STORYMIRROR

Aayan Das

Others

2.5  

Aayan Das

Others

লিলিথ

লিলিথ

4 mins
10.1K


ফেসবুকের দৌলতে দীর্ঘ আঠেরো বছর পর দেখা হয়ে গেল আশিস ও চান্দ্রেয়ীর।'পিপল ইউ মে নো' তে আচমকা চান্দ্রেয়ীকে দেখে আশিস এর মাথাটা ঝনঝন করে উঠেছিল।এই মেয়েটির কাছে সে হেরে গিয়েছিল।এই মেয়েটিকে তীব্রভাবে চেয়েও সে পায়নি।সামান্য একটা ভুল বোঝাবুঝি তাদের মধ্যে ফাটল ধরিয়ে দিয়েছিল।

প্রোফাইল টা ওপেন করে আশিস মৌলি কে ডাকল।

''দেখো-এই হল চান্দ্রেয়ী-''

চান্দ্রেয়ীর মুখের আগের সেই ধারালো ভাবটা আর নেই।তার বদলে সমস্ত চেহারাতে একটা পেলবতা এসেছে।ফেসবুকে পোষ্ট করা অধিকাংশ ছবিতে তার সুখী দাম্পত্যের ছবি।

মৌলি বলল,''-রিকোয়েষ্ট পাঠাও,ওর সঙ্গে আলাপ করব।''

আশিস বলল,''-পাগল নাকি!কবে কোন রিলেশন ছিল,ওকে আমার বন্ধু করার কোনো ইচ্ছা নেই।''

পরের দিন দেখা গেল চান্দ্রেয়ী-ই রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে আশিসকে।

যাকে চেয়েও পাওয়া যায়না সে যেন বড্ড বেশি মূল্যবান হয়ে ওঠে।সে যেন এক লহমায় সকলকে হারিয়ে দেয়।আশিসের বহুবার মনে হয়েছে যদি তার সঙ্গে চান্দ্রেয়ীর বিয়ে হত তাহলে ঠিক কেমন হত!

সে যে টেবিলে বসে ঘুষ নেয়,সেই ঘুষের টাকায় স্কচ খায়,মৌলি চুলে স্ট্রেটনিং করে,তাদের ছেলে কনভেন্টে পড়ে,তারা বছরে দুতিনবার বেড়াতে যায়, -যদি চান্দ্রেয়ীর সঙ্গে তার বিয়ে হত-তাহলে সে সত্যিই কী এরকম অসৎ হত!তাহলে সে কী সত্যিই কবিতা লেখা ছেড়ে দিত?কে জানে আজ হয়তো কবি হিসেবে তার খানিক নামডাক ও হত!

একএকদিন ভোরবেলার স্বপ্নে অথবা আধো তন্দ্রায় আচমকা চোখের উপর ভেসে ওঠে চান্দ্রেয়ীর চিনার গাছের মত জুঁই ফুলের গন্ধমাখা শরীরটা।ঘুম ভেঙে যাওয়ার পর মনটা ভারি হয়ে যায়।সে মৌলি কে আঁকড়ে ধরে।

আশিস তার স্ত্রী কে ভালবাসে।

আজ শৈবালের বাড়িতে তাদের গ্রুপ মিট।সমস্ত পুরোনো বন্ধুরা বহু বহু বছর পর আবার একসঙ্গে হচ্ছে।

আশিসের সারারাত ভাল ঘুম হোলনা।এই আঠেরো বছরে কত সহস্রবার সে চান্দ্রেয়ীকে ভেবেছে,আদর করেছে।যখনই সে একা হয়েছে,যখনই সে বিপন্ন হয়েছে তখনই চান্দ্রেয়ী চলে এসেছে তার স্বপ্নে,জাগরণ।সেই চান্দ্রেয়ীর সঙ্গে দেখা হতে চলেছে।তার ভিতরে একটা চাপা টেনশন হতে লাগল।

সকালে শেভ্ করতে গিয়ে আচমকা আশিসের থুতনিটা ছড়ে গেল।

শৈবালের বাড়িতে আশিস পৌঁছে গেল সবার আগে।কফি আর সিগারেট নিয়ে দোতলার ব্যালকনিতে এক অধীর অপেক্ষা।আশিসের বুকের মধ্যে শব্দ হচ্ছে-দ্রিম দ্রিম।

দূর থেকে চান্দ্রেয়ীকে দেখে আশিসের প্রথমে একটা জোর ধাক্কা লাগল।যেন রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ করে হোঁচট খেয়ে পড়ে যাওয়া।

আশিস মূর্খের মত গত আঠেরো বছর ধরে তার মনে চান্দ্রেয়ীর যে মূর্তি গড়ে রেখেছে সেখানে তার বয়স ঊনিশের বেশি আর একদিনও বাড়েনি।সেখানে সে আজও ধারালো চেহারার ঊনিশ বছরের অভিমানী এক তন্বী।যার বুক ভরা ভালবাসা আর চোখ ভরা অভিমান।যে বিনা কারনেই দুঃখ পায়,যে দুঃখ পেতে ভালবাসে।আশিস তার মনের মণিকোঠায় খুউব সযত্নে লালন করে গেছে তাকে একদম নিজের মনের মত করে।

শৈবালের বাড়িতে যে পৃ

থুলা মহিলাটি ঢুকলো সে আগে বেশ কালো ছিল।এখন তার মাজা মাজা অলিভ রঙের বদলে ধপধপে ফর্সা শরীর থেকে যেন পিছলে পড়ছে তেল,চোখের দৃষ্টিতে সেই ধারালো ভাবটা উধাও হয়ে গেছে।সেই দুঃখবিলাসী মেয়েটির সমস্ত অস্তিত্ব জুড়ে ছড়িয়ে আছে সুখ আর সমৃদ্ধির প্রাচুর্য।সে হাসছে,সে হেসেই চলেছে।সে বড্ড সাধারন হয়ে গেছে।

চান্দ্রেয়ী আশিস কে বলল,''-কি রে আশিষ,ভাল আছিস?''

আশিস সারাক্ষন শুধু চান্দ্রেয়ীর কথাই ভেবেছে অথচ এখন দায়সারাগোছে উত্তর দিল,''-হ্যাঁ রে।তুই ভাল আছিস?''

''একদিন আয় না বউ কে নিয়ে,আমি তো কসবা তে ফ্ল্যাট কিনেছি।''

''যাব যাব,তার আগে তোরা আমার বাড়িতে আয় সবাই মিলে।''

কিছুক্ষন কথা বলার পরে আশিসের হাঁপ ধরে গেল।এই মেয়েটি একেবারে সাধারণ হয়ে গেছে।একেবারে আর পাঁচটা সাধারণ মেয়ের মত।আশিসের ভীষন কষ্ট হতে লাগল।

''তোরা এনজয় কর,আমার একটা মিটিং আছে।''আশিস রাস্তায় বেরিয়ে এসে একটা সিগারেট ধরালো।

সে কিভাবে এই ভুল করল!কেন সে এতবছর পর চান্দ্রেয়ীকে দেখার লোভ সামলাতে পারলো না!সে তিলে তিলে চান্দ্রেয়ীকে গড়েছে তার নিজের মত করে।তার অসহায়তা থেকে,তার একঘেয়েমি থেকে মুক্তির জন্য সে বারবার ছুটে গেছে তার কল্পনার নারীর কাছে।যে নারী তাকে উষ্ণতা দিয়েছে,শান্তি দিয়েছে,পরিত্রান দিয়েছে,যে থেকে গেছে তার অতৃপ্ত কামনায়।যখন সে বিপন্ন হয়ে পড়েছে তখন পৃথিবীর শেষ প্রান্তে পৌঁছেও তার মনে হয়েছে-আর কেউ থাক না থাক তার চান্দ্রেয়ী রয়েছে-

বাস্তবের চান্দ্রেয়ীর তাকানো,হাসি, কথা বলার ভঙ্গী-সেই কাল্পনিক চান্দ্রেয়ীকে ভেঙেচুরে দুমড়ে মুচড়ে দিচ্ছিল।সে বড্ড অসহায় হয়ে পড়ছিল।

আশিস সিদ্ধান্ত নিল,চান্দ্রেয়ীর সঙ্গে জীবনে কখনও সে যোগাযোগ রাখবেনা।তার কল্পনার চান্দ্রেয়ী উজ্জ্বল হয়ে বেঁচে থাক তার মনেই।

পকেট থেকে মোবাইল বের করে আশিস ব্লক করে দিল চান্দ্রেয়ী কে।

 

            পুনশ্চ

           -----------

গল্পটির নামকরন কেন "লিলিথ" হল এই নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন থাকতে পারে।

পৌরানিক মত অনুসারে ইভ কিন্তু পৃথিবীর প্রথম মানবী নন।ইভ এর আগেও 'লিলিথ' নামে আদম এর এক সঙ্গিনী ছিল।কাহিনী অনুসারে লিলিথ এর বুদ্ধি ছিল আদম এর চেয়েও অনেক বেশী।সে চেয়েছিল আদম তার বশ্যতা স্বীকার করুক।অথচ আদম যেহেতু বেশি শক্তিশালী তাই সে চেয়েছিল লিলিথ তার বশ্যতা স্বীকার করুক।শেষ পর্যন্ত দুজনের বিচ্ছেদ হয়ে যায়।আদমের জীবনে আসে ইভ।ইভ খুব সহজেই আদমের বশ্যতা স্বীকার করে নেয়।লিলিথ হারিয়ে যায়।আদম বারংবার ইভকে সন্তানবতী করে।ইভ এর সঙ্গে এক সুখী দাম্পত্যের পরও আদমের কখনও আচমকা মনে পড়ে যায় লিলিথ এর কথা।লিলিথ হারিয়ে গিয়েও বেঁচে থাকে--আদমের অতৃপ্ত কামনায়।

(তথ্য-প্রথম মানবী-সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়)

#positiveindia


Rate this content
Log in