চরমপত্র
চরমপত্র


ওহে ভারতের স্বদেশভক্ত,
মাথায় শুধাই চড়িছে রক্ত
পীড়িতের দিকে আর কবে তুমি
তাকাইবে চোখ তুলে
প্রতিশ্রুতি হাজারো লক্ষ
গেছ আজ সব ভুলে
বলিলে শক্ত মুখের ভাষণে
চলিবে এ দেশ মজুর শাসনে
কোথা সে প্রতিশ্রুতির রক্ষা
কোথা বা কৃষকরাজ
কোথা গেল সেই পূর্ববার্তা
কোথা গেল সব আজ?
শ্রমিকের পেটে জুটে নাহি ভাত
তবু তোমাদের ভরা দুই হাত
হায় রে বিধি এ কী তোর নীতি
এ কেমন ছেলেখেলা
সকলি তাহার আছে যার জোর
শুধু পীড়িতেরে অবহেলা
জানি তো তোমরা ব্যস্ত মানুষ
তাই তো বোধহয় হারায়েছ হুঁশ
তবু কাজ মাঝে ঠিক ঝোপ বুঝে
কোপখানি দাও বুকে
আর কোনোদিন পেলেই সুযোগ
দাঁড়াও রক্ত মেখে
উঃ কী দারুণ তোমাদের কথা,
কী দারুণ ঘোষণা
শুনিলে পরেই জেগে ওঠে ব্যথা
ভুলে যাই বাসনা
মজুরেরা নাকি তোমাদেরই ভাই
তাদের তরেই করিবে লড়াই
এসকল বলে ভুলে যাও পরে
মজুর শব্দখানি
সভাখানি শুধু ত্যাগ করিলেই
জেগে ওঠে শয়তানি
শুধু একখানি দিনের তরে
পায়ে হেটে ছোট সবা ঘরে ঘরে
আসন খানি পাইলেই হাতে
পীড়িতরে যাও ভুলে
চেঁচিয়ে বলো ক্ষুধিতই আছে
সব নষ্টের মূলে
সভা হতে শুধু হইলেই দূর
মুখে জেগে ওঠে বিপরীত সূর
ভুলে যাও সব পূর্ব কথা
ফিরে পাও চেতনা
ক্ষুধিতের মুখে ছুঁড়ে দাও জল
গরিবেরে যাতনা
অনাথেরে বলো লক্ষ্মীছাড়া
ভিখিরীরে বলো পাপ
আর কুলিদের ঘাড়েতে ঝোলাও
দুঃখের অনুতাপ
উঃ কী দারুণ শাসক তোমরা
ক্ষুধিতরে বোলো দেশের নোংরা
ভিখিরিরে বলো বিপদজনক
কাঙালের অভিশাপ
গরিবেরে দাও ফাঁসির সাজা
ধনীদের করো মাফ
জানিতো তোমরা সত্যবাদী
তবু ভুল করে বলে থাক যদি
"শ্রমিকে চরিবে সখের শিখরে
হাঙরে টানিবে হাল
কামারে টানিবে সখের তামাক
জমিদার দেবে জাল"
সেসকল আর এমন কি কথা
বিশেষ কিছুতো না;
এ জগতে ভাই সত্য তোমার
হয় না তুলনা!
ওদের মনেও ব্যর্থ আশা
শুভ্র প্রভাতে হয় ধোঁয়াশা
প্রতি মুহূর্তে ভ্রান্ত চিত্তে
জীর্ণ শান্তি হারায় নৃত্যে
তবে কি ওরা মন্ত্রে গড়া
যান্ত্রিক অভিশাপ
নাকি কেবলই সমাজের কীট
কিম্বা ধোঁয়ার ছাপ?
জানি আমি নহে আমার এ পত্র
পীড়িতেরপ্রতি-রক্ষা ছত্র
তবুও পুড়িও দেখিবা মাত্র
চিঠিতে লেখা এ রক্তগাত্র
কিম্বা আঁধারে নামিলে রাত্র
ছুঁড়ে ফেলে দিও যত্রতত্র
তবে জেনে রেখো ইহা রয়ে যাবে
সহস্র যুগ ধরে
প্রত্যেক দুঃখী পীড়িতের মনে
হৃদয়ের ভিতরে।
স্মরণে নজরুল