ভয়।
ভয়।


বালিগঞ্জে তিন তলার ঘরে ছ মাসের ছোট্ট ছেলেটা খাটের ওপর হামাগুড়ি দিয়ে তারস্বরে চিৎকার করে কাঁদছে। মনে হয় খিদে পেয়েছে। ওর মা মিনিট দশেকের জন্য নীচে গিয়েছে। হাতে একটা কাজ থাকায় আমি ছেলেকে কোলে নিতে পারছিলাম না। কান্নার তীব্রতা বাড়তেই কাজ ফেলে ওকে খাটে কোলে নিয়ে বসলাম। তৎক্ষণাৎ ছেলে চুপ। তার মানে খিদে পায়নি। সঙ্গ চাইছে। ওর মা তো ওকে খাইয়ে গেছে। কোলে শুইয়ে হাটু নাড়িয়ে দুলে দুলে ওকে ঘুম পড়ানোর চেষ্টায় থাকলাম। কিন্তু যতই ঘুম পড়ানোর চেষ্টা করি, ততই চোখ বড় বড় করে আমার মুখের পানে চেয়ে থাকে। বাধ্য হয়ে আলতো করে হাত দিয়ে চোখ ঢেকে দিতেই,.... আবারও ভ্যাঁ।
খাটে হেলান দিয়ে মিনিট দশেক ওকে কোলে নিয়ে বসে আছি। ওকে দোল দিতে দিতে কখন যেন আমার চোখটা লেগে গেছিল। হঠাৎ মনে হল খাটটা যেন নড়ে উঠল। না, এটা মনের ভুল আমার। মিনিট খানেকের মধ্যে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। খাটটা যেন কেউ ধরে ঝাকিয়ে নাড়িয়ে দিল। একটু ভয়েই বাধ্য হয়ে খাট থেকে নামলাম। অদ্ভুত, সব কিছুই স্বাভাবিক। এমন জিনিস আগে আমার সাথে ঘটেনি। ছেলেকে কোলে জাপটে খাটের চারদিক দেখে ঝুকে খাটের নিচে দেখার চেষ্টা করলাম। মেঝেতে ঝুকে খাটের তলায় সবে তাকিয়েছি, অকস্মাৎ আমায় চমকে দিয়ে খাটের ডান দিকের দুটো পায়া ইঞ্চি ছয়েক উপরে উঠে সশব্দে আছাড় খেয়ে মেঝেতে পড়ে গেল। ওই একই সাথে পাশের রান্নাঘরে রাখা স্টিলের আটার কৌটোটাও সশব্দে পড়ে মেঝেময় ছড়িয়ে পড়ল। প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেলাম। মুহূর্তেই বুঝতে বাকি রইলনা যে ভূমিকম্প হচ্ছে। ছেলেকে সুরক্ষিত করার নিয়ে ভয় শুরু পেতে শুরু করলাম। নিমেষেই ছেলেকে কোলে জাপটে পাগলের মত সিঁড়ি বেয়ে নামতে লাগলাম। নামতে নামতে অনুভব করছিলাম পুরো তিনতলা বাড়িটাই থর থর করে কাঁপছে। সবে ঘর থেকে বাইরে বেড়িয়েছে, তিনতলা ছাদের কার্নিসের একটা অংশ হুড়মুড় করে পাশে পড়ল।
কোন মতে নীচে গিয়ে একটা ফাঁকা জায়গাতে আশ্রয় নেই। সেই ট্রমা কাটতে অনেক সময় নিয়েছিল। জীবনে অমন ভয় আমি আগে কখনো পাইনি। মাঝে মাঝে স্বপ্নেও ওই ভয় এখনো হানা দেয়।