Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Aparna Chaudhuri

Children Stories

3  

Aparna Chaudhuri

Children Stories

তিন্নি আর মামমাম ( পর্ব ১৫)

তিন্নি আর মামমাম ( পর্ব ১৫)

5 mins
321



বেলা দুটো নাগাদ রাজু রিক্সা আর ভ্যান নিয়ে হাজির হল আশ্রমের সামনে। তিনটে ছটার শো, তাই বেলা দুটোয় না বেরোলে পৌছনো যাবে না। সবাই মোটামুটি তৈরি। রিক্সায় গুরুদেব আর তিন্নি যাবে। বাকি সবাই ভ্যান রিক্সায়। তিন্নি খুব খুশী। রাজু আর টুকটুকি দিদি সঙ্গে চলেছে। হলে বসে খাবার জন্য মামমাম সঙ্গে নাড়ু আর নিমকি নিয়েছে।

তিন্নি ওর বাবা মায়ের সাথে অনেক বার সিনেমা দেখতে গেছে মাল্টিপ্লেক্সে । ওখানে ওরা pop corn খায়। কিন্তু এখানের সিনেমা হল কেমন সে সম্বন্ধে ওর কোনও ধারণাই ছিল না।

প্রায় আধ ঘণ্টা পর ওরা পৌঁছল ছবি ঘরের সামনে। ওরা যখন রিক্সা থেকে নামলো তখন ওখানে বেশ ভিড়। হলের সামনে বিরাট হোর্ডিঙে সিনেমার নাম লেখা , “বল দুগগা মাইকি”, আর পাশে নায়ক অঙ্কুশ হাজরা আর নায়িকা নুসরত জাহানের বিরাট ছবি। কিন্তু মা দুর্গার কোনও ছবি নেই। 

গুরুদেব রিক্সা থেকে নামতেই ছবি ঘরের মালিক অরুণ বাবু ছুটে এলো,” আরে গুরুদেব আপনি এখানে? ছবি দেখতে? আমার কি সৌভাগ্য।“

“ হ্যাঁ...... সবাই জোর করে নিয়ে এলো। শুনলাম মা দুর্গার সিনেমা এসেছে.........” গুরুদেব বললেন।

গুরুদেবের কথা শুনে অরুণ বাবুর মুখটা শুকিয়ে গেলো। উনি শুধু ধীরে ধীরে বললেন , “ মা দুর্গার......? আপনি আসুন, আপনাদের বক্সে বসিয়ে দিই। ওরে কানাই বক্সের দরজা গুলো খুলে দে।“

কানাই বলে ছেলেটি ছুটে গেলো হলের পিছন দিকের দুটো দরজা খুলতে। তিন্নি অবাক হয়ে দেখতে লাগলো সিনেমা হলটাকে। একটা বিরাট একতলা বাড়ী , মাথায় এসবেস্টসের চাল। হলের দু দিকে সারি সারি দরজা। ওরা যখন ভিতরে ঢুকলও , তিন্নি হলের ভিতরটা দেখেও খুব অবাক হল। এটা ওর দেখা হলগুলোর মত একেবারেই নয়। ওদের, একটা ছোটো দেয়াল দিয়ে আলাদা করা জায়গায় নিয়ে যাওয়া হল। সেখানে অনেকগুলো প্লাস্টিকের চেয়ার পাতা। দেয়ালের কোনগুলো সব পানের পিকে লাল। ছাদ থেকে লম্বা লম্বা রডের থেকে পাখা গুলো ঝুলছে। ওরা সবাই চেয়ারে বসে পড়লো। সামনের সারিতে গুরুদেব, ওনার পাশে তিন্নি, রাজু আর টুকটুকি। পিছনের সারিগুলোতে মামমাম, সেঁজুতি মামমাম আর বাকিরা। বাসুদা বসেছে একদম পিছনের সারিতে। ওরা বসে যাবার পর দুদিকের বাকি দরজাগুলো খুলে দেওয়া হল। আর সেই দরজা দিয়ে পিলপিল করে জনতা ভিতরে ঢুকে এলো। সামনে চটের ওপর কিছু লোক বসলো। আর বাকিরা পিছনের প্লাস্টিকের চেয়ারে। দরজা গুলো খোলাই রইল। 

সিনেমা শুরু হল। সিনেমার শুরু থেকেই নায়কের লম্ফ ঝম্প শুরু, তার সঙ্গে অনেক স্বল্প বস্ত্র সঙ্গিনীদের ও দেখা যাচ্ছে। গুরুদেব একটু নড়েচড়ে বসলেন। ওনার ভুরু দুটো কুঁচকে গেছে। আধঘণ্টা মত সিনেমা হবার পর দড়াম দড়াম করে দরজা গুলো সব বন্ধ হয়ে গেলো। আর দশ বারো জন লোক “ টিকিট টিকিট” বলতে বলতে ওই ভিড়ের মধ্যে ঝাপিয়ে পড়লো। ওদের বক্সের সামনেও একজন এলো, বাসু দা তাড়াতাড়ি এসে ওনাকে ওদের টিকিটের দামটা দিয়ে দিল। টিকিট নেওয়া শুরু হতেই একটা দারুণ হুটোপাটি শুরু হয়ে গেলো। অনেক লোক হামাগুড়ি দিয়ে দরজার কাছে পৌঁছে গেলো বাইরে পালাবার জন্য কিন্তু দেখা গেলো দরজা গুলো সব বাইরে থেকে বন্ধ। টিকিট নেবার লোকগুলো তাদের ঘাড় ধরে ফেরত নিয়ে এলো। তারপর তাদের থেকে টিকিটের পয়সা আদায় করতে লাগলো। যারা টিকিট দিতে চাইছিল না তাদের কেউ কেউ কানমলা, চড় থাপ্পড়ও খেলো। মহিলারা চেঁচাতে শুরু করলো, বাচ্ছারা কাঁদতে শুরু করলো, সে এক হই হই কাণ্ড। এর মধ্যে আবার মামমাম কাঁধের ব্যাগ থেকে নাড়ু আর নিমকির টিফিনবাক্স বার করে সবাইকে নাড়ু আর নিমকি বিলি করতে শুরু করলো।

রাজু সবে নিমকিটা মুখে দিয়েছে, গুরুদেব ওকে জিজ্ঞাসা করলেন,” হ্যাঁ রে রাজু, এই ছবিতে মা দুর্গার গল্প কখন শুরু হবে? “

রাজুরও সিনেমাটা দেখে মনে হচ্ছিল যে এটা ঠিক ঠাকুর দেবতার ছবি নয় ও আমতা আমতা করে বলল,” মনে হয় আর একটু পর থেকে শুরু হবে।“

“ হলেই ভালো না হলে আজ তোর কি হাল হবে সেটা তুই বুঝতেই পারছিস।“ চোখ গোল গোল করে বললেন গুরুদেব।

ওনার মুখের দিকে তাকিয়ে রাজু একটা রাম বিষম খেলো। সেঁজুতি মামমাম তাড়াতাড়ি ওকে জল খাইয়ে দিল।

সিনেমা আবার শুরু হয়ে গেল। সারা হলে হাততালি আর সিটি বাজতে লাগলো। গুরুদেব স্ক্রীনের দিকে মনযোগ দিলেন। কিন্তু আবার শুরু হল নায়কের নৃত্য এবং নায়িকার ছলাকলা। গুরুদেব বিড়বিড় করতে লাগলেন,” মা কখন তোর দেখা পাব মা?”

রাজু ওনার পাশে সিটিয়ে বসে আছে। মনে মনে প্রার্থনা করছে যেন একবার মা দুজ্ঞা কে দেখায় নইলে আজ আর তার রক্ষা নেই। এমন সময় হঠাৎ নায়ক নায়িকার মুখগুলো পর্দার ওপর কেমন লম্বা হয়ে গেল। কথাগুলো গেও গেও করতে লাগলো। তারপর পর্দার আলো আসতে আসতে কমতে কমতে নিভে গেল। দর্শকরা সাংঘাতিক চেঁচামেচি করতে শুরু করলো। সারা হল অন্ধকার, ফ্যানও বন্ধ। অতজন লোক। গরমে তিন্নির দম বন্ধ হয়ে আসতে লাগলো। তারপর মাইকে ঘোষোণা করা হল , লোডশেডিং হয়েছে, এক্ষুনি জেনারেটর চালু করা হবে। সবাইকে অনুরোধ করা হচ্ছে ধৈর্য ধরে নিজের জায়গায় বসতে। কিন্তু ঘোষণায় খুব একটা ফল হল বলে মনে হল না। অন্ধকারে চেঁচামেচি, হুটোপাটি , কান্নাকাটি চলতে লাগলো। অন্ধকারে টুকটুকি হঠাৎ “ আআআআআ” করে চেঁচিয়ে উঠলো।

“ তোর আবার কি হল রে?” জিজ্ঞাসা করলো সেঁজুতি মামমাম।

“ আ-আমার পায়ের কাছে কি একটা নড়ছে।“ বলেই ও তিড়িং করে লাফিয়ে চেয়ারের ওপর উঠে দাঁড়াল।

“ সে কি রে?” বলেই সেঁজুতি মামমাম পা তুলে নিল।

এই চলমান জিনিষটা প্রথম সারি থেকে পিছনের সারিতে গিয়ে পৌঁছল এবং পিছনের সারিতে হুড়োহুড়ি পড়ে গেল। হঠাৎ হলের আলো গুলো জ্বলে উঠলো আর বাসুদা সেই জীবটিকে খপ করে ধরে ফেলল। দেখা গেলো সেটি একটি বেড়াল , মেঝেতে খাবার খুঁজছিল।

আলো আসতে আবার ছবি শুরু হল। সৌভাগ্য বসত তখন একটা দুর্গা পুজ দেখাচ্ছিল। গুরুদেব,” মা ব্রহ্মময়ী ! ” বলে দু হাত জোর করে একটা প্রণাম করলেন। তারপর গুরুদেব জপের মালা নিয়ে চোখ বন্ধ করে জপ করতে লাগলেন, ছবি শেষ হবার আগে আর চোখ খুললেন না । রাজু একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো।

অবশেষে নায়ক নায়িকার মিলন হল এবং ছবি শেষ হল। ছবি শেষ হতেই হলের দরজা গুলো খুলে গেলো । প্রথম সুযোগেই রাজু হল থেকে বাইরে পালিয়ে গেল। গুরুদেবের মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না।

ছবি শেষ হবার পর হলের মালিক ওদের সবাইকে ভিতরের একটা ঘরে নিয়ে গিয়ে বসাল। ওদের সবার জন্য চা আর সিঙ্গারার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। চা টা খেয়ে গুরুদেব অনেকটা শান্ত হলেন।

ওরা যখন আশ্রমে ফিরল তখন অন্ধকার হয়ে গেছে।


Rate this content
Log in