আমি নীলমাধব সান্যালকে দেখিনি
আমি নীলমাধব সান্যালকে দেখিনি


না, আমি কোনো নীলমাধব সান্যালকে চিনি না
আমি কোনো শস্যাগারকে মুহূর্তে নক্সালবাড়ি হয়ে উঠতে দেখি নি
আমি দেখিনি মাটির খোলা রাস্তায় প্রতি সকালে পুরনো ধান শুকিয়ে নিতে
বুকে নীল বুলেটের খোলস ভরে যে মানুষটা দরজা খুলে জেগে থাকত রোজ
না.... আমি তাকে দেখিনি...
গাছেরা বেড়ে উঠতো নিরাপদে
পাঁচিলে পাথর ছুঁড়তো আকাঙ্ক্ষার রোদ্দুর
তখনও সুযোগ পেলে ছাদে বসত শালিকের দল
না, আমি চিনি না কোনো বেপরোয়া জঙ্গলমহলের পথ
না, আমি কখনো উঠে বসতে দেখিনি সমর্থ মেয়েমানুষটার লাশকে
উপলব্ধি করিনি আর কত এগিয়ে চললে নিজেকে জেহাদি ঘোষণা করা যায়
না, অস্ত্র গোনার জন্য আমি কাওকে ছদ্মবেশ ধরতে দেখিনি
আবার চাপাতি নিয়ে কাওকে ছুটেও যেতে দেখিনি বিশ্বাসঘাতকের দিকে
জলে ভিজে যাচ্ছে সব জঞ্জাল
ধীরে ধীরে আরো ভারি হয়ে উঠছে সাম্রাজ্য
বিপ্লবের কোনো অজুহাত ছিল না বলে
আমিও নীলমাধব সান্যালকে চিনে উঠতে পারি নি আজও
শোনো প্রতিটি লুটিয়ে পড়া দেহ
শোনো স্বাধীনতা চাওয়া নাগরিক পতাকার দল
আমি কখনো বিশ্বাসকে হুড়মুড়িয়ে ধ্বসে পড়তে দেখি নি
না, আমি দেখিনি কখনো ইতিহাস বইএর পাতায় মুক্তির মিথ্যে সময়কাল লিখে দিতে
তুমিও বিশ্বাস করতে শেখো
তুমি জেনে নাও যে আমি বুকের খাঁচায় বন্দী করতে শিখে গেছি ধোঁয়াটে নিঃশ্বাস
আবার দক্ষিণের জানলায় আমি বসাতেও শিখে গেছি শহরের সমস্ত গাছ
আসলে সব বিপ্লবকে রক্তক্ষয়ী বলতে পারি নি আমি
সকলকে চেনাতে পারিনি নীলমাধব সান্যালের দেহ
এখনো সময় আছে
এখনো অনেক সময় আছে
আমি সমস্ত ঘাসেদের ছুঁড়ে দিতে পারি যুদ্ধপীড়িত কাঠফাটা জমির কিনারায়
হ্যাঁ, আমি শনাক্ত করতেও পারি উপলব্ধির অবিকৃত দেহ
এরা যুদ্ধাপরাধী
এদের পোশাক নেই, খাবার নেই... এরা অস্ত্রহীন
হ্যাঁ, আমি দেখতে পাচ্ছি গাছেদের প্রতিরোধ
আমি শুনতে পাচ্ছি হাজার হাজার সৈনিকের ফ্ল্যাগমার্চের শব্দ
আমি দরজাকে শুধু একদিকে খুলতে দেখেছি
আর জানলাকে খুলতে দেখেছি তার বিপরীতে
হ্যাঁ, আমি সমস্ত মানুষকে হাঁটতে দেখেছি শহরের পথে পথে
প্রত্যেককে হাতে তুলে ধরতে দেখেছি দাবী, সুস্পষ্ট সংগ্রামের ভাষা
কিন্তু যাদের দুটো হাত পুড়ে গেছিল মোমবাতির আগুনে
এসবের মধ্যেও আমি ফিরে আসতে দেখিনি শুধু তাদের
না, আমি আর খুঁজে দেখিনি আগাছায় ঢেকে যাওয়া পুরনো প্রাসাদের রাস্তাটা
এবার বিশ্বাস করো
আর আমি কোনো নীলমাধব সান্যালকে মিছিলে হাঁটতে দেখিনি।