Aparna Chaudhuri

Children Stories Comedy

3  

Aparna Chaudhuri

Children Stories Comedy

তিন্নি আর মামমাম (পর্ব ৬ )

তিন্নি আর মামমাম (পর্ব ৬ )

3 mins
296



মামমামের ঘরের কোনেই রান্নার ব্যবস্থা। আগে একটা কাঠকয়লার উনুনে রান্না করতো মামমাম। যখনই উনুনটা জ্বালত সারা বাড়ী ধোঁওয়ায় ভরে যেত। কিছুদিন আগে বাবা একটা ছোটো গ্যাস কিনে দিয়েছে। মামমামের জন্য আলাদা বাজার আসে। গোবিন্দ ভোগ চাল, সোনা মুগের ডাল, ঘি, সন্ধব নুন এসব। বেশীর ভাগ দিন মামমাম নিজের জন্য ডালে চালে ফুটিয়ে নেয় আর তার ওপর দিয়ে ভালো ঘি ঢেলে খেয়ে নেয়। মামমামের রাতের খাওয়া নিয়ে কোনও ঝামেলা নেই। রাতে শুধু খই আর দুধ।

মামমামের এই রান্নাঘরটা তিন্নির খুব প্রিয়। যেদিন ছুটি থাকে সেদিন ও মামমামের কাছে এসে বসে। সঙ্গে আনে ওর খেলনা বাটির জিনিষপত্র। সেদিন মামমাম একটু যত্ন করে রান্না করে। বাড়ীতে যা সব্জি আসে তারই খানিকটা মামমামের জন্য দিয়ে দেয় মা।

আজ তিন্নির ছুটি। ও নিজের খেলনা বাটি নিয়ে রান্নাঘরে ঝর্ণা মাসির কাছে গেল। ঝর্ণা মাসি তিন্নিদের বাড়ীতে রান্না করে। ঝর্ণা মাসি ওকে একটা প্যাকেটে করে খানিকটা ঢ্যাঁড়শ দিল। সেই সব নিয়ে তিন্নি রওনা হল মামমামের ঘরের দিকে।

“ এই নাও মামমাম তোমার বাজার।“

“ এসে গেছ দিদি! আমি তোমার কথাই ভাবছিলাম। কাল তোমার জন্য ছানার মুড়কি বানিয়েছি। খাবে এসো।“

“ এখন কি আমার খাবার সময় আছে? তোমায় একটু হেল্প না করে দিলে তুমি কি আর পারবে?” পাকা বুড়ির মত বলল তিন্নি।

ওর কথা শুনে হাসি চেপে মামমাম খুব গম্ভীরভাবে বলল,” তা তো ঠিক। তবে এতো সব তুমি বয়ে বয়ে আনলে , একটু বসে জিরিয়ে নাও, জল টল খাও তারপর নাহয় দুজনে মিলে কাজ শুরু করা যাবে। “

একটু ভাবল তিন্নি, তারপর ওর মামমামের কথাটাই বেশী যুক্তিপূর্ণ বলে মনে হল।

“ ঠিক আছে, দাও কি বানিয়েছ।“ খাটে পা ঝুলিয়ে গুছিয়ে বসলো তিন্নি।

একটা ছোটো বাটি করে মামমাম ওকে ছানার মুড়কি এনে দিল।  

এক চামচ মুড়কি মুখে দিয়ে , পা দোলাতে দোলাতে তিন্নি জিজ্ঞাসা করলো, “ আজ কি তরকারি বানাবে মামমাম?”

“ আজ ভাবছি পোস্ত দিয়ে ঢ্যাঁড়শ টা বানাবো। “

“ ঠিক আছে আমি তোমায় ঢ্যাঁড়শ গুলো কেটে দেবো।“

“ কাটা টা থাক না, তুমি বরং রান্নার সময় সব মশলা গুলো আমার হাতে হাতে দিয়ে দিও।“

“ না না , আমি সব্জি কাটবো। আমার কাছে ছোট কাঠের ছুরি আছে। আমি কাটতে পারি।“

“ আচ্ছা বাবা দেখা যাবে। এখন আমি ঢ্যাঁড়শ গুলো ধুয়ে মুছে কাটতে শুরু করি। তুমি খাওয়া শেষ করে নাও।“

মামমাম কাজ শুরু করলো। তিন্নি তাড়াহুড়ো করে খাওয়া শেষ করে নিজের ছুরিটা হাতে নিয়ে মামমামের পাশে এসে বসলো আর এক খাবলা ঢ্যাঁড়শ টেনে নিয়ে কাটতে শুরু করলো।

“হাত কেটো না যেন দিদি!” বলে মামমাম কড়াইটা বসাল গাসের ওপর তারপর খানিকটা তেল দিয়ে কাটা ঢ্যাঁড়শগুলো কড়ায় দিতে লাগলো ।

তিন্নি মন দিয়ে কাটছিল ঢ্যাঁড়শ গুলো হঠাৎ হেসে বলে উঠলো,” দেখ এই ঢ্যাঁড়শ টা কি ছোট্ট।“

মামমাম, “ কৈ দেখি “ বলে ঘুরে দেখল, তিন্নি ঢ্যাঁড়শ ভেবে একটা কাঁচা লঙ্কা কাটছে।

“ ওরে ওটা ঢ্যাঁড়স নয়, কাঁচা লঙ্কা ভীষণ ঝাল। খবর্দার চোখে হাত দিস না।“

কিন্তু বলতে বলতেই তিন্নি চোখে হাত দিল, আর ব্যাস তারপর তিন্নির চিৎকারে সারা বাড়ীর লোক মামমামের ঘরে জমা হয়ে গেল।

“ মা ...... মা কোথায়? “

তিন্নির মা ওকে সঙ্গে সঙ্গে বাথরুমে নিয়ে গিয়ে হাত চোখ সব জল দিয়ে ধুইয়ে দিল। কিন্তু তাতেও ওর বাঁ চোখটা খুব লাল হয়ে ফুলে উঠলো।

বাবা ডাক্তার কে ফোন করলেন। ডাক্তার একটা মলম আর একটা আই ড্রপ দিলেন। এই পুরো সময়টা মামমাম তিন্নির পাশে বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল।

হঠাৎ ঝর্ণা দি ,” আগুন আগুন!!” চিৎকার করতে করতে ছুটল। ওর পিছনে সবাই। দেখা গেলো মামমামের ঘরে থেকে গাড় কালো ধোঁয়া বেরোচ্ছে।

ঘরের ভিতর গিয়ে দেখা গেল মামমামের ঢ্যাঁড়শের তরকারি কড়ার ওপর দাউ দাউ করে জ্বলছে।



Rate this content
Log in