লক ডাউন ডায়েরির দ্বিতীয় দিন
লক ডাউন ডায়েরির দ্বিতীয় দিন
আজ অ্যালার্মের শব্দে ঘুম ভাঙল। গত রাতে ঠিক করে ঘুম হয়নি। ভোরবেলায় দূরে মসজিদে আজানের শব্দে খেয়াল হল সারারাত না ঘুমিয়েই কেটে গেল। অথচ কাল কী ক্লান্তই না সে ছিল। হঠাৎ দেখি জানলার বাইরে আলোর হাতছানি। পর্দা সরিয়ে জানলা খুলতেই দেখি সকালের মিষ্টি মধুর হাওয়া হুড়মুড়িয়ে ঘরের মধ্যে এসে ঢুকল। পাখির কিচিরমিচির কানে আসছে। জানলা দিয়ে উঁকি মারতেই এক ঝাঁক পাখি উড়ে গেল। পক্ষী সমাজে এখনো লগ ডাউন ঘোষিত হয়নি। কোথাও যাওয়ার নেই ? কোনো তাড়া নেই। তাই আবার বিছানায় গিয়ে আশ্রয় নিলাম। আর একটু ঘুমের দেশে থাকলেই হয় কিন্তু ঘুম কই! যে ঘুম চোখের পাতা থেকে সরতে চাইতো নাআজ সেই ঘুমের দেখা নেই। কতদিন সকালে ওঠার সময় মনে হয়েছে আরও একটু ঘুমতে পারলে কি ভালোই না হয়! কিন্তু আজ যখন একটু ঘুমোলেই হয়, তখন কোথায় সে কাঙ্ক্ষিত ঘুম ? কোথাও যাওয়ার নেই । কোনও তাড়া নেই। তখন মনে হচ্ছে জীবন থেকে একটা স্বাভাবিক ছন্দ হারিয়ে গেছে। একটু পরে রেডি হয়ে বেরোলাম গেটের উদ্দ্যেশ্যে । আজ থেকে বাড়িতে বাড়িতে দুধের প্যাকেট দেওয়া বন্ধ তাই গেটে চললাম দুধের প্যাকেট নিতে। আজকের সকাল অন্যান্য দিনের সকালের চেয়ে একদম আলাদা । অন্যান্য দিনের সকালে পরিচিত মুখ অপর পরিচিতর দিকে তাকিয়ে একটু হেসে অথবা মিষ্টি হেসে অভিবাদন জানাতো –‘সুপ্রভাত’। প্রতি অভিবাদন জানিয়ে অপর পক্ষ হাঁটা দিত নিজের কাজের দিকে। কিন্তু আজ মাস্কে ডাকা মুখ । আবাসনের ভিতরে অন্যসময় একটু দেরি করে ঘুম থেকে ওঠা মর্নিং ওয়াক করা মানুষদের দেখা মেলে। আজ সেই সব মানুষেরা উধাও । তাদের জায়গায় ব্যাগ হাতে খানিক দূরত্ব বব্জায় রেখে মানুষজন চলেছেন জীবন নির্বাহ করার জন্য জিনিসপত্র নিয়ে আসতে। আমি গেটে গিয়ে জানলাম দুধ এখনো এসে পৌঁছায়নি। আমি এসেছি আমাদের আবাসনের গেটে দুই ফ্ল্যাটের দুধের প্যাকেট সংগ্রহ করতে। এই আবাসনে My family & my extended family থাকেন। আমি মা-বাবার দুধের প্যাকেট গেট থেকে সংগ্রহ করে মা –বাবার ফ্ল্যাটে দিয়ে তারপর পাশের ব্লকে নিজের ফ্ল্যাটে যাই। এই সব ভাবতে ভাবতে গেটে দুধের প্যাকেট এসে গেল। বাড়ি ফিরে দৈনন্দিন কাজ করতে করতে ঘড়ির কাঁটা এগোতে থাকলো। একটা দমবন্ধ করা পরিবেশ। টিভিতে খবর শুনলে চিন্তা বাড়ছে। সামনে আবার রাত । সারদিন ঘুমায়নি কিন্তু চোখের পাতায় একটুও ঘুম উঁকি ঝুকি মারছেনা। রাতে শুয়ে চোখ বন্ধ করলাম । ভাবলাম অভ্যাসবশত ঘুম চলে আসবে। চোখের পাতা বন্ধ করতে করতে ভাবলাম লগডাউনের আরেকটা দিনো দেখতে দেখতে কেটে গেলো। এই ভাবে হয়ত একটা একটা করে একুশটা দিন কেটে যাবে কিন্তু একুশ দিনের পর কী আমরা 'করোনা' নামক ভাইরাসের হাত থেকে রক্ষা পাবো!