মুখ ও মুখোশ
মুখ ও মুখোশ
আমার মৃতদেহ কে পাটভাঙা ধবধবে সাদা কাপড়ে জড়িয়ে শুইয়ে রাখা হয়েছে আমাদের উঠোনে।আমার মৃতদেহের পাশে অভিভাবকের মত দাঁড়িয়ে রয়েছে আমাদের পুরোনো বেলগাছ।
আমার সমস্ত দেহ সাজানো হচ্ছে টাটকা রজনীগন্ধায়।ধুপের ধোঁয়ায় সুরভিত হয়ে রয়েছে চারদিক।
আমি সদ্যোজাত ঘুমন্ত শিশুর মত চিৎ হয়ে শুয়ে রয়েছি অনন্ত আকাশের দিকে মুখ তুলে।একফালি সোনালি রোদ হেমন্তের কুয়াশা মেখে আদর করছে আমার প্রাণহীন চোখের পাতায়।
আমাকে ঘিরে রেখেছে আমার শোকস্তব্ধ গোটা পরিবার।আমাদের উঠোনে ভিড় জমিয়েছে কিছু আত্মীয় স্বজন, বন্ধুবা্ন্ধব,পাড়ার লোকেরা।
ভিড় ঠেলে আমি আমার মৃতদেহের দিকে এগিয়ে গেলাম।আমার ভীষন আনন্দ হতে লাগল।বহু বহু বছর বাদে আমি দেখতে পাচ্ছি আমার মুখোশহীন মুখকে।আমার কানের দুপাশে,কপালে,থুতনির নিচে ভারী লোহার মুখোশের কালো দাগ পড়ে গেছে ,জন্মদাগের মত উদ্ধত ও স্থায়ী হয়ে।বড় দুর্বহ ছিল সেই মুখোশ।ভয়ঙ্কর দুর্বিষহ ছিল তার নাগপাশ।সেই মুখোশটা কোথায় কে জানে...বহুদিন বাদে আমি দেখতে পাচ্ছি আমার আসল মুখ কে,আমার প্রিয়তম সেই মুখ।আমার নিষ্পাপ প্রাণহীন মুখে চুম্বন করলাম আমি।
আমার মৃতদেহ কে ভ্যানে তোলার জন্য এগিয়ে এল চারজন বলশালী পুরুষ...আর ঠিক তখনই আমার ঘুম ভেঙে গেল।ঘুম ভেঙে চমকে উঠে বসতেই কানের পাশটা ব্যাথা করে উঠল।
আমার মুখে বসানো রয়েছে এক দুর্বহ জগদ্দল মুখোশ।এই মুখোশের হাত থেকে আমার মুক্তি নেই।