জন্ম-মৃত্যু
জন্ম-মৃত্যু


প্রচন্ড কান্নার শব্দ শুনে সুমনের ঘুম ভেঙে গেল। সে তারপর উঠে সে শুনতে পেল পাশের বাড়ির ৭০ বছরের দিদা ইহলোক ত্যাগ করেছেন। শুনে তার চোখেও জল। সুমন গেল দিদার শেষ যাত্রায়। তার যেন মনে হলো এক যুগের অবসান ঘটল। কারণ, সুমনের পাড়ায় ওই দিদার বয়সী আর কেউ বেঁচে নেই। মৃত্যু যেন একের পর এক অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটায়। এক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হল না। এর কিছুদিন পরেই সুমনদের পাড়ায় নতুন সদস্যের আগমনে পাড়া তখন আনন্দে উদ্বেলিত। জন্ম আবার নতুন অধ্যায়ের সূচনা করল। কিন্তু সুমন এই জন্ম মৃত্যু সম্বন্ধে গভীরভাবে চিন্তা করতে শুরু করল। সে উপলব্ধি করল যে, জন্ম-মৃত্যু চক্রাকারে আবর্তিত হয় আমাদের জীবনে। আমরা যারা গৃহী মানুষ, তাদের কাছে মৃত্যু ভীতি স্বরূপ। আর জন্ম আনন্দের বার্তা নিয়ে আসে। আমরা যদি একটু গভীরভাবে বিশ্লেষণ করি তাহলে দেখব মৃত্যুই জীবনের সত্য। মৃত্যুকে যে ভয় না করে সাদরে গ্রহণ করে, সে মৃত্যুঞ্জয়ী হয় এবং সেই মানুষটি জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে উপলব্ধি করতে পারে। কারণ, তার মৃত্যু ভয় নেই। সেরকমই সুমনের মৃত্যু ভয় চলে গেল। পৃথিবীতে জন্ম যেমন সৃষ্টিকে আরও সুন্দর করে তোলে, ঠিক তেমনি মৃত্যু প্রকৃতির সৌন্দর্য্যকে আরও সুন্দর করে তোলার জন্য তার ভিত্তি প্রস্তর রচনা করে। মৃত্যুর মধ্য দিয়ে প্রকৃতি জরাজীর্ণতা কাটিয়ে নতুন করে সৃষ্টির উপযোগী হয়ে ওঠে। তাই এ বিশ্বসংসারে সৃষ্টির অন্যতম দুটি উপাদান হলো জন্ম ও মৃত্যু। আমরা যদি এই সত্য উপলব্ধি করতে পারি তবেই জীবনের শ্রেষ্ঠত্ব। জন্ম-মৃত্যুর এই চক্রকে কেউ খন্ডাতে পারে না। নিরন্তর চলছে। যদি কোনদিন এ চক্র থেমে যায় তাহলে সৃষ্টির ভারসাম্য নষ্ট হবে এবং বিশ্ব সংসার ধ্বংস হবে।