Debasmita Ray Das

Others

3  

Debasmita Ray Das

Others

ভ্যালেন্টাইনস ডে

ভ্যালেন্টাইনস ডে

4 mins
9.5K


ছাদে আশপাশের গাছগাছালি সমন্বিত প্রকৃতির সমারোহে দাঁড়াতেই জাহ্নবীকে মন খারাপের রেশটা যেন আরো বেশী করে ঘিরে ধরল। তাদের ওখানে এমন ছাদ আর দেখাই বা যায় কোথায় ! বিশাল হাই রাইজের ১৫ নং তলায় তাদের সুসজ্জিত বিশাল ফ্ল্যাট। না তো এতো গাছ আছে সেখানে, আর নাই বা তার সেই ছাদে যেতে একটুও ইচ্ছে করে। এই ঠাম্মির কাছে এলেই একটু যা বাড়ি,মাটি,ছাদের স্বাদ পাওয়া যায়। চতুর্দিক গাছপালায় ঘেরা বেশ বড়ো দোতলা বাড়ি। ছাদে কতো যে টব পুঁতেছে তার ঠাম্মি.. তার কোনো হিসাবই নেই। ইন্দ্রজিৎ,তনুশ্রী যে যার নিজের জীবন নিয়ে ব্যস্ত। মেয়ের জন্য ড্রেস, গিফটস্, প্রচুর.... কিন্তু সময়টা আবার একেবারেই তাদের নেই। জাহ্নবী নামটাও তাদের একেবারেই পছন্দ ছিল না,কিন্তু তার আদরের ঠাম্মির দেওয়া বলে সে নিজেই ওটাকে আর পাল্টাতে দেয়নি। এই ঠাম্মির কাছে আসাটাও তারই জেদ। তিন চার মাস পর পরই বেশ কিছুদিনের জন্যে জাহ্নবী এখানে আসবেই। এখানে তার শৈশবের কিছুটা কেটেছে তো বটেই উপরন্তু এখানে এলে সে যেন নিজেকে খুঁজে পায়,সত্যিকারের ঠাম্মির জাহ্নবীকে৷ যে অন্য সময়ে কলেজ, পার্টি, স্ট্যাটাস এই সবকিছুর ভিড়ে হারিয়ে যায়। আর ঠিক তখনি এই একটি মানুষের কথাই তার মনে হয় আর তার কাছে ছু্ট্টে চলে আসে সে। এই একটা ব্যাপারে তনুশ্রী বকাবকি করেও বিশেষ সুবিধা করতে পারেননি।।

   জাহ্নবী সোসিওলজি অনার্স সেকেন্ড ইয়ার। পড়াশনায় যথেষ্ট ভাল। এ ছাড়াও তার বেশ কিছু ভাললাগার জিনিস আছে। তার মধ্যে একটি হল তার কবিতার খাতা,যা সে শুধু তার ঠাম্মির সাথেই শেয়ার করে। প্রতিমা দেবীও তার এই ঠাম্মি অন্ত প্রাণ নাতনীটিকে বড়োই ভালবাসেন৷আর তাই সে এলেই হইহই গল্প,গান,কবিতা,নারকেল নাড়, তিলের বড়া কোথা দিয়ে যে সময় কেটে যায়,তা টের পাননা দুজনের কেউই। তিনি নিজে একসময় গানের অনুষ্ঠানও করেছেন নিয়মিত। এ ব্যাপারে তাঁর স্বামী সোমেশ্বর বাবুরও উৎসাহ ছিল খুব। জাহ্নবীও তার ঠাম্মির কাছে বসে অনেক গান শিখেছে। ছেলেকেও তিনি সেই আলোতেই গড়ে তুলেছিলেন,খালি বড়ো হওয়ার পর কেমন করে জানি সেই আলো সে হারিয়ে ফেলেছিল নিজের মতোন করে হাঁটতে গিয়ে। যা তিনি খুব বেশীভাবে জাহ্নবীর মধ্যে দেখতে পান। তাঁর স্বামীর পৈত্রিক বাড়ি এখানে, যাকে তিনি আরো সুন্দর করে নিজের মনের রঙ তুলি দিয়ে এঁকেছেন।।

   প্রতিমাদেবী শহর থেকে বেশ দূরে এই মফঃস্বলে একটি গানের স্কুল চালান। একটা সময়ে গানের অনুষ্ঠানের জন্য তাঁকে অনেক জায়গায় যেতে হয়েছে। কোলকাতায় গেলে ছেলের কাছে থাকতেন বটে,কিন্তু কিছু দিনেই যেন দম বন্ধ হয়ে আসতো তার। জাহ্নবীর কষ্ট বুঝতেন তিনি। এখন আর বেশী কোথাও যান না,বাচ্চাগুলোকে আর তাঁর স্কুল নিয়েই থাকেন। এখানকার বেশ কিছু মানুষ সোৎসাহে তাঁকে সাহায্য করেন। কিছুদিন আগে এক নতুন অতিথি যোগ হয়েছে তাতে, ঋত্বিক। তাঁরই এক বন্ধুর নাতি, সরকারী চাকরী পেয়ে এখানে এসেছে। অন্য ধাতুতে গড়া এই ছেলেটি, তা প্রথম দেখাতেই বেশ বুঝেছিলেন প্রতিমাদেবী। বিদেশ বিভুঁইয়ে চেনাশোনা হিসাবেই প্রথমে যাতায়াত শুরু করে সে, যা পরে আত্মিক সম্পর্কে রূপান্তরিত হয়। 

   জাহ্নবীর মনটা খারাপ হওয়ার আজ আরো একটা বিশেষ কারণও ছিল, যদিও সে নিজের মন থেকে সেটাকে গুরুত্ব দিতে চাইছিল না। এখানে নেট সব জায়গায় ধরেনা, ছাদে উঠলে তবু কিছুটা টাওয়ার পাওয়া যায়। এই দুদিনে একেবারেই অন করা হয়নি, করতে ইচ্ছাও হয়নি। এখানে এলে শুধুই তার ঠাম্মির সাথেই সময় কাটানোর ইচ্ছা হয়। আজ কি ভেবে নেটটা একটু অন করতেই হুড়মুড় করে কিছু মেসেজ ঢুকল, তার মধ্যে একটি বিশেষ দিনের শুভেচ্ছা বার্তাই বেশী। তাই তো,বিদ্যুৎ ঝলকের মতোনই মনে পড়ে যায় তার.... আজ যে ১৪ই ফেব, ভ্যালেন্টাইনস ডে ! যদিও সে কোনো বিশেষ দিনের সেলিব্রেশনে তেমন বিশ্বাস করেনা, তবু কোলকাতায় থাকলে তবু বা মনে পড়ত,এখানে তো তার মনেই পড়েনি। এমনিই পড়ন্ত বিকেলে ছাদে দাঁড়িয়ে একটা মনকেমন ঘিরে ধরেছিল তাকে;তায় বার্তাগুলো পেয়ে মন ভাল হওয়ার বদলে তার মনকেমনের পারদ যেন আরো বেড়ে গেল। সত্যিই তো!তেমন কেউ তো নেই তার জীবনে, যার সাথে এই দিনটি বিশেষ ভাবে কাটানো যায়। এমনিই জাহ্নবী একটু অন্যরকম, তাই কলেজে বিশেষ একটা বন্ধু তার নেই বললেই চলে। ঠাম্মিই একমাত্র ভরসা!এসব ভাবতে ভাবতে কেমন হারিয়ে গিয়েছিল সে। হঠাৎ ঠাম্মির ডাকে তার চিন্তায় ছেদ পড়ল৷

"কিরে ওখানে একা একা কি করছিস,নীচে আয়। ক্লাস শুরু হচ্ছে,গান শুনবি না ?''

ঠাম্মির এই গলাটায় মনটা যেন কেমন ভাল হয়ে যায় তার। তরতরিয়ে নীচে নেমে এল জাহ্নবী। দেখল কচিকাঁচায় ভরা একটা ফুল টীম ঘিরে বসে আছে তার ঠাম্মিকে। হঠাৎ বিস্ময় তার চোখে, পিছনে একটা নতুন মুখ! স্বচ্ছ কাচের মতোন তার চোখদুটো, তার দিকেই তাকিয়েছিল। জাহ্নবীও আস্তে আস্তে পিছনে গিয়ে সেই বিস্ময়মুগ্ধ চোখদুটির পাশে গিয়েই বসল। দুজনের মধ্যে একটু হাসি বিনিময় হল। কি একটা অন্য ভাললাগার ছোঁয়া যেন জড়িয়ে ধরল জাহ্নবীর মন। ঠাম্মির দিকে তাকিয়ে দেখল কি পরম আনন্দে নিজের প্রাণ-মন তিনি এই বাচ্চাগুলোর মধ্যে বিতরণ করে দিচ্ছেন। তারাও যেন সদ্যজাত ফুলের পাপড়ি প্রস্ফুটিত হওয়ার অপেক্ষায়। হঠাৎ মনের মেঘ কেটে গিয়ে যেন অন্য এক ভাললাগার অনুভূতিতে ভরে উঠল তার মন,উজ্জ্বল হয়ে উঠল তার আজকের এই ভ্যালেন্টাইনস ডে। যেন অন্য কোনো মানে খুঁজে পেল জাহ্নবী এই বিশেষ দিনটির। তার পাশের মানুষটির সাথে সেও গলা মিলিয়ে গেয়ে উঠল তাদের সাথে....

"আলোকের এই ঝর্ণাধারায় ধুইয়ে দাও....

ভালবাসা কোথাও আটকে থাকার নয়,, ছড়িয়ে দিন বইয়ে দিন। ভালবাসা দিবসের অনেক অনেক শুভেচ্ছা।

#love


Rate this content
Log in