Ignite the reading passion in kids this summer & "Make Reading Cool Again". Use CHILDREN40 to get exciting discounts on children's books.
Ignite the reading passion in kids this summer & "Make Reading Cool Again". Use CHILDREN40 to get exciting discounts on children's books.

নন্দা মুখার্জী

Others

2.1  

নন্দা মুখার্জী

Others

অটুট বন্ধন

অটুট বন্ধন

2 mins
854


     মায়ের জন্য ওষুধ কিনতে বেরিয়ে পাড়ার দোকানে না পেয়ে কৌশিকি হাঁটতে হাঁটতে অনেকটা দূর চলে আসে।শ্রাবণ মাস।যখন তখন বৃষ্টি নামে।ছাতাটা সাথে ছিলো তাই রক্ষে।ঘড়ির কাঁটা অনুযায়ী সন্ধ্যাও তখন হয়নি।কিন্তু কালো মেঘের আবির্ভাবে বিকেল বেলাতেই রাত্রি নেমে এসেছে।ভিজে একসার।হঠাৎ তার নজরে পড়ে বাসরাস্তা থেকে একটু দূরে একটা বেড়া দেওয়া চায়ের দোকানের কাছে একটা ছাতা খোলা অবস্থায় পড়ে আছে।দেখে মনে হচ্ছে ছাতার তলে একটা বড় ঝুড়িতে কিছু আচ্ছাদন দেওয়া।কৌতুহল নিয়ে এগিয়ে যেয়ে ছাতাটা সরাতেই সে চমকে ওঠে।সদ্যোজাত একটি শিশু।কৌশিকি এদিকে ওদিকে তাকিয়ে দেখে কেউ নেই।ইচ্ছাকৃত যে কেউ বাচ্চাটিকে ফেলে গেছে এটা তার বুঝতে একটুও সময় নিলোনা।কিন্তু সে এখন কি করবে?তার যে মন সায় দিচ্ছেনা বাচ্চাটিকে ফেলে যেতে।পরম যত্নে কৌশিকি ওকে বুকে চেপে ধরে। 

 অসুস্থ্য  মায়ের কাছে এসে সব জানায়।মা তাকে রাগ করলেও মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,"তোর তো কিছু ওই সময় করারও ছিলোনা।কিন্তু আমি ভাবছি অন্য কথা।পার্থ তো কিছুতেই বাচ্চাটিকে মেনে নেবেনা।আর পার্থ একা তো নয়।ওদের একান্নবর্তী পরিবার।কেউ না কেউ আপত্তি তুলবেই।"


---এখন কি করবো তাহলে মা?বাচ্চাটিকে তো মেরে ফেলতে পারিনা। 


---না তা কেন?পার্থর সাথে কথা বলে ওকে কোন অনাথ আশ্রমে দেওয়ার ব্যবস্থা কর। 


---দেখি তাহলে রাতে ওর সাথে কথা বলি। এখন ওকে একটু চামচে করে দুধ খাওয়ায়।ও তো অকাতরে ঘুমিয়ে চলেছে ওর মনেহয় ক্ষিদে পেয়েছে। 


   পার্থ একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীতে চাকরী করে।কৌশিকির কথা মত গ্রামের দিকে একটা অনাথ আশ্রমে শিশুটিকে ওরা দিয়ে আসে।তাদের সাথে কথা হয় ছ'মাস পর ওরা বাচ্চাটিকে দত্তক নেবে।কারন কিছুতেই কৌশিকি বাচ্চাটিকে ছাড়তেই রাজি হচ্ছিলোনা।তাকে এই শর্তে পার্থ রাজি করিয়েছে বিয়ের পর তারা ছ'মাসের মাথায় বাচ্চাটিকে দত্তক নেবে আর এখান থেকে দূরে বদলি হয়ে যাবে।এই শিশুটিকে সে মানুষ করবেই।বাড়ির লোককে দত্তক নেওয়ার পর জানাবে যে ওরা ওকে কুড়িয়ে পেয়েছে। 


     ওরা দুজনে মিলে গ্রামের দিকে একটি এতিমখানায় শিশুটিকে রেখে আসে।ছ'মাসের মাথায় বাড়ির সকলকে রাজি করিয়ে শিশুটিকে দত্তকও নেয়।দু'বছরের মধ্যে ওদের একটি ছেলে হয়।ওরা এবং ওদের বাড়ির লোক কখনোই দুই ছেলেকে আলাদা করে দেখেনি।দুজনকেই উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করে।দুজনেই বাইরে চাকরী পায়।কিন্তু বড়ছেলে কৌশিক মা,বাবাকে ছেড়ে বাইরে যেতে রাজি হয়না।কৌশিক মা ছাড়া কিছুই জানেনা।মাকে ছেড়ে দূরে যাওয়ার কথা সে ভাবতেই পারেনা।সে জানেনা এরা কেউই তার আসল মা,বাবা, দাদু,ঠাকুমা নয়।বাড়ির প্রতিটা মানুষের প্রতি তার অসম্ভব একটা টান যা ছোট ছেলে কিংশুকের মধ্যে দেখা যায়না।সে রাগী,বদমেজাজী কিন্তু তাইবলে সে কিন্তু উশৃঙ্খল নয়।অপরদিকে কৌশিক ধীর,শান্ত একটু গম্ভীর প্রকৃতির।দুটি ছেলেই দুই মেরুর বাসিন্দা।কিন্তু ভায়ে ভায়ে খুব মিল।রেগে গেলে কিংশুক একমাত্র তার দাদাভায়ের কথা ছাড়া অন্য কারও কথা সেই মুহূর্তে সে শোনেনা।সবাই বলে আদরটা একটু বেশি পাওয়াতে কিংশুকটা এরূপ হয়েছে।কিন্তু কৌশিকি একথা মানতে নারাজ।সে দুই ছেলের মধ্যে কোনদিন কোন পার্থক্য করেনি।মা হিসাবে সে গর্বিত।দুই ছেলেই তার মনের মত হয়েছে।কৌশিক এখনও মাঝে মাঝে মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে বলে,"আমি জম্ম-জম্মান্তর ধরে তোমায় মা হিসাবে পেতে চাই।তোমার মত মা পাওয়া ভাগ্যের কথা"।আনন্দে কৌশিকির চোখ থেকে জল পড়তে থাকে।আর মনেমনে ভাবে ভাগ্যিস সেদিন ওকে বুকে তুলে নিয়েছিলো।তাই তো আজ সে এতো সুখি।নিজের পেটের সন্তান চলে গেলো বিদেশে বেশি অর্থ উপার্জনের আশায়।অথচ তার কুড়িয়ে পাওয়া ছেলে তাকে এক মুহূর্ত চোখের আড়াল করতে চায়না অফিসের সময়টুকু ছাড়া।কিংশুক বছরে একবার করে আসে।বিয়ে-থা করলে হয়তো তাও আসবেনা।কিন্তু তার কৌশিক এখনও মায়ের পায়ের উপর শুয়ে আদর খায়।বাবা পার্থ দেখে আর হাসতে হাসতে বলে,"তোমার বড় ছেলে তো এখনও বড় হতেই পারলোনা।ওকে বড় হওয়ার একটু সুযোগ দাও।এর পরে বৌ ঘরে আসলে বলবে,মায়ের আঁচল ধরা ছেলে।"

  ---বাবা আমি তো বিয়ে করবোনা।আমি সারাজীবন মায়ের ছেলে হয়েই থাকবো। 


    কৌশিকি ওদের কথার মাঝখানে বলে ওঠে, 


---দূর বোকা বিয়ে করবিনা এ কি কথা।আমি ঠাকুমা হবো কি করে?দেখবি তোর বৌ খুব ভালো হবে।তুই আমার এতো ভালো ছেলে আর তোর বৌ ও খুব ভালো হবে।


     শুরু হয় কৌশিকের জন্য মেয়ে দেখা। কিন্তু হঠাৎই কৌশিকির সংসারে ছন্দপতন!ধরা যখন পড়লো কৌশিকির দুটো কিডনিই পুরো নষ্ট।একমাসের মধ্যে কিডনি ট্রান্সফার করতে হবে তার মধ্যে প্রতি সপ্তাহে ডায়ালাইসিস।বারবার পেপারে দিয়েও কিডনি পাওয়া যায়না।কিংশুক বিদেশ থেকে মায়ের অপারেশান হবে শুনে চলে এসছে।


        আজ অপারেশান।কিংশুকই ছুটোছুটি করছে।ধারেকাছে কৌশিককে দেখা যাচ্ছেনা।কিংশুককে দেখে মনেহচ্ছে সে খুবই চাপের মধ্যে আছে।চুল উস্কোখূস্কো চোখের পাতা ভেজা।সকলেই ভাবছে মায়ের জন্য।তারকাছে তার দাদার কথা জানতে চাইলে সবসময়ই সে বলছে দাদা ডাক্তারের সাথে কথা বলছে। 


       অপারেশান ভালোভাবেই হয়ে যায়।আবার খোঁজ পরে কৌশিকের।এবার আর কিংশুক নিজেকে ধরে রাখতে পারেনা বাবাকে জড়িয়ে ধরে হাউহাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলে,"বাবা টাকার বিনিময়ে মায়ের জন্য কিডনি জোগাড় করতে দাদা পারেনি।ওই অল্প সময়ের মধ্যে কাউকেই পাওয়া যায়নি।দাদাভাই তার একটা কিডনি দিয়ে মাকে বাঁচিয়েছে।আমাকে দিয়ে দিব্যি করিয়ে নিয়েছিলো অপারেশনের আগে আমি যদি মুখ খুলি তাহলে তার মরা মুখ দেখবো।তাই আমি তোমাদের কিছু বলতে পারিনি।বাবা চলো, দাদাভাইকে দেখতে যাই।"


        পার্থ মাথা ঘুরে পড়ে যাচ্ছিলেন।কিংশুক ধরে ফেলে।তখনও কৌশিকির জ্ঞান ফেরেনি।কৌশিক ভালো আছে।বাবা,ভাই যেয়ে তার বেডের কাছে দাঁড়ালে সে বলে,"মায়ের দুধের ঋণ কোনদিন শোধ করা যায়না বাবা।তবুও একটু তো কিছু মায়ের জন্য করতে পারলাম।তোমরা মাকে কিছু বোলোনা।আমি কাল সকালেই মায়ের সাথে গিয়ে দেখা করে আসবো।"


     পার্থর চোখ থেকে অবিরাম ধারায় জল পড়তে থাকে।আর মনেমনে বলতে থাকেন,"তোর যে তোর মায়ের কাছে কোন দুধের ঋণ নেই রে।ভগবান সব আগে থাকতেই ঠিক করে রাখেন।তোর মাকে তুই বাঁচাবি বলেই হয়তো এতো প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্বেও তোকে সেদিন বুকে করে তোর মা বাড়িতে নিয়ে এসেছিলো।তুই পরের জম্মে তোর মায়ের গর্ভেই আসিস বাবা।"পার্থ কাঁদতে কাঁদতে তার আদরের বড় ছেলের মাথায় হাত বুলাতে থাকেন। 


                             শেষ


Rate this content
Log in