিন্তু তবুও আমরা সব ভাই বোনেরা মিলে একটা নিজেদের জন্য একটা আলাদা দিন ঠিক করি যাতে আমরা ভাই-বোনেরা সবাই মিলে একটু মজা করতে পারি তাই আমরা রাখি উৎসব পালন করে থাকি । এই রাখি আমাদের ভাই বোনদের মধ্যে এক সূক্ষ্ম সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখে আর ভাইয়েরাও নিজেদের বোনেদের রক্ষা করবে বলে কথা দেয় আর সেটার সঠিক মর্যাদাও দেয়। তুইও যেমন আমার রক্ষাকর্তা হয়ে আমার পাশে থাকিস তেমনি আমিও তোর সব সময় লম্বা আইয়ুর জন্য প্রার্থনা করি এটাই হলো রাখি উৎসব এর আসল কারণ আর তোকে এসব কথা বলে আর বিরক্ত করবো না এখানেই আমার চিঠি শেষ তুই ভালো থাকিস সুস্থ থাকিস এটাই আমি সবসময় ঈশ্বরের কাছে কামনা করি।আর আমি তোর এই ই-মেল উওরের জন্যে অপেক্ষা করব
ইতি তোর,
আদরের বোন মিনু।