গুলাল আবু বকর ‹›

Others

4  

গুলাল আবু বকর ‹›

Others

ভালো লাগা ও ভালোবাসা

ভালো লাগা ও ভালোবাসা

3 mins
579


পিছন থেকে কে একজন বলে উঠলো,

— স্যর, বিষয়টি পুরনো কাসুন্দি হলেও চর্বিত চর্বণে অরুচি নেই। প্রোফেসর ছাত্রটির দিকে ভুরু ও চশমার ফাঁক দিয়ে দেখে নিলেন। তারপর বললেন,

— মন্তব্য গৃহীত হলো। আশা করছি বাকিদেরও অরুচি হওয়ার কারণ নেই।

ক্লাসভর্তি উপস্থিত পড়ুয়া-সমাজ নিজ নিজ ডেস্ক চাপড়ে সম্মতি প্রদান করলাম। তবে আঘাতের ওজন ছিলো কম এবং স্থায়িত্ব ছিলো সংক্ষিপ্ত।

প্রোফেসর রাইটিং বোর্ডের কাছে এগিয়ে গেলেন এবং উপরনিচ দুটি লাইন টানলেন। একটি ছোট আর অন্যটি বড়। তার হাতে ছিলো স্ব-সংগৃহীত ও স্ব-উদ্যোগে আনীত একখানা সরু তথাকথিত কঞ্চি, যেটা তিনি এনেছিলেন আজকের বিশেষ দিনটির জন্য। ছোট লাইনটির ওপর কঞ্চির দূরবর্তী ডগা ঠেকিয়ে তিনি শুরু করলেন,

— এটা কী?.....(খানিক চুপচাপ) ...... হয়তো ইতিমধ্যে তোমরা কেউ কেউ অনুমান করে ফেলেছো। হ্যাঁ, এটি হলো “ভালো লাগা” নামক অনুভূতি। এই ছোটটি ভালো লাগা।

এরপর ঠেকালেন বড় লাইনটির ওপর। আর বলতে হবে না, আমরা বুঝে গেলাম প্রকৃতপক্ষে ওটা কী।

নাকের ডগায় ঝুলে পড়া চশমাটা বামহাতের তর্জনী দিয়ে খানিক ঠেলে তুলে দিলেন নাকের হাড়ের উপর। এরপর কঞ্চির ডগার দিকটি ধরে খানিকটা অংশ ‘মট’ শব্দে ভেঙে ফেললেন। আমরা ততক্ষণে হাঁ করে তাকিয়ে আছি। এটা দেখে তিনি বললেন,

— এইটি হলো “ভালো লাগা”। যা সহজে ভেঙে যায়।

অতঃপর কঞ্চির উভয়প্রান্ত দুই হাতে ধরে চাপ প্রয়োগে বাঁকাতে থাকলেন। অনেকটা বাঁক নিলো, ভাঙলো না।

আমাদের মুখের দিকে এক এক করে তিনি তাকাতে থাকলেন।

এর দ্বারা কোন্ বিষয়টি বোঝাতে চাইলেন তা আমাদের কাছে আর দুর্বোধ্য রইলো না।

প্রোফেসর এবার অবশিষ্ট কঞ্চির ডগা আমার দিকে তাক করলেন। বললেন,

— ইউ আবু, তুমি একটু দাঁড়াওতো দেখি—

আমি দাঁড়ালাম। উনি তখনই বললেন,

— বসে যাও।

আমি বসলাম। ঠোঁটে হালকা হাসির স্পর্শ নিয়ে তিনি ক্লাসশুদ্ধ সকলকে বললেন,

— এই প্রাণীটিকে তোমরা চেনো। প্রাণীটিকে আমার ভালো লাগে। জানতে চেয়োনা ‘কেনো’! তোমাদের মধ্যে আরো কেউ কেউ এমন আছো। ভেবো না বাকিরা অপাঙ্ক্তেয়। তোমাদের সবাইকে আমি একসাথে—

এপর্যন্ত বলে কথায় টান দিলেন। আমাদেরকে বলার প্রয়োজন ছিলো না তিনি আসলে কী বলতে চাইছেন। তবুও সেটা বলে শোনালেন।

প্রোফেসর বলতে থাকলেন,

— দেখো আজকের আলোচ্য বিষয় দুটির প্রধান পার্থক্য হলো ওটার ধরন বা অনূভূতির মধ্যে এবং অনুভূতির বহিঃপ্রকাশে।

হাতের মার্কার পেন দিয়ে রাইটিং বোর্ডের ওপর একটি বৃত্ত ও একটি অর্ধবৃত্ত অঙ্কন করলেন। বললেন,

— মনে করো, এই অর্ধবৃত্তটি একখানা অর্ধেক মুসাম্বি লেবু। এটাকে গড়িয়ে দাও। নড়েচড়ে থেমে যাবে। গড়াবে না। ‘ভালোলাগা’র অনুভূতি এমনই হঠাৎ থেমে যেতে পারে। কিন্তু যা গড়াতে গড়াতে যায় তা হলো—

আমরা সবাই বুঝে গেলাম কী ও কোনটি গড়াতে গড়াতে এগিয়ে চলে।

প্রোফেসর থামলেন না, বলে চলেছেন,

— এরপর আমরা আলোচনা করতে পারি এই দুটির মনস্তাত্ত্বিক দিক এবং এর বিভাগ ও উপ-বিভাগ নিয়ে।

এসময় ক্লাসের একজন উজ্জ্বল ছাত্রী উঠে দাঁড়ালো এবং বিনীত ভঙ্গিতে বললো,

— স্যর, বিষয়টি যদি আজ এই পর্যন্তই থাকে এবং বাকিটা যদি পরবর্তী ক্লাশে আলোচনা করেন তবে ভালো হয়।

প্রোফেসর বললেন,

— ঠিক আছে আজ থাক এই পর্যন্ত। কারো সাথে সাক্ষাতের কোনো পূর্বাভাস আছে নাকি! —

ছাত্রীটি সলজ্জভাবে মুখ নিচু করে নিলো। আমরা মৃদু গুঞ্জনে মগ্ন হলাম। 🌿

কাহিনী এই পর্যন্ত।

কোনো প্রকার রোমান্টিক হতে চাইলে হাসতে হবে। হাসি রোমান্সের প্রাথমিক পাঠ। হাসি দু’প্রকার। একটি হলো হ্যা_হ্যা_ হাসি ....... না, ওদিকে গিয়ে লাভ নেই। কথা ঘুরে যাচ্ছে!

সুখী হতে গেলেও হাসতে হবে। উত্তম ভাষায় কথা বলার মধ্যে মঙ্গল আছে। কটু কথা ও মন্দ ব্যবহারের সাথে অসুখী হওয়ার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। ‘তাৎক্ষণিক ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ’ ঘটানো উচিত কাজ বলে যিনি মনে করেন তিনি আসলে পরোক্ষভাবে অসুখী জীবন ও অসুখী পরিবারকে আহ্বান করেন। একটি অসুখী পরিবারে বা পরিচিত সার্কেলে একে অপরকে অবহেলা প্রদর্শনে ভালো লাগার অনুভূতি ক্রমশঃ ভোঁতা হতে থাকে। তখন যেটা পালিয়ে গিয়ে অন্যত্র আশ্রয় খোঁজে তার নাম ‘ভালোবাসা’। 

শেষে একটি মজার উক্তি দিয়ে আপাতত সাইডলাইনে চলে যাচ্ছি।

“যারা বলে ‘টাকা দিয়ে সুখ কেনা যায় না’ তারা আসলে জানে না কোথায় শপিং করতে হয়।” 

(Gertrude Stein : আমেরিকার ঔপন্যাসিক, কবি, নাট্যকার)


Rate this content
Log in