STORYMIRROR

Aparna Chaudhuri

Children Stories Inspirational

3  

Aparna Chaudhuri

Children Stories Inspirational

তিন্নি আর মামমাম ( অন্তিম পর্ব )

তিন্নি আর মামমাম ( অন্তিম পর্ব )

3 mins
221

সেবার আশ্রম থেকে ফেরার সময় মামমামের জর্দার কৌটোটা লুকিয়ে রেখে এসেছিল তিন্নি। আশ্রম থেকে মামমাম ফোন করেছিল,” লক্ষ্মী সোনা মা আমার, বলে দে কোথায় লুকিয়েছিস। জানিস তো আমার জর্দা ছাড়া চলে না। “

“ আমায় নিয়ে চল আশ্রমে তাহলে আমি খুঁজে বার করে দেবো।“ ঠোঁট ফুলিয়ে বলেছিল তিন্নি। অনেক অনুরোধ সত্ত্বেও কিছুতেই বলেনি কোথায় লুকিয়েছে জর্দার কৌটো। অগত্যা পরের সপ্তাহে বাবা , মা আর তিন্নি গিয়েছিল আশ্রমে। তিন্নি পুকুরপাড়ের গাছের কোটরের ভিতর থেকে বের করে দিয়েছিল জর্দার কৌটো। 

আসলে ওর আশ্রম থেকে ফেরার কোনও ইচ্ছাই ছিল না। কিন্তু স্কুল যেতে হবে , মায়ের মন খারাপ করছে এসব ভুজুং ভাজুং দিয়ে প্রায় জোর করেই বাবা ওকে ফেরত নিয়ে এসেছিল আশ্রম থেকে। ফিরে আসার পর ওর খুব মন কেমন করতো মামমামের জন্য, আশ্রমের জন্য। অনেকবার ও বাবা আর মাকে বোঝানর চেষ্টা করেছে, এখানে থাকার চেয়ে আশ্রমে থাকা অনেক ভালো। ওরা তিনজন যদি মামমামের সঙ্গে গিয়ে আশ্রমে সবার সাথে থাকে তাহলে খুবই মজা হবে। কিন্তু মা বাবা ওর কথা হেসেই উড়িয়ে দিয়েছে প্রত্যেক বার।

ও যখন আসে তখন ওর ব্যাগ ভর্তি হয়ে গিয়েছিল নাড়ু, পাটিসাপটা, চাল ভাজা, চিড়ে-বাদাম ভাজা, বাদাম চাকতি, মাটির পুতুল এইসবে। রাজু ওর সঙ্গে দিয়েছিল সেই বাবুই পাখির বাসাটা। সেঁজুতি মামমাম দিয়েছিল ওর নিজের হাতে তৈরি একটা নক্সি কাঁথা।

এরপর বেশ কয়েকবার ওরা গিয়েছিল আশ্রমে। যতবার গেছে খুব আনন্দ করেছে। কিন্তু বছর খানেক বাদে ওদের আশ্রম যাওয়া বন্ধ হয়ে গেলো। মা বা বাবাকে জিজ্ঞাসা করলে ওরা বলতো, “ মামমামের এক আত্মীয় থাকে আমেরিকায়। সে মামমামকে নিয়ে গেছে ওদের বাড়ী। এখন যখন মামমাম নেই ওখানে তখন আর আশ্রমে গিয়ে কি লাভ। মামমাম যখন ফেরত আসবে তখন যাওয়া যাবে।“

তিন্নি বিশ্বাস করতো সেই কথা আর মনে মনে ভাবতো কবে মামমাম আবার ফেরত আসবে আর ও যেতে পারবে আশ্রমে।

এরপর অনেকগুলো বছর কেটে গেছে। তিন্নি এখন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে, ফাইনাল ইয়ার। ও এখন জানে মামমাম আমেরিকা যায় নি, চলে গেছে না ফেরার দেশে । তখন ও ছোটো ছিল বলে বাবা মা ওকে বলে নি। আশ্রমে কাটানো দিনগুলো ও ভোলে নি। ওর স্মৃতির মণিকোঠায় সে দিনগুলোর স্মৃতি সযত্নে রাখা আছে। তাই জন্যেই বোধহয় ফাইনাল ইয়ার প্রোজেক্ট হিসাবে ও গ্রামের হ্যান্ডিক্র্যাফট ডেভেলপমেন্ট এর জন্য একটা ওয়েব সাইট বানাচ্ছে। 

সেই জন্যই ওকে যেতে হল আশ্রমে। আশ্রম আর আগের মত নেই। মাটির ঘরের জায়গায় পাকা ঘর উঠেছে। সামনের চাতাল এখন বাঁধানো। পিছনের পুকুর ঘাটও বাঁধানো পরিষ্কার, সেখানে মাছের চাষ হয় এখন। আশ্রমের বাগান ইজারা দেওয়া হয়েছে। আশ্রমের পুরনো গুরুদেব এখন খুবই বৃদ্ধ। ওনার কয়েকজন শিষ্য খুবই বিষয়ী , ওরাই পুকুর বাগান ইত্যাদির দেখাশোনা করে। এখন আশ্রমের আর্থিক অবস্থা বেশ ভালো।

তিন্নি গিয়ে প্রথমে গুরুদেবের সঙ্গে দেখা করলো। ওনার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতেই উনি ওকে আশীর্বাদ করলেন। প্রথমে ওকে চিনতে পারলেন না , খানিকক্ষণ বাদে ওনার মনে পড়লো। খানিকক্ষণ ওনার সাথে গল্প করার পর ও সেঁজুতি মামমামের কথা জিজ্ঞাসা করলো।

“ তুমি ইশকুলে চলে যাও, উনি ওখানেই আছেন।“

একজন অল্পবয়সী ছেলে ওকে নিয়ে গেলো ইশকুলে। আশ্রমেরই দক্ষিণ দিকের জমিতে দুস্থ মেয়েদের জন্য একটা স্কুল বানানো হয়েছে। সেখানে মেয়েরা হাতের কাজ শেখে। কিছু মেয়ে আশ্রমের আর বাকিরা আশপাশের গ্রাম থেকে আসে।

“ তুমি তিন্নি? কত বড় হয়ে গেছো। ঠিক দিদির মত মুখটা হয়েছে। তা এখন কি করছ?” এক গাল হেসে জিজ্ঞাসা করলো সেঁজুতি মামমাম।

তিন্নি সব বলল। ও এখানে কেন এসেছে তাও বলল। উনি খুব খুশী হলেন।

“ রাজু আর টুকটুকি দিদি কেমন আছে?”

“ রাজু এখন ই-রিকশা চালায়। টুকটুকির তো বিয়ে হয়ে গেছে। “

“ আর টেঁপি?”

“ টেঁপি মানে কুমোরদের মেয়ে? ও তো আমাদের আশ্রমেই আছে।“

“ সে কি কেন?”

“ ওর বাবা মারা গেছে। টেঁপির বিয়ে হয়েছিল, কিন্তু শ্বশুর বাড়ী ভালো হয় নি। ও একটা ছেলে নিয়ে বাপের বাড়ী চলে এসেছিল। ভাইয়েরা থাকতে দিল না । তখন ও এখানে চলে এসেছে। দাঁড়াও ওকে ডেকে পাঠাচ্ছি। “

খানিকক্ষণ বাদে টেঁপি ছুটতে ছুটতে এলো। ওকে দেখে কেঁদেই ফেলল টেঁপি। টেঁপির সঙ্গে খানিকক্ষণ কথা বলে তিন্নি এবার আসল কথায় এলো।

তিন্নি ওদের বুঝিয়ে বলল যে ওদের হাতের কাজ, যেমন মাটির পুতুল, কাঁথা এই সব সারা পৃথিবীতে বিক্রি করা যাবে ওর ওয়েব সাইটের মাধ্যমে। শুনে ওরা খুব খুশী। বলল,” তুমি আমাদের বল কি করতে হবে?”

তিন্নি অনেক ছবি, ভিডিও ইত্যাদি নিয়ে ফেরত এলো। এখন ওর অনেক কাজ। প্রজেক্ট শেষ করে ওকে আবার ফেরত যেতে হবে আশ্রমে। ও নিজের জীবনের উদ্দ্যেশ্য খুঁজে পেয়েছে। তিন্নি ওই দুস্থ মেয়েদের উন্নতির জন্য কাজ করতে চায়।

সমাপ্ত  


Rate this content
Log in