Gopa Ghosh

Children Stories Classics Fantasy

4.3  

Gopa Ghosh

Children Stories Classics Fantasy

টুবাইয়ের খুশি

টুবাইয়ের খুশি

3 mins
264


টুবাই স্কুল থেকে ফিরেই সোজা ছাদে উঠলো, মায়ের বারণ তো দূরের কথা, জামা প্যান্টও বদলালো না। ছোটো বোন তিতির দাদাই, ও দাদাই করে গলা ফাটালো কিন্তু সে কোনো কিছুই শুনলো না। অগত্যা মা ছাদে গিয়ে হাজির হলো, সাথে তিতির। টুবাইকে পাখির খাঁচার সামনে বসে কাঁদতে দেখে মা ছুটে গিয়ে জিজ্ঞেস করে "কি রে, কাঁদছিস কেনো, স্কুলে মার খেয়েছিস নাকি?" টুবাই জল ভরা চোখ নিয়ে খাঁচার দিকে আঙুল দ্যখায়। মা দ্যাখে খাঁচায় বন্দী শালিক পাখি টা নড়ছে না, হয়তো মরে গেছে। মা ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো "সব পাখি কি খাঁচায় বন্দী থাকতে পারে, শালিক পাখি কেউ খাঁচায় রাখে না, চল আর কাঁদতে হবে না, জামা কাপড় ছেড়ে খেয়ে নে"। তিতির আধো আধো গলায় বলে উঠলো "তল পাকি মলে গেছে, দাদাই"। বোনের কথায় তার ফোলা ফোলা গাল টিপে বলল "মলে গেছে না, মরে গেছে"। তিতির কিছু না বুঝে খিল খিল করে হেসে উঠলো। 

পরদিন রবি বার। টুবাইয়ের স্কুল ছুটি হলেও মন বড় খারাপ। বাবাকে পাখির হাটে নিয়ে যাওয়ার বায়না করে সকালে খুব বকুনি খেয়েছে। মায়ের কাছে তো সব বায়নাই শর্তসাপেক্ষ। যদি হোমওয়ার্ক টা হয় তবে, যদি হাতের লেখা বাড়তি আরো দশ পাতা লিখে রাখে তবে, স্যারের পড়াটা সম্পূর্ণ করে নিলে তবে।


টুবাইয়ের ইচ্ছার যেনো কোনো মূল্যই নেই। জানালা দিয়ে পাশের সবুজ ঘাসে ভরা মাঠটা ওকে যেনো হাতছানি দিয়ে ডাকে বারবার। টুবাই মায়ের যে কোনো শর্তে রাজি, যদি রোজ স্কুলের পর ওই মাঠে গিয়ে বন্ধুদের সাথে খেলতে দেয়, কিন্তু একথা বলতে গিয়ে মায়ের থেকে মুখে নয় উত্তরটা পেয়েছিল হাতে। টুবাই ভাবে তাড়াতাড়ি বড় হয়ে গেলেই ভালো অন্তত নিজের ইচ্ছেr কিছুটা তো পূরণ  করা যাবে। ছাদের কার্নিশে দাঁড়িয়ে এমন কত কথা ভাবছিল, এমন সময় নিচে থেকে মায়ের গলা ভেসে এলো "কি রে, এতবার ডাকছি কানে যাচ্ছে না, নিচে আয়, ঠাম্মা এসেছে"। টুবাইয়ের মন আনন্দে নেচে উঠলো।


একটা নয় দুটো করে সিঁড়ি ডিঙিয়ে নেমে এলো নিচে। ঠাম্মা দাঁড়িয়ে সিঁড়ির মুখে। নাতিকে দেখে একগাল হেসে বললো "কি গো দাদুভাই, দুষ্টুমিতে আর হাত ভাঙো নি তো আগের মত?"। সেবার হাত ভাঙার কথা মনে পড়ে গেলো টুবাইয়ের। পিসির ছেলে ভোলার আগে সিঁড়ি নামবে বলে প্রায় ছ়'টা সিঁড়ি লাফিয়ে পড়েছিল বারান্দায়, হাত ভেঙে প্লাস্টার করতে হয়েছিল। টুবাই শুধু "হু" বলে ঠাম্মার হাত ধরে ছাদে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে ঠাম্মা বলে ওঠে "তোর জন্য কি এনেছি জানিস দাদুভাই, তবে আগে একটা হামি দিলে দেখাবো"। টুবাই ঠাম্মার কথা শেষ হওয়ার আগেই গালে একটা হামি এঁকে দিলো।


উপহারের কথাটা শুনে তার মন যেনো আনন্দে ভাংরা নাচ শুরু করে দিলো। "চলো না ঠাম্মা কি এনেছ দেখবো"। টুবাই ঠাম্মার হাত ধরে এত জোরে টানলো যে আশি ছুঁই ছুঁই মহিলাটি প্রায় টাল খেয়ে পড়ে যাচ্ছিল। ব্যাস অমনি শুরু হয়ে গেলো মায়ের বকুনি। ঠাম্মাই শেষ মেষ বাঁচালো। "আরে বকছো কেনো, ও কি আর বুঝে করেছে, দাদুভাই আমার খুব লক্ষ্মী ছেলে"। ঘরে গিয়ে টুবাই যা দেখলো তাতে শুধু মুখ দিয়ে বেরোলো "ও ঠাম্মা, তুমি কি করে জানলে, আমার কতদিনের শখ একটা টিয়া পোষার"। একটা সুন্দর খাঁচায় ভরা সবুজ টিয়া পাখি। নিজের চোখকে যেনো বিশ্বাস হচ্ছিল না। এত খুশি বোধহয় কোনোদিন হয় নি। ঠাম্মা কে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো "ঠাম্মা তোমায় আমি কি উপহার দেবো?" টুবাইয়ের খুশি মুখটা দেখে ঠাম্মা বলে উঠলো "দাদুভাই তোর এই খুশি মাখা মুখটাই আমার উপহার"। 


Rate this content
Log in